বিনা চিকিৎসায় রমেক হাসপাতালে ১৩ জনের মৃত্যুর অভিযোগ

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় গত দুই দিনে ১৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এক রোগীর স্বজন হাসপাতালের পরিচালক বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগও করেছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি- রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাননি।

এদিকে রমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, ঈদের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে চিকিৎসকদের কেউই ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেননি। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দুই-একজন ছাড়া গেল দুই দিন কেউ হাসপাতালে আসেননি। জরুরি বিভাগে ভর্তির ব্যবস্থাপত্র নিয়ে রোগীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গেলেও কোনো চিকিৎসক রোগীদের দেখতে আসেননি। এমনকি ওষুধ সেবনের ব্যবস্থাপত্রও করে দেননি। শুধু তাই নয়, রোগীদের স্যালাইন ও কিছু ওষুধ লিখে দেওয়ার মধ্য দিয়ে দায়সাড়া দায়িত্ব পালন করেছেন নার্স ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

ঈদকে ঘিরে চিকিৎসকদের পেশাগত দায়িত্বে এমন অবহেলার কারণে বিনা চিকিৎসায় গত দুই দিনে ১৩ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড, কিডনি ওয়ার্ড, গাইনি ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের নিয়ে চিন্তিত তাদের স্বজনরা। ওয়ার্ডগুলোতে ঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা মিলছে না। নেই দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরাও। এতে জরুরি প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারছেন না কেউ। বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় কাঁদছেন তাদের স্বজনরা।

- বিজ্ঞাপন -

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে হাতেগোনা দুই-একজন ছাড়া আর কেউ গত দুই দিন হাসপাতালে আসেননি। তাদের চেম্বারও বন্ধ ছিল। বেশির ভাগ ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এলেও অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার পদমর্যাদার কোনো চিকিৎসক আসেননি। ঈদের তৃতীয় দিন সকালে কয়েকজন চিকিৎসককে দেখা গেলেও তারা কেউই বেশিক্ষণ হাসপাতালে অবস্থান করেননি।

ঈদের দিন মঙ্গলবার রাতে রংপুর নগরীর চব্বিশ হাজারী কদমতলা এলাকায় জুয়েল মিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সঙ্গে হাসপাতালে এসেছিলেন তার ছোট ভাই শিমুল মিয়া। অনেক ছুটোছুটি করেও চিকিৎসকের দেখা মেলিনি। বিনা চিকিৎসায় পরদিন সকালে মারা যান জুয়েল মিয়া। তিনি রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সার্ভেয়ার ছিলেন।

শিমুল মিয়ার অভিযোগ, ঈদের দিন রাতে তার বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে কোনো চিকিৎসক তাকে দেখতে আসেননি। এমনকি কোনো চিকিৎসাপত্রও দেওয়া হয়নি। শুধু চিকিৎসকের পরামর্শের অভাব আর বিনা চিকিৎসায় বুধবার সকালে তার ভাই জুয়েল মিয়ার মৃত্যু হয়। বড় ভাইয়ের অকাল মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে চিকিৎসকদের কর্তব্যে অবহেলার বিচার দাবি করে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

একই অভিযোগ পীরগাছা উপজেলার পূর্ব দেবু গ্রামের আব্দুল মালেকের স্বজনদের। ঈদের দ্বিতীয় দিন বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী আব্দুল মালেক মারা যান। তার মা ও সন্তানদের অভিযোগ, ঈদের দিন রাতে অসুস্থ আব্দুল মালেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হলেও কোনো চিকিৎসক রোগীকে দেখতে আসেননি। হাসপাতালে সেবা নিতে এসে বিনা চিকিৎসায় মালেক মারা গেছেন।

পেট ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি থাকা নীলফামারীর নীলসাগর এলাকার জুয়েল দাবি করেন, ঈদের দিন থেকে কোনো চিকিৎসক তাকে দেখতে আসেননি। নার্স ও আয়া এসেছে দুই বার। হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি। উপায় না পেয়ে ছাগল বিক্রি করে তিন হাজার টাকায় বাহির থেকে ওষুধ কিনে এনেছেন তিনি।

- বিজ্ঞাপন -

এমন অনেক অভিযোগ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগী ও স্বজনদের।

মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে কোনো চিকিৎসা নেই। সিলিং ফ্যান ঘোরে না। ভ্যাপসা গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে সবাই। কিডনি বিভাগের ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা কম হলেও সেখানেও চিকিৎসক নেই। টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ড বয় ও নার্সরাই এখন রোগীদের ভরসা। একই অবস্থা নেফ্রোলজি ওয়ার্ডেও। সেখানেও তালা ঝুলছে। সেখানকার রোগীদের ঈদের আগের দিন ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

প্যাথলজি বিভাগও বন্ধ। সেখানে দায়িত্বে থাকা কর্মচারী সাখাওয়াত হোসেন জানান, ঈদের আগে থেকে সব প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে কোনো রোগী ভর্তি নেই। ঈদের আগে সবাইকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। গাইনি ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়েও চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

- বিজ্ঞাপন -

এদিকে মেডিসিন বিভাগের বিভাগের প্রধান ও রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজার রহমান গত দুই দিন তার ওয়ার্ডে আসেননি বলে অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তার চেম্বারে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের সহকারী ওয়ার্ড মাস্টার আব্দুস সালাম রোগীদের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দুই দিনে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে সত্য, কিন্তু তাদের কেউই বিনা চিকিৎসায় মারা যাননি। এসব রোগীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিনই কম বেশি চার-পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।

রোগীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল করিম বলেন, ঈদের সময়ে এ রকম একটু সমস্যা হয়। তবে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে কোনো বিঘ্ন ঘটছে না। আমাদের চিকিৎসক, নার্স, ইন্টার্নরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন। বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাননি। দুই দিনে ১৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি ঠিক নয়। এমনিতেই হাসপাতালে প্রতিদিন বেশ কয়েকজন রোগী মারা যান। এসব স্বাভাবিক মৃত্যু বলে তিনি দাবি করেন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

একটি অ্যাকাউন্ট নেই? নিবন্ধন করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!