রাশিয়ার সঙ্গে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থার কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

সম্প্রতি সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) থেকে রুশ ব্যাংকগুলোকে বাদ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তাই, আর্থিক লেনদেনে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আগেই অর্থনীতিবিদরা রাশিয়ার সঙ্গে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিরপেক্ষ দেশ সুইজারল্যান্ড ইইউ’র সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাশিয়ার ওপর সব ধরনের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়।

বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয় রাশিয়ার সঙ্গে বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা বেছে নেওয়ার কথা ভাবছে।

প্রসঙ্গত, সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইডইন্টারব্যাংক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন বা সুইফট দ্রুত এবং নিরাপদ আন্তর্জাতিক ঋণের মূল ভিত্তি। সুইফট বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ এবং অঞ্চলে ১১ হাজার ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত।

“যারা বৈশ্বিক রাজনৈতিক অর্থনীতিতে আগ্রহী তারা ইতোমধ্যেই জানেন, রাশিয়া দীর্ঘকাল ধরে বিশ্ব রাজনীতিতে পশ্চিমের শত্রুতার কারণে সুইফট সিস্টেমকে অনিরাপদ বলে মনে করে। এ কারণেই তারা কিছু দেশের সঙ্গে ‘এসপিএফএস’ বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা চালু করেছে,” অর্থনীতিবিদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন।

সিস্টেম ফর ট্রান্সফার অব ফিন্যান্সিয়াল মেসেজ বা এসপিএফএস হচ্ছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি সুইফট সমতুল্য রুশ অর্থ আদান-প্রদান ব্যবস্থা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া বাংলাদেশকে ব্যাংকিং লেনদেনের বার্তা পাঠানোর বিকল্প ব্যবস্থা এসপিএফএস-এ যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছে।

বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত না হলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “সুইফট বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে? গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রাশিয়া আমাদেরকে এসপিএফএসে যোগদানের জন্য একাধিকবার প্রস্তাব করেছে। তবে সুইফটের বিকল্প হিসেবে, আমরা দুই দেশের জন্য ‘কারেন্সি সোয়াপ’ সিস্টেম নামে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য আরেকটি প্রস্তাব বিবেচনা করছি। এক্ষেত্রে, একটি তৃতীয় মুদ্রা ব্যবহার করা হবে এবং সেটি কোনটি তা নির্ধারণ করতে আমাদের রাশিয়ার সঙ্গে একটি পারস্পরিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় রাশিয়ার সঙ্গে “কারেন্সি সোয়াপ” পদ্ধতির মাধ্যমে বিকল্প অর্থনৈতিক লেনদেনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানানো হয়নি।

কারেন্সি সিস্টেম সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “এই ব্যবস্থা চালু হলে এক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিপরীত মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট খুলবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে রুশ মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট থাকবে এবং রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকার হিসাবে অ্যাকাউন্ট থাকবে। আমদানি, রপ্তানি এবং অন্যান্য বাণিজ্য নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত ঋণ আন্তর্জাতিকভাবে বিনিময়যোগ্য তৃতীয় মুদ্রায় এক দেশ অন্য দেশকে পরিশোধ করবে।”

“তাহলে তৃতীয় মুদ্রাটি কী হবে তা দুই দেশ মিলে সিদ্ধান্ত নেবে,” তিনি বলেন।

এদিকে, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সুইফট এখনই বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে না করলেও নীতিনির্ধারকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিকল্প লেনদেনের পথ খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “ইউরোপীয় অনেক দেশ রাশিয়ার জ্বালানি, বিশেষ করে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পাইপলাইনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। আমি মনে করি রাশিয়ার জ্বালানি শক্তির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে, ইউরোপীয় দেশগুলো এখনই আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম সুইফট থেকে তাদের সরাতে চায় না।”

“কিন্তু সত্যিই এমন হলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বিলম্বিত হবে। এছাড়া, রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আমরা খুব দ্রুত একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি,” তিনি বলেন।

বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় পোশাকসহ কিছু পণ্য রপ্তানি হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে গম ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে বাংলাদেশ রাশিয়ায় প্রায় ৪৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।

এছাড়া, ২০২২ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে, ৭.৫৪ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে।

এর আগে, ২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় ৬৬.৫৩ কোটি ডলারের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি এবং একই সময়ে, ৪৬.৬৭ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞার কারণে আমদানি-রপ্তানির চেয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ ও বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক হবে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!