ভারতে জাতীয় সংবিধান দিবস পালনের তাৎপর্য

পাভেল আমান
পাভেল আমান
4 মিনিটে পড়ুন

কোন একটি দেশ তার শাসন ব্যবস্থা রাজনীতি অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুই পরিচালিত হয় সেই দেশের সংবিধানকে কেন্দ্র করে। যেখানে মানুষের সাম্য অধিকার নাগরিকতার সুযোগ সুবিধা সমস্ত কিছুই লিপিবদ্ধ আছে। এ কথা বলা যেতে পারে সংবিধানই একটা দেশের চালিকাশক্তি। সেই প্রাসঙ্গিকতার নিরিখে ভারতীয় গণতন্ত্রে আজকের দিনটি যতটা পবিত্র, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাসমূহের আত্মা যদি কোনও কিছুকে বলা যায়, তা হল আমাদের সংবিধান। এই আত্মাকে, এই লিখিত গ্রন্থকে ৭৩ বছর আগে স্বীকার করে নেওয়া অত্যন্ত ঐতিহাসিকমুহূর্ত। এই দিনে আমরা একটি রাষ্ট্র হিসাবে ঠিক করেছিলাম যে, এখন আমাদের পরবর্তীলক্ষ্য সাধনে কোন্‌ নির্দেশাবলী মেনে, কোন্‌ নিয়মাবলী মেনে এগোতে হবে! সেইনিয়মাবলী, সেই সংবিধান যার প্রতিটি শব্দ আমাদের জন্য পবিত্র ও পুজনীয়। যে দিনটি ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল সেই দিনটিকে স্মরণ করার জন্য ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস হিসাবে পালন করা হয়।

সংবিধান গৃহীত হয় ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে। এটি ২৬ জানুয়ারী ১৯৫০ সালে কার্যকর হয়েছিল। ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে সংবিধান এবং গণপরিষদ মিলিত হয়েছিল|উচ্চস্বরে ও দীর্ঘায়িত সমর্থনে রাষ্ট্রপতির সংবিধান পাসকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। গণপরিষদের সভাপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ সংবিধান পাশ করার প্রস্তাব দেওয়ার আগে তিনি বক্তৃতা ও মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন মনে রাখবে যে এটি একটি অনন্য বিজয় যার রাস্তা আমরা জাতির পিতার দেখানো অনন্য পদ্ধতিতে অর্জন করেছি এবং আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা রক্ষা করা এবং এটি সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য ফলপ্রসূ করে তোলা আমাদের উপর নির্ভর করে। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ভারত স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার ঠিক এক বছর আগে ১৯৪৬ সালে লেখা হয় ভারতের সংবিধান। যা এককথায় ‘সুপ্রিম রুল বুক’, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। সংবিধান গণপরিষদ দ্বারা লিখিত, যার ড্রাফটিং কমিটির প্রধান ছিলেন বি.আর আম্বেদকর। ১৯৪৯ সালের আজকের দিনেই সংবিধান গ্রহন করেন গণপরিষদ। যদিও, আইনত তা বলবৎ হয়েছিল পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারী। সেই বছর থেকেই ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস বা জাতীয় আইন দিবস পালিত হয়। ৯ ই নভেম্বর ২০১৫ সালে ডঃ বি আর আম্বেদকরের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীর বছরব্যাপী উদযাপনের সময় ভারত সরকার ২৬ শে নভেম্বরকে সংবিধান দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। সংবিধান পাশ হওয়ার পর প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী যোদ্ধা, অরুণা আসাফ আলী এবং প্রয়াত স্বাধীনতার বোন পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “জন-গণ-মন আধিনায়ক জয় হে, ভারত ভাগ্য বিধাতা” জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে গণপরিষদের ঐতিহাসিক অধিবেশন শেষ হয়। আগে এই দিনটি আইন দিবস হিসেবে পালিত হত। সংবিধানের গুরুত্ব ছড়িয়ে দিতে এবং আম্বেদকরের চিন্তাভাবনা ও ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ২৬ নভেম্বর দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছিল। এখন প্রশ্ন বর্তমান বিজেপি শাসিত ভারতবর্ষে সাংবিধানিক অধিকার কি রক্ষিত হয়েছে, সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পালিত হয়েছে, সংবিধানের গুরুত্ব প্রাসঙ্গিকতা ও তাৎপর্য কি ভারতীয়দের মধ্যে প্রসারিত হয়েছে? সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্পে ভারতের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আজ জর্জরিত সাংবিধানিক অধিকার ভূলণ্ঠিত। শুধুমাত্র ভোট বৈতরণী পার করতে রাজনীতি আজ মেরুকরণের পঙ্কিলতায় আবদ্ধ। ভারতীয় সংবিধান দিবস সেদিনই প্রাসঙ্গিক কার্যকরী ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে যেদিন আসমুদ্র হিমাচল ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ তাদের সাংবিধানিক অধিকারগুলো প্রাপ্ত হবে। প্রতিটি মানুষ যেদিন ভারতীয় হয়ে সংবিধানকে উপলব্ধি করতে পারবে। রাজনীতি যেদিন সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হয়ে হয়ে উঠবে মানবিক, গণতন্ত্রের অনুসারী ও সংবিধানকেন্দ্রিক। জাতীয় সংবিধান দিবস সেদিন হয়ে উঠবে প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছেই তাৎপর্যপূর্ণ।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ইংরেজিতে স্নাতক। পেশা শিক্ষকতা। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখির প্রতি আকর্ষণ। বিশেষত কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ বিভিন্ন ফিচার লিখতে অভ্যস্ত। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় উদার আকাশ পত্রিকা। এরপর শব্দসাঁকো, জিলিপি, শারদীয়া আগন্তুক, আলেখ্য, আখর কথা, পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত। আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রতিদিন, উত্তরের সারাদিন, পুবের কলম, দিনদর্পন, সাত সকাল প্রভৃতি পত্রিকায় প্রবন্ধ চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এখনো ভালো লাগে কলমটাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীলতায় ভেসে গিয়ে ভাব জগতে বিচরণ করে কিছু না কিছু লিখতে। লেখালেখিটা অনেকটা জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। ক্রমশই অনুভূত লেখনিই আমার জীবনের অবশ্যিক অভিব্যক্তি।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!