ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মত হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন

ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। এবার সিরিজের শেষ ম্যাচে ইংলিশদের ১৬ রানে হারিয়ে বাংলাওয়াশের (হোয়াইট ওয়াশ) স্বাদ দিল টাইগাররা। যেকোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথমবার এমন কীর্তি গড়ল বাংলাদেশ।

কর্মব্যস্ত দিনেও আজ তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না মিরপুরের গ্যালারিতে। হোম অব ক্রিকেট খ্যাত শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম ছেয়ে যায় লাল-সবুজে। আশা নিয়ে মাঠে আসা সমর্থকদের হতাশ করেননি সাকিব আল হাসানরা। বহুদিন পর আবারো শোনা গেল আতাহার আলির কণ্ঠে সেই ‘বাংলাওয়াশ’।

- বিজ্ঞাপন -

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছিলেন লিটন (৭৩) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (৪৭)। তাদের ব্যাটে ভর করে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রানের পুঁজি গড়ে স্বাগতিকরা। তবে স্রেফ ২ উইকেট হারিয়ে পুঁজি ১৬০ রানের নিচে থাকা চোখে পড়ার মতোই। এক পর্যায়ে রান আরও বেশি হবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ ৫ ওভারে রান ওঠে মাত্র ২৭, বাউন্ডারি আসে স্রেফ একটি।

ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মত হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ
অর্ধশত পূরণ করার পর লিটন কুমার দাস। ছবি সংগৃহীত

এদিন টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদারের অনবদ্য জুটিতে এগোচ্ছিল স্বাগতিকদের ইনিংস। অন্যদিকে, ক্যাচ মিস আর বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়ায় বারবার সুযোগ হারায় সফরকারীরা। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে যেমন আর্চারের বলে শর্ট থার্ডম্যানে রনির সহজ ক্যাচ মিস করেন তরুণ স্পিনার রেহান আহমেদ। জায়গা থেকে নড়তেও হয়নি রেহানের। অনেক সময় পেয়েছিলেন, দুই হাতে নিয়েছিলেনও বল। কিন্তু শেষ সময়ে তালগোল পাকিয়ে মুঠো থেকে ফস্কে যায় ক্যাচটা!

তবে জীবন পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি রনি। উইকেটে থিতু হওয়ার পরও ইনিংস বড় করতে পারলেন না দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা এই ওপেনার। আদিল রশিদের বলে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ২৪ রান।

রনি দ্রুত ফিরলেও আরেক প্রান্তে ঝড় তোলেন লিটন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতেও ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারছিলেন না তিনি। সিরিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতেই ব্যর্থ ছিলেন এই ওপেনার। তবে শেষ ম্যাচে এসে খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন। ৪১ বল খেলে ৮ বাউন্ডারিতে অর্ধশতক পূরণ করেন লিটন।

ফিফটির পর দ্রুত রান তোলায় মনযোগী ছিলেন লিটন। তবে বেশি দূর এগোতে পারেননি। ক্রিস জর্ডানের করা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে সল্টের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। তার আগে ৫৭ বল খেলে ১০ চার এবং এক ছক্কায় ৭৩ রান করেছেন এই ওপেনার। যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংস।

- বিজ্ঞাপন -

১৩৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর মাঠে নামেন সাকিব আল হাসান। তবে ব্যাট হাতে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।

এদিকে, টার্গেট তাড়া করতে নেমে লজ্জা এড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছে বাটলার-মালানরা। তাদের ব্যাটে এক সময় ম্যাচটা ইংল্যান্ডের অনুকূলেই ছিল। তবে শেষ দিকে তাসকিনদের দারুণ বোলিংয়ে শেষটা রাঙাল বাংলাদেশই।

ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মত হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ
উইকেট পাওয়ার পর তাসকিনের উদযাপন। ছবি সংগৃহীত

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় সফরকারীরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সল্টকে শূন্য রানে ফিরিয়ে ইংলিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি তার প্রথম উইকেট। অবশ্য ৫ রানে সল্টকে হারানোর পর মালান-বাটলারের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ইংলিশরা। বিশেষ করে ডেভিড মালান এদিন শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। দ্বিতীয় উইকেটে জস বাটলারকে সঙ্গে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন পঞ্চাশ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথেই রাখেন এই ওপেনার।

- বিজ্ঞাপন -

প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থ মালান সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। ৪৩ বল খেলে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূরণ করেন তিনি। এরপর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৫৩ রান করে মুস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ধরা পড়েন তিনি।

ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মত হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ
বাটলারকে রান আউট করার পরে মেহেদি হাসান মিরাজ। ছবি সংগৃহীত

মালান ফেরার পরের বলেই রান আউটে কাটা পড়েন বাটলার। ইংলিশ অধিনায়ক সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪০ রান। একই ওভারে দুই সেট ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে আবারও ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। বিপরীতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় ইংল্যান্ড।

এরপর মঈন আলিকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি তাসকিন আহমেদ। ৯ রান করা এই অলরাউন্ডারকে মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান এই পেসার। একই ওভারের শেষ বলে বেন ডাকেটকে বোল্ড করেন তাসকিন। এর ফলে ২ উইকেটে ১০০ থেকে ১২৩ এ পৌঁছাতে আরও তিন উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য ৩১ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের। ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই স্যাম কারানকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর লেগের সারির ব্যাটাররা চেষ্টা করলেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান তোলে ইংল্যান্ড।

রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১৬ রানের জয় পায় স্বাগতিকরা। এর আগে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে চট্টগ্রামে ৬ উইকেট এবং দ্বিতীয়টিতে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছিল সাকিব বাহিনী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৮/২ (লিটন ৭৩, রনি ২৪, শান্ত ৪৭, সাকিব ৪; কারান ৪-০-২৮-০, ওকস ১-০-১২-০, রশিদ ৪-০-২৩-১, আর্চার ৪-০-৩৩-০, রেহান ৩-০-২৬-০, মঈন ১-০-১২-০, জর্ডান ৩-০-২১-০)।

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৪২/৬ (মালান ৫৩, সল্ট ০, বাটলার ৪০, ডাকেট ১১, মঈন ৯, কারান ৪, ওকস ১৩, জর্ডান ২; তানভির ২-০-১৭-১, তাসকিন ৪-০-২৬-২, সাকিব ৪-০-৩০-১, হাসান ৪-০-২৯-০, মুস্তাফিজ ৪-০-১৪-১, মিরাজ ২-০-১৮-০)।

ফল: বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: লিটন কুমার দাস।

ম্যান অব দা সিরিজ: নাজমুল হোসনে শান্ত।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মন্তব্য নেই

Log In

Forgot password?

Don't have an account? Register

Forgot password?

Enter your account data and we will send you a link to reset your password.

Your password reset link appears to be invalid or expired.

Log in

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!