কবি তৈমুর খানের ছয়টি কবিতা

তৈমুর খান
তৈমুর খান
3 মিনিটে পড়ুন

আমারই অন্তর্গত নিঃশব্দ হরিণী

আমি কোনও দৈব আলো চাইনি
একটি শুধু কালো হরিণ
খুঁজি এই নিশিবনে
তার দুটি জাদুচোখ ছিল
ডাকত আমাকে
মনোবাসনা পুড়ত রোজ
তার নিভৃত আগুনে

আজও নিশি আসে
আজও হরিণীর ডাক
উপেক্ষা করি না আমি

জলের ছায়ায় দেখি ঘোরে
তার স্মৃতির বিমুগ্ধ মাছ।

জল কেটে কেটে খুঁজে দেখি
এখানেও চেয়ে আছে নিঃশব্দ হরিণী।

পায়রা

তবু মনকে রোজ পায়রা বানাচ্ছি
উড়ানের আকাশ নেই যদিও
মনের আকাশেই উড়ুক সেই পাখি

কোথাও কোথাও জ্ঞান বিতরণ হয়
আমি দান নিইনি কারও কাছে
নিজেকে নিজেই ডাকি: আয়! দু’দণ্ড ছায়ায়

শুধু বিহ্বল চেয়ে চেয়ে কেটে যায় দিন
পায়রারা ঘুরপাক খায়, ডাকে বকম বকম
আমার নিভৃতে শান্তি ফিরে আসে

দো-মহালা তিন-মহালায় ধর্মের কাকেরা চেঁচায়

বাস্তবিক আমি আজও প্রলুব্ধহীন
তাদের স্বর্গের কাছে যেতে ভয় পাই

আলোটি নিভে যাবে, পায়রাগুলি তবুও স্বাধীন
নিজস্ব অন্ধকারে তাদের জাগরণ টের পাই
বেড়ালেরা এখানে আসে না, বেড়ালেরা শিকারি মার্জার।

কথার নির্মাণ থেকে

মনে মনে কথা বলতে থাকি
মনে মনে অনুপম ঐশ্বর্যের পথে
নিজেকে নিয়ে যাই

আজ সব বৃক্ষগুলি নাচে
আজ সব সর্বংসহ হৃদয়
ঈশ্বরের হাসি দেখতে পায়

আগুনে পোড়ে না হাত
দয়ার সীমানায় মেঘ
বৃষ্টি দিতে আসে —
ঘুম ভেঙে গেলে জেগে দেখি
নক্ষত্ররা অসম্ভব সৌরভে
পুলকে পুলকে চেয়ে আছে
আর আজন্ম দুঃখের দোকানে
সুখীফুল বিক্রি করে নতুন আলোর

মনে মনে কথা বলতে থাকি
কথার নির্মাণ থেকে
গড়াতে থাকে
আমাদের শিল্প ভবিষ্যৎ।

মা

কার হরিণছায়া পড়ে আছে জলে?
ফুটকি ফুটকি ফুলে ঘোর মায়া
চুম্বন ভেসে উঠছে কালের বাতাসে

মাতৃত্ব আজ ফণিমনসার গাছ
সহজিয়া মরুর মাটিতে বেড়ে ওঠে
দিনান্তে পাখির ভিড়ে মা উড়ে যায়

আঁচল খুলে খুলে অপত্যচাবির ঘুম নামে
দরোজা খুলে যায় লীন অভিমান
বালিশের তুলোয় জমা মেঘে
কান্না লেগে যায়
আমরা জাগি বেঁচে থাকার ভ্রমে

মা আসে, শ্রীরামকৃষ্ণ দেব, মা আসে
ঘরে ঘরে আরতির মাতৃমন্দির
অদ্ভুত পরিত্রাণে চেয়ে থাকে জন্ম আমাদের

নারীজন্ম

তোমার জানালায় চাঁদ এসে উঁকি দেয়
তোমার দরজা খোলে সূর্য
তোমার মাথাভর্তি নক্ষত্রফুল ফোটে
একটি নারীজন্ম পার করে দাও তুমি

আমার আকাঙ্ক্ষাগুলি এবর্ষায় নির্মাণ করেনি নৌকা
কী করে পার হবে এপার ওপার যুগ?
সাঁতারবিহীন প্রবল জোয়ারে ভেসে যাবে সম্পর্ক
তুমি আকাশের ওপারে আকাশ সাজাবে

ডমরুধর এসে বসবে তোমার আকাশে
নিত্য পদ্ম ফুটে উঠবে রাশি রাশি
পূজায় আনন্দ প্রাণ ভরে যাবে
তুমি বিছানা পাতবে অনন্ত শয়ন ঘরে

একটি পৃথিবীর ভেতর আর একটি পৃথিবী জন্ম নেবে।

বিষ

কত বিষ পৃথিবীতে আছে?
বিষে বিষে মরে যায় নন্দকিশোর

একবার হেসে ওঠো দেখি
এইটুকু হাসি দেখবার জন্য
রোজ তোমার কাছে আসি

বিষে বিষে মরে যায় রাই

একবার নাচো দেখি
আমরা সবাই অসহায়
বসে আছি এই পোড়া দিনে
রাতের চিতার কাছাকাছি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
তৈমুর খান জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। পেশায় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১), নির্বাচিত কবিতা (২০১৬), জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা (২০১৭) ইত্যাদি। কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য সম্মান, নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার, আলোক সরকার স্মারক পুরস্কার সহ অনেক পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!