ফুকুশিমার পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় সাগরে ছাড়া নিয়ে কেন এত প্রশ্ন?

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
সাগরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়া প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ছবি রয়টার্স

ফুকুশিমার পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় সাগরে ছাড়া নিয়ে কেন এত প্রশ্ন?

নাটকীয়তার পর ক্ষতিগ্রস্ত ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে ১০ লাখ টনেরও বেশি ‘পরিশোধিত’ তেজস্ক্রিয় পানি পর্যায়ক্রমে ছাড়া শুরু করেছে জাপান। সরকার বলছে, এতে প্রশান্ত মহাসাগরের জলজপ্রাণীর ওপর প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু কিছু বিজ্ঞানী একমত হতে পারছেন না। ফলে বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তে দেখা দিয়েছে অনেক প্রশ্ন।

২০১১ সালের বড় ধরনের ভূমিকম্পে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এতটাই শক্তিশালী ছিল যে ভূ-কম্পনে সুনামি দেখা দেয়। ১৯৮৬ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের বিস্ফোরণের পর এটিকে বড় দুর্ঘটনা বলে বিবেচনা করা হয়। এত বছর তেজস্ক্রিয় পানি নিয়ে বিপদে জাপান সরকার।

Untitled 2 100 ফুকুশিমার পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় সাগরে ছাড়া নিয়ে কেন এত প্রশ্ন?
ফুকুশিমায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি রয়টার্স

জাতিসংঘের বিশেজ্ঞদের নিয়ে চলে দফায় দফায় বৈঠক। শেষ পর্যন্ত এই পানি গত ২৪ আগস্ট থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে রিলিজ দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথম থেকেই বিরোধিতা করে আসছে চীন। এই বিরোধের জের ধরে বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) জাপান থেকে সামুদ্রিক খাবার আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে বেইজিং। দক্ষিণ কোরিয়াও কঠোর অবস্থানে।

এ ঘটনায় জাতিসংঘের পরমাণু নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ইউএনএইসি) বলেছে, এই পানিতে তেজস্ক্রিয় দূষণের মাত্রা এতটাই কম যে মানুষ ও পরিবেশে সামান্য প্রভাব ফেলতে পারে।

- বিজ্ঞাপন -

সাগরে ফেলা কতটুকু নিরাপদ?

২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে সুনামি আঘাত হানে জাপানে। এতে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩টি চুল্লি প্লাবিত হয়। গরম পানি ঠাণ্ডার শীতলীকরণ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। ফলে পরমাণুচুল্লির কেন্দ্রটি উত্তপ্ত হয়ে যায়। পানি তখন তেজস্ক্রিয় পদার্থের সঙ্গে মিশে দূষিত হয়ে পড়ে। এ জন্য প্রতিদিন জাপানের ১৭০ টন শীতল পানির প্রয়োজন পড়ে। এই পরিস্থিতে দূষিত পানি পরিশোধিত করে সাগরে ছাড়া শুরু হয়েছে। সময় লাগতে পারে আনুমানিক ৩০ বছর।

Untitled 3 86 ফুকুশিমার পরিশোধিত তেজস্ক্রিয় সাগরে ছাড়া নিয়ে কেন এত প্রশ্ন?
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি দৃশ্য যখন শোধিত তেজস্ক্রিয় ছেড়ে দেওয়া শুরু করে। ছবি রয়টার্স

জাপান সরকার জানিয়েছে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে জায়গার প্রয়োজন। ফলে ওখানে যে বড় বড় পানির ট্যাংকগুলো রয়েছে সেগুলো সাগরে ধসে পড়লে বড় বিপদ হবে। সুতরাং এ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে।

এই বর্জ্য পানি সাগরে ফেলার আগে তেজস্ক্রিয় পদার্থ অপসারণ করা সম্ভব হলে, এ নিয়ে এতটা বিতর্ক সৃষ্টি হতো না। কিন্তু সেই কাজটি করতে পারেনি টোকিও। সমস্যার জায়গাটা হচ্ছে ট্রাইটিয়াম। যেটি হাইড্রোজেনের একটি তেজস্ক্রিয় উপাদান। যা পানি থেকে আলাদা করতে এমন প্রযুক্তি দুনিয়ায় এখনও তৈরি হয়নি। কিন্তু এর পরিবর্তে একটা উপায় বের করে জাপান সরকার। তেজস্ক্রিয় পানিতে আরও পানি মিশিয়ে ক্ষতির প্রভাব কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে একমত হতে পেরেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তবে প্রভাব নিয়ে সব বিজ্ঞানী একমত নন। সব জায়গার পানিতে ট্রাইটিয়াম পাওয়া যায়। কিন্তু ট্রাইটিয়ামের মাত্রা কম হয়, প্রভাবও সামান্য।

ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়া শুরু সাগরে, চীনে নিষিদ্ধ জাপানি সামুদ্রিক খাবার
জাপান ধ্বংসপ্রাপ্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে শোধিত তেজস্ক্রিয় ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে জাপানি দূতাবাসে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে আটক করা হয়েছে। ছবি রয়টার্স

বাস্তবে প্রমাণ দেখতে শুক্রবার ২৪ আগস্ট টেপকো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সাগরের পানির যে নমুনা তারা সংগ্রহ করেছে, তাতে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা নিরাপদ সীমায় রয়েছে। ট্রাইটিয়ামের মাত্রা প্রতি লিটারে ১ হাজার ৫০০ বিকিউ’র নীচে।

- বিজ্ঞাপন -

সমালোচকরা মনে করেন, সাগরের তলদেশের সামুদ্রিক প্রাণী ও মানুষের ওপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন। পোর্টসমথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওলজিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক জেমস স্মিথ বলেছেন, ভালো করে দেখলে এই পানি পান করতে আপনার সমস্যা হবে না। কারণ, বর্জ্য পানি দূষণ মুক্ত করা হয়েছে। আরও পানি মিশিয়ে দূষণ আরও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে ফরাসি গবেষণাগারের পদার্থবিদ ডেভিড বেইলি বলছেন, ‘আসল প্রশ্নটা হচ্ছে সেখানে কতটুকু ট্রাইটিয়াম থেকে যাচ্ছে?

অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, সাগরে বর্জ্য পানি ছাড়ার ফল কেমন হতে পারে, এখনই অনুমান করাটা মুশকিল। আরও সময়ের প্রয়োজন।

- বিজ্ঞাপন -
ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়া শুরু সাগরে, চীনে নিষিদ্ধ জাপানি সামুদ্রিক খাবার
দক্ষিণ কোরিয়ায় অ্যাক্টিভিস্টদের বিক্ষোভ। ছবি রয়টার্স

গ্রীনপিস ইস্ট এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পরমাণু বিশেষজ্ঞ শন বার্নি বলেছেন, প্রাণী বা উদ্ভিদে ট্রাইটিয়াম সরাসরি ঢুকলে অবশই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা কমে যাওয়া এবং ডিএনএসহ কোষের গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ বিষয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, সাগর সমগ্র মানবজাতির সাধারণ সম্পত্তি। জোরপূর্বক ফুকুশিমার পারমাণবিক বর্জ্য পানিকে ছাড়া অত্যন্ত স্বার্থপর ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কাজ। যা আন্তর্জাতিক জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে।

এদিকে, প্যাসিফিক আইল্যান্ডস ফোরামের সভাপতি ও কুক আইল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক ব্রাউন বলেন, সবকিছু মাথায় নিয়েই একটা মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। এটা জটিল বিষয়। এ নিয়ে সবাই একমত না হতেই পারেন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!