আজ ‘মা’ দিবস

তিমির বণিক
তিমির বণিক
5 মিনিটে পড়ুন

যার জন্য পৃথিবীর আলোর মুখ দেখে প্রতিটি সন্তান, পৃথিবীতে যিনি নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসতে পারেন, দুঃখে ও সুখে প্রতিটি সময় যিনি স্নেহ ভালোবাসায় পাশে থাকেন, তিনি হলেন মা। আর মায়ের ভালবাসা পেতে কখনো প্রয়োজন হয় না ভালবাসি বলা। আর সেই মায়ের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা জানাতে আজ বিশ্বের অনেক দেশ পালন করছে বিশ্ব মা দিবস

প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্ব মা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যদিও মাকে ভালোবাসা-শ্রদ্ধা জানানোর কোনো দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না- তবুও মাকে গভীর মমতায় স্মরণ করার দিন আজ।

t আজ 'মা' দিবস
মায়ের সঙ্গে

জন্মদাত্রী হিসেবে সকলের জীবনে মায়ের স্থান সবার ওপরে। তাই তাঁকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানানোর জন্য একটি বিশেষ দিনের হয়ত কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরও আধুনিক বিশ্বে ‘মা দিবস’ পালন হচ্ছে। সঙ্গে উপহার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সাদা কার্নেশন ফুল।

দিবসটিতে মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানান সন্তানেরা। কেউ মাকে ফুল দেন। কেউ দেন কার্ড। মাকে উপহারও দেন কেউ কেউ। মাকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটা বা বিশেষ অনুষ্ঠানও করেন অনেকে। কেউবা এসব না করে শুধুই বলেন, ‘মা, তোমায় অনেক ভালোবাসি।’ অনেকে আবার একটি দিনকে ঘিরে মা দিবস পালনের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা বলছেন, মায়ের প্রতি সন্তানের অকৃত্রিম ভালোবাসা কোনো একটি দিনের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকতে পারে না। আর মাকে শ্রদ্ধা জানাতে কোনো আনুষ্ঠানিকতার দরকার হয় না। যে কেউ ভাবতেই পারেন, মায়েদের কি আলাদা করে কোনো উপহারের প্রয়োজন পড়ে? তাঁরা যে সন্তানের মুখে শুধুমাত্র ‘মা’ ডাক শুনতে পেলেই হৃদয়ের প্রিয় উপহার পেয়ে যান।

প্রথম মা দিবস উদযাপন শুরু হয় গ্রিসে। গ্রিকরা তাদের মাতা-দেবি ‘রেয়া’র নামে পূজা করত। তবে আধুনিক কালে মা দিবস উদযাপনের প্রথম ভাবনাটি এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে এক সমাজকর্মীর মাথা থেকে। ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিস নামের নারী মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রবিবার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য তিনি লড়াই করতে থাকেন। অবশেষে ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস মা দিবসকে সরকারিভাবে পালনের অনুমতি দেয়। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। যদিও করোনার কারণে এবার দিবসটিতে কোন আনুষ্ঠানিকতা দেখা যাবে না। তাই বলে ঘরে ঘরে মায়ের ভালবাসা কুড়াতে কার্পণ্য করবে না, কোন সন্তান।

কোনো মা, তা তিনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন, যত কুশ্রীই হন না কেন, সন্তানের কাছে তিনিই সবচেয়ে প্রিয়। হিন্দু ধর্মে মা সন্তানের কাছে দেবীর মতোই। আর শুধু হিন্দু ধর্মে কেন? ইসলামে ‘মায়ের পায়ের নীচে বেহেস্ত’ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। খ্রিষ্টধর্মেও রয়েছে ‘মাদার মেরির’ বিশেষ তাৎপর্য। সেই মায়ের জন্য কিনা বছরে একটা মাত্র দিন! এভাবে ভাবলে দিবসটি ঘিরে অবশ্য একটা তাচ্ছিল্য ভাব সামনে আসে। তবে এভাবে ভাবা আসলে ঠিক নয়। অন্তত একটা দিন তো মায়ের কথা, তাঁর সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার কথা ভাবেন বিশ্ববাসী।

আবার অনেকেই বলেন, লোকদেখানো, অহেতুক আড়ম্বর, ঘটা করে কিছু করা তেমন ভালো লাগে না, বিশেষ করে সেটা যদি নিজের জন্মদাত্রী মায়ের জন্য হয়। আজকাল কত ছেলে-মেয়ে, পুত্রবধুকে দেখা যায় মায়েদের অযত্ন-অবহেলা করতে। তখন খুব খারাপ লাগে। যে মা-বাবা আমাদের আঙুল ধরে হাঁটতে শিখিয়েছে, কথা বলতে শিখিয়েছে, মুখে তুলে দিয়েছে অন্ন, সেই বাবা-মা বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে, তাঁদের হাতে গড়া সন্তানটি ছোটবেলার কথা ভুলে বাবা-মা কে পাঠিয়ে দিচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে।

আপনি হয়তো বলবেন পশ্চিমা দেশগুলোর কথা। কিন্তু সেসব দেশে সমাজব্যবস্থা ভিন্ন, রীতি-নীতিও আলাদা। সামাজিক নিরাপত্তাও পাশ্চাত্য দেশগুলিতে অনেক বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোতে বৃদ্ধ মা বাবারা সরকারি ভাতাও পেয়ে থাকেন। কিন্তু, আমাদের দেশে? আমরা তো দেশকেও ‘মা’ বলে ডাকি। দেশের মাটিকে মা জ্ঞান করে তাঁর পায়ে মাথা ঠেকাই আমরা। বড় গলায় গর্ব করি দেশমাতৃকার জন্য।

কিন্তু নিজের মায়ের বেলায়? বেঁচে থাকতে কতদিন, কতবার তাঁকে আদর করে বলেছি ‘মা, তোমায় ভালোবাসি’? জীবনচক্রের ঘূর্ণন শুরু হয় সেই জন্মলগ্ন থেকে। এরপর ছোটবেলা কাটিয়ে উঠে ক্রমে কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য। সবশেষে অনিবার্য মৃত্যু। এই ধ্রুব সত্যের চক্রটি সবার জন্য। তাই যতদিন ‘মা’ বেঁচে আছেন, ততদিন প্রতিটি দিনই হয়ে উঠুক ‘মা দিবস’।

জগতের সকল মা ভাল থাকুন।

:

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অনুসরণ করুন:
সাময়িকী, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!