জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে অ্যান্টার্কটিকায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়েছে অ্যান্টার্কটিকার এম্পেরর প্রজাতির পেঙ্গুইন। এরই মধ্যে এ প্রজাতির প্রায় ১০ হাজার পেঙ্গুইন ছানার বিপর্যয়কর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবিসি জানায়, সাঁতারোপযোগী পানিরোধী পালক গজানোর আগেই পেঙ্গুইনের ছোট ছোট ছানাগুলোর পায়ের নিচের বরফ গলে তা ভাঙতে শুরু করে। ফলে হয় পানিতে ডুবে কিংবা বরফ-ঠাণ্ডা পানিতে জমে ছানাগুলো মারা যায়।
![জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে অ্যান্টার্কটিকায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু 38 Untitled 2 96 জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে অ্যান্টার্কটিকায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/08/Untitled-2-96.jpg)
ঘটনাটি ঘটেছে গত বছর অ্যান্টার্কটিকার পশ্চিমে, বেলিংশাউসেন সাগরের সম্মুখভাগে। স্যাটেলাইটের ছবিতে সে দৃশ্য ধরা পড়েছে।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, বিশ্ব উষ্ণায়নের এই যুগে বরফ ক্রমাগত গলতে থাকায় চলতি শতকের শেষ নাগাদ ৯০ শতাংশেরও বেশি এম্পেরর পেঙ্গুইন কলোনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
কারণ ব্যাখ্যায় বিবিসি-কে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের (বিএএস) ড. পিটার ফ্রেটওয়েল বলেন, “এ (এম্পেরর) প্রজাতির পেঙ্গুইন তাদের প্রজনন চক্রের জন্য সাগরের বরফের ওপর নির্ভরশীল; ছানাদের বিকাশে এই বরফ তাদের জন্য একটি স্থায়ী প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু সেই বরফই যদি যথেষ্ট এলাকাজুড়ে না থাকে, কিংবা দ্রুত গলে যায়- তাহলে এই পাখিরা বিপদে পড়ে যাবে।”
তবে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পারলে- আশা আছে। আর যদি তা না পারি, তাহলে এই আইকনিক, সুন্দর পাখিগুলোকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তেই ঠেলে দেব আমরা।”
![জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে অ্যান্টার্কটিকায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু 39 Untitled 3 83 জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে অ্যান্টার্কটিকায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/08/Untitled-3-83.jpg)
ড. ফ্রেটওয়েল এবং তার সহকর্মীরা ‘কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে ২০২২ সালে পেঙ্গুইনের ওই মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞানীরা বেলিংশাউসেন সাগরের কাছে পাঁচটি কলোনি ট্র্যাক করেছেন। এগুলো হল- রথসচাইল্ড দ্বীপ, ভার্দি ইনলেট, স্মাইলি দ্বীপ, ব্রায়ান উপদ্বীপ এবং ফ্রগনার পয়েন্ট।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সেন্টিনেল-২ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে, তারা পেঙ্গুইনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হন।
মার্চের দিকে দক্ষিণ গোলার্ধে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক পাখিরা সাগরের বরফে ঝাঁপ দেয়। সেখানে তারা মিলিত হয়, ডিম পাড়ে, ডিম ফুটিয়ে ছানা বের করে এবং ছানারা বড় হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত তাদের দেখভাল করে
![জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে অ্যান্টার্কটিকায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু 40 Untitled 4 73 জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে অ্যান্টার্কটিকায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/08/Untitled-4-73.jpg)
ডিসেম্বর বা জানুয়ারির কাছাকাছি সময়ে সাধারণত নতুন পাখিরা সমুদ্রে চলে যায়। কিন্তু গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, সাঁতারের জন্য ছানাগুলোর প্রয়োজনীয় পালক গজানোর আগে নভেম্বরেই সামুদ্রিক বরফের চাঁই ভাঙতে শুরু করেছিল।
ফলে পাঁচটি কলোনির চারটিতেই প্রজনন ব্যর্থ হয়; শুধুমাত্র উত্তরের রথসচাইল্ড দ্বীপ কিছুটা সফল হয়েছে।
২০১৬ সালের গ্রীষ্ম থেকেই অ্যান্টার্কটিকার বরফ প্রবলভাবে গলে যাচ্ছে। মহাদেশজুড়ে বরফজমা পানির মোট এলাকা হ্রাসের নতুন রেকর্ড হয়েছে।
২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ দুই গ্রীষ্মে রেকর্ড হারে বরফ গলেছে; বলা যায়, বেলিংশাউসেন সাগর প্রায় বরফের আবরণ বিহীন হয়ে পড়েছিল।
পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার কুফল এম্পেরর পেঙ্গুইনরা ভোগ করছে বলে জানান ফ্রেটওয়েল ও তার সহকর্মীরা। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এম্পেরর পেঙ্গুইনের ৬০ টিরও বেশি পরিচিত কলোনির এক তৃতীয়াংশই বরফ গলার কারণে দুর্ভোগে পড়েছে।
![জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে অ্যান্টার্কটিকায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু 41 Untitled 5 30 জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে অ্যান্টার্কটিকায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/08/Untitled-5-30.jpg)
অন্যদিকে পৃথিবীর আরেক প্রান্ত, আর্কটিক অঞ্চলেও দশকব্যাপী সামুদ্রিক বরফ ধীরে ধীরে গলছে।
অ্যান্টার্কটিকের সামুদ্রিক বরফ বিশেষজ্ঞ ড. ক্যারোলিন হোমস বিবিসি-কে বলেন, “আমরা এখন যা দেখছি তার সঙ্গে আগের যা দেখেছি তার বিস্তর ফারাক রয়েছে। আমরা পরিবর্তন হবে সেটি ধারণা করেছিলাম, কিন্তু তা যে এত দ্রুত হবে সেটি ভাবনায় ছিল না।”
“আর্কটিকের ওপর বিভিন্ন গবেষণা মতে, জলবায়ু উষ্ণায়ন পরিস্থিতি বদলে দেওয়া গেলে উত্তর মেরুতে সমুদ্রের বরফ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। তবে অ্যান্টার্কটিকেও তা ঘটবে কিনা সেটি আমাদের জানা নেই। কিন্তু এটি মনে করার কারণ আছে যে, যথেষ্ট ঠাণ্ডা পেলে সমুদ্রের বরফ পুনর্গঠিত হবে।”
প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) এম্পেরর পেঙ্গুইনদের ‘বিলুপ্তের হুমকিতে’ থাকা প্রজাতি হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে।
তাছাড়া, বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়তে থাকার কারণে এই পেঙ্গুইনগুলোর জীবনযাত্রা ঝুঁকির মুখে পড়ায় এদেরকে জরুরি ভিত্তিতে ‘অরক্ষিত’ ক্যাটাগরিতে রাখার প্রস্তাবও করা হয়েছে।