‘ঘোড়েল’ পর্ব – সতেরো

মুসা আলি
মুসা আলি
13 মিনিটে পড়ুন

মালতির সন্ধান লাভ করার পরে সুচরির অনুসন্ধান লাভ করাই যেন প্রদীপের জীবনে প্রধানতম তৃষ্ণা হয়ে উঠল। এত নীচে নেমেও যে দর্শন উপহার দিতে পারল মালতি, তার চেয়ে বড়ো কিছু লুকিয়ে থাকতে পারে সুচরির মধ্যে। মালতির সঙ্গে মিথ্যে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা শুনে সুচরিতা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে এমন ভাব দেখিয়েছিল যে তার জীবন থেকে প্রদীপ নামক সূর্য চিরদিনের জন্য অস্তমিত হয়ে গেছে। আবহমান কালের জীবনীশক্তি তার মধ্যে আর এতটুকু বেঁচে নেই। পরের দিন সকালে যে নতুন করে পূবের আকাশে উদয় হবে, সেই সম্ভাবনা সুচরির মন থেকে সম্পূর্ণ দূর হয়ে গিয়েছিল। ফলত বিচ্ছেদের আগুনে পুড়তে পুড়তে প্রদীপ কতখানি সোনা হয়ে উঠতে পেরেছে, সেই খবুরটুকুও নিতে চায় নি সুচরি। এভাবেই কলেজের প্রিয় সাথি প্রদীপকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল সে। যাওয়া ঠিক কিনা সেই প্রশ্নে প্রদীপ এত দোদুল্যমান হয়ে উঠল যে মাঝে মাঝে মনের আকাশে হারিয়ে যাওয়া সুচরিতা চাঁদ হয়ে ভেসে উঠতে লাগল, যদিও তা খুব বেশি সময় স্থায়ি হল না, অতীত ঘটনাপুঞ্জের স্রোতে দ্রুত ভেসে গেল।
শনিবারের বিকেলে জনাকীর্ণ শিয়ালদহ স্টেশনে সেই সুচরিকে দেখেই চমকে উঠল প্রদীপ। এখানে কেন? তাহলে কী এখন কলকাতায় থাকে? দ্বিধার সমুদ্রে দোল খেতে লাগল, আবেগের প্রাবল্যে ভেসে যেতে যেতে সুচরির সামনে গিয়ে বলল, তুমি এখানে?
এখন কলকাতায় থাকি।
প্রদীপ দুচোখ স্থির করে চেয়ে থাকল সুচরির দিকে, দুঠোঁটের ফাঁকে গোপন হাসির বিস্তার, মনের আকাশে নানা প্রশ্নের উঁকি। সুচরিতার সঙ্গে কতদিন কথা বলার সুযোগ হয় নি। এভাবে যে হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি প্রদীপ। ঘুরিয়ে প্রশ্ন করল, এখন কী করছ?
কেমন আছি, তা জিজ্ঞেস করলে না?
প্রদীপ চুপ করে থাকল।
ভাবছ কী, তোমাকে বাদ দিয়ে খুব সুখে থাকতে পেরেছি?
সুখ-অসুখের প্রশ্ন উঠছে কেন? আজও তোমাকে ঠিকমতো Estimate করতে পারলুম না সুচরিতা।
সুচরিতা ভাবতে পারে নি, এমন প্রশ্ন করে প্রদীপ তাকে বিমর্ষ করে দিতে পারে। এতদিন পরে দেখা, কুশল কামনায় অনেক কথা হতে পারে কিন্তু প্রদীপ সে পথে না গিয়ে খোঁচাখুঁচির প্রসঙ্গে ঢুকে পড়ল? স্মৃতির সরণি বেয়ে পিছনে ফিরতে বাধ্য হল সুচরিতা, মনের আকাশে ভেসে ওঠা সুবিমলের ছায়ামূর্তিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করল। স্রেফ কূট ভালোবাসা নিয়ে সুবিমল তাকে কূটনীতির গহ্বরে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল। আজকাল রাজনীতির কর্মকর্তাকে দেখলে সুবিমলের কথা মনে পড়ে যায়। সকলে যেন একই ছাঁচে গড়ে ওঠা মানুষ। সুবিমলের ফাঁদে পড়ার দৃষ্টান্ত প্রদীপের চোখে পরিষ্কার হওয়ার পরে সুচরি কলকাতায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল। অথচ সেই প্রদীপ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দুটো দিন তাকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে জীবনপণ করে লড়েছে। সুবিমলের কোনো বাধাকে সে তোয়াক্কাই করে নি। সুচরির জীবনে তা আজও ইতিহাস হয়ে বেঁচে আছে। তবুও সে সামান্য ঘটনায় কেন যে তাকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করতে পারল না, সেই দুঃখ উথলে উঠতে লাগল সুচরির আবেগমথিত সমুদ্রে।প্রাইজ বিতরণের প্রথম দিনে সুবিমলের পাঁচ আঙুলের স্পর্শকাতরতায় সাবধান হওয়া উচিত ছিল কিন্তু চাকরি প্রাপ্তির মোহে সুচরি তা হতে পারে নি। তীব্র অনুশোচনায় ডুবে যেতে লাগল, বার বার মনে হল, মনের আকাশে একসময় যে প্রদীপ চাঁদ হয়ে ভেসেছিল, তা বোধ হয় চিরদিনের জন্য অস্তমিত হয়ে গেছে। তার ডাকে সাড়া দেবার মতো মানসিকতা আর বেঁচে নেই। আবার প্রদীপের শ্লেষযুক্ত প্রশ্ন, Estimage সম্পর্কে কিছু বললে নাতো?
তা শোনার মতো ধৈর্য তোমার আছে?
তুমিই আমাকে ধৈর্যহারা করে তুলেছ সুচরি। তুমিই সেই সুচরি যার জন্যে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দুটো দিন জীবনপণ করে সমর্থন যুগিয়েছিলাম। তার কোনো মূল্য দিতে পেরেছ কী?
এত বড়ো মন্তব্য করতে পারলে?
সেটাই সাধারণ ঘটনাস্রোত।
চলো, ওই চায়ের দোকানে বসি, তোমার পুরনো Estimate এর উপর আমার নতুন মূল্যায়ন নিয়ে অনেক কিছু বলার আছে।
প্রদীপ কোনো উত্তর দিল না, আবার সুচরিতার সঙ্গ ত্যাগ করে চলে যেতে মন চাইল না, পায়ে পায়ে চায়ের দোকানের ভিতরে গিয়ে বসল।
সুচরির মুখে হাল্কা হাসি, নিজের অপরাধপ্রবণতা ঢেকে রাখার আন্তরিক সদিচ্ছা।
হাসছ যে?
এতদিন আমাকে ভুলে থাকতে পারলে?
একথা জিজ্ঞেস করার অধিকার তোমার আছে?
চুপ করে থাকল সুচরিতা।
তুমি এখন কী করছ?
শ্যামবাজার চৌরাস্তার পাশে একটা নার্সিং হোমে কাজ করি।
তাহলে তো বেশ আছ।
একটা কিছু তো করতে হবে।
ওখানে তোমার কাজটা কী?
নার্সের দায়িত্ব পালন করা।
ট্রেনিং নিয়েছিলে?
কেবলমাত্র আবেদন যাচাই করে মূল কমর্কর্তা আমাকে নির্বাচন করেছেন।
এ জব কেমন লাগে তোমার?
প্রচন্ড অপছন্দের মধ্যে মানিয়ে নিতে হয়।
অপছন্দ বলছ কেন? ওখানে কী সুবিমলের মতো কেউ কেউ রয়েছেন?
চমকে উঠল সুচরিতা, কিন্তু সেই প্রসঙ্গে ঢুকল না বরং প্রদীপকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলল, মনের জায়গা থেকে কেউ সরে গেলে সেবার জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজেকে স্থির রাখতে হয় প্রদীপ, এটাকে নিজের সঙ্গে নিজের প্রতারণাও বলতে পারো।
আমাকে এভাবে বঞ্চিত করে তোমার কী লাভ হল?
নার্সিং হোমে সেবার নামে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হচ্ছে, শুধু এটুকুই লাভ। জীবনের সব হিসেব হারিয়ে গরমিলে বেশ ডুবে আছি, নতুন করে মেলাতে চাইলে কে তার মূল্য দেবে বলো?
আমাকে তাক্ করে এসব বলছ নাতো?
তোমাকে টার্গেট করে বলার কী আছে?
অবাক হয়েছিলাম যেদিন তুমি বাণী সিনেমার পাশে আমাকে একা ফেলে রেখে সুবিমলের কর্মীসভায় যোগ দিতে গিয়েছিলে। জীবনে নিশ্চয় চাকরির প্রয়োজন আছে কিন্তু তা কখনো জীবনে জীবন যোগ করার স্বপ্নকে বাদ দিয়ে সম্পন্ন হতে পারে না।
তা অবশ্যই নয়।
সেই কাজ তুমি করেছিলে।
তার শাস্তি হিসেবে নার্সিং হোমে সেবার নামে নিঃসঙ্গ জীবনের মরুভূমিতে বেশ আছি। তুমি খুশি তো?
ভনিতা করে বেশ তো কথা বলতে শিখেছ। সেবা, শান্তি, মরুভূমি প্রসঙ্গ তুলে আমাকে নরম করে দিতে চাচ্ছ নাতো?
সুচরিতার দুঠোঁটের ফাঁকে এক চিলতে হাসি, বুঝল, ঘোরতর রাজনীতিক প্রদীপ এখনও মনের ঘূর্ণাবর্তে জেগে আছে। —তোমাকে একটা প্রশ্ন করব?
অবশ্যই করতে পারো।
সুবিমলের ঘনিষ্ট বন্ধু রাজিবুলদা এখন কী তোমার ঘনিষ্ট সঙ্গী? রঘুকে তো কাছে পেয়ে গিয়েছ।
দ্বিতীয় প্রসঙ্গটা সম্পূর্ণ ভুল।
আমি জানতাম, জয়ন্ত দেবনাথের মৃত্যুর পরে স্থানীয় রাজনীতি পুরোপুরি দুটো ভাগে ভাগ হয়ে পড়বে। একদিকে তুমি আর রাজিবুলদা, অন্যদিকে সুবিমল— বাহুবলীদের তীব্র কূটনৈতিক লড়াই, শক্তি দিয়ে মানুষের সমাজকে নিজের কব্জায় রাখার সুন্দরবনী খেলা। জানো প্রদীপ, কূটনীতির এ নোংরা খেলা থামলে এতদিন সুন্দরবন সন্দুরী হয়ে উঠতে পারত, কিন্তু তা হয়েছে কী? কূটনীতিপুষ্ট সামাজিক অবক্ষয়ে ধুকতে ধুকতে পরিবেশের পাশবিকতাই এখানে শুধু বেঁচে আছে। জয়ন্ত দেবনাথের মৃত্যু কী তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে না?
কলকাতায় থেকেও এত খবর রাখো?
কেবল তোমার জন্যেই রাখতে হয়।
কী রকম?
রাতে ভীষণ ভয়ে ভয়ে থাকি, সুবিমল কখন কী করে বসে তোমাকে। ক্লান্তির বোঝা সারা শরীরে মেখেও মাঝ রাত পর্যন্ত কেবল দুঃস্বপ্নে ডুবে থাকি।
আমি তো তোমার সঙ্গে নেই, তার পরেও এমনি অলিক চিন্তা?
আমি কিন্তু তোমার সঙ্গেই রয়েছি— প্রতি মুহূর্তে আছি, প্রতিদিন আছি, অনুশোচনার আগুনে পুড়ে কতটা খাঁটি সোনা হয়ে উঠেছি, এখন তা প্রমাণ করতে না পারলেও আমার অন্তরশক্তি জানে, আমিই তোমার সঙ্গে আছি। আরেকটা প্রসঙ্গ খুব জানতে ইচ্ছা করছে।
কী বলো শুনি?
আজও কী তুমি ঠিক আগের মতো আমাকে মনপ্রাণ দিয়ে ঘৃণা করো? সুবিমলের ক্ষণিক দুর্ব্যবহার এখনও কী ভুলতে পারো নি?
প্রদীপ চুপ করে থাকল।
নতুন করে আমাকে গ্রহণ করার জন্যে তোমাকে এ কথা বলছি নে প্রদীপ। সুবিমলের পাশবিকতার স্পর্শ পেয়েই যে তীব্র প্রতিবাদ উগরে দিয়েছিলাম, তা তুমি পিছনে দাঁড়িয়ে নিশ্চয় শুনেছিল। সেকথার কোনো মূল্য নেই? কেঁদে ফেলেছিলাম তাৎক্ষণিক দুঃখের সাগরে ডুবতে ডুবতে, তার কী কোনো মানে হয় না? জীবনের এ কান্না কার জন্যে ছিল, তা কী একবারও ভেবে দেখেছ? কেন সেই মূল্যায়ন আজও তোমাকে ভাবায় না? কূটনীতি নিয়ে যা করছ, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার আমার নেই কিন্তু সুন্দরবনের দেহ নির্ভর কূটনীতি কী এতটুকু মনের মূল্য দিতে পারে না? সেই ঘটনার পরে আমি কেমন আছি, কোথায় থাকছি, কী করছি, তা খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছ কী?
প্রদীপ চুপ করে থাকল।
তাহলে কী চুপ থাকাটাই উত্তর? সুবিমলের সঙ্গে তোমার কোনো পার্থক্য নেই? এক সময় লোক দেখানো ভালোবাসায় মেতে উঠেছিলে, সেই একই মত্ততা নিয়ে এখন কূটনীতির পাশবিকতায় মগ্ন থাকতে হচ্ছে তোমাকে। জীবনের হিসেবের খাতা কী এমনিই?
এখন এসব ভেবে লাভ কী?
তোমাকে ফিরে পেতে চাই না প্রদীপ। যে তোমার মনের সঙ্গীকে এভাবে অপমান করতে পারল, সেজন্য চরম প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করে না তোমার?
সেই শক্তি আছে কী?
তাহলে এ পাশবিক কূটনীতি করে লাভ কী? কেবল তোমার নিরাপত্তার কথা ভেবে সুন্দরবনে রাজনীতির নামে কূটনীতির পাশবিকতায় আজও ডুবে থাকতে হবে? কখন কী হয়ে যায়, সেই ভয়ে রোজ খোঁজখবর রাখি। রঘু এখন তো তোমার হাতের মুঠোয়। আরেকটু নার্স করলেই ছেলেটা সম্পূর্ণ তোমার গ্রিপে চলে আসবে। রাজিবুলদা রয়েছেন তোমার সঙ্গে, লোকটা কত পাওয়ারফুল, তা তুমি ভালোই জানো।
এ তথ্য তুমি জানলে কী করে?
যেদিন রাজিবুলদা পটলার দোকানের ভিতরে বসে সুবিমলের উপর প্রচন্ড তম্বি দেখাচ্ছিল, আমি দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে সব কিছুই শুনেছি। সুবিমল একটাও কথা বলতে পারেন নি, বরং চুপ করে থেকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, পাশবিক কূটনীতির কবলে পড়ে তাঁর পক্ষে সব স্বচ্ছতা মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। এতে কী প্রমাণ হয় না যে রাজিবুলদা সর্বশক্তি দিয়ে তোমাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছেন? এক অদ্ভুত নেশা নিয়ে লোকটা এগিয়ে চলেছে জীবনের পথে। সুন্দরবনকে পাশবিক কূটনীতির কবল থেকে যে কোনো মূল্যে মুক্ত করতে চান। তার জন্যে যা করলে হয় করবেন। সুবিমলকে দিয়ে পারলেন না, এখন তোমার পাশে থেকে নিজের উদ্দেশ্যে সিদ্ধিলাভ করতে চান, ওঁর ডাকে হাজার মানুষ পথে নামতে পারে। সুন্দরবনের পাশবিক কূটনীতির মধ্যেও আমমানুষ যে আজও সুস্থ গণতন্ত্র খুব বেশি পছন্দ করে, তার উজ্জ্বল নিদর্শন হল রাজিবুলদার বজ্রকঠিন আদর্শকেন্দ্রিক ব্যক্তিত্ব। তোমাকে আরেকটা প্রশ্ন করব?
বলো শুনি।
আমাকে নতুন করে মানিয়ে নিতে পারো না?
সুচরি যে তাকে এমন প্রশ্ন করতে পারে তা ভাবতে পারে নি প্রদীপ। অগত্যা চুপ করে থেকে সময় গুণতে লাগল, একবার আড়চোখে সুচরির আপাদমস্তক দেখে নিল।
আবার সুচরির খোঁচামারা প্রশ্ন, চুপ করে থাকাটাই বুঝি উত্তর?
তুমি কী জানো, আমাকে এখন বিষ্ণুপুরে থাকতে হয়। রাত এলে প্রচন্ড ভয় গ্রাস করে। এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে থাকতে ভালো লাগে বলো? এত অনিশ্চিত জীবন নিয়ে আরেকটা জীবনের কথা কী ভাবতে পারি? মাঝে মধ্যে গা-ঢাকা দিয়ে গ্রামে যাই, তাও খুব সাবধানতা নিয়ে, সুবিমলকে দিয়ে কিছুই বিশ্বাস নেই।
এখন এত সহজে তোমাকে ক্ষতি করতে পারবে না।
এভাবেই ভাবছ?
মূল শক্তি রঘু সুবিমলের সঙ্গে নেই, সেজন্যে তাঁকেই বরং এখন কিছুটা ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে।
এক অর্থে তা সত্যি।
তোমার আশু কাজ হল রঘু আর রাজিবুলদাকে একসূত্রে নিয়ে আসা, তাহলে সহজে সাফল্য লাভ করতে পারবে। চাইব খুব তাড়াতাড়ি তোমার জয়লাভ সূচিত হোক, তারপর না হয় সময় করে মন নিয়ে ভাববে। কটার ট্রেনে ফিরবে।
সাড়ে ছটায়।
টিকিট কেটেছ?
কাটতে গিয়েই তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
বসো, টিকিট কেটে আনছি।
না না, তা হয় না।
আরে, আমার কাছে থাকা টাকার উপর তো সুবিমল আর জোর করে শরীরী চাপ দিতে পারবেন না।
প্রদীপ শুষ্ক হাসি উপহার দিল, মাত্র কয়েক মিনিট লাগল সুচরিতার ফিরে আসতে। এসেই বলল, এই নাও, কত নম্বর প্লাটফর্মে ট্রেন?
বারো নম্বরে।
চলো এগিয়ে দিয়ে আসি।
প্রদীপের মনের গভীরে অদ্ভুত আড়ষ্টতা। ডান হাত টেনে ধরে সুচরিতা প্রদীপকে দাঁড় করালো। আমাকে আরেকটা মালতি ভাবছ নাতো?
চমকে উঠলো প্রদীপ।
দুজনেই কলকাতায় থাকি, সে থাকে অনেক পুরুষকে নিয়ে, শুনেছি, রাতে রাতে পাল্টে ফেলে, আমি কেবল তোমার সঙ্গ নিয়েই আছি।
প্রদীপ চেয়ে থাকল সুচরির দিকে, দেখল তার মায়াভরা দুচোখে টলটলে জল।
জানো প্রদীপ, সকাল সন্ধের আরতিতে কেবল তোমার মঙ্গল কামনা করি।
প্রদীপ ট্রেনে উঠে বসল, বাইরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সুচরিতা। ট্রেন ছাড়ার সংকেত বেজে উঠল, শুষ্ক মুখে সুচরিতা ডান হাত নেড়ে বলল, সাবধানে যেও, তোমার দুচোখে আমার যে ভালোবাসা লুকিয়ে রয়েছে, ওটা আর গোপন রেখো না।
প্রদীপ কোনো উত্তর দিল না কিন্তু সুচরির কথায় সে যে নতুন শক্তি সঞ্চয় করতে পারল, তা মনে মনে স্বীকার করে নিল। সুচরি যে এখনও তার সঙ্গেই রয়েছে, তা অস্বীকার করতে পারল না। মালতি বেঁচে থাকতে চাচ্ছে নিজের মাতৃত্ব নিয়ে, সুচরির একমাত্র সাধনা তাকে কাছে পাওয়া নিয়েই, মর্মে মর্মে বুঝল, সুন্দরবনে শক্তির বিরুদ্ধে আরেকটা শরীরী অবস্থান কাজে লাগাতে না পারলে চলতি কূটনীতির জটিল অঙ্ক থেকে সহজে উতরে যাওয়া সম্ভব নয়।

চলবে…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মুসা আলি
শিক্ষক জীবনের ৫৫ বছরে এসে সাহিত্যচর্চা শুরু। ইতিমধ্যে পঞ্চাশের বেশি উপন্যাসের মনসবদার। গল্প উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে দীর্ঘ জীবন পরিক্রমায় কঠোর বিশ্বাসী। এখন বিদগ্ধ পাঠক শুধুমাত্র কাহিনি বা চরিত্র খোঁজেন না বরং তার ভিতরে লেখক এর নিজস্ব গভীর মনন আবিষ্কার করতে চান। ঔপন্যাসিক মুসা আলি দীর্ঘ জীবন পরিক্রমার জাদুতে তার নিজস্ব মনন দিয়ে বাঙালি পাঠককে ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ করে তুলতে বদ্ধপরিকর।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!