ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় ইউক্রেন
রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ক্রিমিয়ার একমাত্র সংযোগ সেতুকে নিশানা বানিয়ে শনিবার হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালে মস্কোর দখল করা উপদ্বীপকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযান জোরদার করেছে কিয়েভ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিয়েভের লক্ষ্য হলো উপদ্বীপে রাশিয়ার অবস্থানকে দুর্বল করা। যাতে করে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে দখলদার বাহিনীর অবস্থান ধরে রাখা ও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়।
পাল্টা আক্রমণে বড় ধরনের অগ্রগতির সম্ভাবনা ম্লান হয়ে যাওয়ার পর ইউক্রেন এখন পশ্চিমাদের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ক্রিমিয়ার ভেতরে ও বাইরে আক্রমণ চালাচ্ছে।
ক্রিমিয়ার রাশিয়াপন্থি প্রশাসনিক প্রধান সের্গেই আকসিয়োনভ বলেছেন, শনিবার ভোরে কার্চ প্রণালিতে দুটি ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর তিনি আবার বলেছেন, ওই এলাকায় আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনীয় সেনারা কার্চ সেতুতে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার চেষ্টা চালিয়েছে।
আকসিয়োনভকে উদ্ধৃত করে রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সাময়িক সময়ের জন্য সেতুর ওপর ধোঁয়ার মেঘ দেখা গিয়েছিল। হামলার বিষয়ে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা কোনও মন্তব্য করেননি।
আগস্ট মাসের শুরুতে ক্রিমিয়া ও রাশিয়ার দখলে থাকা দক্ষিণ ইউক্রেনের ভূখণ্ডকে সংযুক্ত করা দুটি সেতুতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এই দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ভেদ করতে হিমশিম খাচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী।
![ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় ইউক্রেন 38 crimi 1 ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় ইউক্রেন](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/08/crimi-1.jpg)
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রিমিয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনা করে ইউক্রেন আশা করছে যদি উপদ্বীপটিকে বিচ্ছিন্ন করা যায় তাহলে দখলকৃত অঞ্চলে রুশবাহিনীর অভিযান পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে।
এতে রাশিয়া এক ধরনের পিছু হটতে বা সমঝোতায় বাধ্য হবে, কিংবা এই সুযোগে ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারে ইউক্রেন অভিযান শুরু করতে পারবে। একই সময়ে ইউক্রেন দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
সরকার সমর্থিত কিয়েভভিত্তিক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো মাইকোলা বিয়েলিয়েস্কভ বলেছেন, যখন রণক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না তখন এমন হামলার গুরুত্ব বেড়ে যায়। পরিস্থিতি জটিল করে এবং সময় ক্ষেপণ করে এমন সবকিছু আমাদের জন্য সুবিধাজনক।
![ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় ইউক্রেন 39 crimia 2 ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় ইউক্রেন](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/08/crimia-2.jpg)
জুন মাসে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রায় ১৫০ বর্গমাইল এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। কিন্তু রাশিয়ার মাইনফিল্ড, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং বিমানবাহিনীর শক্তির সঙ্গে লড়াই করার কারণে প্রত্যাশামতো দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে না। ক্রিমিয়া উপদ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের আকারের মতো। কিন্তু এর কৌশলগত এবং প্রতীকী গুরুত্ব অপরিসীম।
রবিবার ইউক্রেনীয় বাহিনী ক্রিমিয়া ও অধিকৃত দক্ষিণ ইউক্রেনের মধ্যে দুটি প্রধান সড়ক সরবরাহ রুটের একটিকে লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। চোনহার ব্রিজ হলো রাশিয়ার ক্রিমিয়ার লজিস্টিক কেন্দ্র ঝানকোই থেকে সরাসরি রুট। হেনিচেস্কের আরেকটি রুটেও আঘাত হানে ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র।
ইউক্রেনের আংশিক দখলকৃত খেরসন অঞ্চলের রুশ নিযুক্ত গভর্নর রবিবারের হামলার প্রভাব কম করে তুলে ধরে বলেছেন, বেসামরিক যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী এবং সশস্ত্র বাহিনী কীভাবে কাজ করে তাতে কোনও পরিবর্তন হবে না।
![ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় ইউক্রেন 40 ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় ইউক্রেন](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/08/crimi-a-2-1024x579.jpg)
সামরিক বিশ্লেষকরা অবশ্য বলেছেন, সেতুটির ক্ষতির ফলে পন্টুন সেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক বহরগুলোকে ক্রিমিয়া ও অধিকৃত দক্ষিণ ইউক্রেনের মধ্যে দীর্ঘ পথ ব্যবহার করতে বাধ্য করবে।
রাশিয়ার সামরিক সরবরাহ নিয়ে গবেষণা করা পেন্টাগনের প্রতিরক্ষা চুক্তি ব্যবস্থাপনা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা ট্রেন্ট টেলেনকো বলেছেন, ইউক্রেনের হামলা রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। রাশিয়ার সামরিক যান চলাচল ও রেল ফেরি কিয়েভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট।
দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনে একটি অগ্রগামী বাহিনীর কমান্ডার ক্যাপ্টেন আনাতোলি খারচেঙ্কো বলেছেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলো রণক্ষেত্রে একটি পার্থক্য তৈরি করছে। রসদ চ্যালেঞ্জ দক্ষিণের রণাঙ্গনে রাশিয়ার কামানের সুবিধা হ্রাস করেছে।