ভাষা, রাজনীতি ও আধিপত্য

আহমেদ স্বপন মাহমুদ
আহমেদ স্বপন মাহমুদ
3 মিনিটে পড়ুন

কেবল এই মুল্লুকে নয়, ভাষা নিয়ে সর্বত্রই একটা জবরদস্তি লক্ষ করা যায়। এই জবরদস্তি অরাজনৈতিক নয়। বরং বেশি মাত্রায় রাজনৈতিক। কেবল ভাষা বলতে কিছু নাই, তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভীপ্সা ছাড়া।

বাংলা ভাষার গতিপ্রকৃতি যদি লক্ষ করা যায়, তাহলে এটি একটি জবরদস্তিমূলক ভাষা, সন্দেহ নাই। আপনি যখন আপনার ভাষার আধিপত্য জারি রাখতে চান, রাজনৈতিকভাবেই তা রাখতে চান – অন্যের ভাষাকে আক্রমণ করে, দখল করে তা যেন জারি রাখতে হয়! আদিবাসীদের ভাষার দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গারো, তঞ্চইঙ্গা, চাকমা, মারমা ইত্যাদি বহু ভাষা খোদ বাংলা ভাষার আক্রমণের কারণে নাই হয়ে যাচ্ছে। আমরা কী তা দেখতে পারছি না!

ভূখণ্ডের রাজনীতি ভাষাকে ভাষা হতে দেয় এবং দেয় না, ভাষার উপর প্রভাব জারি রাখে এবং রাখে না। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ভাষা আর বাংলাদেশের ভাষার রাজনীতিকে এক বলে ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই, কখনো কখনো মিল থাকলেও। ভাষার আধিপত্য রাজনীতিরই আধিপত্য। এই আধিপত্য বাংলা ভাষার সাথে গারো ভাষার বা মারমা বা ওঁরাও অথবা পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষার সাথে হিন্দি বা বাংলাদেশের ভাষার তুলনামূলক রাজনীতির আধিপত্যের অংশ।

আবার একই ভাষার নানা রূপ থাকে। ভাষা বাংলা বটে, কিন্তু সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ বা বরিশালের ভাষার বিভিন্নতা ভাষার বৈচিত্র্য ও জীবনধারারই অংশ, যে জীবনপ্রবাহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।

ভাষার আধিপত্যই ভাষাকে জীবিত রাখে, অন্য অর্থে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ও বিস্তার ভাষাকে ভাষা হিসেবে জারি রাখে। কলকাতার দিকে তাকালেই বুঝা যায়, হিন্দি ভাষার আগ্রাসন সেখানে কতটা। ইংরেজি ভাষার প্রভাব ও বিস্তার অরাজনৈতিক নয়, সারা দুনিয়া তা টের পাচ্ছে।

সাহিত্যের ক্ষেত্রে, ভাষা এক হলেও, সাহিত্য এক না। ইংরেজি সাহিত্য বলতে আমরা অস্ট্রেলিয় সাহিত্যকে বুঝি না। অস্ট্রেলিয়া, গ্রেট ব্রিটেন ও আমেরিকার ভাষা ইংরেজি। কিন্তু আমেরিকান সাহিত্যকে কেবল ভাষার অভিন্নতার কারণে ব্রিটিশ সাহিত্য বলি না। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্য বলা তাই তেমন কোনো দোষের নয়। কারণ ভারতের প্রদেশ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অভীপ্সা ভারতের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলন করে তার ভাষা দিয়েই, যেমনটা বাংলাদেশও। তবে শিল্প-নন্দন গুণাগুণ দেশকালের বাইরে, সে কথা আমরা জানি। ভাষা যখন তার অন্তরমর্মে পৌঁছে তখন ভাষা লুপ্ত হয়ে কেবল সুর ছড়ায়, যে কারণে সাহিত্যিকের বড়ত্ব ও মহত্ব, মহৎ শিল্পকর্ম দেশকালের সীমারেখা মানে না কোনোদিন।

কেউ কেউ দেশভাগের মর্মপীড়ায় বাংলাদেশের ভাষা ও সার্বভৌমত্বকে যদি ভারতের হাতে তুলে দেয়াকে সমাধান মনে করেন, বা ভাষার ঐক্যকেই রাজনীতি ও সম্প্রীতির মূলমন্ত্র হিসেবে মনে করেন, তারা ভূগোলোর রাজনীতি ও সময়ের দায়কেই অস্বীকার করতে চান, এদেশের মর্ম ও স্বাধীনতাকেও তারা অস্বীকৃতি জানাতে চান বলে মনে করতে পারি আমরা। স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যে কারণে উজ্জ্বল, ভাষার রাজনীতিও সেই কারণে আলাদা, সাহিত্যও। তবে ইতিহাস ভাষার দায় নেয় সময় সময়।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অনুসরণ করুন:
আজ ৩রা ফেব্রুয়ারি কবি ও প্রাবন্ধিক আহমেদ স্বপন মাহমুদের জন্মদিন। ১৯৬৬ সালের আজকের এই দিনে তিনি নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশা শুরু করেন প্রকাশনা সংস্থায়। অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময়। কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক সংস্থায় শিক্ষা ও নীতি গবেষণায়। বর্তমানে একটি গবেষণা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বায়ন ও আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাহী বোর্ডের সদস্য। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন ও নীতি প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। তার প্রকাশিত কাব্যগন্থের মধ্যে রয়েছে― কবিতা— অতিক্রমণের রেখা [শ্রাবণ প্রকাশনী, ২০০০] সকল বিকেল আমাদের অধিকারে আছে [জয়ামি ২০০৪] অবিচল ডানার উত্থান [জয়ামি ২০০৬] আদি পৃথিবীর গান [পাঠসূত্র, ২০০৭] আগুন ও সমুদ্রের দিকে [পাঠসূত্র, ২০০৯] আনন্দবাড়ি অথবা রাতের কঙ্কাল [অ্যাডর্ণ পাবলিকেশন, ২০১০] প্রেম, মৃত্যু ও র্সবনাম [প্রকৃতি ২০১৪] অতিক্রমণের রেখা (নির্বাচিত কবিতা) [লোক, ২০১১] ভূখণ্ডে কেঁপে ওঠে মৃত ঘোড়ার কেশর [শুদ্ধস্বর, ২০১৩] রাজার পোশাক [শ্রাবণ প্রকাশনী, ২০১৪] অনেক উঁচুতে পানশালা [চৈতন্য, ২০১৪] দাহকাব্য [শমপ্রকাশ, ২০১৫] শ্রীমতি প্রজাপতি রায় [তিউড়ি প্রকাশন, ২০১৭] এখান থেকে আকাশ দেখা যায় [তিউড়ি প্রকাশন, ২০১৮] এবং প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থগুলো হচ্ছে— সমূহ সংকেতের ভাষা [শ্রাবণ প্রকাশনী, ২০০১] কলমতালাশ: কবিতার ভাব ও বৈভব [শ্রাবণ প্রকাশনী, ২০১৪] কবিতার নতুন জগৎ [ঐতিহ্য, ২০১৭] এছাড়াও উন্নয়ন রাজনীতি ও গবেষণা নিয়ে রয়েছে তার অসংখ্য প্রকাশনা। ভ্রমণ, আড্ডা, বন্ধুত্ব তার প্রিয় প্রসঙ্গ। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন, যথাক্রমে ― বইপত্তর সম্মননা (কলকাতা) ২০০০, বগুড়া লেখক চক্র সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫, শব্দগুচ্ছ পুরস্কার ২০১৫, ও ‘লোক’ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!