কুয়াকাটায় হোটেলে ৫০% ছাড়, তারপরও পর্যটকশূন্য
সাগরকন্যা কুয়াকাটার আবাসিক হোটেলগুলোতে ৫০% ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবুও দেশের আকর্ষণীয় এই পর্যটন কেন্দ্রে আসছেন না ভ্রমণপিপাসুরা।
চলতি রমজান মাসের শুরু থেকেই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকনের এই সৈকতে। এ জন্য পর্যটকদের টানতে ছাড় দিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
![কুয়াকাটায় হোটেলে ৫০% ছাড়, তারপরও পর্যটকশূন্য 38 2 44 কুয়াকাটায় হোটেলে ৫০% ছাড়, তারপরও পর্যটকশূন্য](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/04/2-44.jpg)
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রমজানের আগে ছুটির দিনগুলোতে আবাসিক হোটেলে কক্ষ সংকটে পড়েছেন অসংখ্য পর্যটক। কমিউনিটি ট্যুরিজমের আওতায় অনেক পর্যটক আশ্রয় নিতেন আশেপাশের বাসাবাড়িতে। অনেকে আবার খোলা আকাশের নিচে, বাসের মধ্যে, সৈকতের বেঞ্চে রাতযাপন করেছেন। কিন্তু এখন সেই চিত্র একেবারেই উল্টো।
পর্যটক না থাকায় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোকান খুলছেন না। ফলে চরম বেকাদায় পড়েছেন পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত নিম্ন আয়ের মানুষরা।
শুক্রবার শেষ বিকালে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেখা গেছে, জিরো পয়েন্ট এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সের সামনে তিন জন পুলিশ সদস্য বসে আছেন। সৈকতে মোটরসাইকেল রেখে কয়েকজন চালক আড্ডা দিচ্ছেন। একটু দূরে কয়েকজন ফটোগ্রাফার ক্যামেরা নিয়ে বসে বসে আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাচ্ছেন।
![কুয়াকাটায় হোটেলে ৫০% ছাড়, তারপরও পর্যটকশূন্য 39 3 43 কুয়াকাটায় হোটেলে ৫০% ছাড়, তারপরও পর্যটকশূন্য](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/04/3-43.jpg)
গোটা সৈকতে ৪০ থেকে ৫০ জন পর্যটক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন কাওসার আহমেদ ও লিমা আক্তার দম্পতি। তারা গাজীপুর থেকে এসেছেন। কথা হয় তাদের সঙ্গে। কাওসার আহমেদ বলেন, ‘এই প্রথম কুয়াকাটায় এসেছি। কোথাও কোনও ঝামেলা হয়নি। এখানকার পরিবেশ খুব ভালো। সৈকতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ঘুরতে বেশ ভালোই লাগলো। তবে পর্যটক না থাকায় সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে।’
সৈকতের জিরো পয়েন্ট, লেবুর বন, শুঁটকি পল্লী, লাল কাকড়ার চর, মিশ্রীপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, কাউয়ারচর, গঙ্গামতিসহ সব দর্শনীয় স্থান পর্যটকশূন্য। গুটিকয়েক ফুচকা বিক্রেতা দোকান খুলে বসে আছেন। সৈকতের ভাসমান দোকান, শুঁটকি মার্কেট, ঝিনুক মার্কেট, রাখাইন নারী মার্কেটে পর্যটকদের আনাগোনা নেই। আগের মতো নেই হইচই কোলাহল।
![কুয়াকাটায় হোটেলে ৫০% ছাড়, তারপরও পর্যটকশূন্য 40 kuakata কুয়াকাটায় হোটেলে ৫০% ছাড়, তারপরও পর্যটকশূন্য](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2022/05/kuakata.jpg)
সৈকতের ফটোগ্রাফার বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘রমজানের আগে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা আয় হতো। এখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করতে কষ্ট হয়। রমজানের শুরু থেকেই পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে। এখন বাজার-সদায় কিনতে কষ্ট হয়। ঈদের বাজার কীভাবে করবো জানি না।’ ফুচকাবিক্রেতা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘রমজানের আগে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় হতো। এখন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। বেচা-কেনা একেবারে কমে গেছে। খুব সমস্যার মধ্যে দিন কাটছে।’
মোটরসাইকেল চালক ইব্রাহিম বলেন, ‘রমজানের আগে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় করতাম। বর্তমানে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করতে কষ্ট হয়।’
সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘রমজানের আগে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। এখন ৫০০ টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়।’
![কুয়াকাটায় হোটেলে ৫০% ছাড়, তারপরও পর্যটকশূন্য 41 4 30 কুয়াকাটায় হোটেলে ৫০% ছাড়, তারপরও পর্যটকশূন্য](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/04/4-30.jpg)
কথা হয় আবাসিক হোটেল সী-ভিউ ম্যানেজার সোলায়মান ফরাজীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের হোটেলে ৫০% ছাড় চলছে। রমজানের শুরু থেকেই প্রায় সব হোটেল ছাড় দিয়েছে।’
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (কুটুম) সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক হোসাইন আমির বলেন, ‘প্রতি বছর রমজান মাসে পর্যটক কম থাকেন। ঈদকে সামনে রেখে হোটেল-মোটেলগুলোতে সাজসজ্জার কাজ চলছে।’
এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও কুয়াকাটা গেস্ট হাউজের মালিক আব্দুল মোতালেব শরীফ বলেন, ‘রমজানের শুরু থেকেই পর্যটক কমে গেছে। এই ফাঁকে আমাদের হোটেলগুলোতে আসবাবপত্রসহ আনুষঙ্গিক মালামাল করে ঈদে আগত পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পুলিশ পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘বর্তমানে পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম। তারপরও যেসব পর্যটক কুয়াকাটায় আসছেন আমরা তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দিচ্ছি।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন