দাপুটে জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় বাংলাদেশের

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন

নাজিবউল্লাহ জাদরানের ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ভোঁ দৌড় বোলার তাসকিন আহমেদের। তাকে আর পায় কে! সতীর্থরা কেউই আটকাতে পারছেন না ডানহাতি পেসারকে। তাসকিন ছুটছেন মাঠের এ-মাথা থেকে ও-মাথা। তার মতোই ছুটছে বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানকে ৮৮ রানে হারিয়ে ‘প্রিয়’ ফরম্যাট ওয়ানডেতে আবার সিরিজ জয় বাংলাদেশ দলের। সঙ্গে সবাইকে ছাপিয়ে ওয়ার্ল্ডকাপ সুপার লিগের শীর্ষে টাইগাররা।

চট্টগ্রামে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে লিটন দাসের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে স্কোর বোর্ডে ৩০৬ রানে বিশাল সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা। এটি আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম তিনশ পার করা পুঁজি। ৩০৭ রানের বিশাল লক্ষ্য টপকাতে নেমে ২১৮ রানে অলআউট হয় আফগানরা। এতে ৮৮ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হয় তামিম ইকবালদের।

এর ফলে একদিনের ক্রিকেটে ২৭ নম্বর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে টানা পঞ্চম এবং সব মিলিয়ে টানা তৃতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৩০৭ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুর ওভারে ৯ রান তুলে নেন দুই আফগান ওপেনার রহমত শাহ ও রিয়াজ হাসান। তবে পরের ওভারে দ্রুত রান নিতে গিয়ে আফিফ হোসেন ধ্রুবের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে ফেরেন রিয়াজ। ১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। তিনে নামা হাসমতউল্লাহ শহিদিকে চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে ফেরান শরিফুল ইসলাম, ৫ রানে সাজঘরে আফগান অধিনায়ক।

মাত্র ১৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া দলকে প্রতিরোধ গড়ে দিতে ব্যর্থ হন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। সাকিব আল হাসানের করা দশম ওভারে মুশফিকের স্টাম্পড হয়ে ফেরেন তিনি। ১৬ বলে করেন ৯ রান। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন ওপেনার রহমত শাহ ও নাজিবউল্লাহ জাদরান। তাদের ৪২ রানের জুটি ভাঙার বড় সুযোগ তৈরি করেন সাকিব। কিন্তু লংঅফে থাকা শরিফুলের হাত ফসকে বলটি বাউন্ডারি হয়ে গেলে বেঁচে যান ২৭ বলে ২৪ রান করা জাদরান।

সাকিবের করা পরের বলটিতে সোজা ব্যাটে খেলেন নাজিবউল্লাহ। সেটি সরাসরি আঘাত করে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে। তখন নন স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যান রহমত ছিলেন নিজের সীমানার বাইরে। টিভি আম্পায়ারের কাছে রান আউট পরীক্ষার জন্য গেলে সেটি একবার দেখেই আউটের সিদ্ধান্ত দেন দায়িত্বে থাকা আম্পায়ার গাজী সোহেল। তবে বোলার সাকিব নিজেই জানান, বলটি তার আঙুলে হাতে স্পর্শ না করেই সরাসরি উইকেট ভাঙে। বেঁচে যান রহমত।

ব্যাট করার সুযোগ অর্ধশতক তুলে নেন রহমত। যদিও এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। তাসকিনের বলে বোল্ড হন ৫২ রানে। এতে তাদের ৮৯ রানের জুটি ভাঙে। একই পথে হাঁটেন নাজিবউল্লাহ। ফিফটি করে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। এবারও শিকারির নাম তাসকিন। ৬১ বলে ৫৪ করেন নাজিবউল্লাহ। বলের সঙ্গে রান তুলতে ব্যর্থ হওয়া আফগানদের এই দুই ব্যাটসম্যান আউট হলে হার নিশ্চিত হয়ে যায়।

শেষ দিকে মোহাম্মদ নবির ৪০ বলে ৩২ এবং রশিদ খানের ২৬ বলে ২৯ রান আফগানিস্তানের হারের ব্যবধানই কমিয়েছে শুধু। রহমানউল্লাহ গুরবাজ, মুজিব উর রহমান, ফরিদরা ব্যর্থ হলে ২১৮ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। ৮৮ রান ও ২৯ বল হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ দল। এই জয়ের ফলে ১ ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে তামিম ইকবালের দল। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব এবং তাসকিন ২টি করে উইকেট নেন।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা অতোটাও দাপুটে হয়নি বাংলাদেশ দলের। ৩৮ বলে ৩৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তামিম ইকবাল আর লিটন দাস। সে জুটির অর্ধেকের মতো রান জোগান হয়েছে অতিরিক্ত খাত থেকে। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে দুটি চার মারলেও তামিম আউট হয়ে যান ১২ রানেই। আগের ম্যাচের মতোই তিনি ফেরেন ফজল হক ফারুকির বলে। তামিমের মতো সুবিধা করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। রশিদ খানের বলে ফেরেন ৩৬ বলে ২০ রান করে।

এরপরের গল্পটা লিটন আর মুশফিকের। এক-দুই রান করে নিয়ে জুটি বড় করতে থাকেন দুই জন। বাজে বল পেলে বাউন্ডারিতেও পাঠান দারুণ দক্ষতায়। লিটন পঞ্চাশে পা রাখেন ৬৫ বলে, মুশফিক ৫৬ বলে। অনবদ্য ব্যাটিংয়ে রেকর্ড বই ওলটপালট করেন এই দুই জন। রশিদ, মুজিব, নবীদের মতো স্পিন ত্রয়ীকে রীতিমতো পাড়ার বোলার বানিয়েছেন লিটন-মুশফিক। তাদের ৮৩ রানে শুরু করা তৃতীয় উইকেট জুটি থামে ২৮৫ রানে। ২০২ রানের এই জুটি তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ।

১৮৬ বলের এই পার্টনারশিপের পথে নান্দনিক সব শটে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। ইনিংসের ৪১তম ওভারে রশিদকে এক্সটা কাভার দিয়ে চার মেরে শতকের স্বাদ পান তিনি। পরে আরো আগ্রাসী রূপে লিটন। ইনিংসের ৪৭তম ওভারে যখন থামলেন, তখন নামের পাশে ১৩৬ রান। ১২৬ বলের ইনিংসে ১৬টি চারের সঙ্গে ছক্কা হাঁকান ২টি। লিটনের সঙ্গে সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন মুশফিক। তবে শেষ পর্যন্ত আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।

লিটনের আউটের পরের বলেই ফরিদকে আপার কাট করতে গিয়ে ৮৬ রানে আউট হন মুশফিক। ৯৩ বলের ইনিংসটি সাজান ৯টি চারের মারে। তবে সেঞ্চুরি মিসের দিনে সতীর্থ সাকিবকে টপকে গেছেন মুশফিক। একদিনের ক্রিকেটে ৬৬৩০ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সাকিব। আজ এই ইনিংসটি খেলে ৬৬৭০ রান নিয়ে সাকিবকে টপকে গেছেন মুশফিক।

লিটন-মুশফিক আউট হলে শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেননি নতুন ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষ চার ওভারে বাউন্ডারি আসে কেবল একটি। ৯ বল খেলে মাহমুদউল্লাহ করতে পারেন কেবল ৬ রান, ১২ বলে ১৩ রানে অপরাজিত আফিফ। এতে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানের পক্ষে ফরিদ আহমেদ সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!