ভারতের হিমাচল প্রদেশে ভারি বৃষ্টি-বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৫০

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন
কয়েকদিন ধরে টানা ভারি বর্ষণে হিমাচল প্রদেশের বিপাশা নদীর পানি দুকূল উপচে আশেপাশের এলাকা প্লাবিত করে। মান্ডি শহরে একটি মন্দির বন্যার পানিতে প্রায় ডুবে গেছে। ছবি রয়টার্স

ভারতের হিমাচল প্রদেশে ভারি বৃষ্টি-বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৫০

ভারতের হিমাচল প্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বেশ কয়েকজন চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যে কারণে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সোমবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। বলেছেন, এখনো ২০ জনের বেশি মানুষ চাপা পড়ে আছে বা নিখোঁজ রয়েছে।

রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সোমবার বিকাল পর্যন্ত ৪১টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

“আরো ১৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। কিন্তু যেহেতু অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে, তাই তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা আমরা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছি,” বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা প্রাভীন ভারদ্বাজ।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) এ এক পোস্টে লেখেন, “গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে বিরতিহীন বৃষ্টিপাতের কারণে হিমাচল প্রদেশে আবারও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।”

গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলেও তিনি জানান ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে। তিনি বলেন, “মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কারণ এখনো ২০ জন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।”

ভারতের হিমাচল প্রদেশে ভারি বৃষ্টি-বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৫০
ভারতের হিমাচল প্রদেশে গত কয়েকদিন ধরে টানা ভারি বর্ষণে বিশেষত মান্ডি শহরে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। ছবি রয়টার্স

এর আগে তিনি দু’টি পৃথক ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছিলেন। সোমবার দুপুররাত দেড়টার দিকে রাজ্যটির সোলন জেলায় হঠাৎ বজ্রসহ অতি ভারি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট হড়কা বানে জাডোন গ্রামে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।

একইদিন শিমলা শহরের সামার হিল এলাকায় ভূমিধসে একটি শিব মন্দির ভেঙে পড়ে, এতে অন্তত নয়জনের মৃত্যু হয়। শিমলার ডিসি আদিত্য নেগি বার্তা সংস্থা পিটিআইকে জানান, শিমলা শহরে ভূমিধসের দুটি ঘটনা ঘটেছে, এতে ১৫ থেকে ২০ জন মাটিচাপা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোলানের কান্দাঘাট মহকুমার মামলাই গ্রামে ভারি বৃষ্টির পর হড়কা বানে ভেসে যাওয়া ছয় ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। জাডোনে পানির তোড়ে দু’টি বাড়ি ও একটি গোয়ালঘর ভেসে গেছে বলে বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে। জাডোনে নিহতদের মধ্যে তিনজন কিশোর বয়সী ও একজন শিশু

হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু টুইটার পোস্টে এসব মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ঘটা বিভিন্ন বিপর্যয়ের কারণে রাজ্যটির ৭৫২টি সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে বলে হিমাচলের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা কেন্দ্র জানিয়েছে।

ভারতের হিমাচল প্রদেশে ভারি বৃষ্টি-বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৫০
হড়কা বানে জাডোন গ্রামের দুইটি বাড়ি ও একটি গোয়ালঘর ভেসে গেছে। ছবি এএনআই

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সোমাবার রাজ্যটির সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সুখু।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমাবার জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে আসা মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হিমাচল প্রদেশ ও পার্শ্ববর্তী উত্তরাখণ্ডে নতুন করে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে।

আরও বৃষ্টি হতে পারে এমন পূর্বাভাস দিয়ে হিমাচল প্রদেশের আবহাওয়া বিভাগ সোমবার শিমলা, কুল্লু, মানডিসহ কয়েকটি জেলায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে। পুরো রাজ্যজুড়ে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।

হড়কা বানে জাডোনমুখি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকারীরা হেঁটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে প্রথমে চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করেন। পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে এক বালিকার মৃতদেহ উদ্ধার করেন।

ভারতের হিমাচল প্রদেশে ভারি বৃষ্টি-বন্যায় মৃত্যু বেড়ে ৫০
কাজ করছেন জরুরী বিভাগের কর্মীরা। ছবি

শিমলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪০টি গাছ উপড়ে পড়েছে। এক মাইক্রোবাসের ওপর একটি গাছ পড়ে অন্তত একজন আহত হয়েছেন।

একইদিন হিমাচল প্রদেশের প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা কলেজের একটি ভবন ধসে পড়েছে।

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাতে ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে হিমাচল প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ভারি বৃষ্টিপাতে দেখা দেওয়া বন্যা, ভূমিধস ও অন্যান্য ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ২৯০ জন এবং ৩২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

২৪ জুন থেকে শুরু হওয়া এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাত হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে বলে রোববার সরকারি এক হিসাবে বলা হয়েছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!