জীবনানন্দ দাশের ধানসিঁড়ি নদী

এ কে এম রেজাউল করিম
এ কে এম রেজাউল করিম
5 মিনিটে পড়ুন
ছবি: সংগৃহীত।

যদি জীবনানন্দ দাশের ধানসিঁড়ি নদী দেখতে চান তবে পার হতে হবে নদীর পর নদী। তারও আগে যেতে হবে ঝালকাঠি। সুগন্ধা নদী তীরের ঝালকাঠিকে ঘিরে আছে কীর্তনখোলা, বিষখালী, গাবখান, জাঙ্গালিয়া, বাসন্ডা ও ধানসিঁড়ি নদী আর কীর্তিপাশা, কুরিয়ানাসহ অনেক ছোট-বড় খাল। এখানে রয়েছে কীর্তিপাশা জমিদারবাড়ি, গাবখান সেতু, সুজাবাদ কেল্লা, নেসারাবাদ মাদ্রাসা, কবি কামিনী রায়ের বাড়ি ও রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামে শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের জন্মস্থানসহ শীতলপাটি শিল্প, মৃৎশিল্প ও পেয়ারার গ্রাম ভীমরুলি। আছে চেয়ে দেখার মতো অজস্র গাছপালা আর মনে রাখার মত মানুষ। এখানকার মানুষগুলো আকৃতিতে মানুষ নয়, সত্যিকার অর্থেই মানুষ।

ধানসিঁড়ি নদীর রূপ-সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছিল কবি জীবনানন্দ দাশকে। নদীর জলে ভেসে ভেসে কবি লিখেছিলেন আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়। লেখার পর আবার কখনও ধানসিঁড়ির কাছে গিয়েছিলেন কি না জানি না, তবে জীবনানন্দ দাশ তার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ রূপসীবাংলায় ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি লিখে ধানসিঁড়ি নদীকে অমর করে রেখে গেছেন।

এই ধানসিঁড়ি নদী বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায় অবস্থিত। নদীটির উৎস আড়িয়াল খাঁ নদ । ঝালকাঠি জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির মোহনা সুগন্ধা নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৬০ কিলোমিটার ,গড় প্রস্থ ৪৯০ মিটার। নদীর প্রকৃতি সর্পিলাকার। কিন্তু বর্তমানে নদীটির অবস্থা করুণ। দীর্ঘ নয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীর দুই পাশ সংকুচিত হতে হতে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।এখন এর প্রস্থ কোথাও কোথাও ২৫ ফুট আবার কোথাও তার কম।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ঝালকাঠির মোল্লাবাড়ি, বারৈবাড়ি এবং রাজাপুরের হাইলকাঠি, ইন্দ্রপাশা ও বাঁশতলা—এই গ্রামগুলোর বুক চিড়ে বয়ে চলা ধানসিঁড়ি নদীটি এসে রাজাপুরের জলাঙ্গী (জাঙ্গালিয়া নদী) মোহনায় মিশেছে।

দুই যুগ আগেও এই নদী দিয়ে পাল তোলা নৌকা, লঞ্চ, কার্গো চলাচল করত। রাজাপুর থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ ঝালকাঠি জেলা সদরের সঙ্গে সবচেয়ে সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক যাতায়াতের পথ ছিল এই নদী। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি কৃষিতেও বড় অবদান রাখত। সেই নদী এখন নৌকা চলাচলেরও অনুপযোগী। বর্ষা মৌসুমে নৌকা চলাচল করলেও শীত মৌসুমে তা একেবারে শুকিয়ে যায়।
শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের বেশির ভাগ সময় নদীটি পানিশূন্য হয়ে পড়ায় দুই পাড়ের কয়েক শ হেক্টর ফসলি জমির চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব জমি এখন এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। এলাকার কৃষকেরা বলেন, নদীটির নাব্য ফিরিয়ে আনতে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও যথাযথভাবে খনন না হওয়ায় তা কোনো কাজে আসেনি।

এই নদীতে বিষখালী ও গাবখান দুই নদী থেকে জোয়ার প্রবাহিত হয়ে মাঝ বরাবর এসে থেমে যায়। ভাটির সময় জোয়ারে বয়ে আনা সেসব পলি আর নামতে পারে না বলে দ্রুত নদীটি নাব্য হারায়।

কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার সেই ধানসিঁড়ি নদীটির অস্তিত্ব এখন বিলীন হওয়ার পথে। ঝালকাঠি সদর থেকে শুরু করে রাজাপুর উপজেলার বাঘরী বাজার পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা বয়ে চলা নদীটি নাব্য হারিয়ে এখন শীর্ণ মরা খালে পরিণত হয়েছে।

অবৈধ দখল ও সময়মতো খনন না করায় পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে এখন মাত্র চার কিলোমিটার জায়গায় পানিপ্রবাহ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এই নদীতে কিছুটা প্রাণের সঞ্চার হলেও শীত মৌসুমে প্রাণহীন হয়ে পড়ে।

এখনো দূরদূরান্ত থেকে বহু দর্শনার্থী ধানসিঁড়ি নদী দেখতে আসেন কিন্তু নদীর এ বেহাল অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যান। নদীর অনেকাংশ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পাড়েরহাট এলাকায়ও ভরাট হয়ে কৃষিজমির সঙ্গে মিশে গেছে। এখানে শীত মৌসুমে কোনো কোনো জায়গার পানি শুকিয়ে যায়। এর ফলে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারে না। যেখানে পানি থাকে সেখানেও কচুরিপানায় ভর্তি হয়ে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে থাকে। নদীর দেশে নদীর মৃত্যু, চিন্তা করা যায় না! শুধু নদী কেনো, এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, নৈসর্গিক সৌন্দর্য কিছুই এখানে আগের মতো নেই।
প্রয়োজনীয় তথ্য

প্রাচীন মহারাজগঞ্জ বর্তমানের ঝালকাঠি। এখানকার জেলে সম্প্রদায় ও জঙ্গলাকাঠি মিলে এর নাম হয়েছে ঝালকাঠি। ঝালকাঠি আসা একেবারে সহজ। ঢাকার সদরঘাট থেকে সরাসরি ঝালকাঠির লঞ্চ আসে। আবার লালকুঠি ঘাট থেকে আসে স্টিমার। লঞ্চ ছাড়ে রাত আটটায়। স্টিমার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। সিঙ্গেল বা ডাবল বা ফ্যামিলি কেবিনে বা ডেকে চলে আসতে পারেন। কেবিন ভাড়া সিঙ্গেল ৮শ’ টাকা। ডাবল ১ হাজার ৬শ’ টাকা।

সকালে ঝালকাঠি নেমে খেয়াঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ নিয়ে চলে যান নদীর পর নদী পারি দিয়ে ধানসিঁড়িতে। ঝালকাঠিতে থাকার জন্য মোটামুটি মানের হোটেল রয়েছে। লঞ্চ বা স্টিমার ঘাটের পাশেই এসব হোটেলে থাকতে পারবেন। খাওয়ার জন্য একইভাবে ঘাটের পাশের সাধারণ রেস্তোরাঁর ওপর অসাধারণ ভরসা করতে পারেন।

মনে রাখবেন, নৌকায় চলাচল করতে হবে। সুতরাং সঙ্গে গামছা ক্যাপ বা টুপি এবং খাবার পানি সঙ্গে রাখবেন। নদীর পানিতে ভুলেও বিস্কুট, চিপস, লজেন্স, ইত্যাদির প্যাকেট ও পানির বোতল ফেলবেন না। সাঁতার জানলেও সঙ্গে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখবেন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম ১৯৭৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। কে এম আবদুল করিম এবং মিসেস ফাতেমা করিমের জেষ্ঠ্য সন্তান তিনি। তিনি যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিখ্যাত ওয়েষ্টমিনষ্টার ইউনিভারসিটি থেকে জি.ডি.এল ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি দেশে বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক ডিগ্রী সহ ট্রেনিং গ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকেই রেজাউল করিম লেখালেখি ও গনমাধ্যমের সাথে জড়িত। ছাত্রজীবনে বরিশালের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক প্রবাসী দিয়ে সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি দেন। এর পরে ঢাকায় ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল পযর্ন্ত মোহম্মদী নিউজ এজেন্সিতে তিনি কনিষ্ঠতম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ‘চ্যানেল আই’তে বিজনেস ফাইল এবং এটিএন বাংলায় অর্থনৈতিক পরিক্রমা নামে অনুষ্ঠান উপস্থপনা করতেন। এছাড়া দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক যায়যায় দিন প্রতিদিন ও জনকন্ঠ পত্রিকাও তিনি লেখালেখি করতেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক আমার দেশ (অন লাইন), দৈনিক দিনকাল সহ কয়েকটি অন লাইন মিডিয়ায় নিয়মিত কলাম লিখছেন এবং লন্ডনে কয়েকটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে ‘টক শে’ তে অংশ নিচ্ছেন। সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট এব্ং ডেমোক্রেসি সেন্টারের সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে তিনি জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি আর্ন্তজাতিক সম্মেলন, বৈঠক ও আলোচনায় অংশগ্রহন করেন। যার মধ্যে ২০০০ সালে জার্মানির বার্লিনে আয়োজিত এসিসিয়েশন অব নিউজপেপারস ( ডব্লিউ.এ.এন) এবং এডিটরস এন্ড মার্কেটরস কনফারেন্স অন্যতম। এছাড়াও বিভিন্ন প্রোগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম রাশিয়ার মস্কো, ইটালির রোম, স্পেনের মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা, কানাডার টরেন্টো, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ইটালির রোম, সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়ার কুয়ালালামপুর, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস এবং যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ সহ বিশ্বের বিভিন্ন শহর ভ্রমন করেছেন। বর্তমানে শিক্ষানুরাগী রেজাউল করিম তার নিজ গ্রাম সাতুরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ’ এবং ‘শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক রিসার্চ ইনষ্টিটিউট’। ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম এক কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রী সাদিয়া করিম লন্ডনের একটি বহুজাতিক কোম্পনীতে কর্মরত। একমাত্র মেয়ে রুকাইয়া করিম।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!