ভারত-বাংলাদেশের লেনদেন রুপিতে চালু , চালু হবে টাকায়ও

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
7 মিনিটে পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশের লেনদেন রুপিতে চালু , চালু হবে টাকায়ও

মঙ্গলবার ১১ই জুলাই থেকে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রুপির ব্যবহার শুরু করেছে বাংলাদেশঢাকায় আজ দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।

একটি পাইলট কর্মসূচি হিসেবে এই লেনদেন চালু হচ্ছে। আপাতত শুধুমাত্র রূপিতে লেনদেন হবে, পর্যায়ক্রমে টাকায়ও লেনদেন চালু হবে বলে বলছে কর্তৃপক্ষ।

এখন বাংলাদেশের কোনও ব্যবসায়ী ভারতের সাথে আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন। এতদিন বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পুরোটাই হতো মার্কিন ডলারে।

কিন্তু সাম্প্রতিক ডলার সংকটের কারণে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার সরাসরি রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির মূল্য লেনদেনের কথা জানিয়েছে।

প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ অংশে সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড এবং ভারতের অংশে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং আইসিআইসিআই ব্যাংকের মাধ্যমে এ লেনদেন হবে। পরবর্তীতে দুই দেশের আরও ব্যাংক ধীরে ধীরে এই প্রক্রিয়ায় যোগ দেবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

কিন্তু ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্য নিয়ে যে লেনদেন শুরু হচ্ছে, তার ফলে কার্যত ডলার কতটা সাশ্রয় হবে?

ভারত-বাংলাদেশের লেনদেন রুপিতে চালু , চালু হবে টাকায়ও
শিগগিরই এই বাণিজ্যে টাকাও যুক্ত হবে বলে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিশ্চিত করেছেন।

ডলার কতটা সাশ্রয় হবে?

কর্তৃপক্ষ বলছে, শতভাগ বাণিজ্য রুপিতে হবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশ ভারতে যতটা পণ্য রপ্তানি করবে, ততটাই কেবল রুপিতে লেনদেন হবে। এর বাকিটা মানে যা বাংলাদেশ আমদানি করে তার অর্থ শোধ করা হবে হবে ডলারে।

এর মানে হচ্ছে, দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্যের দাম রুপিতে দেবে ভারত, যা বাংলাদেশ ভারত থেকে পণ্য কিনতে ব্যবহার করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে বছরে প্রায় দুই বিলিয়ন বা দুইশো কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ।

এর বিপরীতে দেশটি থেকে আমদানি হয় প্রায় ১৪ বিলিয়ন বা ১৪০০ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় সাত গুণ।

ফলে সাধারণভাবে ধারণা করা যায়, নতুন ব্যবস্থায় বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে কম মার্কিন ডলার সাশ্রয় করতে পারবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন ছয় শতাংশ খরচ সাশ্রয় হবে

বাংলাদেশ এবং ভারতের ব্যবসায়ীরা এতোদিন স্থানীয় মুদ্রায় মার্কিন ডলার কিনে বাণিজ্যিক লেনদেন নিষ্পত্তি করতেন। কিন্তু রুপিতে বাণিজ্য হলে তার প্রয়োজন হবে না।

পোশাক রপ্তানিকারকদের অন্যতম সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, এর ফলে বাংলাদেশের একটি বড় অংকের ডলার সাশ্রয় হবে এবং তাতে রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকরা লেনদেনে লাভবান হবেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, সরাসরি রুপিতে লেনদেনের ফলে অন্তত ছয় শতাংশ খরচ সাশ্রয় হবে ব্যবসায়ীদের।

তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, “ভারতের সাথে বাণিজ্যের সময় একবার টাকা থেকে ডলারে, আবার ওদিকে রুপি থেকে ডলারে রূপান্তর করতে হয়। এই রূপান্তর করতে গিয়ে আমরা হিসেব করে দেখেছি ছয় শতাংশের মতো গ্যাপ বা লস হয়। অর্থাৎ ১০০ ডলারে ছয় ডলারের মতো। দুই দেশ নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন করলে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীরা এই লস থেকে রেহাই পাবে।”

সেই সাথে একটি মাত্র মুদ্রার ওপর আমদানি-রপ্তানির নির্ভরশীলতা কিছুটা কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বাণিজ্য শুধুমাত্র ভারতীয় রুপিতে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, এই লেনদেন সুবিধা টাকায়ও চালু করতে হবে।

মি. হাতেম বলেছেন, শিগগিরই এই বাণিজ্যে টাকাও যুক্ত হবে বলে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ শুরুতে রুপি এবং টাকা উভয় মাধ্যমেই লেনদেনের জন্য আবেদন করেছিল। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তা অনুমোদনও করেছে।

ভারত-বাংলাদেশের লেনদেন রুপিতে চালু , চালু হবে টাকায়ও
বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীরা এতোদিন স্থানীয় মুদ্রায় মার্কিন ডলার কিনে বাণিজ্যিক লেনদেন নিষ্পত্তি করতেন।

ডলার-সংকট কমবে না, বলছেন বিশ্লেষকেরা

ব্যবসায়ীরা সাশ্রয়ের কথা বললেও, বিশ্লেষকেরা সে বক্তব্যের সাথে একমত নন। তারা বলছেন, সেটি হওয়ার সম্ভাবনা কম, বরং এর ফলে ডলার সংকট বেড়ে যেতে পারে বলেও আশংকা করছেন কেউ কেউ।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলছেন, “যেহেতু বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বড় ধরণের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেজন্য রুপিতে লেনদেনে ডলার-সংকট কমবে না, বরং বাড়বে।”

তিনি বলেছেন, নতুন ব্যবস্থায় এই বাণিজ্যের ফলে বাংলাদেশ আগে যে দুইশো কোটি ডলার পেতো, সেটা এখন ভারত রুপিতে পরিশোধ করবে। ফলে বাংলাদেশ ওই পরিমাণ ডলার আর পাচ্ছে না। এতে ডলারের সরবরাহ কমে যাচ্ছে।

মি. মনসুর বলছেন, রুপিতে বাণিজ্যের সুযোগ আবার সব রপ্তানিকারকদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। যে ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র ভারত থেকে কাঁচামাল আমদানি করে এবং ভারতেই রপ্তানি করে তারা হয়তো এই লেনদেনে কিছুটা সুবিধা পাবেন।

কিন্তু এতে ব্যবসায়ীদের যে লাভ হবে সেই লাভের অর্থ ডলারে রূপান্তর করা এবং সেখানে প্রকৃত দাম পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মি. মনসুর। কেননা রুপির দাম ডলারের দামের মতো স্থিতিশীল নয়।

এদিকে, এ ব্যবস্থার সাফল্যের অনেকটাই রুপি এবং টাকার দর নির্ধারণের ওপর নির্ভর করবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, টাকা ও ভারতের মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।

এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের কোনও লাভ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ভারত চাইছে, তাদের মুদ্রাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী করতে।

“ভারতীয় মুদ্রা রুপি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনও রিজার্ভ মুদ্রা নয়। তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ মুদ্রার ব্যবহার বাড়লে ভারতীয় মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং বাংলাদেশে ভারতীয় রুপির চাহিদা বাড়বে,” তিনি জানান।

ভারত মার্কিন ডলারের পাশাপাশি নিজস্ব মুদ্রা রুপিতে নেপাল, ভুটানসহ ১৮টি দেশের সাথে সীমিত পরিসরে বাণিজ্য করছে। তবে দেশটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সঙ্গে রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শুরু করতে যাচ্ছে।

ভারত-বাংলাদেশের লেনদেন রুপিতে চালু , চালু হবে টাকায়ও
ভারত-বাংলাদেশের লেনদেন রুপিতে চালু , চালু হবে টাকায়ও 41

টাকা-রুপি বাণিজ্যের আলোচনা যেভাবে শুরু

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য টাকা ও রুপিতে করার আলোচনা প্রায় এক দশক ধরে চলছে। দীর্ঘ বিরতির পর রিজার্ভ সংকটের মধ্যে বিষয়টি আবার সামনে আসে।

গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেন করার প্রস্তাব করে ভারত।

এরপর চলতি মার্চে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ একনেক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপিত হয়।

পরের মাসে ভারতের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে টাকা ও রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত বছরের মার্চে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

কিন্তু রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের তুলনায় আমদানি বিল পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় এ বছরের জুলাইয়ে রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

রিজার্ভ কমার অন্যতম কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দেড় বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার ধারাবাহিক দরপতন হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত আছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!