মুন্সীগঞ্জে বিজ্ঞান ক্লাসে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শিক্ষক আটক

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন

মুন্সীগঞ্জে বিজ্ঞান ক্লাস চলাকালে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে এক স্কুল শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। আটক স্কুল শিক্ষকের নাম হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। তিনি বিদ্যালয়টিতে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয় পড়ান। গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে জেলা সদরের বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

পরে এ ঘটনায় ওই বিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী বাদি হয়ে ইসলাম ধর্মের ওপর আঘাত করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ এনে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গতকাল সোমবর (৪ এপ্রিল) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে তা নাকচ হয়।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিযোগে জানা যায়, গত সোমবার (২১ মার্চ) বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাসে তিনি ইসলাম ধর্ম ও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তিকর কথা বলেন। যা শিক্ষার্থীরা মোবাইলে রেকর্ড করে। এ বিষয়ে ক্লাস শেষে শিক্ষকের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয় চলাকালীন শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ জানান, দশম শ্রেণির কিছু ছাত্র-ছাত্রী এসে আমাকে বললো তাদের ধর্ম ও মহানবীকে (স.) কটূক্তি করেছেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। তার বিচার চাই। আমি তাদের বলি, ঘটনার সত্যতা পেলে বিচার হবে। পরে আমি অন্য শিক্ষক ও অভিভাবক সদস্যদের সাথে আলোচনা করে হৃদয় মণ্ডলকে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেই। দুপুর ১২টার দিকে ছাত্র ও কিছু এলাকার মানুষ এসে বিক্ষোভ করে। তখন তাদের বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারা তা না মানায় আমরা থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দেই।

এদিকে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল বলেন, বিজ্ঞানের বিষয়ে বুঝাতে গিয়ে আমি কিছু বলেছি। তবে আমি ইসলামের মহানবীকে নিয়ে কিছু বলিনি।

হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা বলেন, তিনি কোন অপরাধ করেনি। ২২ বছর ধরে হৃদয় মণ্ডল ওই বিদ্যালয়ে গণিত ও বিজ্ঞানের ক্লাস করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে আগে কোনো অভিযোগ উঠেনি।

এদিকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে শিক্ষক আটকের ঘটনায় সোস্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

শাশ্বতীকির সম্পাদক মোজাফফর লেখেন, প্রশ্নটা অনেক পুরাতন। এবং লক্ষ্য করে দেখবেন, বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল নতুন কিছু বলেননি। বিজ্ঞান ও ধর্ম সম্পর্কে খুব সাধারণ ও মৌলিক কথা এগুলো। আমরা জানি এসব এবং প্রায়শ বলি। এসব জেনেও মানুষের ধর্ম পালন করতে কোনো অসুবিধা হয় না। ধর্ম ও বিজ্ঞান বিষয়ে এর চেয়ে গুরতর বলে গেছেন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর। তাকে আমরা এখন গুরুত্বসহকারে পাঠ করি।

আসলে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁর মতো মেধাবি বিজ্ঞানবিষয়ক সুযোগ্য শিক্ষককে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো এবং তাঁর প্রতি সাম্প্রদায়িক আচরণের জন্য সেই ছাত্রকে জবাবদিহিতামূলক শাস্তির আওতাই আনার দাবি জানাই। এখনো সে ছোটো, সামলাতে না পারলে ভবিষ্যতে সে কি করতে পারে ভেবেই শিউরে উঠছি। এর পেছনে অন্য কোনো মহল জড়িত থাকতে পারে। ছাত্রটিকে না ধরলে সেটি জানা যাবে না।

এটা বিজ্ঞানের ক্লাস, ধর্মের ক্লাস নয়। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত। আর ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস।

এ বিষয়ে স্বকৃত নোমান বলেন, বিজ্ঞান ক্লাসে ছাত্ররা ধর্ম নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে ওই শিক্ষককে হেনেস্তা করেছে। শিক্ষক যতোবারই তাদের বোঝাতে চেয়েছেন, এটা বিজ্ঞানের ক্লাস, ধর্ম নয়; এখানে বিজ্ঞান নিয়েই আলোচনা হবে। কিন্তু ক্লাস রুমেই ওই ছাত্ররা মোবাইল দিয়ে কথা রেকর্ড ও ভিডিও করেছে। তাকে আটক করে শিক্ষকদের মর্যাদাহানী করা হয়েছে। একজন দোষী না হয়েও জেলে আছেন, এমনকি তার জামিনটাও হয়নি। শিক্ষক সমাজের জন্য এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের পুরো শিক্ষকদের উচিত এ নিয়ে প্রতিবাদ করা। অথচ তারা নীরব হয়ে আছেন।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) রাজিব খান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিক্ষককে থানায় আনা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত চলছে, এলাকায় বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!