প্রবহমান: পর্ব – বারো

হোসনে আরা মণি
হোসনে আরা মণি
3 মিনিটে পড়ুন
প্রবহমান

রমিজ মিঞা নাতিনের বিয়ে এই মাঘেই সেরে ফেলতে চায়।
শরাফত নিমরাজী। মাইয়্যের বিয়ে যখন দেয়াই লাগবি তখন বেশি দেরি করার হেতু থাকতে নেই। তার মাঝে আলতার মার শরীরের ব্যাপার আছে। এখন তিন মাস চলছে। এই মাঘে পাঁচ মাস হবে। একটু ঢেকেঢুকে চললে না হয়! জামাই পক্ষের চোখ ফাঁকি দেয়া যাবে, কিন্তু মাঘ পেরুলে আর সে উপায় থাকবে না।
হিরণবালার শরীর-মন সব আইঢাই। কত স্বপ্ন ছিল আলতা মা লেখাপড়া শেখবে। ডুরে শাড়ি পরে, চুল বেঁধে ইশকুলে যাবে। হাহ্! স্বপ্নভঙ্গের বেদনার সাথে নিজের শরীরে আরেকটা শরীর ধারণের কষ্ট তাকে ইদানীং সারাক্ষণই কেমন হতবল করে রাখে।
ভাল-মন্দ কিছুই বোধ করে না রওজান বিবি আর আকিমন। মাইয়্যে ঝিপুত বিয়ে তো একদিন দেয়াই লাগে – দুই দিন আগে আর পরে। দাদার ইচ্ছে নাতিনের বিয়ে দিয়া। তা দিক না। ভালো ঘর-বর সব সময় তো মেলে না। বৌয়ের মন খারাপ। মাইয়্যেরে সে এত কম বয়সে বিয়ে না দিয়ে ইশকুল পাশ দেয়াবার কথা ভাবে। তা পুষ্যে ছাওয়াল হলে সে ভাবনা কি আর বাপ-দাদায় ভাবতো না? খালি ইশকুল ক্যান, কলেজ-মাদ্রাসা যে জায়গাতেই পড়তি যাতি চাইতো নাতি, দাদা কি আর তাতে আপত্তি কইরতো?
রাতে হিরণবালা স্বামীর কাছে তার আর্জিটা জানায়। দুর্বল শরীরে হাঁফাতে হাঁপাতে সে বলে, আমার শইলডা বালো না। এমন সুমায় আলতা মারে আমার কাছেত্থে না সরালি হোতো না?
আলতারে আবার কহানে সরাচ্ছি? শরাফত যেন বিস্মিত।
বিয়ে দিচ্ছেন। উরা যদি এহানে না রাহে?
রাকপি নে ক্যা? বৌ যদ্দিন বড় না অয় তদ্দিন তো বাপের বাড়ি থাহাই নিয়ম।
তেমু। আলতারে আপনি এহনই বিয়ে দেন না। আর কয়ডা বছর সবুর অরেন।
কয়ডা বছর মানে? মাইয়্যেরে কি তুই বিয়ে না দিয়ে ডোলে ভরে রাহার খোয়াব দেহিস?
কী কন না কন, ডোলে ক্যা ভরে থোবো! আমি কই ওর ডাঙ্গর হওয়া তামাইৎ অপেক্ষা করার কতা।
মাইয়্যে মানুষ ডাঙ্গর হতি সুমায় লাগে না। তুই কয় বচ্ছরে ডাঙ্গর হইছিলি মনে আছে?
তা আর মনে নেই হিরণবালার! সে কথা কি কেউ ভোলে! বিশেষ করে যার ডাঙ্গর হওয়ার প্রত্যাশায় গোটা পরিবার দিন গোনে তার কি আর সে সময়ের হিসেবে ভুল হয়! এগারো নাকি সাড়ে এগারো বছর বয়স ছিল তখন হিরণের? অত দিন-মাস মেপে বয়সের হিসেব তো আর করা হয়নি কখনো। তবে বাড়ির সবাই বলছিল যে বারো বছর হওয়ার আগেই ফুল দেখলো বৌ। তার ফুল দেখার ঘটনায় রওজান বিবি সহ গোটা পরিবারে চাপা খুশির বান বয়েছিল। পাক গোসলের দিনে শাশুড়ি আকিমন এক হাঁড়ি ক্ষীর রেঁধে পাড়া-পড়শিকে দাওয়াত দিয়ে খাইয়েছিল। আর ঠিক সেই রাতেই প্রথম শরাফত পেয়েছিল বৌ নিয়ে দুয়ারে খিল আঁটার পারিবারিক অনুমোদন। ক্লিষ্ট হাসির সাথে কেমন এক লাজুক ভাবের যৌগিক ছায়ায় হিরণের মুখ এখন মাখামাখি। সেই মুখে চুমু খেতে শুরু করেছে শরাফত। সদা অরুচি আর বমি-বমি ভাব লেপ্টে থাকা পোয়াতি শরীরটা আগ্রাসী চুমুর তীব্র আবেদনেও কেমন গুটিয়ে থাকে। কিন্তু স্ত্রীর শরীর গুটানো কি বিছানো তার দিকে দৃকপাতের সময় তো এখন নেই স্বামীর। সে ব্যস্ত তার জমিনে যেমন খুশি চাষ দেবার কাজে।
এমন সোহাগী সময়েও আজ হিরণের মুদিত দু চোখ বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে নামে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
জন্ম - মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার ওমেদপুর গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মতারিখ- প্রকৃত: ২৭ জুন ১৯৭৭, সনদীয়: ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ পিতা- মোঃ আব্দুল গফ্ফার মোল্লা মাতা- সালেহা ইয়াসমিন সংসারসঙ্গী- মোঃ দেলোয়ার হোসেন (মাহমুদ) তিন কন্যা- আদৃতা, অঙ্কিতা ও দীপিতা বর্তমান অবস্থান: রাজশাহী। পেশা: সরকারী চাকরি [উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, বিভাগীয় কার্যালয়, রাজশাহী] প্রকাশিত গ্রন্থঃ ৭টি (৬টি গল্পগ্রন্থ, ১টি উপন্যাস) প্রথম: অপরাজিতা (সময় প্রকাশন) দ্বিতীয়: জীবনের পেয়ালায় ছোট্ট চুমুক (ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ) তৃতীয়: নদীও নারীর মত কথা কয় (বটেশ্বর বর্ণন) চতুর্থ: মহাকালে প্রান্তরে (পরিবার পাবলিকেশন্স) পঞ্চম: লিলুয়া জীবনের নারীগণ (বটেশ্বর বর্ণন) ষষ্ঠ: বিবিক্তা (বটেশ্বর বর্ণন) – উপন্যাস সপ্তম: তামসী (বইঘর)
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

একটি অ্যাকাউন্ট নেই? নিবন্ধন করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!