নাটোরের সেলিনা বেগমের সংগ্রামী জীবনের কথা

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
3 মিনিটে পড়ুন
সংগ্রামী নারী সেলিনা বেগম

সেলিনা বেগম। নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ভাতুরিয়া গ্রামের মহসিন ঘরামির দরিদ্র কঠিরে তার জন্ম হয় ১৯৬৬ সালে। এরপর মহসিনের পরিবারে জন্ম নেয় আরো আটটি সন্তান।

সেলিনা বেগম জন্মের পর খুবই অল্প সময় সে তার বাবা ও মায়ের সান্যিধ্য পায়।প্রায় ১১ বছর বয়সেই ১৯৭৭ সালে তাকে বসতে হয় বিয়ের পিড়িতে। একই ইউনিয়নের ফুলতলা এলাকার রিক্সা চালক এন্তাজ আলী শিকদতারের সাথে।

বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জিবন বেশ সুখেই চলছিল।এরই মধ্যে তাদের কোল জুড়ে আসে একটি মেয়ে।মাত্র ০৫ বছরে তার কোল জুড়ে আসে আরো দুইটি সন্তান। এভাবেই চলছিল সেলিনা বেগম ও এন্তাজ আলী শিকদারের দাম্পত্য জীবন।

এরপর ১৯৮৬ সালে তাদের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। এন্তাজ আলী শিকদার একদিন সখ করে তার বড় মেয়েকে নিয়ে রিক্সায় করে সকালে বেড়াতে বের হয়। বেড়াতে বের হওয়ার পরেই নাটোর বগুড়া মহাসড়কে পিছন থেকে আসা একটি দ্রুত গতির ট্রাক তার রিক্সায় ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।

গুরুতর জখম হয় মেয়ে সহ বাবা এন্তাজ আলী শিকদার।এরপর র্দীঘ দিন সে বিছানাগ্রস্থ হয়ে থাকেন। দিন যায় মাস যায় এন্তাজ শিকদার বিছানাতেই পড়ে থাকে।

একমাত্র উপার্জনের মানুষটি বিছানায় পড়ে থাকার কারণে, পরিবারের এই দুই সদস্যের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করার মত তেমন কেউই পাশে ছিল না । সেই দিন থেকে শুরু হয় সেলিনার সংগ্রামী জীবন।

ছাত্রাবাসে রান্না করার কাজ করা সহ কিছুদিন পরে বেশি বেতনের আশায় পচুর হোটেলে প্রায় ছয় মাস কাজ করেছিলেন তিনি।সংসার স্বামী ও কন্যার চিকিৎসা খরচ চালাতে সুবল সাহার ডাল মিলেও কাজ করেছেন প্রায় ছয় মাস ।

১৯৯৭ সালে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ফুলতলা মোড়ে একটি চায়ের দোকান দেন তিনি। হাফ কেজি চিনি, আড়াইশো গ্রাম চায়ের পাতি আর কয়েকটা কাপ নিয়ে তার সংগ্রামী জীবনের শুরু।

বর্তমানে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা ব্যয়, সংসার পরিচালনা সহ দুই মেয়েকে বিবাহ ও এক ছেলেকে বিবাহ দেওয়া এবং মাথা গোঁজার জন্য একটি জায়গা কিনে সেখানে বাড়িও করেছেন সংগ্রামী নারী সেলিনা।

কারো কোন সাহায্য ছাড়াই জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এই নারী সেলিনা “আক্ষেপ করে বলেন পড়াশোনার করার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু কপালে আছে চা বিক্রি করে খাওয়া আমার কি আর পড়াশোনা হয়?”

অসাধারণ এই রমনী পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ের সমস্ত অনুশীলন তার মুখস্ত আছে। অনর্গল আবৃত্তি করতে পারেন কবিতা। অত্র অঞ্চলের কোন মহিলা মারা গেলে তার শেষ গোসলের দায়িত্ব তিনি পালন করেন এবং এলাকায় দাইমা হিসেবেও তার রয়েছে অনেক খ্যাতি।

কিন্তু স্বেচ্ছায় এই কাজগুলো করে তিনি কোন পারিশ্রমিক নেননা। তাই মুলত চায়ের দোকান ছাড়া আর কোন আয়ের উৎস নেই, এই সংগ্রামী নারী সেলিনার।

সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা কোনো দিনই তিনি পাননি। নিরবে একদিন বিদায় নেবে সংগ্রামী নারী আমাদের মাঝ থেকে। আমরা কি কেউ তার জীবন সংগ্রামের গল্প জানবো?

নাটোরের আনাচে-কানাচে এমন অনেক সেলিনারাই জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। কে রাখে তাদের খবর? কে শোনে তাদের জীবনের করুণ ব্যথার আর্তনাদ…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!