গাজায় হামলার শুরুর মাসেই ইসরায়েল ২০০০ পাউন্ড ওজনের কয়েক হাজার বোমা ফেলেছে
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম মাসে গাজায় ২০০০ পাউন্ড ওজনের কয়েক হাজার বোমা ফেলেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ ভিয়েতনাম যুদ্ধে এই বোমা ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই বোমাগুলো ইরাকের মসুলেও যুক্তরাষ্ট্র যেসব বোমা মেরেছিল, সেগুলোর এর চেয়ে ৪ গুণ ছোট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বোমার সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গাজাবাসীর অন্তত কয়েক যুগ লেগে যাবে।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএএনএন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলার বিষয়ে একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েল এমন সব বোমা ব্যবহার করেছে—সেগুলো যেখানে পড়েছে তার আশপাশের অন্তত ১০০০ ফুটের মধ্যে যারা ছিল তারা সবাই হয় নিহত হয়েছে কিংবা গুরুতর আহত হয়েছে।
![গাজায় হামলার শুরুর মাসেই ইসরায়েল ২০০০ পাউন্ড ওজনের কয়েক হাজার বোমা ফেলেছে 38 গাজায় ২ শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৮২](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/11/Untitled-4-28.jpg)
যুদ্ধের শুরুর দিকের স্যাটেলাইট চিত্র থেকে দেখা গেছে, গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধের প্রথম মাসেই হাজারো ২০০০ পাউন্ডের বোমা ব্যবহার করেছে। এই বোমাগুলো ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর আর কোথাও কোনো যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি। স্যাটেলাইট চিত্র থেকে দেখা গেছে, এসব বোমা গাজায় এমন সব গর্ত তৈরি করেছে যার ব্যস ১২ মিটার বা প্রায় ৪০ ফুট।
অস্ত্র ও যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বোমা ব্যবহারের কারণেই গাজায় নিহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গাজা বিশ্বের যেকোনো শহরের তুলনায় অনেক বেশি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেশি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ২০০০ পাউন্ডের এসব বোমার আঘাতে ভূমি, অবকাঠামো এবং জনগণের শারীরিক ও আর্থিক এমনকি মানসিক যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষত পূরণ হতে সময় লাগবে অন্তত কয়েক যুগ।
এ বিষয়ে যুদ্ধের সময় বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর বিষয়টি নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়াশিংটনভিত্তিক সিভিকের লিগ্যাল ফেলো জন চ্যাপেল বলেন, ‘গাজার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ২০০০ পাউন্ড বোমা ব্যবহারের অর্থ হলো, স্থানীয় সম্প্রদায়ে লোকদের এর সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েক দশক সময় লেগে যাবে।’
![গাজায় হামলার শুরুর মাসেই ইসরায়েল ২০০০ পাউন্ড ওজনের কয়েক হাজার বোমা ফেলেছে 39 ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় নিহত বেড়ে ৩১৩](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/10/Untitled-5-3.jpg)
যদিও ইসরায়েলের দাবি, হামাসকে নির্মূল করতে হলে তাদের ভারী গোলাবারুদ-বোমার প্রয়োজন। ইসরায়েলে সমর্থকেরা যুক্তি দেন যে, ভারী অস্ত্রশস্ত্র হামাসের টানেল নেটওয়ার্ক বিধ্বস্ত করার জন্য ‘ব্লাস্টার’ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ইসরায়েল সেই টানেল নেটওয়ার্ক ধ্বংসে কতটা কার্যকর হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
![গাজায় হামলার শুরুর মাসেই ইসরায়েল ২০০০ পাউন্ড ওজনের কয়েক হাজার বোমা ফেলেছে 40 গাজায় হামলার শুরুর মাসেই ইসরায়েল ২০০০ পাউন্ড ওজনের কয়েক হাজার বোমা ফেলেছে](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/12/Untitled-2-4.jpg)
কিন্তু গাজার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ২০০০ পাউন্ডের বোমার ব্যবহারের প্রভাব বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বোমা সাধারণত পশ্চিমা সামরিক বাহিনী খুবই কম ব্যবহার করে। কারণ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে নির্বিচারে এ ধরনের বোমা হামলা নিষিদ্ধ। সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিশ্লেষক ও জাতিসংঘের সাবেক যুদ্ধাপরাধ তদন্তকারী মার্ক গারল্যাসকো বলেছেন, ‘গাজায় ইসরায়েলের প্রথম মাসে যে পরিমাণ বোমা হামলা করেছে তা ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর আর কখনোই হয়নি।’
গারল্যাসকো বলেন, ‘আপনাকে এই বিষয়টি তুলনা করার জন্য ভিয়েতনাম যুদ্ধে ফিরে যেতে হবে। ইরাকে হওয়া দুই দফার যুদ্ধের এমন ঘন ঘন ও ভারী বোমা ব্যবহার করা হয়নি।’