ধর্মবাজ বনাম মুক্তবাজ: জাত পাত যার যার; আত্মদর্শন সবার পর্ব-৫

বলন কাঁইজি
বলন কাঁইজি
19 মিনিটে পড়ুন

ধর্ম/ Ism (ইজাম)/ ‘دين’ (দীন)

এটি শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘স্বভাব’ পরিবারের অন্যতম ‘রূপক পরিভাষ’। এর মূলক ‘স্বভাব’, উপমান পরিভাষা ‘জাত’, চারিত্রিক পরিভাষা ‘নিসর্গ’ ও ছদ্মনাম পরিভাষা ‘প্রকৃতি’।

ধর্ম (রূপ) বি. স্বভাব, প্রকৃতি, গুণ, পুণ্য, মনুষ্যত্ব, নিয়ম, রীতি, সাধনপথ, সতিত্ব, সৎকর্ম, পুণ্যকর্ম, সদাচার, কর্তব্যকর্ম, প্রত্যেক জীব বা বস্তুর নিজস্ব গুণ, Ism, ‘دين’ (দীন), Attribute, Trait, ‘شميلة’ (শামিলা), ‘المهاراة’ (মাহারাত) (প্র) ১. মানুষের কর্তব্য অকর্তব্য সম্বন্ধে জ্ঞান ২. বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শাস্ত্র নির্দিষ্ট বিধি-বিধান ৩. শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন ও সমাজ শাসনমূলক মতবাদ ৪. সাধুশাস্ত্র হতে উৎপত্তি যুগোপযোগী সামাজিক শাসনমূলক সংস্কার বিশেষ (দেপ্র) এটি শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘স্বভাব’পরিবারের ‘রূপক পরিভাষা’ ও শ্বরবিজ্ঞানের একটি প্রতীতি বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. কোনো বস্তুর গুণাগুণকে ধর্ম বলা হয় ২. নৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ সংস্কারকৃত মতবাদকে ধর্ম বলা হয় (ছপ) প্রকৃতি (চাপ) নিসর্গ (উপ) জাত (রূ) ধর্ম (দেত) স্বভাব।


প্রপক (Extensive)

১. ব্র‏হ্মার দক্ষিণ অঙ্গ হতে ধর্ম উৎপন্ন হয়। বরাহপুরাণে কথিত আছে যে; ব্র‏হ্মা সৃষ্টি করার মানসে যখন গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হন, তখন তাঁর দক্ষিণ অঙ্গ হতে এক পুরুষের (ধর্ম) আবির্ভাব ঘটে। ব্র‏হ্মা তখন তাঁকে বলেন- “তুমি চতুষ্পদ ও বৃষভাকৃতি। তুমি বড় হয়ে প্রজাপালন করো।” তখন ধর্ম সত্যযুগে চতুষ্পদ, ত্রেতায় ত্রিপদ, দ্বাপরে দ্বিপদ এবং কলিতে একপদ হয়ে ব্রাহ্মণদের সম্পূর্ণরূপে, ক্ষত্রিয়দের তিনভাগ, বৈশ্যদের দু’ভাগ ও শূদ্রদের একভাগ দিয়ে রক্ষা ও পালন করতে আরম্ভ করেন। গুণ, দ্রব্য, ক্রিয়া ও জাতি এ চারটি সাম্প্রদায়িক মতবাদের পদ। বেদে এঁর নাম তৃশৃঙ্গ। এঁর মাথা দুটি ও হাত সাতটি। বামনপুরাণ মতে ধর্মের স্ত্রী অহিংসা। এঁর গর্ভে চারটি পুত্র জন্মগ্রহণ করে যথা- ১. সন্যকার ২. সনাতন ৩. সনক ও ৪. সনন্দ। অন্যান্য পুরাণে এঁরা ব্র‏হ্মার মানসপুত্র বলে কথিত আছে।
২. মহাতেজস্বী একজন রাজা। এঁর কন্যার নাম ধর্মব্রতা।
Orthodoxy বি. সনাতন, অনন্ত, চিরন্তন, চিরস্থায়ী, বিশ্বজনীন, শাশ্বত, সার্বজনীন, সর্বজনবিদিত, Catholic, eternal, never-dying, ‘أرثوذكسي’(উর্সুজুক্সি), ‘الأرثوذكس’ (আলউর্সুজুক্স) {ই}
ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (A highly important quotations of Ism)
“সবাই কী আর হবেরে মন, ধর্মপরায়ণ, যার যার কর্ম সে সে করে, তোমার বলা অকারণ”(পবিত্র লালন- ৯১৫/১)।
ধর্মের কয়েকটি সাধারণ উদ্ধৃতি (Some ordinary quotations of Ism)
১. “কোন্ সাধনে শমনজ্বালা যায়, ধর্মাধর্ম বেদের মর্ম, শমনের অধিকার তায়।”(পবিত্র লালন- ৩৬৯/১)।
২. “ধর্মবাজার মিলাইছে নিরঞ্জনে, এক কানায় এক বোবায়, ভবের হাটে করে বিকিকিনে।”(পবিত্র লালন- ৫৬৭/১)।
৩. “ধর্মাধর্ম নাই যে বিচার, কৃষ্ণসুখে সুখ গোপীকার, হয় যে নিরন্তরি, তাইতো দয়াময়- গোপীরে সদাই, মনের ভ্রমে জানতে নারি।”(পবিত্র লালন- ৫৫৮/৩)।
৪. “ধর্মাধর্ম বলতে নাই, শুধু প্রেমের গান গায়, নাই লজ্জা ভয়, জাতির বোল রাখল না সে, সেতো করল একাকারময়।”(পবিত্র লালন- ৪২৩/২)।
৫. “ধর্মাধর্ম সব নিজের কাছে, জানা যায় শাস্ত্র যেচে, লালন কয় আমার ভুল হয়েছে, ভেবে দেখি তাই।”(পবিত্র লালন- ৬৩৭/৪)।
৬. “না মানে সে ধর্মাধর্ম, যার হয়েছে বিচার সাম্য, লালন কয় সাঁই মহামান্য, তবে মানবকরণ সারা।”(পবিত্র লালন- ১৮৫/৪)।
৭. “প্রেম কী সামান্যেতে রাখা যায়, প্রেমে মজলে ধর্মাধর্ম ছাড়তে হয়।” (পবিত্র লালন- ৬৪৩/১)।
৮. “প্রেম পিরিতির এমনই ধারা, এক প্রেমে দু’জন মরা, ধর্মাধর্ম চায় না তারা, লালন বলে প্রেমের রীতি তাই।”(পবিত্র লালন- ৬৪৩/৪)।
৯. “বড়াই করে কপাল পোড়া, বুঝে না ধর্মীয় মতবাদের আগাগোড়া”(বলন তত্ত্বাবলী- ২০৪)।
১০. “ধর্মীয় মতবাদ গোত্র জাতির, তুলবে না কেউ জিকির, কেন্দে বলে লালন ফকির, কেবা দেখিয়ে দিবে” (পবিত্র লালন- ২২৮/৪)।
১১. “সবল দেবধর্ম আমার বৈষ্টমী, ইষ্ট ছাড়া কষ্ট পাই, এঁটে দেয়া নষ্টামি।”(পবিত্র লালন- ৯১২/১)।
ধর্মের সংজ্ঞা (Definition of Ism)
কোনকিছুর গুণাগুণকে স্বভাব বা ধর্ম বলে।
ধর্মের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theosophical definition of Ism)
নৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ সংস্কারকৃত মতবাদকে ধর্ম বলে।
ধর্মের প্রকারভেদ (Classification of Ism)
ধর্ম দুই প্রকার। যথা- ১.সনাতনী ধর্ম ও ২.কৃত্রিমত ধর্ম।
১. সনাতনী ধর্ম (Orthodoxy Ism)
প্রকৃতির নিয়মাবলীকে সনাতনী ধর্ম বলে।
২. কৃত্রিম ধর্ম (Pretended Ism)
সামাজিক, মানবিক, প্রাকৃতিক, দার্শনিক ও নৈতিকতার ওপর নির্মিত মনগড়া সংস্কারাদিকে কৃত্রিম ধর্ম বলে।

ধর্মের পরিচয়

এটি শ্বরবিজ্ঞানের বৈক্তিক-বৈশিষ্ট্য সারণির ‘স্বভাব’পরিবারের অধীন একটি ‘রূপক পরিভাষা’বিশেষ। কোনো বস্তুর গুণাগুণকে ধর্ম বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে ধর্ম বলে পুরাণের একটি চরিত্র ভিন্ন কিছুই নেই। ধর্ম নামে যা আছে তা হলো সাম্প্রদায়িক মতবাদ। সাম্প্রদায়িক মতবাদাদিকেই সাধারণমানুষ ধর্ম নামে ডাকাডাকি করে থাকেন। সামাজিক, মানবিক, প্রাকৃতিক, দার্শনিক ও নৈতিকতার ওপর নির্মিত মনগড়া সংস্কাররূপ এসব সাম্প্রদায়িক মতবাদ সারাবিশ্বে প্রায় ২,৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। যেমন- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্ট ও ইসলাম। এবং প্রত্যেক সাম্প্রদায়িক মতবাদের অনুকূলে আবার রয়েছে কয়েক সহস্র করে পরম্পরা মতবাদ। সাম্প্রদায়িক মতবাদকে ইংরেজিতে Religion (রিলিজন) এবং আরবিতে ‘ﺪﻴﻦ’ (দিন) বলা হয়।

সাম্প্রদায়িক মতবাদের পরিচয়

পূর্বকাল হতেই দেখা যায় একদল লোক সাম্প্রদায়িক মতবাদকে অত্যধিক প্রাধান্য দেয় আবার একদল লোক একেবারেই গ্রহণ করে না। যারা কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদকে প্রাধান্য দেয় না তারা প্রায়ই বলে থাকে সাম্প্রদায়িক মতবাদ বলতে কিছুই নেই। তারা এও বলে যে- “Religion is nothing only blindly faithful” অর্থ- “সাম্প্রদায়িক মতবাদ কিছুই না কেবল অন্ধবিশ্বাস।” প্রকৃত ব্যাপারটিও তাই। সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ব্যক্তি বিশেষের মনগড়া মতামতকেই ধর্ম বলা হয়। আর এ ধর্মকেই সাম্প্রদায়িক মতবাদ বলা হয়। তবে এসব সাম্প্রদায়িক মতবাদ আধুনিকযুগের পূর্বে পরিবার ও সমাজে শান্তি-শৃংখলা বিধানের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রয়োজন ছিল। তখন রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল না। তাই সাম্প্রদায়িক মতবাদ অনেক উপকারী ছিল। কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত থাকায় মানুষ আর অন্ধবিশ্বাসের অধীনতা স্বীকার করতে চায় না। এ ছাড়াও বর্তমানে একই রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক বিধান ও রাষ্ট্রীয় বিধান উভয় একসঙ্গে চালু রাখা কোনমতেই সম্ভব নয়। যে কোনো একটি বিধান মান্য করা সবার একান্ত প্রয়োজন। উল্লেখ্য যে; সাম্প্রদায়িক বিধানাদি প্রায় রূপকার্থে নির্মিত কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিধানাদি বাস্তবভাবে নির্মিত। এজন্য; সাম্প্রদায়িক বিধান কখনই রাষ্ট্রীয় বিধানের তুল্য হতে পারে না। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক বিধান কেবল একটি গোত্রের জন্য নির্মিত কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিধান রাষ্ট্রের সর্ব শ্রেণির জনগণের জন্যই সমান অধিকার নিশ্চিত রেখে নির্মিত। বিগত আদিমযুগ ও মধ্যযুগেই সাম্প্রদায়িক বিধানের অধিক অধিক প্রয়োজন ও গুরুত্ব ছিল। এর অন্যতম কারণ ছিল তখন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় বিধান কোনটাই ছিল না। আধুনিক যুগের প্রথমদিক হতে রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্রীয় বিধান নির্মাণ করা আরম্ভ হয়। তখন হতেই সাম্প্রদায়িক বিধানের প্রয়োজনও ক্রমে ক্রমে শিথিল হতে আরম্ভ করে। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই সাম্প্রদায়িক বিধানের তেমন ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না।

অন্ধবিশ্বাসের বিষবৃক্ষ রোপণ

সর্ব প্রথমে শ্বরবিজ্ঞানের সূত্রাদি দ্বারা বিশ্ববিখ্যাত একজন শ্বরবিজ্ঞানী কর্তৃক একটি পৌরাণিক সাহিত্য নির্মিত হয়। তারপর কয়েক শত বছর বা কয়েক শতাব্দি অতিবাহিত হয়। অতঃপর আধ্যাত্মিক জ্ঞান বা আত্মতত্ত্ব জ্ঞানহীন পণ্ডিতরা অতিব পুণ্যের কাজ মনে করে উক্ত পৌরাণিক সাহিত্যটির আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা আত্মতত্ত্বভিত্তিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ব্যতীত কেবল প্রকৃতিনির্ভর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রণয়ন করা আরম্ভ করে। অন্ধবিশ্বাসপ্রবণ মূঢ় ব্যক্তিরা দিব্যজ্ঞানের দৈন্যতার জন্য পৌরাণিক সাহিত্যের প্রপকাদির মধ্যে ব্যবহৃত দৈবিকা বা প্রতীতিদের হঠাৎ করে ঐশিদূত বা দৈবদূত বা ঐশিমহামানব বা স্বর্গীয়াবতার বলে আখ্যায়িত করতে আরম্ভ করে। তারপর নীতি নৈতিকতাপূর্ণ ও আত্মশুদ্ধির পরম শিক্ষামূলক প্রপকাদিকে চমৎকার বলে এবং দৈবিকা বা প্রতীতিদের চরিত্রকে বাস্তব জীবনাদর্শ বলে প্রচার প্রসার করতে বা লেখালেখি করতে আরম্ভ করে।

পরবর্তীকালে তার পাঠক বা অনুসারীরাও প্রপকাদির মধ্যে চরিত্ররূপে ব্যবহৃত প্রতীতিদেরকে স্বর্গীয়দূত, প্রপকাদিকে স্বর্গীয়দূতগণের ঘটনাবহুল চমৎকার এবং প্রপকাদির মধ্যে বর্ণিত ঘটনাদিকে প্রতীতিগণের বাস্তব জীবনাদর্শ বলে অন্ধবিশ্বাস করতে আরম্ভ করে। এভাবেই সর্ব প্রথম অন্ধবিশ্বাসরূপ বিষবৃক্ষের বীজ রোপিত হয়। অতঃপর দৈবিকা বা প্রতীতিগণের প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে তার অনুসারীরা প্রপকাদির প্রচার ও প্রসার করা অনেক পুণ্যের কাজ বলে মনে করে। এভাবেই সুসংগঠিত হতে থাকে একটি সম্প্রদায়। কয়েক শতাব্দি পরে এটি একটি বড় দলে পরিণত হয়ে যায়। সাথে সাথে সঞ্চিত হতে থাকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নীতিমালা। অতঃপর থরে-বিথরে সঞ্চিত নীতিমালা একত্রিত করে গড়ে উঠে একটি সাম্প্রদায়িক মতবাদ। অভিনবরূপে নির্মিত সাম্প্রদায়িক মতবাদ ও সাম্প্রদায়িক নীতিমালা গ্রহণকারী সাম্প্রদায়িক অনুসারীর সংখ্যাও দিনের পরদিন বাড়তে থাকে।

একটি পৌরাণিক সাহিত্য নির্মাণের কয়েক শতাব্দি পর এভাবেই ঐ সাহিত্যটির ওপর নির্ভর করে এক বা একাধিক সাম্প্রদায়িক মতবাদ বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রদায় আত্মপ্রকাশ করতে থাকে। অন্ধবিশ্বাসরূপ এ বিষবৃক্ষের ডালপালা যুগে যুগে চারদিকে কেবল বাড়তেই থাকে। বিষবৃক্ষরূপ এ দ্রুতগামী ঘোড়াটি একদিন সারাবিশ্বে পরিভ্রমণ করতে সক্ষম হয়। এভাবেই অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত সাম্প্রদায়িক মতবাদরূপ বিষবৃক্ষের ছায়া একসময় সারাবিশ্বব্যাপী পতিত হয়। মানবসভ্যতার ঊনবিংশ শতাব্দিতে দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা এ অন্ধবিশ্বাসের ঘোড়ার পিঠে চড়েই অতিক্রম করেছেন। এ দ্রুতগামী ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেই তারা তাদের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার অন্বেষণ করছিলেন। গত ঊনবিংশ শতাব্দির পূর্বে দীর্ঘ আড়াই সহস্র বছর এভাবেই অতিবাহিত হয়েছিল। তখন অধিকাংশ দার্শনিক ও বিজ্ঞানী ধারণা করতেন যে; সূর্য পৃথিবীর চারদিকে পরিভ্রমণ করে। কিন্তু আজ অন্ধবিশ্বাসের সে লৌহনিগড় কেটে ও অন্ধবিশ্বাসের কাল্পনিক ঘোড়াটিকে হত্যা করে আধুনিক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে; সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে না বরং পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘুরে।

সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাণ পদ্ধতি

বিশ্বের যে কোনো একটি পৌরাণিক সাহিত্যকে কেন্দ্র করে একটি সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাণ করতে হলে এবং তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে একজন সুবিজ্ঞ সাম্প্রদায়িক মতবাদীকে উক্ত পৌরাণিক সাহিত্যটি হাতে নিয়ে অবশ্যই বলতে হবে যে এসব কোনো মানুষের নির্মিত বাণী নয় বরং এসব স্বয়ং স্রষ্টার পক্ষ হতে মহামানবের নিকট অবতীর্ণ। তাকে আরও বলতে হবে যে; কেবল স্রষ্টার পক্ষ হতে প্রতীতির নিকট যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছিল তিনি কেবল তা-ই প্রকাশ করে ছিলেন। এ পবিত্র গ্রন্থের মধ্যে মানুষের নির্মিত বা রচিত কোনো বাণী নেই। কারণ মানুষের নির্মিত বাণী এমন হতে পারে না। আর মানুষ যদি এরূপ বাণী রচনা করতে পারতেন, তবে বিশ্বে অনেকেই এরূপ বাণী নির্মাণ করে দেখাতেন। কেউ শতবছর চেষ্টা করলেও এরূপ একটি বাণী নির্মাণ বা রচনা করতে অবশ্যই পারবেন না। এবার সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাতা সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির উচিত যে সর্ব প্রথমে উক্ত পৌরাণিক সাহিত্যের মৌলিক (The basic elements of Theology.) যথা- ১. সৃষ্টিকর্তা ২. পালনকর্তা ৩. সংহারকর্তা ৪. বর্থ্য ৫. স্বর্গীয়দূত (ঐশিদূত) ৬. আদিমানব-আদিমানবী ৭. বসিধ (১-৩) ৮. পাপ-পুণ্য ৯. স্বর্গ-নরক ১০. বিচার ও ১১. মুক্তি এ এগার (১১) টি সদস্যের জীবনযাপন প্রণালি, আকার প্রকার, আয়তন অবস্থান, আবাস নিবাস, বংশসারণী, সংখ্যা পরিমাণ ও কার্যক্রম যেক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য তা নির্ধারণ করা। অতঃপর স্রষ্টাদের সম্মেলন ও দৈব সম্মেলন দ্বারা প্রয়োজনীয় সংস্কার করা আরম্ভ করা।

এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক পণ্ডিতকে সদস্যদের জীবনী, বংশ, জন্মস্থান, অবস্থান ও আকার প্রকার নির্মাণের সময় অবশ্যই সাতন্ত্রতা রক্ষা করতে হবে। যাতে অন্যান্য সাম্প্রদায়িক মতবাদের সদস্যদের ছদ্মনাম বা উপমাদির সাথে মিলে না যায়। একটি নতুন সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাণের ক্ষেত্রে তার অভিনবত্ব অটুট রাখার জন্য নিচে সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাণের একটি অভিনব মৌলিকসদস্য নির্ঘণ্ট তুলে ধরা হলো।

সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাণের মৌলিক সদস্য নির্ঘণ্ট

শ্বরবিজ্ঞানে বর্ণিত নরদেহের আদিকারণকে (শুক্র) ধরা হলো আদিমানব এবং নারীদেহের আদিকারণকে (রজ) ধরা হলো আদিমানবী। মুখের কথাকে ঐশিসাংবাদিক এক (১) এবং নারীদের রজকে ঐশিসাংবাদিক দুই (২) ধরে সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাণ করা হলো। মুখের কথা, দেহ ও মনের দ্বারা পরিবার, সংসার ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় বলে এ তিনটিকে স্বর্গ (১. বৈচন, ২. দৈহিকা ও ৩. মৈনাক) ধরা হলো এবং বাচালতা, অপকর্ম ও মুখবন্ধ করে থাকা হতে পরিবার, সংসার ও সমাজে তীব্র অশান্তি সৃষ্টি হয় বলে এ তিনটিকে নরক (১. বৈচাল, ২. কৈকাজ ও ৩. গোমড়া) ধরা হলো। অতঃপর দেহধামের বিভিন্ন সদস্য যেমন দেহ, আত্মা, মন, জ্ঞান, ইন্দ্রিয়াদি, রিপু, রুদ্র, মন্দা, দশা ও ভালা মাত্রিকার সদস্যদের ঐশিকর্মী বা দেবকমী (প্রতীতি, দৈবিকা, জ্যোতিকা) ধরা হলো। এছাড়াও; অন্যান্য সদস্যদের শ্বরবিজ্ঞানে বর্ণিত অর্থের মতোই রেখে দেওয়া হয়।
১. সৃষ্টিকর্তা = কাঁই
২. পালনকর্তা = সাঁই
৩. সংহারকর্তা = যম
৪. দৈবকর্মী = প্রতীতি, দৈবিকা, জ্যোতিকা
৫. সাংবাদিক (১) (মুখের কথা) = বলন
(২) (নারীদের রজ) = বসিধ
(৩) (কামরস) = উষ্ণজল
৬. বর্থ্য (ব্যত্যয়কারী) = বর্থ্য
৭. আদিমানব = জনক
৮. আদিমানবী = জননী
৯. মুক্তি = অখণ্ডতা
১০. স্বর্গ = স্বর্গ
স্বর্গের পরিমাণ = ৩টি
স্বর্গের ছদ্মনাম = ১.বৈচন, ২.দৈহিকা ও ৩.মৈনাক
১১. নরক = ৩টি
নরকের পরিমাণ = ১. বৈচাল, ২. কৈকাজ ও ৩. গোমড়া

এবার ওপরোক্ত বিষয়বস্তু দ্বারা অত্যন্ত অভিনবরূপে পৌরাণিক কাহিনী দ্বারা একটি গ্রন্থ নির্মাণ করি। অতঃপর উক্ত গ্রন্থের মধ্যে ব্যবহৃত ১. কাঁই ২. সাঁই ৩. যম ৪. প্রতীতি ৫. বলন ৬. বর্থ্য ৭. জনক ৮. জননী ৯. অখণ্ডতা ১০. স্বর্গ ও ১১. নরক- এ ১১ টি সত্তার সম্পূর্ণ অভিনব ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো। অতঃপর পৌরাণিক সাহিত্যে বর্ণিত পৌরাণিক চরিত্রগুলোর রূপক জীবনী নির্মাণ করা হলো। এবার এ নতুন সাম্প্রদায়িক মতবাদটি সার্বজনীন বা চিরস্থায়ী করার জন্য গ্রন্থটির মধ্যে ব্যবহৃত কঠিন ও দুর্বোধ্য শব্দগুলোর ও নতুন নতুন পরিভাষাগুলোর অভিনব ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো। এবার নতুন একটি সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাণ করা শেষ হলো। এবার শ্বরবিজ্ঞানে সারগর্ভ ও শিক্ষামূলক চমৎকারগুলো লোকসমাজে বা পথেঘাটে পুনঃপুন প্রচার-প্রসার করতে আরম্ভ করি। ফলে অত্র অঞ্চলের লোকজন উক্ত চমৎকারগুলোর দ্বারা বর্ণিত প্রতীতি ও শিক্ষামূলক উপাখ্যানগুলোর প্রতি ক্রমে ক্রমে দুর্বল হতে থাকবে ও সেসব বিশ্বাস করতে থাকবে এবং লৌকিকাদির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকবে। সাম্প্রদায়িক অন্ধবিশ্বাসের লৌহ নিগড়ে একবার মানুষকে আবদ্ধ বা বশীভূত করতে পারলেই সে সাম্প্রদায়িক সংস্কার তার ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় অকাতরে মাথা পেতে নিতে বাধ্য হয়। সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাণ শিল্পটিও অতি প্রাচীন। তবে এরও আরও অনেক প্রাচীন হলো পৌরাণিক সাহিত্য নির্মাণ শিল্প। এজন্য; পৌরাণিক সাহিত্য শিল্পকে মানব সভ্যতার প্রথমশিল্প বা ‘আদিশিল্প’ বলা হয়।

এ শিল্পটির নাম সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাণ শিল্প। তবে বিশিষ্ট সাম্প্রদায়িক মতবাদী পণ্ডিতগণের অভাবে বর্তমানে এ শিল্পটি মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। নতুন কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদ নির্মাণ করা হলে বা প্রতিষ্ঠা করা হলে, একসঙ্গে এখানে অনেক লোকের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে একদিকে ভুয়া মতবাদকর্মও করা হয় অন্যদিকে; কিছু অজ্ঞ ও মূর্খ সাম্প্রদায়িক অনুসারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা বা রুটিমুটিরও ব্যবস্থা হয়। আবার কিছু কিছু অজ্ঞ ও মূর্খ লোকের মৌখিকভাবে সাম্প্রদায়িক মতবাদ প্রচারের মাধ্যমেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। এছাড়াও; কিছু লেখক, গবেষক, মতবাদ বিশারদ, সাম্প্রদায়িক পরিভাষাগুলোর বৈখ্যিক ও টৈকিকদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আবার পৌরাণিক লৌকিকাদির আলোচনার দ্বারাও অনেক গায়ক-বক্তার কর্মসংস্থানের উত্তম ব্যবস্থা হয়। কোনো সাম্প্রদায়িক পণ্ডিত একবার মাত্র যুক্তি, দর্শন ও বিজ্ঞানের সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর সাম্প্রদায়িক মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে, তা আর ঠেকায় কে? সাম্প্রদায়িক মতবাদ এরূপ অবস্থায় উন্নীত হলে তা কখনই বিলুপ্ত হয় না। অত্যন্ত সহজ-সরল ও শ্রমহীন এবং আরামে জীবিকা নির্বাহের অফুরন্ত সুযোগ থাকায় সমাজের অল্পজ্ঞানী বা খুষ্কজ্ঞানীরা ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় উক্ত সাম্প্রদায়িক দর্শন গ্রহণ করতে থাকে এবং স্বস্ব প্রচেষ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে জনমত সৃষ্টি করার দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। ফলে সাম্প্রদায়িক দর্শনের প্রচার ও প্রসার দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে।

পরিশেষে বলা যায় পদার্থের গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে ধর্ম বলা হয়। যেমন আগুনের ধর্ম দাহ্য করা, চুম্বকের ধর্ম আকর্ষণ করা, কম্পাসের ধর্ম দিকদর্শন করা, জলের ধর্ম নিম্নগমন করা ও বাতাসের ধর্ম উড়ানো ইত্যাদি। কিন্তু বাংভারতীয় উপমহাদেশে যাকে ধর্ম বলা হয়/ হচ্ছে সেগুলো আদৌ ধর্ম নয় বরং সেগুলো হলো সাম্প্রদায়িক মতবাদ বা সাম্প্রদায়িক মতবাদ। ধর্ম চিরন্তন, শাশ্বত, সর্বকালীন ও সার্বজনীন। কিন্তু সাম্প্রদায়িক মতবাদ বা সাম্প্রদায়িক মতবাদ চির আপেক্ষিক। যেমন বঙ্গদেশে পূর্বকালে হিন্দু মতবাদ ছিল। সবাই ছিলাম হিন্দু। বর্তমানে অধিকাংশই মুসলমান। আবার কিছু দিন পর আজকের ইসলামী মতবাদও হয়তো থাকবে না। এখানকার অধিকাংশ লোক হয়তো আবার গ্রহণ করবে লালন কিংবা লোকনাথ মতবাদ। তাই আসুন আমরা না জেনে ও না বুঝে ধর্মকে মতবাদ এবং মতবাদকে ধর্ম বলা হতে বিরত থাকি।

সাম্প্রদায়িক গ্রন্থকে (ধর্মগ্রন্থ) ঐশিগ্রন্থ বলার কারণ কী?

সাধারণত; ঐশিগ্রন্থ বলে কোনো গ্রন্থ নেই। তবে কেবল মানব দেহকেই ঐশি গ্রন্থ বলা যায়। যেহেতু; দেহ জঠররূপ ঐশিধাম হতে অবতরণ করে সেহেতু দেহকে ঐশিগ্রন্থ বলা যায়। আর আদিকাল হতে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সব মানুষ কেবল দেহকেই পাঠ করে চলেছে। মানব দেহের রোগ পড়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও দেহের রেখা ও তিলক পড়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে জ্যোতির বিজ্ঞান। এছাড়াও; যোগ, ইয়োগা, অ্যাকুপ্রেসার ও ধ্যান সবই কেবল দেহকে পাঠন-পঠন বিদ্যা। তবে সাম্প্রদায়িকরা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যই মানবরচিত শ্বরবিজ্ঞানকে ঐশিগ্রন্থ বলে প্রচার প্রসার করে থাকে। এর অন্যতম কারণ হলো; সাধারণত; মানব রচিত পুস্তক-পুস্তিকা সাধারণ মানুষ মেনে নিতে চায় না। কিন্তু ঐশিগ্রন্থ বললে সাধারণ মানুষ দ্রুত মেনে নিতে চায়। সারা বিশ্বের সর্ব শ্রেণির সাম্প্রদায়িকরা এ কৌশলটিই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে থাকে। কার্যত দেখা যায়; বিশ্বের কোনো সম্প্রদায়ই স্বস্ব সাম্প্রদায়িক গ্রন্থকে মানব রচিত বা মানব নির্মিত বলতে চায় না। যদি হিন্দুদের প্রশ্ন করা হয়; তবে তারা বলবে তাদের গীতা স্বয়ং মহামতি শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী। অন্যদিকে; যদি বৌদ্ধদের প্রশ্ন করা হয়; তারা বলবে ত্রিপিটক স্বয়ং বুদ্ধদেবের বাণী। আর বুদ্ধদেব স্বয়ং ব্রহ্মা প্রেরিত মহামানব। আবার যদি মুসলমানদের প্রশ্ন করা হয়; তারা বলবে পবিত্র কুরান স্বয়ং আল্লাহর বাণী। যদি ইহুদিদের প্রশ্ন করা হয়; তারা বলবে তৌরাত স্বয়ং প্রভুর বাণী। কারণ সাম্প্রদায়িকরা জানে যে; মানুষের বাণী বললে সাম্প্রদায়িক গ্রন্থের সম্মান হ্রাস পায়। এর কারণ হলো মানব রচিত বাণী মানুষ কখনই সাম্প্রদায়িক গ্রন্থরূপে মেনে নিতে চায় না। পরিশেষে বলা যায়; সাম্প্রদায়িক গ্রন্থের মান বাড়ানো এবং পুণ্য ও স্বর্গ ব্যবসা করার জন্যই সাম্প্রদায়িক গ্রন্থকে ঐশিগ্রন্থ বলা হয়।

উপসংহারে এসে বলা যায় যে; মতবাদ মানুষের সৃষ্টি। অন্যদিকে; ধর্ম সহজাত ও চিরন্তন। মতবাদ ও ধর্ম এক নয়। মতবাদকে ধর্ম ও ধর্মকে মতবাদ বলা কোনমতেই সমীচীন নয়। কোনো মতবাদ, মতবাদকর্ম, দেব, দেবতা, ঐশিদূত, সাম্প্রদায়িক গ্রন্থ ইত্যাদি নিয়ে বাড়াবাড়িও করাও একেবারে অনুচিৎ।

চলবে…
ধর্মবাজ বনাম মুক্তবাজ: জাত পাত যার যার; আত্মদর্শন সবার পর্ব-৪

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অনুসরণ করুন:
মিথলজি গবেষক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!