সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে কিশোর অপরাধ প্রধান অন্তরায়

মেশকাতুন নাহার
মেশকাতুন নাহার
4 মিনিটে পড়ুন

সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে কিশোর অপরাধ প্রধান অন্তরায়

শিল্প বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে যেসব নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তারমধ্যে কিশোর অপরাধ অন্যতম। শিল্প বিপ্লবের ফলে দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের বিকাশ ঘটেছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নির্ভর সমাজব্যবস্থা ভেঙে যান্ত্রিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটে। জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রয়োগ ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব সংগঠিত হয়। কারখানা শিল্পের ব্যপক বিস্তৃতি লাভ করে। এর ফলে নারী পুরুষ উভয়েরই কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটে। আর সেক্ষেত্রে পরিবারের নির্ভরশীল শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে শিশু কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

সাধারণত ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীদের দ্বারা সংগঠিত সমাজবিরোধী আচরণকেই কিশোর অপরাধ বলা হয়।
শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু কিশোরদের দ্বারা সংগঠিত অপরাধই হলো কিশোর অপরাধ।

অপরাধ বিজ্ঞানী বার্ট বলেছেন “কোনো কিশোরকে তখনই অপরাধী মনে করতে হবে যখন তাঁর অসামাজিক কাজ বা অপরাধের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।” কিশোর কিশোরীরা সাধারণত আবেগের বশবর্তী হয়ে কিংবা পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে অপরাধ করে থাকে। উদ্দেশ্যহীন ভাবে শুধুমাত্র কৌতূহলের কারণে ও অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হতে পারে। প্রাপ্ত বয়ষ্ক অপরাধীদের মতো কোনো পরিকল্পিতভাবে কোন অপরাধ করে না। কিশোর কিশোরীরা সাধারণত যে ধরনের অপরাধ করে থাকে তা হলো পকেটমার, চুরি, ছিনতাই, স্কুল কলেজের মেয়েদের উত্যক্ত করা অর্থাৎ ইভটিজিং, জুয়া খেলা, নেশা করা, পর্ণ ছবি দেখা প্রভৃতি

ইদানীং কিশোররা গ্যাং তৈরি করে নতুন করে অপরাধের মাত্রা যোগ করেছে। গণমাধ্যমে উঠে এসেছে এ ধরনের অপরাধের বিভিন্ন চিত্র। তাছাড়া অল্প বয়সে স্মার্টফোন হাতে পাওয়ার কারণে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অপরাধ সংগঠিত করছে। ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে গ্রুপ তৈরি করে গ্যাং তৈরি করে অপরাধ ও অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে। টিকটক এপস ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে কিশোর অপরাধ প্রধান অন্তরায়
সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে কিশোর অপরাধ প্রধান অন্তরায়

বাবা মা উভয়ের কর্মক্ষেত্রের কারণে একদিকে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে পরিবারের শিশু কিশোররা নিরাপত্তাহীনতা জনিত কারণে যা ইচ্ছে তাই করার সুযোগ পাচ্ছে। মোবাইল গেইমস, ইউটিউবে আসক্ত হওয়ার প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জারে অসৎসঙ্গের সাথে চ্যাটিং করে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে। বাবা মায়ের আদেশ উপদেশ ,লেখপড়া তাদের কাছে বিরক্তিকর। এভাবেই যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আজ হুমকির সম্মুখীন।

আমরা জানি আজকের শিশুরা আগামীদিনের উন্নত ও সমৃদ্ধশালী জাতির কর্ণধার। আর শিশু কিশোরা যদি বিপথগামী হয় তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাবগুলোর মধ্যে পারিবারিক ভাঙন, বিবাহবিচ্ছেদ, দাম্পত্যকলহ, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে অসামঞ্জস্যতা অন্যতম। যাঁর ভুক্তভোগী বেশিরভাগ শিশু কিশোররা। যেসব পরিবারে দাম্পত্যকলহ, বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে সেসব পরিবারের শিশু কিশোররা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় পড়ে যায়। এর ফলে তাদের নৈতিক চরিত্র গঠন, মূল্যবোধ,আচার আচরণ সঠিক ভাবে গড়ে উঠে না। এমন পরিবারের শিশু কিশোররা বিচ্যুত আচরণ করে থাকে এক পর্যায়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে কিশোর অপরাধ প্রধান অন্তরায়
সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে কিশোর অপরাধ প্রধান অন্তরায়

তাছাড়া বস্তি এলাকায় গিঞ্জি পরিবেশে শিশু কিশোররা অপরাধের দিকে ধাবিত হয়। গিঞ্জি পরিবেশের কারণে খুব সহজেই প্রাপ্ত বয়ষ্ক অপরাধীদের সঙ্গে মিশে তাঁরা ও অপরাধী হয়ে ওঠে। মাদকাসক্ত, চোরাচালান, ধর্ষণ সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত হয়ে যায়।

কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরিবার সহ অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার থেকেই একটা শিশুর বেড়ে ওঠা। তাই সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে পরিবারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশু কিশোরদের ব্যস্ত রাখতে হবে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা, খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে শিশু কিশোরদের উন্নত বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে। বিদ্যালয়ে অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রীদের কাউন্সেলিং এর জন্য বিদ্যালয় সমাজকর্মী নিয়োগ করা জরুরি।

সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে কিশোর অপরাধ প্রধান অন্তরায়
সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে কিশোর অপরাধ প্রধান অন্তরায়

এখনো আমাদের দেশে পর্যাপ্ত শিশু কিশোর সংশোধনী ইন্সটিটিউট গড়ে ওঠেনি। যেখানে অপরাধী বা উশৃঙ্খল শিশু কিশোরদের আচরণ সংশোধন করে সমাজে পুনর্বাসিত করার সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি বলা যায় পরিবার, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, শিশু কিশোর আইনের যথাযথ প্রয়োগ, কিশোর আদালতের সুসংগঠিত বিচার কার্যক্রম- প্রতিটি স্তরে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কিশোর অপরাধ সমাজ থেকে দূরীভূত হতে পারে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
প্রভাষক সমাজকর্ম। কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, কচুয়া, চাঁদপুর। শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ২০২০ সালে তার একক কাব্যগ্রন্থ 'দীপ্ত আবির্ভাব' প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ৪টি যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!