ন্যাটোকে অস্থিতিশীল করতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘নতুন পরিকল্পনা’

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

ন্যাটোকে অস্থিতিশীল করতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘নতুন পরিকল্পনা’

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোকে অস্থিতিশীল করে তুলতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘নতুন পরিকল্পনা’ হাতে নিয়েছেন। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইকের এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করে বলা হয়েছে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঘুঁটি হিসেবে ন্যাটোর নতুন সদস্য দেশ ফিনল্যান্ডকে ব্যবহার করছে রাশিয়া। ফিনিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ড সীমান্তে একটি অভিবাসী সংকট তৈরি করে দেশটিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে মস্কো। যার স্পষ্ট প্রভাব পড়তে পারে ন্যাটো মিত্রদের ওপর।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবিলা করার জন্য ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়েছিল ন্যাটো। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই জোট শুরুতে ১২টি দেশ নিয়ে এই গঠিত হলেও বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১। এ জোটে সদ্য অন্তর্ভুক্ত নতুন সদস্য ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ড। যেটির সঙ্গে রাশিয়ার কয়েকশ’ মাইল দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতিবেশী দেশ ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার তেমন কোনও বিবাদের কথা শোনা না গেলেও এবার অভিযোগ উঠেছে, সদ্য ন্যাটো সদস্য হওয়া প্রতিবেশী এই দেশটিকে ব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন পুতিন।

ফিনল্যান্ডের অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধকে ব্যবহার করে দুদেশের সীমান্তে একটি অভিবাসী সংকট তৈরি করে দেশটিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে রাশিয়া।

ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত যোগাযোগ-বিষয়ক রাষ্ট্রদূত মিকো কিনুনেন একটি ফোন সাক্ষাৎকারে নিউজউইককে বলেন, ফিনল্যান্ডের নর্ডিক প্রতিবেশী দেশ রাশিয়ার সঙ্গে একটি ছাড়া বাকি সব সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে হেলসিঙ্কি।

তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ফিনল্যান্ডের ক্ষতি করতে চায় অথবা ক্ষতির চেষ্টা করতে এবং বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, এটি স্পষ্ট।’

ন্যাটোর সদস্য হতে চলেছে সুইডেন
ন্যাটোর পতাকা। ছবি সংগৃহীত

দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করা আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায়, গত সপ্তাহে রাশিয়ার সঙ্গে আটটি সীমান্ত ক্রসিংয়ের মধ্যে চারটিই বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে ফিনিশ কর্তৃপক্ষ। হেলসিঙ্কি বলেছে, ফিনল্যান্ড-রাশিয়া সীমান্তে এত সংখ্যক অভিবাসীর ঠেলে দেওয়া একটি ইচ্ছাকৃত চক্রান্ত। তবে ফিনল্যান্ডের এ দাবি অস্বীকার করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী পেটেরি অর্পো বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে শুধু উত্তরের সীমান্ত ক্রসিং রাজা-জুসেপ্পি খোলা থাকবে। এর আগে, রুশ সীমান্তরক্ষীরা অভিবাসীদের ফিনিশ সীমান্তে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে দেশটি।

আর্কটিক অঞ্চলে রাশিয়ার সঙ্গে একটি সীমানা রয়েছে ন্যাটো সদস্য দেশ নরওয়ের। এ দেশটিও বলছে, প্রয়োজনে একটি সংক্ষিপ্ত নোটিশ দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের একমাত্র সীমান্ত ক্রসিংটিও বন্ধ করে দেওয়া হবে। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী আরেকটি ন্যাটোভুক্ত দেশ এস্তোনিয়া। তাদেরও অভিযোগ, ভিসা বা বসবাসের অনুমতি ছাড়াই আশ্রয়প্রার্থীদের সীমান্তে পাঠাচ্ছে মস্কো।

সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির থিংকট্যাংক দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানায়, ফিনিশ সীমান্তে রাশিয়া যা করছে তা ‘স্পষ্টত হাইব্রিড যুদ্ধ কৌশল’, যা এর আগে ২০২১ সালে পোলিশ সীমান্তে রাশিয়া এবং বেলারুশ প্রয়োগ করেছিল; এবং এটি ‘সম্ভবত ন্যাটোকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে’ই করা হচ্ছে।

ন্যাটোকে অস্থিতিশীল করতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘নতুন পরিকল্পনা’
একদল ন্যাটো সৈন্য। ফাইল ছবি

আইএসডব্লিউ বলছে, ওই সময় বেলারুশের নিরাপত্তাকর্মীরা মধ্যপ্রাচ্যের হাজার হাজার অভিবাসীকে বেলারুশের সীমান্ত দিয়ে পোল্যান্ডে যেতে সাহায্য করেছিল, যা ন্যাটোর বিরুদ্ধে বেলারুশের ওপর আগ্রাসন চালানোর মিথ্যা অভিযোগ তোলার সুযোগ করে দিয়েছিল ক্রেমলিনকে।

কয়েক দশকের জোটনিরপেক্ষতার পর চলতি বছরের এপ্রিলে ন্যাটোর ৩১তম সদস্য হয়ে ওঠে ফিনল্যান্ড। ইউক্রেনে রাশিয়ার চালানো সর্বাত্মক আগ্রাসনের কারণে দেশটির মধ্যে নিরাপত্তার আশঙ্কা দেখা দেয়। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে ন্যাটো জোটে যোগদানে উৎসাহী হয় ফিনল্যান্ড।

ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার ৮৩০ মাইল সীমানা রয়েছে। তাই দেশটি ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত হওয়াকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি রাশিয়া। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পেছনে অন্যতম একটি কারণ ছিল রাশিয়ার সীমান্তের দিকে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ, এমন যুক্তিই দেখিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন।

ফিনিশ মন্ত্রী কিনুনেন বলেছেন, ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান করার আগে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ব্যবহার করা একটি কৌশলের পুনরাবৃত্তি করছে মস্কো। ওই সময় তারা ফিনল্যান্ডের সীমান্তে ‘মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকার শরণার্থীদের পাঠানোর মাধ্যমে তাদের তারা হাতিয়ার হিসেবে’ ব্যবহার করেছিল। তবে তখন ফিনল্যান্ড ন্যাটোর সদস্য ছিল না।

এ বিষয়ে কিনুনেন বলেন, ‘ওই সময় মস্কো ফিনিশ সীমানা ইচ্ছাকৃত লঙ্ঘন করেছিল কিনা তা নিয়ে ফিনিশদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি থাকলেও এখন তা পানির মতো পরিষ্কার।’

ন্যাটোকে অস্থিতিশীল করতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘নতুন পরিকল্পনা’
সমুদ্রে ন্যাটোর মহড়া। ফাইল ছবি

কিনুনেন আরও বলেন, ‘রাশিয়া হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ দিকে এসে ইউরোপের বিভিন্ন অংশে পদক্ষেপ নিতে পারে। এক্ষেত্রে ন্যাটোর আর্টিক্যাল ৫-এর সুযোগে ন্যাটোকে সংঘাতে লিপ্ত হতে বাধ্য করতে পারে। এমন কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য হবে পশ্চিমা সমাজকে বিভক্ত করে আঞ্চলিক উদ্বেগ সৃষ্টি করা, যা ইউক্রেনের প্রতি আমাদের সমর্থনকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে।’

ন্যাটোর আর্টিক্যালের অনুচ্ছেদ ৫-এ বলা হয়েছে, ন্যাটোভুক্ত কোনও এক সদস্য রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ ন্যাটোর সব সদস্য রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সে আক্রমণ সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকবে ন্যাটোর।

বৈষম্যহীনতার প্রতি ফিনল্যান্ডের অবস্থান জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষার আবেদনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে হেলসিঙ্কি এখনও আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর আইন মেনে চলবে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেনে পুতিনের পরিচালিত আগ্রাসনের মাধ্যমে ‘আন্তর্জাতিক আইনের মূল মূল্যবোধ লঙ্ঘন করছে রাশিয়া।’ একইসঙ্গে জাতিসংঘ সনদে উল্লেখ করা ‘আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি আমাদের বাধ্যবাধকতার সুবিধাও নিচ্ছে’ দেশটি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!