যুদ্ধে যাওয়া এড়াতে ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে দেশ ছাড়ছেন অনেক ইউক্রেনীয়

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
সেনা সংগ্রহে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে ইউক্রেন। প্রতীকী ছবি রয়টার্স

যুদ্ধে যাওয়া এড়াতে ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে দেশ ছাড়ছেন অনেক ইউক্রেনীয়

রাশিয়ার চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইউক্রেন নিজেদের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে নতুন সেনা নিয়োগ করে যাচ্ছে। এরপরও ধারণা করা হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর হাজারো ইউক্রেনীয় নাগরিক অবৈধভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

অনেকেই এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে দেশ ছেড়ে ইউরোপের অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে বাড়িতে লুকিয়ে থাকছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানখবর জানিয়েছে।

ইউক্রেনের সাধারণ সেনা সমাবেশের নিয়ম অনুসারে যুদ্ধে সক্ষম ১৮ বছরের বেশি বয়সী সব পুরুষরা সেনাবাহিনীতে নিয়োগের উপযুক্ত। এছাড়া ৬০ বছরের কম বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের দেশ ত্যাগ করা নিষিদ্ধ।

আক্রমণের পর প্রথম সপ্তাহগুলোতে কয়েক হাজার সাধারণ ইউক্রেনীয় দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে স্বেচ্ছায় যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের এই অবদান দেশকে স্বাধীন রাখতে এবং প্রাথমিক আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করেছিল।

এক বছরেরও বেশি সময় পরে প্রাথমিক নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে অনেকেই এখন মৃত, আহত বা যুদ্ধ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। তাদের শূন্যতা পূরণে বাহিনীতে নতুন সেনা নিয়োগের প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত যারা যুদ্ধ করতে চায় তাদের বেশিরভাগ যোগ দিয়েছেন। ফলে এখন যুদ্ধে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সেনা নিয়োগের চেষ্টা করছে দেশটি।

তিনের বেশি সন্তানের পিতা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ চাকরিতে যারা কাজ করছেন তাদের সেনা নিয়োগের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ডাকা হলে বাকি সবাই যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

যুদ্ধে যাওয়া এড়াতে ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে দেশ ছাড়ছেন অনেক ইউক্রেনীয়
একদল ইউক্রেনীয় সেনা। ছবি রয়টার্স

সেনা সংগ্রহের জন্য সামরিক নিয়োগ কর্মকর্তারা রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। মাঝে মাঝে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নোটিশ দেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, কর্মকর্তারা পুরুষদের ভ্যানে করে নিয়োগ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কয়েকজন ইউক্রেনীয় পুরুষ বলেছেন, সেনাবাহিনীতে যোগদানের নোটিশ গ্রহণ তাদের পছন্দ না। কিন্তু যুদ্ধরত একটি দেশে বসবাসকারী হিসেবে তাদের ডাকা হলে তারা যোগ দেবেন। কিন্তু অনেকেই তা এড়াতে মরিয়া এবং সবার পক্ষে ৫ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া সম্ভব হয় না। অন্যরা সেনাবাহিনীতে যোগদান এড়াতে বাড়িতে লুকিয়ে থাকছেন।

পূর্ব ইউক্রেনের একটি কারখানার মালিক বলেছেন, সকালে যাতায়াতের সময় নিয়োগ কর্মকর্তাদের দ্বারা তুলে নেওয়ার হুমকি থাকায় অনেক শ্রমিক কাজে আসতে ভয় পাচ্ছে।

নতুন সেনাদের রণক্ষেত্রে পাঠানোর আগে কয়েক সপ্তাহের ট্রেনিং দেওয়া হয়। অনেককে ফ্রন্টলাইন যুদ্ধের প্রয়োজনীয় বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কোর্সের জন্য ব্রিটেনে পাঠানো হয়। যদিও এই প্রশিক্ষণ প্রায়শই প্রাথমিক বলে মনে করা হয়।

যুদ্ধে যাওয়া এড়াতে ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে দেশ ছাড়ছেন অনেক ইউক্রেনীয়
গ্রাড রকেট নিয়ে তৈরি একটি ইউক্রেনীয় আর্টিলারি ইউনিট। ছবি সংগৃহীত

ঘুষ দিয়ে ইউক্রেন ছাড়ার ক্ষেত্রে ওডেসা প্রধান শহরে পরিণত হয়েছে। এখানকার সামরিক নিয়োগ কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্পেনের তার ৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ রয়েছে। তবে শুধু ওডেসা নয়, পুরো ইউক্রেনজুড়ে এই দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। সামরিক নিয়োগ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শতাধিক ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুর্নীতি এতটা বেড়েছে যে ঘুষ গ্রহণ এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে সক্ষম এমন প্রাপ্ত বয়স্কদের দেশ থেকে পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত ইউক্রেনের আঞ্চলিক সামরিক নিয়োগ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তাকে ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়েছে এবং সব আঞ্চলিক সামরিক নিয়োগ কর্মকর্তাদের অপসারণ করা হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ভিডিওতে জেলেনস্কি বলেছেন, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নগদ ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণ বা লড়াইয়ের যোগ্য লোকদের ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার মতো অভিযোগ রয়েছে।

পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে ইউক্রেন
বাখমুতের ফ্রন্টলাইনে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা। ছবি রয়টার্স

যুদ্ধের শুরুতে যোগ দেওয়া অনেক ইউক্রেনীয় মনে করেন সেনাবাহিনী যোগদান এড়াতে চাওয়া বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া কিছু না। দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব স্বীকার করছে, সেনা নিয়োগ কঠিন হবে কিন্তু ইউক্রেনের সামনে তা অব্যাহত রাখা ছাড়া উপায়নেই। কারণ রাশিয়াকে প্রতিহত করতে হলে সেনা নিয়োগ প্রয়োজন। ইতোমধ্যে মস্কো লাখো নতুন সেনা সংগ্রহ করেছে।

জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক সম্প্রতি স্বীকার করে বলেছেন, জনগণ সেনাবাহিনীতে যোগদান সম্পর্কে ইতিবাচক হবে, এটা আশা করা অবশ্যই কঠিন। যারা প্রথমে গিয়েছিল তারা ছিল সবচেয়ে দেশপ্রেমিক ছিল। কিন্তু তারা ১৭ মাস ধরে আছে এবং আমাদের পালাক্রমে তাদের কাজে লাগানো প্রয়োজন।

অবশ্যই সেনাবাহিনীতে যোগদান ভীতিকর, এর অর্থ মৃত্যু বা অক্ষমতা। এটি ২১ শতক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি খোঁজা কাউকে এখন বন্দুক হাতে তুলে নিতে হবে দেশকে রক্ষায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সমাজের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন, গুরুত্ব ব্যাখ্যা করছেন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!