পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারেননি বাংলাদেশের কৃষকরা

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন

পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারেননি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কৃষকরা। বাধ্য হয়ে অনেকে মাটি চাপা দিয়ে পাট জাগ দিয়েছিলেন। অনেক কৃষক আবার একই পানিতে বারবার জাগ দেওয়ায় কালচে বর্ণ ধারণ করেছে সোনালি আঁশ পাট।

সোনালি আঁশ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ফরিদপুরে এবার পাটের বাম্পার ফলন হলেও গুণগত মান বজায় না থাকায় দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। অথচ গুণ-মানে সেরা ফরিদপুরের পাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিও হয়।

জেলার সালথা, নগরকান্দা ও বোয়ালমারী উপজেলা পাট উৎপাদনে সেরা। এখানকার কৃষকদের ভালো-মন্দ নির্ভর করে পাট আবাদে সাফল্যের ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরের হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে পাট। কিন্তু নতুন পাটের ভালো দাম না পেয়ে রীতিমতো হতাশ চাষিরা। লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও যেন উঠছে না। ভালো ফলনও এবার তাদের দুর্দশা ঘোচাতে পারেনি।

কৃষকরা জানান, পানির অভাবে স্বাভাবিকভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় এবার গুণগত মানও বেশ খারাপ হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সালথা, নগরকান্দা, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারীসহ প্রায় সব উপজেলার প্রতিটি হাটেই নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এবার সময়মতো পাট জাগের পানি না পাওয়ায়, বেশি অর্থ খরচ করে ডিজেলচালিত শ্যালো পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে জাগ দিতে হয়েছে। অনেকেই পানির অভাবে মাটির গর্তে পাট জাগ দিয়েছেন। এতে চাষিদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুন।

কৃষকরা বলছেন, বর্তমান বাজারমূল্যে এই ভরা মৌসুমেও উৎপাদন খরচ উঠছে না।

ফরিদপুরের প্রসিদ্ধ বাজার কানাইপুরে সপ্তাহে শুক্র ও মঙ্গলবার হাট বসে। প্রান্তিক চাষিরা তাদের উৎপাদিত পাট এখানে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। ভরা মৌসুমে প্রতি হাটে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার মণ পাট কেনা-বেচা হয়। বর্তমানে কানাইপুর হাটে মণপ্রতি পাটের দাম ২,২০০ থেকে ২,৮০০ টাকা। তবে এ দামে সন্তুষ্ট নন চাষিরা।

এদিকে, ক্রেতাদের ভাষ্য, এবার পাটের গুণগত মান সঠিক নেই। পানি সমস্যার কারণে রং নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ভালো দাম দেওয়া যাচ্ছে না।

কানাইপুর বাজারের পাট নিয়ে আসা সত্তার মাতুব্বর, কালাম মোল্লা, রুস্তুম আলী, সদানন্দসহ বেশ কয়েকজন পাটচাষি বলেন, “এবার পাটের আবাদ ও ফলন ভালো হলেও পানির অভাবে পাট জাগ দিতে কষ্ট হয়েছে। মানে খারাপ, ভালো রং হয়নি, খরচ বেড়েছে। যে দরের আশায় পাট নিয়ে হাটে এসেছি তা মিলছে না। উৎপাদন খরচ বাড়ছে, নিত্যপণের দাম বেড়েছে, কীভাবে সংসার চলবে তাই ভাবছি।”

সালথা উপজেলার গুপিনাথপুর গ্রামের হরিদাস মজুমদার বলেন, “গত বছর প্রতিমণ সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় পাট বিক্রি করেছি। রং খারাপ হওয়ায় সেই পাট এবার সর্বোচ্চ প্রতিমণ ২,০০০ থেকে ২,২০০ টাকায় বিক্রি করছি। তাও ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছে না। খারাপ মানের পাটের প্রভাব ভালো মানের পাটেও পড়েছে। ভালো মানের পাটও সর্বোচ্চ ২,৬০০ থেকে ৩,০০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না। এতে খরচও উঠবে না। অনেক লোকসান গুণতে হবে।”

বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর বাজারের পাট ব্যবসায়ী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “গত বছর এক মণ পাট ৩,৫০০ থেকে ৩,৮০০ টাকা পর্যন্ত দাম ছিল। তেল আর সারের দামও কম ছিল। এতে কৃষকরা মোটামুটি চলতে পেরেছে। তবে এবার পাটের অবস্থা খুবই খারাপ। পানির অভাবে কৃষকরা সঠিক সময়ে জাগ দিতে পারেননি। মাটি খুঁড়ে ও নোংরা-পচা পানিতে জাগ দেওয়ায় পাটের রং কালো হয়ে গেছে। আবার তেল-সার ও দ্রব্যমূল্যের দামও বেশি।”

এ অবস্থায় দাম নির্ধারণ করার পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পাট কেনার দাবি জানান তারা।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!