নাটোরে নুনিয়া জনগোষ্ঠীর শিশুরা অনাহারে

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
3 মিনিটে পড়ুন
নাটোরে অনাহারী নুনিয়া শিশুদের একাংশ

লকডাউনে ২২ দিন ধরে বাবা-মা ইট ভাঙার কাজে যেতে পারেননি। তাই প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিশুর খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। তিনবেলা খাবার জুটেনি তাদের। নুরীয়া সম্প্রদায়ের এই শিশুদের অনেকে একবেলা খেয়ে সারাদিন ক্ষুধা পেটে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যায়।

স্থানীয় ভাষায় নুনিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষেরা নূরীয়া সম্প্রদায় নামেই পরিচিত। এই নুনিয়া জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষেরা এক সময়ের চা বাগানের শ্রমিক ছিলেন। সময়ের সাথে সাথে সব কিছু আধুনিকায়ন হলেও, বদলে যায় নি তাদের ভাগ্য। তারা এখনও বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাতারেই রয়ে গেছে।

নাটোর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেবাড়িয়া উত্তরপাড়া ও মলি­কহাটি এলাকায় এ নুনিয়া সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবারের বসবাস। এখানকার প্রতিটি পরিবারের নারী-পুরুষদের কেউ ইট-পাথর ভেঙে সংসার চালান, কেউ আবার মজুরের কাজ করেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে তাদের প্রত্যেকেই কাজ হারিয়েছেন। ঘরে সঞ্চয় বলতে তাদের কিছুই নেই।

গত ২২ দিন লকডাউনে সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য আসেনি। বাইরে থেকে কেউ এলাকায় গেলেই তারা ভাবছেন হয়তো তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসা হয়েছে। শিশু থেকে প্রবীণ সবাই উৎসাহ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন। প্রত্যেকের একটাই কথা, আবার কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে?

আমরা আবার কবে দু’পয়সা রোজগার করে তা দিয়ে চাল, ডাল ও আলু কিনে খেতে পারব? নুনিয়া সম্প্রদায় ঘুরে দেখা গেছে, বহু মানুষেরই দুবেলা খাবার জুটছে না। এখানকার সিংহভাগ পরিবারেই স্বামী দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। সংসার টানতে স্ত্রীরাও ইট-পাথর ভাঙার কাজ করেন।

দুজনের যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলেপুলে নিয়ে কোনোমতো সংসার চালান। লকডাউনের জেরে গত ২২ দিন থেকেই তাদের সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ। ফলে রোজগারও বন্ধ হয়ে রয়েছে।

ঘরে বসে বসে ২২ দিন ধরে সংসার চালাতে গিয়ে তাদের হাত শূন্য হয়ে পড়েছে। কার্ড না থাকায় তারা সরকারি ভর্তুকিতে চাল, আটাও পাচ্ছেন না। ফলে সমস্যায় পড়েছেন বাসিন্দারা।

তেবাড়িয়া উত্তর পাড়ার গণেশ, কার্তিক ও মিনতিসহ অনেকেই বলেন, আমরা ইট ও পাথর ভেঙে অথবা মাটি কাটার কাজ করে সংসার চালাতাম। কিন্তু ২২ দিন ধরে কাজ বন্ধ। ঘরে যেটুকু টাকা-পয়সা জমানো ছিল, তা দিয়ে চাল, ডাল কিনে খেয়েছি। এখন আর খাবার জুটছে না। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এনামুর রহমান চিনু জানান, নুনিয়া সম্প্রদায়ের মানুষরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি, তাই তাদের জন্য কিছু করতে পারিনি। আমি চেষ্টা করছি তাদের সাহায্য করার।

এ ব্যাপারে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাঙ্গাঙ্গীর আলম জানান, নুনিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কাজ করছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!