বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত অবস্থান স্পষ্ট করল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
7 মিনিটে পড়ুন
'টু প্লাস টু' বৈঠকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত অবস্থান স্পষ্ট করল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। শুক্রবার ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের বিদেশ সচিব ভিনয় কোয়াত্রা।

তিনি বলেছেন যে, একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সেদেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে। তিনি এটাও বলেছেন, “বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেদেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।“

মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পরে সন্ধ্যায় যৌথ বিবৃতি জারি করেছে ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয় নি।

নিজেদের অবস্থান “খুবই স্পষ্ট করে” যুক্তরাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরার বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা ব্যাখ্যা করছেন যে আমেরিকা যাতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশী চাপ না দেয়, সেই বার্তাই শুক্রবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে ভারত।

‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি’

‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পরে শুক্রবার বিকেলে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক।

সেখানেই এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব ভিনয় কোয়াত্রা মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি আমরা। তৃতীয় কোনও দেশের নীতিমালা নিয়ে আমাদের মন্তব্য করার জায়গা নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেদেশের মানুষ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত অবস্থান স্পষ্ট করল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে
বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে ভারত তার স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে । ফাইল ছবি

“এক বন্ধু এবং সঙ্গী দেশ হিসাবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান জানাই আমরা। একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সেদেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে,” বলছিলেন মি. কোয়াত্রা।

তিনি একটু জোর দিয়েই বলেন, “বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি, আমরা যেভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি, সেটা খুব স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি।“

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের এই অবস্থান নতুন নয়। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যেভাবে নানা মন্তব্য করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা, তার বিপরীতে গিয়ে ভারত ‘তাদের’ দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে মার্কিন মন্ত্রীদের সামনে তুলে ধরার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

‘ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার দরকার ছিল’

বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের নানা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুক্রবারের বৈঠকে ভারত তাদের অবস্থান যে স্পষ্ট করে দিয়েছে, সেটাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ী বলছেন, “ভারতের অবস্থান স্পষ্টই ছিল, কিন্তু সেটা ‘খুব স্পষ্ট’ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিবের সামনে তুলে ধরাটা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে আমাদের।“

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত অবস্থান স্পষ্ট করল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন । ফাইল ছবি

তার কথায়, “ভারতের পক্ষে বাংলাদেশে একটা স্থিতিশীল সরকার থাকা খুবই জরুরী আমাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে। সেদেশের ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে শেখ হাসিনার সরকারের ওপরে নানাভাবে চাপ বাড়াচ্ছে, সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও তারা যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে, সেগুলো তো ঘটনা।

“তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যাতে তারা বেশি মাথা না ঘামায়, সেটা ভারত স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে,” বলছিলেন অধ্যাপক লাহিড়ী।

ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে যাচ্ছে?

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। প্রতিবছর টু প্লাস টু বৈঠক যেমন করছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা, তেমনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আর নরেন্দ্র মোদীর মাঝে-মধ্যেই সাক্ষাত হয়।

এরকম একটা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কেন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়বে ভারত?

পররাষ্ট্র সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ শশাঙ্ক মাট্টু তার এক্স (আগেকার টুইটার) হ্যাণ্ডেলে পর পর বেশ কয়েকটি পোস্ট করেছেন বাংলাদেশ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রর ভূমিকা ও ভারতের অবস্থান নিয়ে।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত অবস্থান স্পষ্ট করল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে
মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ একাধিক দেশের সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লিতে পৌঁছন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্বন্দ্বে যাচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের মাথা গলানোর কারণে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হুমকির মুখে পড়ছে।“

প্রথম এই পোস্টের সঙ্গে ভারত আর বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর একটা ছবি দিয়েছেন মি. মাট্টু।

এর পরবর্তী পোস্টগুলিতে মি. মাট্টু ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “ওয়াশিংটন প্রকাশ্যেই হাসিনা সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাসিনা সরকার আর আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে মানবাধিকার ইস্যুতে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমেরিকার অবস্থান একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।“

তিনি এও বলেছেন যে, ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শরিক হলেন শেখ হাসিনা। তিনি যদি নির্বাচনে পরাজিত হন, তাহলে প্রতিবেশীদের নিয়ে ভারতের নীতিমালাতেও সমস্যা হবে।

বৈঠকের আগে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) বিশেষজ্ঞ রিক রসো বলেছিলেন, ভারত-মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ইস্যুগুলোর প্রভাবই কিন্তু বেশি থাকবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, “গাজা বা ইউক্রেনের যুদ্ধের চেয়ে বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলঙ্কায় কী ঘটছে, সেটাই কিন্তু ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ!”

নির্দিষ্ট কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “যেমন ধরুন বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী আলাদা। মিয়ানমারের সামরিক জুনটার সঙ্গেও দুই দেশ আলাদাভাবে কথা বলছে।”

“ওদিকে মালদ্বীপে একটি নতুন চীন-পন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। অস্থিরতার আশঙ্কা আছে শ্রীলঙ্কা বা নেপালে। ভারতের কাছে এই ইস্যুগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অনেক সরাসরি যুক্ত”, মন্তব্য করেন রিক রসো।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত অবস্থান স্পষ্ট করল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ‘টু প্লাস টু’ সংলাপ। ওয়াশিংটন ডিসি, ২০২২

যৌথ বিবৃতিতে নেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

শুক্রবারের বৈঠকে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে, তেমনই কথা হয়েছে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়েও, এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।

আবার প্রতিরক্ষা খাতেও দুই দেশের সহযোগিতা, যৌথ উৎপাদন নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে।

সন্ধ্যায় দুই দেশে তরফে যৌথ বিবৃতি জারি করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে যে দুই দেশের চার মন্ত্রী ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, মধ্য প্রাচ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েলের ওপরে ‘ভয়াবহ সন্ত্রাসী’ হামলা, গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের কাছে সহায়তা পৌঁছিয়ে দেওয়া এবং আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

আবার সামরিক সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়টি যৌথ বিবৃতিতে আসে নি।

বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন যে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও আনুষ্ঠানিক যৌথ বিবৃতিতে তৃতীয় কোনও দেশের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বিষয় না আসাটাই স্বাভাবিক।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!