নাটোরে এক প্রভাবশালীর দাপটে বাড়ি ছাড়া শিক্ষক পরিবার

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
5 মিনিটে পড়ুন

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার, বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের রামেশপুর গ্রামের চৌকিদার হাবিবুর রহমান হবুর ছেলে মনিরুল ইসলাম মনির (২৩)। তার বিরুদ্ধে নিজ এলাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।

কয়েক বছর ঢাকায় অবস্থান করে এলাকায় বিলাস বহুল টয়োটা প্রিমিও গাড়ী কিনে চলাফেরা করেন। ইতোমধ্যে মাইক্রোবাস, ট্রাক ও একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে গেছেন। মনির থানায় সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক আব্দুর রহিমকে সাথে নিয়ে নিজের গাড়িতে ঘুরে বেড়ান বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি মনিরুল ইসলাম মনির হয়রানির শিকার হয়ে রামেশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরওয়ার হোসেন পিঞ্জু বর্তমানে স্ত্রী ও ৫ ম শ্রেনীতে পড়ুয়া শিশু কন্যাকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। তবে অভিযুক্ত মনির বলছেন এসব অভিযোগ সত্য নয়।

প্রতিবেশী আকরামুল ইসলাম বলেন, ‘রামেশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, একজন ভালো মানুষ, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকায় যে কেউ, যেকোনো রকম সমস্যায় পড়লে তার সেই সমস্যার সমাধান করতে সার্বিক সহযোগিতা করেন। এই প্রধান শিক্ষক আমাদের গ্রামের মেরুদন্ড।’

প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক সরওয়ার হোসেন পিঞ্জু এলাকার একটি খাল খনন করতে গেলে মনির লোকজন নিয়ে সেখানে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। প্রধান শিক্ষক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, তার প্রতি চড়াও হয় এবং মামলাসহ নানা রকম হয়রানির হুমকি দেন।’

প্রতিবেশী রতন সরকার বলেন, ‘মনির নানা জনকে চাকুরী দেয়ার নাম করে টাকা আত্মসাত করেছে। গ্রাম প্রধান ও হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে এসব বিষয়ে বিচারের উদ্যোগ নেয়ায় মনির শিক্ষকের উপরে ক্ষিপ্ত হয়েছে বলে আমার মনে হয়।’

প্রতিবেশী ময়েজ উদ্দিন বলেন, চৌকিদারের ছেলে মনির ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত প্রকৃতির, হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে। ২০১৪ সালে এই এলাকার চন্ডিপুর গ্রামের রেজাউল করিমের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে রেখার সাথে মিথ্যা সর্ম্পক করে বিয়ে না করায় মনিরের জন্য রেখা বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে।’

রামেশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার বলেন, ‘মনির এই স্কুলে দুটি শুন্যপদে তার পছন্দের লোক নিয়োগ দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এসব বিষয়ে বিরোধের জের ধরে থানা পুলিশ দিয়ে এবং প্রকাশ্যে স্কুলে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন মনির। প্রধান শিক্ষককে নানাভাবে হয়রানি ও সম্মানখুন্ন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

রামেশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা দিপ্তী রানী প্রামানিক বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকেই প্রধান শিক্ষক সরওয়ার হোসেন পিঞ্জু মাছ চাষ ও পোলট্রি ব্যবসা করেন। এসব ব্যবসায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ায় তিনি অনেক টাকা ঋৃণ গ্রস্থ হয়ে পড়েছেন বলে আমি জানি, তবে তিনি কারো সাথে প্রতারণা করেছেন বলে আমার মনে হয় না।

বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ৯নং ওয়ার্ড সদস্য সাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘মনির প্রধান শিক্ষককে নানা ভাবে হয়রানি করায় এখন তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। শুনেছি কোন মামলা না থাকলেও পুলিশ তাদের বাড়ি গিয়ে, তাকে না পেয়ে তার বিরুদ্ধে নানা কথা বলে আসছেন। গত ১২ দিন থেকে তিনি স্কুলেও আসছেন না।’

রামেশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ছেলে নিয়ামুল হোসেন নির্ঝর বলেন, ‘মনিরুল ইসলাম মনির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আত্বীয় পরিচয় দিয়ে লোকজনকে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা পুলিশে চাকুরী দেয়ার কথা বলে টাকা নেন। এভাবে অনেকের কাছেই সে টাকা নিয়েছে। বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক আব্দুর রহিমকে সাথে নিয়ে নিজের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ান।

২০১৮ সালে তাকে ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিয়েও চাকুরী বা টাকা ফেরত না পাওয়ায়, বিজয় সরকার নামে একজন চাকুরী প্রার্থী যুবক আত্মহত্যা করেছেন। এ বিষয়ে বিজয় সরকারের বড় ভাই মারুফ সরকার জয় আদালতে মনির ও তার ভাই বাবুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এখনো চলমান রয়েছে।’

রামেপুর হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক দেলোয়ারা খাতুন ও মেহেদী হাসান বলেন, নিজের অস্তিত্বকে জানান দিতে, ছাত্রই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সামাজিকভাবে হেও প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি আমরা।’

অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, ‘ চৌকিদার পুত্র হওয়াটা কি আমার অপরাধ? হালাল ব্যবসা করে সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স প্রদান করি। আমার বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ অসত্য। কারো নিকট থেকে চাকুরী দেয়ার কথা বলে টাকা নেইনি, কখনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আত্বীয় বলে কোথাও পরিচয়ও দেইনি।

সরওয়ার হোসেন পিঞ্জুর প্রতারনার বিষয়ে একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে বক্তব্য দেয়ায় পিঞ্জু আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। আমার কোন টয়োটা প্রিমিও গাড়ি নেই, একটি পুরাতন মাইক্রোবাস এবং কিস্তিুতে কেনা একটি ট্রাক আছে। ডেইরী ব্যবসা থাকায় আমি ঢাকা ও পাবনাসহ বিভিন্ন স্থানে দুধ সরবরাহ করি।’

বড়াইগ্রাম থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রহিমের কাছে এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মনিরের গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোসহ তার সাথে সখ্যতার সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষক সরওয়ার হোসেন পিঞ্জুর বিরুদ্ধে থানায় একটি নিয়মিত মামলা রয়েছে। মনিরের সাথে তার কোন সর্ম্পক নেই।’

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!