‘চন্দন রোশনি’ পর্ব – উনিশ

মোহিত কামাল
মোহিত কামাল
18 মিনিটে পড়ুন

পর্ব – উনিশ: মস্তিষ্কে সন্দেহের পোকা

ওয়ান স্টেপ ক্রাইসিস সেন্টারের ব্যবস্থাপনা ভালো। বিভিন্ন নারীসংগঠন আর মানবাধিকার কর্মীরা ছুটে এসেছেন চন্দনার বেডের পাশে। বাকরুদ্ধ চন্দনার মা বসে থাকেন মেয়ের বেডের পাশে। এত মানুষের আনাগোনার মধ্যে নিজে একদম একা হয়ে আছেন। তার আবেগ শূন্য, চাউনি শূন্য, ভাবছেন তার জীবনটাই শূন্য হয়ে গেছে।
রিপোর্টারদের সঙ্গে কথা বলছে না চন্দনা। আইনজীবীরা নিষেধ করে দিয়েছেন। এখনও আসল আসামির নাম প্রকাশিত হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তার পরামর্শের কারণে চেপে রেখেছে উর্বশীও। তবে রিপোর্টারদের অনুসন্ধান থেমে নেই। ঘনিষ্ঠতা জমিয়ে একজন নারী রিপোর্টার চন্দনার মা’কে নিয়ে এলেন ওয়ার্ডের বাইরে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনার ছেলে-মেয়ে কজন?’
‘দুই মেয়ে। চন্দনা বড়।’
‘আপনার স্বামী কী করেন?’
‘তিনি এখন কিছু করছেন না। অসুস্থ। স্ট্রোকের পর প্যারালাইসিসের কারণে শয্যাশায়ী।’
‘আরেক মেয়ে?’
‘সে ছোট। এবার ইন্টারে ভর্তি হয়েছে।’
‘তো, ওই যে মেয়েটি, উর্বশী নাম, ছুটোছুটি করছে চন্দনার জন্য, সে তো আপনার মেয়ে না, তাই না?’
‘জি। মেয়ের বান্ধবী।’
‘গাজীপুরের আঞ্চলিক পত্রিকার খবর বের হয়েছে মা-বোন উদ্ধার করেছেন ভিকটিমকে। এখন বলছেন, উর্বশী মেয়ে না, মেয়ের বান্ধবী? খবর দু রকম হয়ে গেল না?’
রিপোর্টারের কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলেন চন্দনার মা।
‘আমার কথাগুলো কি খারাপ লাগছে শুনতে?’
‘অবাক হচ্ছি। খারাপও লাগছে। উর্বশী মেয়ে না ঠিকই তবে মেয়ের মতো। হানিমুন করতে গিয়ে ওর স্বামী হারিয়ে গেছে সাগরে। মেয়েটি বড় দুর্ভাগা।’
‘তো সে নিজেকে চন্দনার বোন বলে পরিচয় দিয়েছে কেন? বান্ধবী হিসেবে তো পরিচয় দিতে পারত। নিজেকে আড়াল করার পেছনে অন্য কোনো গোপন বিষয় থাকতে পারে?’
চন্দনার মা কখনও কোনো রিপোর্টারের সঙ্গে কথা বলেননি, বলার মতো কারণ ঘটেনি। এখন ঘটেছে। কথা চালিয়ে যাওয়া উচিত না বন্ধ করা উচিত, বুঝতে পারছেন না তিনি।
তাঁকে চুপ থাকতে দেখে রিপোর্টার আবার প্রশ্ন করল, ‘খবর রটেছে উর্বশী মেয়েটি ভালো না, অন্যজগতে ঢুকে গেছে সে; স্বামীহারা বিধবা। আলাদা অ্যাপার্টমেন্টে আলাদা ফ্ল্যাটে উঠেছে, সঙ্গী করেছে আপনার মেয়েকে। যৌন ব্যবসায় নেমেছে। খবরটা কি জানতেন না, নাকি জেনেবুঝেও মেয়েকেও থাকতে অনুমতি দিয়েছেন উর্বশীর সঙ্গে?’
বাজ পড়ল মাথায়। বাজের আক্রমণে দেহের বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেল। শূন্য চোখ মেলে তাকালেন তিনি রিপোর্টারের মুখের দিকে। ভাষাহীন মুখের ভাষায় বিস্ময় আর ঘৃণার রেখা ফুটে উঠল। এই ঘৃণা রিপোর্টারের প্রতি যেমন হলো, তেমনি সন্দেহের পোকা ঢুকে গেল মস্তিষ্কে। এ পোকার দহন রিপোর্টারের কথার তিরের ক্ষতের চেয়েও ভয়াবহ, বিষদহনে নীল হয়ে উঠলেন তিনি।
রিপোর্টার আবার বলল, ‘আসল খবর লুকোনোর চেষ্টা করেছেন, তাই না?’
জবাব দেওয়ার ভাষা নেই। অনবরত আক্রমণাত্মক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হতে লাগলেন তিনি।
‘উর্বশী, যে কিনা যৌনব্যবসায় কেবল দালাল হিসেবে কাজ করছে না, নিজেও নেমেছে পুরুষকে ফাঁদে ফেলার নোংরা ব্যবসায়, তাকে নিজের মেয়েরূপে ভাবতে ঘেন্না হয় না আপনার? এ মেয়ে গাজীপুরে সাংবাদিককে চড় মেরেছিল। ভদ্র ঘরের কোনো সন্তান কি এভাবে উগ্র হতে পারে? স্বামী হারিয়ে এ মেয়ে আরও বহু পুরুষকে ভোগের বস্তুতে পরিণত করেছিল। হিমাদ্রি নামে ওর প্রাক্তন এক বয়ফ্রেন্ড এখন মানসিক রোগী, এসব খবর কি জানেন আপনি? নিশ্চয় জানেন।’
চন্দনার মায়ের দাঁড়িয়ে থাকার পুরো শক্তি উবে গেল। হাসপাতাল বারান্দার পিলারের সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন ঠেস দিয়ে। চক্কর খাওয়া মাথাটা ঠাস করে বাড়ি খেল পিলারের সঙ্গে। নিজেকে সামলাতে পারলেন না, বসে পড়লেন ফ্লোরে।
হাঁটু গেড়ে রিপোর্টারও বসল পাশে। গলায় অনুতাপ মিশিয়ে আবার বলল, ‘এসব তথ্য আমরা পেয়েছি, আপনাকে ক্রস চেক করে নিশ্চিত হলাম। ধরে নিলাম মেয়ে কার সঙ্গে মেশে, কোথায় থাকে, কার সঙ্গে যাওয়া-আসা করে কিছুই জানা নেই আপনার। নিরপরাধ আপনাকে কষ্ট পেতে হলো আমার জিজ্ঞাসাবাদে। আপনাকে বিব্রত করার জন্য আমি দুঃখিত। সহজ হোন প্লিজ, মেয়ের পাশে দাঁড়ান। আগে মেয়েকে সুস্থ করে তুলুন। তারপর মেয়েকে শোধরানোর কাজে মন দেবেন।’
অনলবর্ষণের ঝাপটা দিল রিপোর্টারের অনুতাপ আর উপদেশ, নাক দিয়ে দেহের ভেতর ঢুকে গেল বিষবাষ্প। কানের ভেতর শোঁ শোঁ বইতে লাগল বিষকণ্ঠের প্রতিধ্বনি, চিন্তনেও ছোবল বসাল বিষধর সাপের ফণা। প্রায় সারারাত আইপ্যাড, ল্যাপটপ, ফেসবুক নিয়ে বসে থাকতো যে মেয়ে, হঠাৎ কেমন বদলে গেছে অনুমান করতে পারলেন। ছোটবেলা থেকে স্বাধীনচেতা হলেও উর্বশীর সঙ্গে মেলামেশার সুযোগে আরো বেশি মুক্তমনা হয়ে গেছে। বিয়ের ব্যাপারে অনাগ্রহ আর মা হিসেবে চাপাচাপির কারণে একটা অনড় বিদ্রোহী মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠেছে মেয়ে- সে প্রায় বলতো মেয়েরা এখন ক্রিকেট-বিশ্ব জয় করছে, ফুটবল খেলছে, আকাশে বিমানও উড়াচ্ছে। তোমার আঁচল ধরে বসে থাকলে কিছুই হবে না, কোনো ইচ্ছাপূরণ হবে না, নিজের পায়ে দাঁড়াতে দাও। দাঁড়াতে গিয়ে কত দূরে নামতে পারে সে! আসলেই কি নেমেছে? না কি পরিস্থিতির শিকার হয়েছে? রিপোর্টারের তথ্য কোনো মতেই মানতে পারছেন না, নিজের মেয়েকে তো নয়ই, উর্বশীকে নিয়েও কোনো খারাপ চিন্তা জায়গা দিতে চাচ্ছেন না তিনি মনে। তবু ভাবনার জাল বিন্যস্ত হচ্ছে, নেতিবাচক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে মস্তিষ্ক। সুন্দর চেহারা, গ্ল্যামারার্স গেট আপ, ব্যক্তিত্ব আর আচরণ দিয়ে যে মেয়ে সকলের মন জয় করত সে কি এ পথে নামতে পারে? বুক খালি করে বেরুল হতাশার নিঃশ্বাস, কুঞ্চিত ললাটে রেখার টানটান উদ্বেগ উধাও হয়ে ভাঁজ বেড়ে গেল। বিপদের সংকেত পেলেন তিনি। বুকের কান্নার ভেতর জন্ম নিল অবিশ্বাসের চারাগাছ- মনের কোণে পুষে রাখা জীবনযাপনের অন্য দুঃখগুলোও বিস্তার ঘটতে লাগল।
হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখলেন তিনি উর্বশীকে। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে আসছে সে। এ উর্বশীকে কোনো মতেই রিপোর্টারের কল্পনায় তরুণীর সঙ্গে মেলানো যায় না, তেজোদীপ্ত উর্বশীর মুখ থেকে বেরুচ্ছে আলোর বিকিরণ, দেহভঙিমার ভেতর থেকে বেরুচ্ছে সত্য ও সুন্দরের উদ্ভাস। উর্বশী কাছাকাছি আসার পরই জ্বলে উঠলেন তিনি। ঝরঝর করে ঝরে যেতে লাগল তাঁর ওপর ঢেলে দেওয়া বিষ-খবর।
আন্টির মুখের দিকে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের ঝাঁকুনি খেয়ে উর্বশী দেখল ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ঘনফুট অশুভ গ্যাস জমাট বেঁধে গ্যাসচেম্বারে পরিণত করেছে আন্টিকে।
নিশ্চয় কটু কথা বলেছে কেউ! কে? জানে না এখনও উর্বশী। পাশে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি এখানে এভাবে বসে আছেন কেন? শরীর ভালো তো? খারাপ লাগছে, আন্টি?’
উত্তর পেল না উর্বশী। নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে শংকিত হয়ে উঠল সে। কাঁকড়ার কামড়ের স্পট থেকে ধোঁয়ার বিকিরণ ঘটছে। উৎস কি এই ধোঁয়ার? আন্টিকে দেখে কেন মনে পড়েছে গ্যাসচেম্বারের কথা? জীবনচেম্বার কি তবে অশুভ গ্যাসে ভরে উঠছে?
বুকের ঘরে নতুন কোনো বার্তা আসছে না! এ সময়ে তো সাধারণ টেলিপ্যাথির মতো মনোপ্যাথি ঘটে, নতুন অনুভব আর নতুন চেতনায় ঋদ্ধ হয়ে ওঠে মন। এখন অনুরণন আসছে না। কালো গ্যাসের দাপটে কি তবে বাঁধা পাচ্ছে অলৌকিক সংযোগ- অর্ণব কি দেখতে পাচ্ছে না আমাকে?
উর্বশীর অন্তরের প্রশ্ন ব্যাপক ঘূর্ণি তুলল অর্ণবের আলোর দেহে।
ক্ষণকালের জন্য আঁধারে ঢেকে থাকলেও উর্বশীর ডাকে অর্ণবের সংযোগে বিপ্লব ঘটে গেল। মুহূর্তের মধ্যে জাভা সাগর থেকে ও আলোর গতিতে ছুটতে লাগল বঙ্গোপসাগরের দিকে। দেহতরঙ্গকণা কেবল জলের ভেতর দিয়ে ছুটছে তা নয়, বাতাসের গতিরও সহযোগিতা নিচ্ছে। সাগরের বাতাসকে কাজে লাগিয়ে দেহের আলোককণা গ্রহণ করছে বাতাসশক্তি বা উইন্ড অ্যানার্জি; রাশি রাশি সমুদ্র তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে গ্রহণ করছে তরঙ্গশক্তি বা ওয়েভ অ্যানার্জি, জোয়ারের স্রোত থেকে টেনে নিচ্ছে টাইডাল অ্যানার্জি। অবাস্তব কোনো শক্তির জোয়ার নয়, কল্পলোকের গল্প নয়, বায়বীয় আর জলজ জগতের এ প্রাকৃতিক শক্তিই জীবন- এ অনুভব তাকে হাজির করল বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়।
নিজের দেহতরঙ্গে বয়ে যেতে লাগল খুশির তরঙ্গ। বিষয়টা কী? উর্বশীর সঙ্গে সংযোগ নেই তবু মনে আনন্দঢেউ জাগছে কেন?
নিজেকে প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে রাশি রাশি আলোর বুরবুর বেরুতে লাগল। জেগে ওঠা প্রশ্নের উত্তরও পেতে লাগল অর্ণব দৃশ্যমান মানচিত্রের নতুন সীমানা দেখে। বাংলাদেশের পতাকা জলপতাকারূপে উড়ছে সাগরবুকে। তলদেশের বিস্তৃত মাটি পর্যন্ত ফুঁড়ে বসে গেছে লালসবুজ রঙের সীমানাবেড়ি। আর এই ব্যারিকেড হচ্ছে সমুদ্রজয়ের উল্লাসের প্রমাণচিহ্ন- ন্যায্যতার ভিত্তিতে ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকা ও তদূর্ধ্ব মহীসোপান এলাকা মিয়ানমারের রাহুমুক্ত হয়েছে। মুক্ত এলাকায় তাই উড়ছে বিজয় পতাকা। পতাকার উড়াল সংকেত বুকের ঘরে ঢুকিয়ে দিল উড়াল ঢেউয়ের নতুন স্রোত। সামনে তাকিয়ে দেখল সেই স্রোত আরও বিস্তৃত- ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার জুড়েও গেঁথে আছে লালসবুজের বিজয়কেতন। আনন্দে চোখের আলো খুলে যাওয়ার কথা। বেরুচ্ছে না আলো। খুলছে না এখনও আলোর সংযোগ। সামনে কী রয়েছে? কী বাধা আড়াল করে রেখেছে উর্বশীর জাগতিক সত্তা? প্রশ্ন বুকে নিয়ে খুব কাছে দৃষ্টি ফেলে যা দেখল বিষাদ আর উদ্বেগের পরিবর্তে ঝিকমিক ঢেউ উঠল আলোর দেহের তরঙ্গমালায়- চোখ নেচে উঠল আনন্দে। রেটিনার ইমেজে ধরা পড়ছে- আঁধারে লুকিয়ে আছে ভারত থেকে জয় হিসেবে পাওয়া আটটি আর মিয়ানমার থেকে পাওয়া তেরটি তেল গ্যাস ব্লক।
লুকানো সম্পদের ঢাকনা খুলে গেলে নিশ্চয়ই আঁধার কেটে যাবে, দেশের উন্নতি হবে, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি ঘটবে জনগণের, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেশকে নিয়ে যাবে আলোর পথে, উন্নত দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে মনের ত্রিতালে ধ্বনিত হতে লাগল মরমি সুর- নিশ্চয় আঁধারে ঘিরে থাকা উর্বশীও আবার আলো ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে। আবার সংযোগ ঘটবে তার সঙ্গে। এ জীবন আর ওই জীবনের ঐশ্বর্য আর আলোর সম্পদের পাহাড় দেখে হতাশার ধোঁয়া সরে যেতে লাগল। অর্ণবের অভ্রভেদী চোখে ভেসে উঠল সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস ব্লকে ওত পেতে থাকা আনুমানিক ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আর ভূ-সীমানায় মজুদ থাকা প্রায় ১২টি ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জমানো পাহাড়। হিগ্স বোসন কণা খোঁজার এলএইচসি টানেলের মতো সৃষ্ট আলোর ট্যানেলে আকস্মিক বিশ্বকাপ উদ্বোধনের আকাশ আলোর ঝড়-তুফানের মতো বিজয়োল্লাস ধেয়ে এলো বিপুল গতিতে। সেই ঝড়ও চোখের টানেলে ফোকাস করল গ্যাস ছাড়াও অপ্রাণিজ অন্যান্য সমতল, চুনাপথর ও ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, গ্যানেট, মোনাজাইট, কায়ানাইট, লিকোক্সিন এসব খনিজ বালি। এছাড়া সাগরের তলদেশে চিকচিক করছে ক্লেসার ডেপোজিট, ফসফরাস ডেপোজিট, এভাপোরাইট, পলিমেটালিক সালফাইড, ম্যাঙ্গানিজ নডিউল, ম্যাগনেসিয়াম নডিউল এসব খনিজ আকরিক। সব দেখে আনন্দে আত্মহারা হলো না, বরং এলএইচসি টানেলের শক্তিমত্তা আরও বেড়ে যাওয়ায় হিগ্স বোসন কণার চেয়ে বেশি শক্তির কণাদ্যুতি ছড়িয়ে যেতে লাগল। সেই দ্যুতিময় আলোয় এবার স্পষ্ট হয়ে গেল উর্বশীর অবস্থান। দেখল উর্বশীকে দখল করে নিয়েছে চন্দনা আর চন্দনার মায়ের মন। তার দিকে ছুটে আসছে দুর্নামের ঝড়। সেই ঝড়ের গতিকে শক্তিশালীই মনে হলো অর্ণবের। সমুদ্র জয়ের ফলে নতুন অর্জিত জলসীমায় প্রায় ১০ লাখ টন খনিজ বালির মধ্যে খনিজ আকরিক লেড, জিংক, কপার কোবাল্ট মলিবডে নামের মতো দুষ্কর ধাতুও রয়েছে। দূরবর্তী গ্যালাক্সির নিভু নিভু তারার মতো জ্বলতে থাকা বালি সমুদ্রের এসব ধাতু জ্বলে উঠল এলএইচসি টানেলের পরিধিতে। অর্ণবের রেটিনায় ইমেজ ঢেলে দেওয়া দৃশ্যটির উল্লাস সঞ্চারিত হয়ে গেল উর্বশীর দেহেও। জীবন্ত উর্বশীর দেহ থেকে সে- ঐশ্বর্যকণা এখন ঢুকে যাচ্ছে চন্দনার মায়ের চোখে। নৈরাশ্য আর বিস্ময়ের ঘোরে জমতে থাকা বেদনার স্রোত তরল হতে লাগল। মা এখন মেয়ের কলঙ্ক দেখছেন না। উর্বশীকেও দোষী ভাবছেন না, খারাপ ভাবনাগুলো ধুয়ে গেল নতুন কণার পরশে। চন্দনার মায়ের এ পরিবর্তনে পরোক্ষভাবে নিজের ভূমিকা আছে দেখে নবছন্দে মেতে উঠল অর্ণবের দেহতরঙ্গ কণা। তখনই দক্ষিণ তালপট্টি হারানোর ব্যথাও ব্যাপক জয়ের ঐশ্বর্যের কাছে ম্লান হয়ে গেল। সিবেডে উদ্ভিদকলা বা ফ্লোরার সম্পদ দেখে আশায় ভরে উঠল ওষুধ আবিষ্কারের স্বপ্ন। দেশের বিজ্ঞানীরা এসব সম্পদ ব্যবহার করে নিশ্চয়ই তৈরি করে ফেলবে জীবনবিনাশী রোগের ওষুধ। অর্জিত খনিজ ধাতু ব্যবহার করে আকাশে উড়াবে নতুন ধরনের বিমান। সেই বিমানে নিশ্চয়ই ঘটবে না বিদ্যুৎবিভ্রাট। মাছ, শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ, কাঁকড়া, কুমির, হাঙ্গর, তিমি এসব রাশি রাশি প্রাণিজ সম্পদও ধরা পড়তে লাগল এলএইচসি টানেলের ভিজুয়াল স্ক্রিনে। আবারও নেচে নেচে উঠল অর্ণবের আশাবাদী দেহতরঙ্গ। বছরে প্রায় ছ’লাখ টন মৎস্যসম্পদ আহরণের হিসাব ভেসে উঠল চোখের মণিতে। আশাবাদী-আত্মপ্রত্যয়ী অর্ণবের আত্মবিশ্বাস জলজীবনের ঢেউ জলজ সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যেতে লাগল উর্বশীর দেহে- তার মননও ভরে উঠল স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষাপূরণের প্রবল আত্মবিশ্বাসে। সমস্যা জয়ে প্রতিজ্ঞার রেখাচিত্রও উর্বশীর চোখের মণিতে বসিয়ে দিল মাইক্রোচিপ। মাইক্রোচিপের কেন্দ্রে নিম্নচাপের মতো ঘূর্ণি তৈরি হলো। ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ-এর প্রেরণাসঞ্চারী কথা ‘ঝুঁকি না নিলে পিছিয়ে পড়তে হয়’Ñ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে লাগল মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে কঠোর হতে লাগল উর্বশীর দৃঢ়চেতা মনোভাব- ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের মধ্যে ভেসে এলো নতুন চমক- ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে কোনো ঝুঁকিই না নেওয়া।’ ‘সাহসী হতে হবে, সাহসী পথে ভুলও হতে পারে, হোক’। উর্বশীর মস্তিষ্কের ভেতর এমনি বৈদ্যুতিক সংকেত ঢুকছে ঝড়ের মতো। মানবদেহের ত্বকের মধ্যে সিরিঞ্জ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া চালের সমান ক্ষুদ্র চিপের চেয়ে ক্ষুদ্র আলোককণার চিপ উর্বশীর কর্নিয়ার তলে আসন গেড়ে বসল। এ চিপের শক্তি ও প্রভাব সম্পর্কে কোনো ধারণা তৈরি হয়নি উর্বশীর। নিজের চোখে যে এমন একটি তরঙ্গযন্ত্র বসে গেছে মোটেই বুঝতে পারেনি ও। মানবদেহের ত্বকের মধ্যে বসানো চিপ স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। আর উর্বশীর চিপের স্থায়ী সংযোগ ঘটে গেল অর্ণবের আলোকতরঙ্গের সঙ্গে। তার অনুভব-অনুভূতির সাংকেতিক তরঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল উর্বশী- এ খবরও জানা হয়নি ওর। নতুন নতুন আইডিয়ার সংকেত আসতে দেখে কিছুটা হতবাক হলো উর্বশী। ভাবনার তলে চাপা পড়ে রইল না ও। সম্পর্কের নতুন সংযোগে আন্টিকে নিয়ে এগিয়ে গেল চন্দনার বেডের দিকে। কাছে গিয়ে হাত রাখল চন্দনার কপালে। সম্পর্কের সুতোয় বসে গেল নতুন এক গিঁট। চন্দনার মায়ের মনও স্পর্শ করেছে সেই গিঁটের আঁটসাঁট টান। শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচা ও রুখে দাঁড়ানোর সমন্বিত অঙ্গীকারনামা গিঁটের প্রাণরসায়ন হিসেবে জ্বালানি সঞ্চার করল।
নতুন আলো দেখলেন চন্দনার মা। মেয়েকে সাহস দিয়ে বললেন, ‘মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে এগোতে গেলে পাল্টা আক্রমণ আসতে পারে। আক্রমণের ভয়ে পিছিয়ে না গিয়ে পাল্টা আঘাত করতে হবে যৌক্তিক পথে।’
মায়ের জেগে উঠা আত্মবিশ্বাস ছুঁয়ে গেল চন্দনা ও উর্বশীর প্রাণ। আগুনের পরশমণির ছোঁয়ার মতো পরশ ধুয়ে পরিচ্ছন্ন করে দিল যত কালিমা আর দুর্বলতা। মামলার ব্যাপারে এগিয়ে যাওয়ার পথটি মূল্যায়ন করতে বসল উর্বশী। রাগের বশে ভুল পথে এগোলে চলবে না, ইতোমধ্যে বুঝে গেছে। ভুলগুলো ধরতে হবে- শোধরাতে হবে- তারপর এগোতে হবে- এমনি বোধের ভেতর থেকে প্রশ্ন উঁকি দিল: একাকী থাকার সিদ্ধান্ত কি ভুল ছিল?
নিজের স্বচ্ছতার সামনে উড়ে গেল ভুলের ধূলিকণা।
চন্দনার উপলব্ধিতেও লুকিয়ে ছিল ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়টি। মার্ক জাকারবার্গের প্রেরণাময়ী কথা অনুযায়ী ভুল করেনি ও। ‘সাহসী হতে হবে, সাহসী পথে ভুল হতে পারে’- এই প্রেরণাসংকেতও বলছে বেশি সাহসী ঝুঁকি নিয়েছে চন্দনা, ভুল করেনি সে।
‘বেশি’ সাহসী ঝুঁকি কি অনুমোদনযোগ্য? নিজেকে খুঁড়ে খুঁড়ে ব্যবচ্ছেদ করে প্রকৃত মনোভাবটি বের করার চেষ্টা করল উর্বশী। হ্যাঁ। মনোভাবের কেন্দ্রটি দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রে ঘুরপাক খাচ্ছে নেতিবাচক চক্র- ‘বেশি’ বাক্যটির মধ্যে সংঘাত ঘটছে। সাহসী হতে হবে যাত্রাপথের ব্যারিকেডের শক্তি বুঝে। সামনে অজয় শত্রু ওত পেতে থাকলে তাকে আক্রমণ করা মানে নিজের মৃত্যু বা বিপর্যয় আলিঙ্গন করা। শত্রুর ক্ষমতা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করতে হবে। ধারণা না পেয়ে অগ্রসর হলে ‘ঝুঁকি নেওয়া’ মরণঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে- এ ধরনের ব্যবচ্ছেদের নতুন সাংকেতিক আলোয় জ্বলজ্বল করে উঠল উর্বশীর চোখ। হিকমত আবসারির সাংবাদিক-কানেকশন বা ঊর্ধ্বতন পুলিশ-কানেকশনের বিষয়ে খোলাসা না হলেও মোটামুটি ধারণা পেয়ে গেছে ও। ইতোমধ্যে চন্দনাকে কলগার্ল বানিয়ে নিউজ হয়েছে। অর্থাৎ সামাজিক দুষ্ট তিরে শত্রুপক্ষ বিদ্ধ করতে পেরেছে চন্দনাকে। ‘কান টানলে মাথা আসে’- সেই আলোকে বলা যায় নিজেও আক্রান্ত হয়েছে। দ্বিতীয়ত পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা ও আইনজীবীর পরামর্শে এখনও আসল আসামির নাম ফলাও হয়নি। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত যেমনটি ঘটে, ঘটেনি। ফলে কালিমার ছাপ লাগেনি আসামির গায়ে। তলে তলে কি বিপজ্জনক অপরাধী চক্রটি পুলিশ, মিডিয়া কিংবা চিকিৎসক বা আইনজীবীদের কিনে নিতে পারে?
প্রশ্নটি উঁকি দিলেও গাজীপুরের এসআইয়ের স্বচ্ছ পদক্ষেপের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন এলো না মনে।
আটঘাট বেঁধে নামতে হবে না ফাইট দিতে গেলে!
কীভাবে বাঁধবে আটঘাট?
কর্নিয়ায় প্রতিস্থাপিত হওয়া মাইক্রোচিপের স্পন্দনে আসতে লাগল নতুন সংকেত- এখনও চিকিৎসা চলছে চন্দনার, মেডিকেল রিপোর্ট নেওয়া হয়নি। এখানকার ওয়ান স্টেপ সেন্টারে চিকিৎসক, পুলিশ, আইনজীবী কিংবা মানবাধিকার কর্মীরা এ দায়িত্ব নেওয়ার কথা। নিয়েছেন তারা? দায়িত্ব কি পালিত হচ্ছে, ধাপে ধাপে কি এগোচ্ছে প্রতিটি পদক্ষেপ, নাকি থমকে পড়ে আছে বা আটকে আছে কোথাও?
প্রশ্নগুলোর টোকা খেয়ে আলোকিত হয়ে উঠল ব্রেন। প্রতিটি বিষয়ে সূক্ষ্ণ চোখ রাখতে হবে। চিকিৎসা এবং রিপোর্টের সঙ্গে সঙ্গে তদন্তকাজ চলবে, সব প্রস্তুত করে মামলটি চলে যাবে গাজীপুর থানায়। এমন কথাই বলেছিলেন মূল তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর থানার এএসআই জলিল।
চন্দনার ওপর শারীরিক নিপীড়ন হয়েছে। ধর্ষণ হয়েছে কি না জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তবে নারী চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট তৈরি হওয়ার কথা। রিপোর্ট কি গোপনে পাঠানো হবে? আইনের বিধি জানা নেই। জানাটা জরুরি। ওকে নিয়েও কানাঘুষা করছে সাংবাদিকরা- বিষয়টিও চোখ এড়ায়নি। চোখ খোলা রেখেই অগ্রসর হচ্ছে। মায়ের সাপোর্ট নিয়েছে উর্বশী। বাবাকে খোলামেলা কিছুই জানায়নি। তবে জানানোর প্রয়োজন উড়িয়ে দেয়নি। প্রয়োজনে বাবারও হেল্প নিতে হবে- সব কিছু ভেবে রাখল মনে মনে।

চলবে…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের জন্ম ১৯৬০ সালের ০২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়। তাঁর বাবার নাম আসাদুল হক এবং মায়ের নাম মাসুদা খাতুন। তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম ও খালিশপুর, খুলনায়। বর্তমান নিবাস ধানমন্ডি, ঢাকা। স্ত্রী মাহফুজা আখতার মিলি, সন্তান মাহবুব ময়ূখ রিশাদ, পুত্রবধূ ইফফাত ইসলাম খান রুম্পা ও জিদনি ময়ূখ স্বচ্ছকে নিয়ে তাঁর সংসার। চার ভাই এক বোনের মধ্যে চতুর্থ সন্তান তিনি। তাঁর অ্যাফিডেভিট করা লেখক-নাম মোহিত কামাল। তিনি সম্পাদনা করছেন শুদ্ধ শব্দের নান্দনিক গৃহ, সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক পত্রিকা শব্দঘর। তাঁর লেখালেখির মুখ্য বিষয় : উপন্যাস ও গল্প; শিশুসাহিত্য রচনার পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণাধর্মী রচনা। লেখকের উড়াল বালক কিশোর উপন্যাসটি স্কলাস্টিকা স্কুলের গ্রেড সেভেনের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে; ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি (ঝঊছঅঊচ) কর্তৃকও নির্বাচিত হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কথাসাহিত্য ৩৭ (উপন্যাস ২৪, গল্পগ্রন্থ ১৩)। এ ছাড়া কিশোর উপন্যাস (১১টি) ও অন্যান্য গ্রন্থ মিলে বইয়ের সংখ্যা ৫৫। জাতীয় পুরস্কার: কথাসাহিত্যে অবদান রাখার জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৮), অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার ১৪১৮ বঙ্গাব্দ (২০১২) অর্জন করেছেন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে অন্যান্য পুরস্কারও; হ্যাঁ (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০২০) উপন্যাসটি পেয়েছে সমরেশ বসু সাহিত্য পুরস্কার (২০২০)। পথভ্রষ্ট ঘূর্ণির কৃষ্ণগহ্বর (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০১৪) উপন্যাসটি পেয়েছে সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪)। সুখপাখি আগুনডানা (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০০৮) উপন্যাসটি পেয়েছে এ-ওয়ান টেলিমিডিয়া স্বাধীনতা অ্যাওয়ার্ড ২০০৮ এবং বেগম রোকেয়া সম্মাননা পদক ২০০৮―সাপ্তাহিক দি নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্রেস-প্রদত্ত। না (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০০৯) উপন্যাসটি পেয়েছে স্বাধীনতা সংসদ নববর্ষ পুরস্কার ১৪১৫। চেনা বন্ধু অচেনা পথ (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০১০) উপন্যাসটি পেয়েছে ময়মনসিংহ সংস্কৃতি পুরস্কার ১৪১৬। কিশোর উপন্যাস উড়াল বালক (রোদেলা প্রকাশনী, ২০১২; অনিন্দ্য প্রকাশ, ২০১৬) গ্রন্থটি ২০১২ সালে পেয়েছে এম নুরুল কাদের ফাউন্ডেশন শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১২)। তিনি মনোচিকিৎসা বিদ্যার একজন অধ্যাপক, সাবেক পরিচালক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ,ঢাকা
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!