কবিগুরুর একগুচ্ছ প্রিয় পদ

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
8 মিনিটে পড়ুন

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রন্ধনপ্রীতি সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। তিনি বিভিন্ন ভোজের নিমন্ত্রণ এবং প্রসিদ্ধ রেস্তোরাঁর মেন্যু কার্ড সংগ্রহ করতেন এবং সেগুলো ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে এসে রান্নাঘরের ঠাকুরদের দিয়ে দেশি এবং বিদেশি রান্নার সংমিশ্রণ ঘটাতেন, যা থেকে জন্ম নিত নতুন স্বাদের খাবার।

পরবর্তিকালে ব্রিটিশ শেফ শন কেনওয়ার্দি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগৃহীত মেনুকার্ডগুলো পুনরায় সংগ্রহ করে কবিগুরুর ভাললাগা রেসিপিগুলোর ওপর গবেষণা করেন। পরে একই উপকরণ ও মসলা ব্যবহার করে সেই সব খাবার তৈরি করে তিনি তাঁর ক্যাফেতে পরিবেশন করতেন এবং এমন ভাবে পরিবেশন করতেন, যাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৈরি করা খাবারের স্বাদ ও সুবাস— দুটোই অক্ষুন্ন থাকে।

আজ ২৫শে বৈশাখ, কবিগুরুর জন্মদিনে তাঁরই তৈরি করা তাঁর প্রিয় কিছু খাবারের রেসিপি এখানে সাজিয়ে দিলাম—

দুধ শুক্তো
উপকরণ: ১টা কাঁচাকলা, ১ কাপ কাঁচা পেঁপে, ৮-১০টি লাল বা সাদা মুলা, ৯-১০টি সজনে ডাঁটা, আলু ও মিষ্টি আলু ১ কাপ করে, ১ কাপ বেগুন, ১ কাপ পটল, ১ কাপ ঝিঙা, ১ কাপ মটরশুঁটি, ১ কাপ উচ্ছে, ৩ টেবিল চামচ পোস্ত দানা, ১ টেবিল চামচ হলুদ সরিষা দানা, ১ কাপ বড়ি, আধ চা-চামচ চিনি, ৩ কাপ দুধ, ঘি ৩ টেবিল চামচ, সরিষা তেল ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: পোস্তদানা ও সরিষা জলে ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রেখে ভাল করে বেটে নিন। সবজিগুলো কেটে একপাশে রেখে দিন। উচ্ছে কেটে অল্প লবণ এবং হলুদ দিয়ে মেখে আধ ঘণ্টা রেখে দিন। কড়াই গরম করে তাতে আধ কাপ সরষে তেল ঢেলে দিন। এ বার বড়িগুলো বাদামি করে ভেজে একপাশে রেখে দিন। উচ্ছে ৩-৪ মিনিট ভেজে একপাশে রেখে দিন। একই কড়াইয়ে আরও আধ কাপ তেল ঢেলে গরম করে নিন। এ বার পাঁচফোড়ন, তেজপাতা, আদা কুচি ঢেলে দিন। পাঁচফোড়ন ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছে বাদে সব সবজি ঢেলে দিন। ৭ থেকে ৮ মিনিট মাঝারি আঁচে ভেজে নিন। সবজি নরম হয়ে এলে ২ কাপ জল দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন আর মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া করুন। জল শুকিয়ে এলে তাতে পোস্ত ও সরিষা বাটা দিয়ে দিন। আর একটু নাড়াচাড়া করে ৩ কাপ দুধ ঢেলে দিন। দুধ একটু উৎলোলেই তাতে বড়ি ও উচ্ছেগুলো দিয়ে ৪ মিনিট অপেক্ষা করুন। এ বার স্বাদমতো লবণ ও চিনি দিন এবং তিন টেবিল চামচ ঘি ঢেলে দিন। ২-৩ মিনিট পরে নামিয়ে নিয়ে পরিবেশন করুন।

সজনে দিয়ে সোনা মুগের ডাল
উপকরণ: সোনা মুগ ডাল ৫০০ গ্রাম, সজনে ডাঁটা ৫টা, কাঁচা আম সেদ্ধ, তেল (সরষের) ১ কাপ, শুকনা লঙ্কা গোটা ৭টা, গোটা জিরে ১ চামচ, সাদা সরষে ১ চা-চামচ, আদা কুচি ২ চা-চামচ, তেজপাতা ২টা ও নুন স্বাদমতো।
পদ্ধতি: ডাল ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। এ বার কড়াইতে তেজপাতা, সরষে ফোড়ন, আদা কুচি দিয়ে তেলে নেড়ে ছোট করে কাটা সজনে ডাঁটা দিন। নাড়ুন। কিছুটা নেড়ে ডাল ঢেলে দিন। কিছুক্ষণ নেড়ে আম দিয়ে দিন। ঘন হয়ে গেলে ১ কাপ গরম জল দিন। নুন দিন। ঘন হলে নামান।

কুলফি
উপকরণ: ১০ লিটার দুধ, ২ কেজি চিনি, ৫০ গ্রাম এলাচি।
প্রণালি: ১০ লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ৫ কেজি করে নিন। এ বার এতে ২ কেজি চিনি ও ৫০ গ্রাম এলাচি দিয়ে দিন। এর পর এই মিশ্রণ কুলফির ছাঁচে ঢেলে মুখটা ভালভাবে আটা দিয়ে বন্ধ করে দিন। এ বার প্রায় ১০ লিটার ধারণ ক্ষমতার একটি হাঁড়িতে, হাঁড়ির গলা অবধি বরফ দিন। আর সেই কুলফির ছাঁচগুলো বরফের মধ্যে দিয়ে ২-৩ মিনিট ঝাঁকিয়ে নিন, হয়ে গেল মজাদার কুলফি। ছাঁচ থেকে কুলফি বের করে পরিবেশন করুন।
বরফের মধ্যে লবণ দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কারণ বরফে লবণ দিলে বরফটা ধীরে ধীরে গলে। ডিপফ্রিজেও বানাতে পারেন এটি। এই অনুপাতেই আরও কম বা বেশি কুলফিও বানাতে পারেন।

ঝিঙে পোস্ত
উপকরণ: ঝিঙে (গোল গোল করে কাটা) আধ কেজি, আলু (ছোট ছোট করে কাটা) ১৫০ গ্রাম, কালিজিরা আধ চা-চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, সরিষার তেল ও ঘি (মেশানো) আধ কাপ, সরিষার তেল ও ঘি (আলু ভাজার জন্য) ২ টেবিল চামচ, পোস্ত বাটা ২ টেবিল চামচ, কাঁচালঙ্কা চেরা ৫-৬টা।
প্রণালি: কড়াই গরম করে ২ টেবিল চামচ সরিষার তেল ও ঘি দিয়ে আলু বাদামি করে ভেজে নিয়ে এক পাশে রেখে দিন। একই কড়াইয়ে আধ কাপ সরিষার তেল ও ঘি দিয়ে দিন। গরম হলে কালিজিরা দিন। কালিজিরা ফুটে গেলে একে একে আদা, রসুন ও পেঁয়াজ বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ার পর পোস্ত বাটা দিয়ে দিন। তেল ও মসলা আলাদা হয়ে এলে ঝিঙে দিয়ে দিন। এ বার ভাজতে থাকুন। ঢাকনা দেবেন না, কারণ ঝিঙে থেকে প্রচুর জল বের হবে। জল মাখা মাখা হয়ে এলে কাঁচালঙ্কা ও আলু ভাজাগুলো দিয়ে নেড়ে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে ফেলুন। এ বার পাত্রে ঢেলে পরিবেশন করুন।

কলার মোচার কোপ্তা
উপকরণ: কলার মোচা ২ কাপ (সেদ্ধ করে শিল-পাটা অল্প পিষে নিতে হবে), বেসন ৩ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ১ চা-চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ, আদা বাটা ১ চা-চামচ, রসুন বাটা ২ চা-চামচ, ঘি ও সরিষার তেল (রান্নার জন্য), তেল (ভাজার জন্য), পেঁয়াজ কুচি প্রয়োজন মতো, কাঠবাদাম বাটা ২ টেবিল চামচ, এলাচি ৪টি, লবঙ্গ ৫টি, দারুচিনি ১ ইঞ্চির ১টি, চারমগজ বাটা ৩ টেবিল চামচ (চারমগজ হল তরমুজ, মিষ্টিকুমড়া, শসা ইত্যাদির দানা শুকিয়ে দুধে ভিজিয়ে বেটে নেওয়া। বাজারে চারমগজ কিনতে পাবেন। না পেলে পেস্তাবাদাম ও কাজুবাদাম বাটা দিতে পারেন), দুধ, কিশমিশ, টমেটো কুচি সামান্য চিনি ও লবণ।
মিশ্রণের উপকরণ: ১ চা-চামচ রসুন ও ১ চা-চামচ আদা বাটা, ১ টেবিল চামচ ধনেপাতা কুচি, ১ চা-চামচ কাঁচালঙ্কা কুচি, ২ চিমটি জায়ফল গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুচি, লবণ ও ৩ টেবিল চামচ বেসন সব একসঙ্গে ভাল করে মেশাতে হবে।
প্রণালি: কলার মোচা পরিষ্কার করে সেদ্ধ করে নিন। এর পর জল ঝরিয়ে মিহি করে বেটে নিন। তার সঙ্গে মিশ্রণের সব উপকরণগুলো ভালো করে মেশান। তারপর ২-৩টা কিশমিশ দিয়ে গোল গোল বল বানিয়ে এক পাশে রেখে দিন। এরপর গরম তেলে বলগুলো ভেজে নিন। অন্য পাত্রে পেঁয়াজ কুচি তেলের মধ্যে ভেজে নিন। আদা ও রসুন বাটা দিয়ে একটু কষে নিন। এর পর এক এক করে হলুদ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া দিয়ে ভালো করে ১ মিনিট কষিয়ে নিন। প্রয়োজনে অল্প পানি দিন। এবার গরম মসলা, মরিচের গুঁড়া ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। এ বার কাঠবাদাম বাটা দিয়ে আরও একটু কষিয়ে নিয়ে টমেটো কুচি দিয়ে দিন। তেল এবং মসলা যখন আলাদা হয়ে যাবে তখন চিনি ও ২ কাপ গরম জল (ফুটন্ত) তাতে দিয়ে দিন। ঘন হয়ে আসলে তার মধ্যে কোপ্তাগুলো ছেড়ে দিন। ২ মিনিট পরে চারমগজ বাটা দুধে মিশিয়ে তাতে দিয়ে ৫ মিনিট অল্প আঁচে রান্না করুন। এরপর নামিয়ে সুন্দর একটি পাত্রে পরিবেশন করুন।

আমের চাটনি
উপকরণ: কাঁচা আমের টুকরা ২ কাপ, শুকনা লঙ্কা ৩-৪টা, সরিষা দানা ১ টেবিল চামচ, সরিষার তেল আধ কাপ, চিনি আধ কাপ, ভিনেগার আধা কাপ, আদা কুচি ১ টেবিল চামচ, জল ২ কাপ।
প্রণালি: কড়াইয়ে তেল গরম করে নিয়ে সরিষা দানা দিয়ে দিন। সরিষা ফুটে এলে আদা কুচি ও শুকনা লঙ্কা দিয়ে দিন। আদা ও শুকনা লঙ্কার সুগন্ধি বের হলে তাতে জল, চিনি ও ভিনেগার দিয়ে দিন। ঘন ঘন হয়ে এলে আম ঢেলে দিন। একটু নাড়াচাড়া করে তাতে পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। মাঝারি আঁচে মাঝে মাঝে নেড়ে দিন। আম নরম হয়ে এলে এবং অল্প জল থাকা অবস্থায় ওভেন থেকে নামিয়ে ফেলুন। তার পর পাত্রে ঢেলে পরিবেশন করুন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!