গল্প: তিন স্তর ও করমচা ট্যাবলেট

নবনীতা বসুহক
নবনীতা বসুহক
23 মিনিটে পড়ুন

দেশটির তিন স্তর। প্রথম স্তর ষোল ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রার জন্য সারা স্তরে এসি। অন্যস্হানেও এসি বসানো। স্তর শুরু পঞ্চাশ কিমি উচ্চতা থেকে। একটা পাতলা কুয়াশার চাদরের আস্তরণ দিয়ে ঢাকা
এই তিন স্তর বিরাট আকারের। যেন তিনতলা বাড়ির অনেক অনেক বড় সংস্করণ। পাহাড় সমুদ্র বাদ দিয়ে তিনস্তর নির্মাণ। যদিও পঁচিশ বছরে হয়নি তবে ইচ্ছেমত স্হান পরিবর্তন করা যায়। যেন ট্রেনের ভেতর। তিন স্তর একসঙ্গে স্হান বদলেছে। কখনও শীতে সমুদ্রের ধার। কখনও গরমে পাহাড়ে উপত্যকায়। তখন সরকার একজনই ছিল। নিচের স্তরের কথা ভাবত। আলাদা আলাদা ভাবে কোনদিন কোন স্তর ভ্রাম্যমান হয়নি। স্ক্রপে নাকি জং পরেছে।তাই পরীক্ষা করেওছে উচ্চস্তরের সরকার নিজেরা একক বিচ্ছিন্ন হওয়া যায় কীনা। হ্যাঁ, জনসংখ্যা বাড়ছে বলে তিন স্তরের ভিন্ন ভিন্ন সরকার। তিনটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র। ধনীরা ওপরের স্তরে থাকে। যারা আয় করে বেশি যারা এসি রাখার ট্যাক্স দিতে পারে তারাই। আজসেতুর দাদা কালকেতু; থাকে ওখানেই। আজসেতুর খুব ইচ্ছে সবাই মিলে সেখানে যাবে। সবাই মানে– বাবা,মা সে আর তার বউ, ইচ্ছা। কিন্তু ওখানে শ্বাস নিতে গেলে বেশ টাকা প্রয়োজন। কালকেতু বলেছিল, সব খরচ দিয়ে দেবে। কেবল টিকিট কেটে যাবার দায়িত্ব আজসেতুর। অফিসে অতিরিক্ত খেটে আজ কিছু টাকা পাবে। এর জন্য টুর করতে হচ্ছে। বাড়িতে ফিরে আসা হয় না সবসময়। ইচ্ছা ফোন করে কোথায় আছো?
কাজে। পরে করছি।
গা পিত্তি জ্বলে যায় ইচ্ছার। কাজে না অন্য কোনো কারণে ফিরছে না বাড়ি কে জানে?
আজ তাকে প্রথম দেখাতেই বলেছিল, তার বান্ধবী ছিল।
এখনো আছে?
আছে।
বিয়ের পরে থাকবে?
না।
বিয়ের পরে প্রথম দিকে বারবার ফোন করত অফিস থেকে। অফিস থেকেই বেরিয়ে পরতে বলত। সিনেমা,থিয়েটার,বাইরে খাওয়া, দূরে বেরানো কী করেনি!
তারপর ফাঁক তৈরি হল। অতি ব্যবহারে দ্রব্যক্ষয় কমানো যায় না। মানুষ এখন দ্রব্যের মত। কিছুদিন পরেই সম্পর্কের নতুনত্ব শুকনো পাতার মত। কেবল পায়ের তলায় পিষ্ট হয়। যারা মিশুক স্বভাবের তাদের এই শূন্যতা থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি। ইচ্ছার মত অ-মিশুকে– যাদের ভাবনার জগত বেশি বাস্তব থেকে তাদের সমস্যা অনেক। একটা বাচ্ছা কি সমস্যা মেটাতে পারত?
এখন আর আগের মত নেই যেন আজসেতু। সিনেমা দেখতে যাওয়া,রেস্টুরেন্টে খাওয়া, বেরোন সব বন্ধ। একঘেয়ে দিনগুলো কাটাতে প্রাইভেট নার্সিংহোমে জয়েন করেছে ইচ্ছা ডিগ্রিকে কাজে লাগিয়ে। খুব কষ্ট পায় যখন রাতে ফোন থেকে টুকটাক শব্দ বের হয়। দু’বছর পর থেকে সন্দেহ বাড়ছে ইচ্ছার। আজসেতু টাকা জমাচ্ছে। আর বাইরৈর জগতে ক্রমেই বুঁদ হয়ে যাচ্ছে। সবটা যে অফিস নয় তা ও বোঝে। বিশেষত সে জানে এদের একজন আবার প্রথম স্তরেই থাকে। যাবার ইচ্ছে নেই তার। ও কি এই কারণে ওখানে যেতে চাইছে? আর একজন এখানে থাকে। তার সঙ্গে কি ঘুরছে!
ইচ্ছা, তোমার ফোন।
শাশুড়ি ধীরা।
কে মা?
আজসেতু।
পরে কথা বলছি।
ধরে আছে ও।
কাটো না ফোনটা।
ও জিজ্ঞাসা করছে সিল্ক কোন রঙের নেবে?
‘নেব না’- বলে দাও।
‘কী যে হয় না ইচ্ছার’- বলে গজগজ করতে করতে চলে যায় ধীরা। ইচ্ছার শাশুড়ি। জানায়, ও নার্সিংহোমে। ওর ফোনে কর।
ওরটা বেজে যাচ্ছে বলেই তোমাকে করলাম। শাড়ি কিনছি। ওর জন্য
রঙ কী নোব?
মেরুন নে। ওর পছন্দ।
নেই।
তবে জাফরান নে।
তাও নেই?
কালো নীল আর কচি কলাপাতা আছে।
তাহলে সালোয়ার নে। কালকেতুর কাছে গেলে লাগবে।
হম্। রাখছি।
দ্বিতীয় স্তরে তাপমাত্রা কুড়ি থেকে পঁচিশ। উচ্চতা পঁচিশ কিমি থেকে শুরু।কুয়াশার চাদর পাতার দরকার হয়নি। সেখানে আগের স্তরের অদৃশ্য মেঝে আছে আর নিচের স্তরের ছাদ তাদের পায়ের নিচে। বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় বলেছে পরিস্কার- প্রবল গরম আর প্রবল ঠান্ডার ভারসাম্য রাখতে এই স্তর। আবার অর্থনৈতিক ভাবে মাঝামাঝি অবস্হানের লোকেরা এখানে থাকতে পারবে। মূলত তিনস্তর তৈরির মূল কথা ধনী, মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তদের তিনটি স্তরে রাখা। আগামী, আজসেতুর দিদি সেখানে থাকে। ছোট দেওর নিয়ে গেছিল পড়ানোর জন্য। তারপর ল্যাব অ্যাসিন্টেটের চাকরি পেল। সঙ্গে গবেষণা। ওখানেই সেটেলড। পরে নিজের পুরনো বন্ধুর সঙ্গে আলাপ, তারপর বিয়ে। ধীরা রা গেছে ওখানে। নিচের স্তরের থেকে এখন তাপমাত্রা কম। থেকে এসেছে ক’দিন। কালকেতুর তাই খুব রাগ। যায়নি কেন ধীরারা কালকেতুর ওখানে? বিশেষত কালকেতু আর সখি তখন খুব ব্যস্ত ল্যাবের কাজে। বাচ্ছাটার অনেক উপকার হত ওরা গেলে। কিন্তু আটকে গেল আগামী সন্তান সম্ভবা বলে। প্রায়ই বমি করছে। সখির অবশক রোবট আছে। পুরন্দর একটা রোবট। সব কাজ করতে পারে। এ – টু জেড। যেমন বাজারকরা, দোকান যাওয়া, কেউ এলে দরজা খোলা,সকলের জন্য রান্না করা, স্কুলে দিয়ে আসা সংস্রবকে। এছক গল্প করা, ঘর মোছা কাপড় কাচা, জামাকাপড় গোছানো, ইস্ত্রি করা— সব করে। সখি খুব যে চেয়েছিল ওরা যাক তা নয়, তবে কালকেতু সত্যি চায়ছিল। তখন একটা পরীক্ষা নিয়ে প্রায় গবেষণা ঘরে থাকতে হত দু’জনকেই। কারণ কালকেতু ধীরার হাতে খেতে ভালবাসত। হয়তো চায়ছিল, সংস্রব ঠাকুমা ঠাকুরদার সঙ্গে থাকুক।ধীরা ধীরাজকে বলছিল, তুমি যাও। ধীরাজ মেয়ের বাড়ি ছেড়ে নড়বে না কিছুতেই। ধীরাজ কি কিছু কাজ পারে? ধীরাজ যেতে পারত তা যাবে না। আগে একবার গেছিল ওরা। তখন সংস্রব আসেনি। সখি ধীরাজকে এসি ব্যবহার নিয়ে বলেছিল, অভ্যাস নেই তো। তাই সাবধানে ব্যবহার কোরো। কথাটা খুব মনে লেগেছিল ধীরাজের। তাই পরদিনই চলে এসেছিল। পরে অনেকবার বলেছে কালকেতু যেতে। কিন্তু ধীরাজ যায় নি। ধীরা বলেছিল,চল না! কেমন আছে ছেলে দেখে আসি।
ধীরাজ বলেছিল,সখি খারাপ ব্যবহার করেছিল মানলাম। তোমার ছেলে, কালকেতুও তো বলেনি সখিকে, ক্ষমা চাও।
ছেলেরা যখন ছোট ছিল ধীরা ওদের পক্ষ নিত। এখন চুপচাপ থাকে। কি হবে এসব নিয়ে কথা বাড়িয়ে? ক’দিন আর বাঁচবে! তাছাড়া সত্যিকে আড়াল করে লাভ
কি! ছেলে মেয়েরা স্বার্থপর তো বটেই। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। কালকেতু তো সখির জন্য ওখানেই চলে গেল। কতদিন ধরে বলেছেন, এখানে এসে থাক। তা শুনবে? ওখানে সুখ বেশি।
কালকেতু ওখানকার নামকরা গবেষক। বায়োলজি পড়ে পরীক্ষা করে কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে। ওদেশে সবাই এখন আর মানুষের বাচ্ছা চায় না। কুকুর আর মানুষ, কুকুর আর ইঁদুর, খরগোশ আর সিংহ ছাড়া নানান সংকর সন্তান নেয়। ল্যাবে বসে সেই কাজটা করে কালকেতু। ওরা খরগোশ আর মানুষের মিশ্রণ থেকেই তৈরি করেছে মেয়ে সংস্রবকে। শরীরজাত নয় বলে বংশধর বলতে কেমন লাগে আজও ধীরার। সখিই মেয়েকে দেখাশোনার জন্য রোবট মানে পুরন্দরকে তৈরি করেছে অমৃত ওষুধ দিয়ে। এ ঘরেই কেবল নয় বাইরের সব কাজ করে। একটা গাড়ির মত দেখতে পুরন্দর। মানুষের মত নয়। বিয়ের পর সখি একবার এখানে এসেছিল। দিন দুই থেকে তার নাভিশ্বাস। সাতদিনের মাথায় চলে গেছে। সংস্রবকে আনেনি। রোবটকেও নয়। ওরা জিরো ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছাড়া বাঁচবে না। তাও ওখানে যেতে ইচ্ছে করে বৈকী। বড় ছেলের ঘর বলে কথা। কিন্তু ধীরাজ না গেলে তাকে ফেলে যাওয়া যায় না।
কালকেতু বলছিল, সংস্রবকে দেখে যাও। একাই এস। কিন্তু ততটা টান সংস্রবের প্রতি আসেনি। যতটা আছে আগামীর মেয়ে সংস্কৃতির ওপর। তবু একা যাবে ভেবেছিল। তখন ইচ্ছার বিয়ে হয়নি। কিন্তু আজসেতু তখন কিছুই রান্না পারে না। তাই ওদের রেখে যাওয়া হয় নি। কেনা খাবার আজসেতু খায় যদিও খরচ বেশি। ধীরাজ আবার বাইরের খাবার খেতে পারেনা। কালকেতু বলেছিল খরচ দিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু
গৃহশান্তি বলে তো একটা ব্যাপার আছে। যাননি বলে কালকেতু আর সখি কড়া করে মেল করেছিল। তারপর নরম সুর। এসে দেখ। একবার। তা সেইটা এবার করেই ছাড়বে আজসেতু।

তৃতীয় স্তর কোন এসি বসানো নেই।এটা একেবারে নিচে। ওপরের স্তর ঢাকা থাকা সত্তেও রোদ আসে, বৃষ্টি হয়। পাহাড়-পর্বত বা জলধারার কোন অসুবিধা নেই।এখানে গরম ও ঠাণ্ডা দুই-ই প্রচন্ড। ইচ্ছারা তৃতীয় স্তরে থাকে। কিছু টাকা হলে প্রথম স্তরে বেড়াতে যাবে ওরা। পরার জামা স্যুট গোছায় ইচ্ছা। মাঝে মধ্যে বাড়ি থাকে আজ। তখন তারটা নেয় জিজ্ঞাসা করে।
ঠাণ্ডা কেমন ওখানে? সোয়েটার নোব।
নিয়ে নাও।
মা বাবার?
ওরা আমাদের থেকে বেশি শীত কাতর।বুড়ো মানুষ।
কবে যাব।
সেপ্টেম্বর।
টাকা জমা করছ কেন?
আজ চুপ।
বলবে না।
পরে বলব।
দাদাদের ওখানটা কেমন গো?
দাদাকে ফোন করে জেনে নাও।
কেমন যেন ছাড়া ছাড়া উত্তর।
ইচ্ছা কথা বলে। ওখানে পূর্বস্থলী থাকে না?
থাকে।আমি কি করবো?
তুমি ওর কাছে যাবে?
ভাবিনি কখনও।
ও।
দাদা বলেছেন, আমাদের ঠিক উপরের অংশটা দিদিদের আর তার ওপরে দাদাদের দেশ। সত্যি? ওখানে সবকিছু এসি। গাছে, রাস্তায়, বাতাসে, জলে, জঙ্গলে কীভাবে তৈরি জান?
ঘুম পাচ্ছে। ইচ্ছা।
ও। তুমি তো এসি মেশিন তৈরি কর। ওখানে পাঠাও। আমরা ঘরে কেন রাখতে পারি না?
সরকারের বারণ। এবার ঘুমোও।
সেপ্টেম্বর মাসে যাওয়া। টুকটাক কিনছে। দাদাদের আর বাচ্ছার জন্য। আচ্ছা রোবটের জন্য কী নেবে?
দাদা বলেছেন, পুকুর জলের ভাপ নিতে। কোথায় পাবে জানে ইচ্ছা। তাই মার কাছে বাড়ি গেল। মার দাদু বদ্যিকা পাশ করেছিল। বাবা ছিলেন কবিরাজ। আর ইচ্ছার বাবা উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতেন। অনেক গাছ তৈরি করেছেন। তাদের বাড়িতে একটা ঘরে অনেক বাবার,দাদুর, দাদুরবাবার বোতলে ওষুধ আছে। মা সেসব শিখে ওষুধ দেয় আশেপাশের লোকজন প্রতিবেশী দের। নিজেও উদ্ভাবন করে অনেক কিছু। পুকুরজলের ভাপ সংগ্রহ করতে মাকে অনেকবার দেখেছে ও। ফোন করলে মানুষ বলে দেয় কী আবিষ্কার করল নতুন। এর মধ্যে যাবে যাবে করে আর শোনা হয়নি।
আজসেতু কাল বাড়ি যাব? যাবে?
তুমি যাও। আমার হবেনা।
ধীরাজ বলেছিলেন, দিয়ে আসবেন।
ধীরা বলল,আজ দিয়ে আসবে।
ওকে দেখে মা বলল,খবর না দিয়ে এলি? কী ব্যাপার রে?
ওমা আসতে নেই বুঝি!
তোরা যাবি কবে?
সেপ্টেম্বর।
চল পুকুর পাড়ে।
মা একটা চালের ড্রাম এনেছে। ওটার মুখ খুলে রাখল। তারপর দুপুরে গরম পুকুরের জল ভরে ফেলল কৌটোয়।
মা ওখানে শ্বাসকষ্ট খুব। কি নোব বল তো?
গাছের ডালে থাকা কোটর পাখির ঘ্রাণ।
আর?
মাছেদের কলতান?
আর কী?
দেব নতুন করেছি।এখন চল চা খাই। কতদিন চা খাইনি একসঙ্গে।
চা খেতে খেতে ইচ্ছা বলল,বাবার লাগান সেই করমচা গাছ আছে?
আছে। রেললাইনের ধারে।
কেউ কিছু বলে না।
বলবে কি করে? গেল মাসে সরকার থেকে রেলের পাশের ঝোঁপ, তোর বাবার লাগানো কাটতে এসেছিল। অমনি কোথায় ছিল ধনেশ! ঠোক্কর দিয়ে যাচ্ছে লোকগুলোকে বারবার।
তাই নাকি!
তারপর আর ওরা আসেনি কাটতে। চল, বিকেলে করমচা গাছের কাছে যাব।
আর পুকুর জলের ভাপ?
কাল বিকেলে যাবি যখন সব গুছিয়ে দোব।
বাড়ি ফিরল কত কী নিয়ে। পুকুর জলের ভাপ,কোটর পাখির ঘ্রাণ, করমচা ট্যাবলেট,মাছেদের কলতান।
এসব অনেক হলেও ওজন মাত্র পাঁচশ গ্রাম। নাহলে ইচ্ছার মত রোগা মানুষ কী নিয়ে আসতে পারে!

না, দাদারা টিকিট পাঠায়নি ।মেল করেনি। ফোন নয়।খবর জেনেছে দাদাদের দেশে মড়ক লেগেছে। মানুষের মড়ক। কোন ফোন নেই। মেল নেই। ধীরাজ বলল, তুই খোঁজ নিতে যা।
আজকে বাধা দিয়ে ইচ্ছা বলল, কেউ যায় ওখানে?
আজ বলল,সে যাবে। কালকেতু তার দাদা।
যাবে কীভাবে?
ট্রেন বন্ধ।প্লেন বন্ধ। রোপওয়ে বন্ধ।
সিড়িঙ্গে বন্ধ।
সিড়িঙ্গে হল আকাশের উপর ঠাণ্ডা দেশটায় যাবার লম্বা সিঁড়ি।
তুমি এত জানলে কি করে?
খবরে।
খবরে বলা হয়েছে বহু লোক হত।নিঁখোজ। ইচ্ছার বন্ধু ডানার দাদা আকাশ থাকে ওখানে। আকাশ অবশ্য স্কাইপ করছে এখনো ডানাকে। নার্সিংহোমে ডানার কাছে সব খবর পাচ্ছে। তাই তো খবর পেল ইচ্ছা
পূর্বস্থলী মানে আজের আগের প্রেমিকা এখন নেই। আজসেতুকে ধীরা বলল,ওদের সঙ্গে নিয়ে আয়।
ধীরাজ বেশ চিন্তা করছেন।বললেন,ওকে নিয়েই আয়।
যাব কিভাবে?
ধীরাজ বলল, প্যারাশুটে।
পাব কোথায়?
আছে তোর মার কাছে ।তবে ষাট কেজির বেশি ওজন নিতে পারবে না। আজসেতু বলল,আমার ওজন পঞ্চান্ন।আর তিনশো পঞ্চান্ন গ্রাম ওষুধ হবে।
কিন্তু খবর তো নিতে হবে তাই না।
ওপরে উঠছে আজসেতু। কিন্তু ততই ঝিমুনি আসছে। ইচ্ছার করমচা ট্যাবলেট খেয়ে চলেছে। তখন আবার চাঙ্গা। ইচ্ছা আগে দাদাদের ওখানে পাঠাতে চায় নি। এবার তেমন বাধা দিল না। কেন?
দাদাদের স্তর ওপরের আকাশে। সেখানে ধুলোর আস্তরণ মেঘের মেঝে। মেঘের মেঝে ঢালাই রাস্তা। প্রবেশ পথে তোরণ। সীমান্তরক্ষী থিকথিক করছে। সেখানে গিয়ে অনেক লাইন। কিন্তু ওপরের স্তরে যাবার লাইন বেশি নয়। তারা চারজন। ওপাশে লাইন আর একটা।সবাই মাঝের স্তরে নামছে। কেউ থাকবে এখানে কেউ নামবে আরও নিচে। নামার সংখ্যা বেশি। আগামী বলেছিল,দেখা করতে।
সম্ভব নয়।
কেন?
ফানুসের হাওয়া বিকল হলে!
তোর কাছে আসছি।
কখন?
এই তো বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি।
লাইনে কেউ নেই। আজ দাঁড়িয়ে আগামীর জন্যে।আগামী আসছে না। এদিকে কাউন্টার বন্ধ করে দেবে।আর মাত্র কয়েক মিনিট। বলে রেখেছে তবু।ওরা বলছে, আপনি যদি তিন মিনিট দেরি করেন তাও কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারি নির্দেশ।
এই সময় দৌড়তে দৌড়তে আগামী এল। বলল,তুই এগুলো নিয়ে যা।
কী এগুলো?
আমার ল্যাবে তৈরি কিছু ওষুধ দিলাম।
তুই চল। সঙ্গে। আমি তো প্রয়োগ জানি না।
সব ডিরেকশন দেওয়া হয়েছে।
না। ওখানে কেউ যায় নাকি? মড়ক লেগেছে যেভাবে!
ফেরার পর আসিস।
দেখি।
এখানে কেমন আছে সবাই?
মড়ক শুরু হয় হয়। আমি অবশ্য ট্যাবলেট করে রেখেছি।
তাহলে সরকারকে দিয়ে দে।
ওরা এখন ওদের কোম্পানি ছাড়া নিচ্ছে না। তাছাড়া পেটেন্ট আমি পাব না। সরকার বলে দিয়েছে।
বাই।
আসার সময় আসিস।
দেখি কী অবস্থা হয়!
বৌদির জন্য এরকম হল।
কেন?
ওখানে দাদা যেতে চায়নি। বৌদি সর্বসুখ চায়। ঠান্ডা বলে মড়ক বেশি। তারপর ঐ রোবট। তার অতিরিক্ত ঠান্ডা চায়। আমাদের দাদা কি আছে রে?
শোন,আমি এই স্তরে অবস্থান করছি।সীমান্তে দাঁড়িয়ে ঘ্যান ঘ্যান করিস না। বর আর সংস্কৃতির কাছে যা। আর মড়ক লাগলে আমাদের স্তরে যাস। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ‘স্বাস্থ্যকর’ বলছে, দ্বিতীয় স্তরে মড়ক চট করে লাগবে না।

দাদার বাড়ি তেমন দূরে নয়।ঠিকানাটা মনে ছিল এই যা। তৃতীয় স্তরের দ্বিতীয় আকাশ। কিন্তু তার এই আকস্মিক আগমনে রাস্তার লোক যারা আছে কেমন যেন হতবাক। কুতকুতে চোখ যায় প্ল্যাস্টিক জামার মধ্যে ঢাকা, তার থেকেই দেখছে। রাস্তায় লোক বেশ কম। যে ক’জন বেরিয়েছে পুলিশ জিজ্ঞাসা করছে। তাকেও করা হল।ট্যাবলেট দিতে এসেছে বলে ছাড়া পেল। বদলে একশখানা ট্যাবলেট নিল। যেই শুনল এই ট্যাবলেট মড়ক প্রতিষেধক। সীমান্তরক্ষী বাহিনী তেমন কিছু বলেনি, এই পুলিশ বাহিনী বড্ড মিলিটারি মার্কা ও ধূর্ত। বলল আজসেতু, রোজগার কেমন?
ভালো নয়!
কবে যে সুন্দর দিন আসবে!
নিষ্ঠুর আচরণ করছে পৃথিবী ।
পৃথিবী না মানুষ?
দাদাদের বাড়ির গেটে দারোয়ান নেই। সামনের বাজারে, দাদার ছবিতে যেমন দেখা যায়, এখন লোক নেই। মাছি ভন ভন করছে একটা মাছওলার একটা মাছে।
কি মাছ?
আকাশগঙ্গা নদীর মাছ। নেবে?
এরা কেউ আছে কিনা জানো? মানে বেঁচে আছে? তবে ভেতরে। বাড়ি থেকে বের হয়না। নেবে?
দাও।
টাকা এখানকার নেই। কি দিই?
আচ্ছা এটা নাও।
চারটে ট্যাবলেট দিল লোকটাকে।
এই স্তরের সেন্ট্রাল এসি বন্ধ। মাছটা রাঁধতে হবে। নাহলে খারাপ হয়ে যাবে।
অনেকক্ষণ ধাক্কা দেবার পর দাদা দরজা খুলল। সাদা রঙের প্ল্যাস্টিকে ঢাকা দাদা বলল, তুই? কী ব্যাপার বল।
বাবা বলল। খোঁজ নিতে। তাই এলাম।
এখানে মড়ক লেগেছে জানিস না! কেউ আসে?
তাই জন্য তো বাবা পাঠাল।
এসে যখন পড়েছিস এ বেলা বাইরে থাক।
ঘরে যাব না?
না। কাঠভাস্কর্য ঘর আছে বাইরের দিকে, ওখানে থাক। বলে চাবি ছুঁড়ে ফেলে দিল।
ইচ্ছা কতগুলো জিনিস দিয়েছে। নেবে না?
বিকেলে নেব।পরিষ্কার করে। তোকে পরীক্ষা করব বিকেলে।
কি পরীক্ষা !
তোকে বিকেলে পরীক্ষা করব। ফানুসে এসেছিস তাই সরকার কিছু বলেনি। যদি বলত সরকার — পনের দিন পর ঘরে ঢোকার অনুমতি দিতনা।
খুব বিরক্ত লাগল আজসেতুর ধীরাজ এখানে পাঠিয়েছেন বলে।
যাক। কিছু খাওয়া যাক।
ইচ্ছা এখন নার্সিংহোমে। ফোন করল। না! লাইন লাগছে না।নার্সিংহোমের ভেতর শোনা যায় না অবশ্য। আগামীকে ফোন করল। শোনা গেল-
কিরে পৌঁছাতে পারলি? দাদাদের কী অবস্থা? আছে তো।
দাদা দরজা বন্ধ করে বাইরের দিকে ওদের কাঠভাস্কর্য করা বাড়িতে রেখেছে।
কী শয়তান রে!বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি! খাচ্ছিস কি!
ইচ্ছার দেওয়া করমচা বড়ি। আর আমার নীল ট্যাবলেটটা খাস। ক্ষিদে আর ক্লান্তি দুটোই কাটবে।
আচ্ছা। রাখছি। আমি মাছ ভাজছি।
মাছ কোথায় পেলি?
একজন বিক্রি করছিল।
ওইসব খাস না। আর মন দিয়ে আমার কথা শোন, পরে কথা বলব। এখানে মড়ক শুরু হয়েছে।
তাই নাকি! মাকে ফোন করে বলিস পৌঁছাতে পেরেছি।
বিকেলে দাদা বলল, না। তোর কোন সমস্যা নেই। ঘরে চল।
আমি ফিরে যাব।
রাগারাগি করিস না ভাই। সরকার বাড়ির উপর নজর রাখছে।
কেন?
সবাইকার বাড়িতেই নজর রাখছে। কিন্তু আমার বাড়িতেই বেশি রাখছে নজর। ঘরের ভেতর আয়।
কেন নজরে রাখছে!
পরে বলব।
সখি বেশ রোগা হয়ে গেছে। কাজ করে নিজে হাতে।রোবট কোন কাজফাজ করছে না। বলল,এখানে কেমন দমবন্ধ অবস্থা। খবর শুনেছ?
আঃ। থাক না।
কী খবর? পূর্বস্থলী নেই? কি হবে জেনে ওর?
‘সে কী!কী বলছ’-
বলে ধপ করে বসে পরল আজসেতু।
ও যদিও আমার মাসতুতো বোন, তবু তোমারও তো বন্ধু ছিল!
দাদা বলল,কত চেনা জানা মারা গেল! কেবল পূর্বস্থলী কেন?
একটু পর আজ বলল, আমি আসছি।
আরও বের হওয়া যাবে না।
সংস্রব চলে এল। খরগোশের মতো নরম স্বভাব আর মানুষের মত আকার! খরগোশ আর মানুষের বাচ্ছা। খুব আদরে বলল, আমি এই শিশিটা নোব।
দুটো ট্যাবলেট নাও।
আর দাদা ইচ্ছা রোবটের জন্য অনেক পুকুরের ভাপ পাঠিয়েছে। ওটা কোথায়?
ও অকেজো।
চল কেজো করি। সখি বলল, থাক এখন। দাদা বলল,থাকবে কেন? রোবটের কাছে বসে দাদা পুকুর জলের ভাপ দেওয়া মাত্র ওটা চাঙ্গা হয়ে গেল। ঘরের কাজ রান্নাবান্না শুরু করল। চা বানিয়ে খাওয়াল।
দাদা বলল,শোন আমরা ট্যাবলেট খেয়েছি। আগামী যে কষ্ট করে ট্যাবলেট দিয়েছে তা কোন কাজে লাগবে না। ওর পাওয়ার এ স্তরে কাজে লাগবে না। ওকে বলার দরকার নেই।
সখি বলল,কেন বলবে না! আগামীর বুদ্ধি চিরকাল কম।
তুই কি এনেছিস রে?
দেখে নাও।
কী এসব!
কোটর পাখির ঘ্রাণ, মাছেদের আলাপন,করমচা ট্যাবলেট আর পুকুর জলের ভাপ—
ধুত্, এসব লাগবে না। কেবল করমচা ট্যাবলেট দিস। ওটাই কাজের।
করমচা ট্যাবলেট যদি এগুলো দিয়ে তৈরি কর কোনদিন মড়ক হবে না।
আচ্ছা। সিরিয়াস কথা বলছি মন দিয়ে শোন।
সখি বলল, শোন আজ,পূর্বস্থলীর বাড়ি তেমন দূরে নয়। কি করছে শপথ একবার দেখে এসো। বাচ্ছাটা কেমন আছে কী জানি।
বাধা দিল কালকেতু,
ওকে যেতে হবে না।
আমার কিছু হবেনা। যাব।
কালকেতু সঙ্গে এল আজসেতুর। কালকেতুর সঙ্গে পুলিশ। কেন কে জানে?
পূর্বস্থলীর বর শপথও ডাক্তার।শয্যাসীন। দরজা খোলা। মুমূর্ষু শপথকে প্রথমেই করমচা বড়ি খাওয়াল ওরা। তারপর কোটর পাখির ঘ্রাণ শোঁকালো আর করমচা ট্যাবলেট দিল আবার। রাতে চাঙ্গা হয়ে গেল শপথ অনেকটা।
শপথ,তোমাদের বাচ্ছা কোথায়?
কোয়েরান্টেইন হোমে।
কোথায় তোমার বউ? পূর্বস্থলী? কোন কবরে আছে পূর্বস্থলী? বল শপথ।
কবরস্থানে নয়। ওই ঘরে আছে ও।
মারা যায় নি!
না। প্রচার করেছি। নাহলে ওর মৃত্যুদণ্ড হোত!কেননা ওর হাতে রাজকন্যা মারা গেছে। ওর দোষ ছিল না।
এখন এসব থাক।
দাদা ও ঘরে যাবার আগেই পূর্বস্থলীকে করমচা ট্যাবলেট দিল।
ট্যাবলেট খেয়ে অনেকটা চাঙ্গা হল পূর্বস্থলী। ক্ষীণ স্বরে বলল,
কে? কালকেতু দা!
না, আজসেতু আছে।
সে এখানে!
কালকেতু পূর্বস্থলীর ঘরে।
আজসেতু শিরশির করে উঠল সাফল্য আর উত্তেজনায়। হাত মুঠো করে ধরে চুমু খেল পূর্বস্থলীর কপালে। অদৃশ্য হল পূর্বস্থলী আর আজসেতুর ঘর থেকে কালকেতু। বাবা ধীরাজ যে মূল্যবোধ ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, আজও কিছু কিছু বেঁচে আছে।

ফিরছে আজসেতু।দাদা কিছুতেই এল না। সখি এখনো সরকারি নজরবন্দি। হটস্পট জোন হয়েছে তাদের বাড়ি যারা ল্যাবে ছিল। মানে কড়া নিরাপত্তা। কোথাও যাওয়া যাবে না। কারণ যে ল্যাবে সখি কাজ করত সেখানকার ভাইরাস বিস্ফোরণ ঘটেছে! ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুরো শহর তছনছ। সখি তাই এই দেশ থেকে যেতে পারবে না।বলেই বসেছিল কালকেতুকে আজসেতু, বৌদি,মানে সখির জন্যেই এরকম হল?
সখিকে নাম ধরেই ডাকে আজসেতু।
ও জেনে করেনি-বলল কালকেতু।আরও বলল,ল্যাবে বাস্ট ওর হাতে হয়ওনি। হয়েছে পিদিমের হাতে। কিন্তু ওর প্রাইভেট ল্যাব, তাই দোষ ওর। এ সময় ওকে ছেড়ে যাওয়া যায় না।
সখি তোমার ল্যাবে কাজ করত না?
করত। এই ল্যাবটা সন্ধের সময় ছিল।
আজসেতু যত ট্যাবলেট এনেছিল সব দিয়ে দিয়েছে এখানে- কালকেতুর সঙ্গে ফানুসে করে গিয়ে গিয়ে। বাঁচান গেছে ন’শ নিরানব্বই জনকে। কোটর পাখির ঘ্রাণ কাজে লেগেছে সংকর প্রজাতির বাচ্ছাদের। শ্বাস নিয়েছে তাতেই হাজার তিনেক সংকর বাচ্ছা।পুকুর জলের ভাপ সঞ্জীবিত করেছে চারশ পঞ্চান্নটা রোবটকে। ফলে নিরাপদে কাজ করা বেড়েছে এই স্তরে।
মাছেদের কলতান ফুরফুরে করেছে মানুষকে ক’দিনেই। কালকেতুর সঙ্গে গিয়ে প্রাইভেট ভাবে রোগগ্রস্ত পাড়াতে ঘুরে ঘুরে কাজটা সেরেছে। যেতে চেয়েছিল পূর্বস্থলীও। দাদা বারণ করায় যায়নি। বরং বাচ্ছাকে কোয়েরান্টাইন হোম থেকে নিয়ে এসে জীবনের কবিতা শেখাচ্ছে। এ ফর আপেল বি ফর… পড়াচ্ছে।
ওদিকে বাড়ি বা নার্সিংহোম যেখানেই থাকুক ঘনঘন স্কাইপ করছে ইচ্ছা। ইতিমধ্যে সে জেনেছে,পূর্বস্থলী মরেনি। ফলে ওর ধারণা রাতদিন আজসেতু পূর্বস্থলীর সঙ্গেই কাটাচ্ছে। তাই ওর সাথে দিনরাত স্কাইপে থাকছে আজসেতু। ইচ্ছা তার মার সাহায্য নিয়ে স্বর্ণলতা দিয়ে তৈরি যোগাযোগ-প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করেছে। কথা বলতেই হচ্ছে তাই। ও চটলে খুব খারাপ লাগে আজসেতুর। তবু ইচ্ছা চটবেই। অবশ্য বেচারাকে বেড়াতে আসার বদলে বাড়িতে বসে থাকতে হল। কত গোছগাছ করছিল। পূর্বস্থলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। কেবল ইচ্ছা যখন চানে গেছিল বারবার পূর্বস্থলীর দেখা করার কারণ শুনে নিল। পূর্বস্থলী বলল,সে আজসেতুর সঙ্গে কথা বলবে।
দেখা যাবে। তাছাড়া তুমি এখন ঘরেই থাকো।
শপথ কাজে বেরোচ্ছে আর আমি ঘরে বসে থাকব? আমিও হসপিটালে যাব। কিন্তু আমার কিছু ট্যাবলেট চাই।
সব বিতরি দিয়েছি নন্দিনী।
তোমার সঙ্গে আর নেই?
আছে।
সীমান্ত পার হলে আর তো ট্যাবলেট লাগবে না তোমার। তখন নিয়ে নোব। দেবে তো আবার?
তুমি কি সীমান্ত পর্যন্ত যাবে?
হমমম্।
কী চায় ও?
বেশ কিছু ট্যাবলেট! আর বাঁচার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সঙ্গে যেতে।
আজসেতু ফানুসে ভেসে ওঠে। ইচ্ছা এখন নার্সিংহোমে। তবু জানায়, এবার সে বেরোচ্ছে। আর কথা বলা হবে না। কারণ যোগাযোগ থাকবে না আর দশ মিটার ওপরে উঠলেই। সঙ্গে সঙ্গে উড়ছে পূর্বস্থলী।সেটা ইচ্ছা জানে না। বলল আজসেতু কৌতূহল নিয়েই,পূর্বস্থলী কেবলই এগিয়ে দিতে যাচ্ছ? কেন?
আবার দেখা হবে কি না হবে!
প্রথমস্তরে এসো।
তোমার বউ ইচ্ছা রেগে যাবে।
ইচ্ছাই কিন্তু জোর করে এখানে পাঠিয়েছে। নর্সিংহোমে ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছে। ওষুধ জোগাড় করেছে। শাশুড়িমার থেকে।
আমি জানি।
কি করে?
তোমাদের সব খবর আমরা পাই।
কি করে?
ইচ্ছে করলে সুইচ- টিভিতে।
তাছাড়া উনি তোমার শাশুড়ি শপথের জেম্মার বোন।
আমার শাশুড়ির?
ইয়েস, আজ।
কথা বলতে বলতে স্তরসীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মাঝে এসে পড়েছে ওরা। আজসেতু বলল, ট্যাবলেট আর আছে?
স্তরসীমান্ত রক্ষী বলল,
আমরা ভয়ে খাইনি। প্রায় একশ চুরাশিটা বড়ি ফেরত দিল স্তররক্ষী। আজসেতু সব দিয়ে দিল পূর্বস্থলীকে। যদিও জানে আর এসব লাগবে না পূর্বস্থলীর দেশের কারুর।
কেননা এক সপ্তাহ পরেই উপরের স্তর নিচের স্তর থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যাত্রা করবে। যা এদ্দিন হয়নি। তিন স্তর একসঙ্গে ছিল। ওরা এবার বিচ্ছিন্ন হবার নাটবল্টু খুলতে পেরেছে। সামনের সপ্তাহে ওপর স্তর যাবে সবুজবাগে। যেখানে কোটর পাখির ঘ্রাণ,
পুকুর জলের ভাপ ,
মাছেদের আলাপন, আর করমচা গাছ পাওয়া যাবে প্রচুর।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!