বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১১ কোটিতে পৌঁছেছে: জাতিসংঘ
ইউক্রেইন ও সুদানের সংঘাতে লাখ লাখ উদ্বাস্তু যোগ হওয়ায় বিশ্বজুড়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা বেড়ে রেকর্ড ১১ কোটিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান।
নতুন করে প্রায় এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ যুক্ত হওয়ার পর গত বছরের শেষ নাগাদ এই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১০ কোটি ৮৪ লাখে।
![বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১১ কোটিতে পৌঁছেছে: জাতিসংঘ 38 বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১১ কোটিতে পৌঁছেছে: জাতিসংঘ](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2022/09/mayanmar-rohinga-1024x537.jpg)
এর আগে কখনোই এক বছরে এত বাস্তুচ্যুত বাড়েনি, বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলেছে ইউএনএইচসিআর।
গত বছর শেষের ওই সংখ্যাও এখন বেড়ে ১১ কোটিতে দাঁড়িয়েছে, এর প্রধানতম কারণ সুদানের ৮ সপ্তাহের সংঘাত, বলেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপো গ্রানি্দ।
“এমন একটা প্রতিবেদন হচ্ছে, যার জন্য পুরো বিশ্বকেই অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এই জোরপূর্বক স্থানচ্যুতির সমাধান এতই কঠিন হয়ে উঠছে যে তার সমাধান তো দূর টেবিলে আলোচনার জন্যই তোলা যাচ্ছে না।
“মেরুকরণ প্রবল এমন একটি বিশ্বে আছি আমরা, যেখানে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা যাবতীয় মানবিক ইস্যুকে খারিজ করে দিচ্ছে,” জেনিভায় সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি।
২০১১ সালে সিরিয়ায় সংঘাতের আগের দুই দশক বিশ্বজুড়ে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ও আন্তর্জাতিক শরণার্থীর সংখ্যা মোটামুটি ৪ কোটিতে স্থির ছিল বলে জানাচ্ছে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন।
পরের এক যুগে প্রতিবছর এই সংখ্যা বেড়েছে; বাড়তে বাড়তে এখন তা ২০১১-র প্রায় তিন গুণে এসে পৌঁছেছে।
![বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১১ কোটিতে পৌঁছেছে: জাতিসংঘ 39 বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১১ কোটিতে পৌঁছেছে: জাতিসংঘ](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/06/Untitled-2-17.jpg)
এখন গড়ে বিশ্বের প্রতি ৭৪ জনের মধ্যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা একজনেরও বেশি, বলছে ওই প্রতিবেদন।
এসবের জন্য সংঘাত, নিপীড়ন, বৈষম্য, সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলোকে দায়ী করেছেন গ্রান্দি।
ইউএনএইচসিআরের হিসাবে, মোট শরণার্থী এবং যাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা দরকার তাদের প্রায় অর্ধেকই এসেছে তিনটি দেশ থেকে- সিরিয়া, ইউক্রেইন ও আফগানিস্তান।
শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মকানুন এবং কোথাও কোথাও তাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন গ্রান্দি। তবে তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
“১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের মূলনীতি অনুসরণে দেশগুলোর মধ্যে শিথিলতার মাত্রা বাড়তে দেখছি আমরা, এমনকি ওই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী অনেক দেশের মধ্যেও এমনটা দেখা যাচ্ছে,” ব্রিফিংয়ে বলেছেন তিনি।
![বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১১ কোটিতে পৌঁছেছে: জাতিসংঘ 40 বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ১১ কোটিতে পৌঁছেছে: জাতিসংঘ](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/06/rohinga.jpg)
গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীরা অভিবাসী ও শরণার্থীদের বিষয়ে দায়িত্ব ভাগাভাগির চুক্তিতে পৌঁছেছেন, এরকম বেশকিছু অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি গ্রান্দি।
“কিছু বিষয়ে উদ্বেগ আছে, তা সত্ত্বেও (ইইউ মন্ত্রীদের চুক্তি) এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি আমি। ইউরোপীয়রা কোনো এক বিষয়ে একমত হয়েছে, এতে আমরা খুব খুশি,” বলেছেন তিনি।
গ্রান্দি কেনিয়ারও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আফ্রিকার এই দেশটি এখন তাদের দেশে আশ্রিত ৫ লাখ শরণার্থীর জন্য নতুন সমাধান খুঁজছে; এ আশ্রিতদের মধ্যে দারিদ্র্য, খরার কারণে আফ্রিকার শিং অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা অনেকেও আছেন।