আলো অন্ধকারে যাই (পর্ব ১৩)

গৌতম রায়
গৌতম রায়
10 মিনিটে পড়ুন

‘শিক্ষকতা’ বিষয়টির সাথে সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা, সৃজনশীলতার যোগটি সর্বজন স্বীকৃত। বিষয়গুলি শ্রেণিকক্ষে অনুশীলন হলে সেগুলি ব্যক্তি জীবনেও অনুশীলনের অভ্যেস তৈরি হয়। পক্ষান্তরে এগুলির অভাব শিক্ষকের মাঝে ফসিলাইজেশন (fossilization) তৈরি করে। বছরের পর বছর কোনো একটি বিষয় যখন শিক্ষক কর্তৃক একইভাবে, একই উদাহরণে বা অনুশীলনের অংশ হিসেবে শ্রেণিকক্ষে ব্যবহৃত হয়, তখন সেটি ফসিলাইজেশন। 

সেদিক থেকে চিন্তা করলে ‘সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে ও পশ্চিম দিকে অস্ত যায়’ – এটি চিরসত্য হলেও বছরের পর বছর present simple tense এর উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার হওয়া বা নির্দিষ্ট কিছু বাক্য translation, voice change বা narration এর জন্যে ব্যবহার করা এবং তার বাইরে কিছু ব্যবহার না করতে পারাটা অবশ্যই ফসিলাইজেশন।      

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এই ফসিলাইজেশন বেশ পাকাপোক্ত হয়ে গিয়েছে। বিদ্যমান কাঠামোর মাঝেও যে কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগানো যায়, শিক্ষাকে জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করা যায়, শিক্ষা প্রক্রিয়াটিকে আনন্দঘন করা যায়, সেটি শিক্ষকতায় যুক্ত অনেকেই হয়ত বিস্মৃত হয়েছেন। শিক্ষা মানেই একটি জটিল কিছু, কঠিন কিছু, আনন্দ বর্জিত কিছু এরকম এক ধরনের ভাবনা পেয়ে বসেছে আমাদের শিক্ষার্থীদের। আর এর জন্যে আমরা – শিক্ষকেরা দায় এড়াতে পারি না।

শিক্ষার নিউক্লিয়াস যদি ধরা হয় শিক্ষককে আর শিক্ষক যদি এমন হন যে আজ থেকে বিশ বা ত্রিশ বছর আগে তিনি যা শিখেছেন, যা পড়েছেন তার থেকে বের হতে চান না – তবে কাজটি হয়তো তার জন্যে সহজ হয়ে যায় ঠিকই; কিন্তু ইনোভেশন বা উদ্ভাবন নামের বিষয়টি ক্ষয়িষ্ণু হতে হতে একসময় শূন্যের কোঠায় চলে যায়। 

শিক্ষাবিদ Benjamin Bloom শিক্ষাকে একটি পিরামিডের সাথে তুলনা করেছেন। এই পিরামডটির প্রথম স্তরে বড় অংশ জুড়ে আছে remembering বা স্মরণ করা। দ্বিতীয় স্তরে আছে understanding বা অনুধাবন করা। ক্রমান্বয়ে অন্য ধাপগুলি হলো প্রয়োগ (application), বিশ্লেষণ (analysis), মূল্যায়ন (evaluation), ও নির্মাণ/সৃষ্টি (creation)। যখন একজন শিক্ষার্থী এই সবগুলি ধাপ বা স্তর পরিভ্রমণ করে তখনই তার শিখন সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়।

পাঠক, ভেবে দেখুন আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সকল learning activity মূলত এই পিরামিডের প্রথম দুটি ধাপের ভিতরেই সীমাবদ্ধ। আমরা কোন কিছু বিশ্লেষণ করতে হলেও সেটি করে থাকি মুখস্থ শক্তি ব্যবহার করে। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো – এটি আমাদের স্মরণ করেই বলতে হয়, কিন্তু বিলাসীর চরিত্র, বা হৈমন্তীর মনো-সামাজিক জটিলতা মুখস্থ করে উত্তর লিখলে সেটি বিশ্লেষণ হয়ে ওঠে না। সেটিও অবধারিতভাবে হয়ে যায় recalling, যা Bloom’s Taxonomy অনুযায়ী শিক্ষার প্রথম ধাপ।  

মুখস্থ করা, নোট পড়া, গাইড বই পড়ে উত্তর রপ্ত করা এসবের মাঝ দিয়ে যেতে যেতে আমরা যারা শিক্ষক তারাও নিজেদের মস্তিষ্কের ব্যবহারে অলস হয়ে পড়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদেরকে বনসাই করে রাখছি কারণ আমরা নিজেরাই বনসাই হয়ে আছি ফসিলাইজেসনের কারনে। 

বিলাসী পড়ার উদ্দেশ্য কেন তার চরিত্র চিত্রণের মাঝে আটকে থাকবে বা সমসাময়িক সমাজ ব্যবস্থার চিত্রকল্প নির্মাণের মধ্যে? কেন ‘আমি স্টেশনে পৌঁছিবার আগেই গাড়িটি ছাড়িয়ে যাইতে’ হইবে? আমি কলেজে যাবার আগে স্নান করতে পারি না? আমার মা সকালের খাবারটি বানানোর আগে অন্য কাজ করতে পারেন না? আমি জানালার কাছে আসার আগেই পাখিটি উড়ে যেতে পারে না? পারে এবং সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিকতাকে আমরা জোর করে দূরে ঠেলে দিয়েছি। জীবনের সাথে যে শিক্ষার সম্পর্ক নেই সেই শিক্ষাকে শিক্ষার্থী কেন আনন্দ নিয়ে শিখতে চাইবে? 

Alan Maley তার Poem into Poem, Advanced Learners, Literature নামের পুস্তকগুলিতে দেখিয়েছেন, বিশুদ্ধ সাহিত্যও কীভাবে উচ্চতর চিন্তন দক্ষতার মাঝ দিয়ে শেখানো যায়। ওফেলিয়ার সাথে হ্যামলেটের প্রেমের জটিলতার বিবরণ দিতে না বলে বলা যায়, তুমি ওফেলিয়া বা হ্যামলেট হলে কী করতে, কেন করতে? ম্যাকবেথ নাটকটি যেখানে শেষ হয়েছে তার পরে আরো একটি সিন রচনা করতে বলা যেতে পারে শিক্ষার্থীকে। এগুলির জন্যে সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতার প্রয়োজন হয়।

‘একটা মজার গল্প তোমায় বলতে ভুলে গেছি।

সেদিন ছিলো বেষ্পতিবার। আকাশ ছুঁড়ে মারলো ঘূর্ণিঝড়

অমিতাভের সঙ্গে হঠাৎ কলেজ স্ট্রিটে দেখা হতেই, এই যে শুভঙ্কর

কেমন আছিস, এটা-ওটা দু-দশ কথার পর

আসল প্রশ্ন, এখনো সেই নন্দিনীতেই ডুবে আছিস নাকি?

ইদানিং যা লেখা-টেখা বেরোচ্ছে তা পড়লে মনে হয়

নন্দিনী তোর আকাশ এবং তুই উড়ন্ত পাখি।

অমিতাভ, তুমি জানই, পলিটিক্সে নিবেদিত প্রাণ

তাই তাকে বললাম,

নন্দিনীকে ধরিস যদি প্রকাণ্ড বিপ্লব  

আমি হলাম তার ভিতরের দাবি-দাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্লোগান।’

কাব্যগ্রন্থঃ কথোপকথন-এক, কবিতাঃ কথোপকথন ১৯, পূর্ণেন্দু পত্রী

উপরোক্ত ধরনের কোনো একটি লেখা তুলে দিয়ে আমরা কি আমাদের ছেলেমেয়েদের ইংরেজি অনুবাদ করতে শিখিয়েছি? আমাদের শিক্ষকবৃন্দ কি কখনো আমাদের বলেছেন – তোমাদের স্কুলের  সামনে দিয়ে এতো গাড়ি যায় হর্ন বাজাতে বাজাতে। এই এলাকাটিকে হর্নমুক্ত করার জন্যে প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সড়কমন্ত্রীর কাছে আবেদন লেখো; শ্রেণিকক্ষে একটা ফ্যান চলে না বা সুইসটি নষ্ট – সেটি ঠিক করার জন্যে আবেদন করো; ব্রিটিশ কাউন্সিল বা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হবার জন্যে আবেদন করো; অন্য স্কুলের সাথে বিতর্ক প্রতিযোগিতার জন্যে সেখানে একটি চিঠি পাঠাও বা স্কুলকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্যে আবেদন লেখো! উত্তরটি আমাদের সকলেরই কম বেশি জানা।

বোনের বিয়ে নিয়ে চিঠি লিখতে বলা হয়, এমন কি কোনো ভায়ের বিয়ে হয় না। এখন বাংলাদেশে একটি-দুটি স্কুল ছাড়া কোথাও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্যে আবাসন ব্যবস্থা না থাকলেও শিক্ষার্থীদেরকে যুগের পরে যুগ ধরে স্কুলের হোস্টেলে সিট পাবার জন্যে আবেদন পত্র লেখা শেখাতে আমরা ব্যস্ত হয়ে আছি। যে সন্তান বাবা-মায়ের সাথে থাকে তাকেও বই কেনার টাকা পাঠাতে অনুরোধ করে বাবার কাছে পত্র লিখতে বলা হয়। আমাদের কোনো শিক্ষার্থী কৃষক হতে চায় না কারণ আমরা কৃষি কাজকে সম্মানের কাজ বলে গণ্য করি না। কেন  আমাদের শিক্ষার্থীরা খেলোয়াড় হতে, অভিনেতা হতে, শিল্পী হতে, ব্যবসায়ী হতে চায় না? তাহলে কি আমরা এমন কোনো ইউটোপিয়াতে বসবাস করি যেখানে শুধুই ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার গিজগিজ করবে? 

সত্তরের দশকের বেলবটম প্যান্ট এখন অচল। অচল টেপ রেকর্ডার, টুইন ওয়ান, ফিল্ম ক্যামেরা, গ্রামোফোন; টিডিকে বা মাক্সেল ক্যাসেট। সময়ের বিবর্তনে এসব অনেক কিছু বাতিল হয়েছে, রূপান্তরিত হয়েছে। আজ একটি এন্ড্রোইড ফোন দিয়ে কথা বলা যায়, গান শোনা যায়, ছবিও তোলা যায়, ছবি আঁকাও যায়। এ সকল রূপান্তরের সাথে আমরা কম বেশি নিজেদেরকে মানিয়েও নিয়েছি। শুধু রূপান্তর হয় না আমাদের ইংরেজি (এবং অবশ্যই বাংলা) শিক্ষার ধরনে। তাই কারিকুলামে changing of sentence থাকলেও আমাদের শিক্ষকদের কাছে এসে সেটি হয়ে যায় transformation of sentences। আর আমরা শেখাতে থাকি None but every mother loves her child. কারিকুলাম দেখতে চাইলো শিক্ষার্থী একটি affirmative sentence কে negative করতে পারে কিনা – অথচ সেটি হয়ে গেল অর্থ না পাল্টে একটি বাক্য নেগেটিভ করার ক্লিশে। তাতে বাক্য কতটা প্রাঞ্জল থাকলো আর কতটা কৃত্রিম বা হাস্যকর হলো তা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথ্যা নেই। ওই যে, শিখে এসেছি যা – তা থেকে বের হওয়া যাবে না! বের হতে হলেই তো নতুন করে পড়া, শেখা, নিজেকে ভেঙেচুড়ে নতুন করে গড়া। তারচেয়ে ওই ভালো – পড়লাম না, শিখলাম না – শুধু সিস্টেম আর সরকারকে দোষারোপ করে গেলাম। অথবা বললাম, ইদানিং ছেলেমেয়েদের শেখার কোন আগ্রহ নেই। পেশাগত উন্নয়নের কথা এলেই সেই একই অজুহাত – বেতন কম, সম্মান কম, গৃহশিক্ষকতা  না করলে চলে না ইত্যাদি। আমি ভাত খাই’ এর পরিবর্তে ‘আমি সকালে দুটি রুটি বা পরাটা খাই একটি ডিম ও একটু সবজি বা ডাল দিয়ে’ – এই কথাটা শেখাবার সাথে বেতন কমের সম্পর্ক কোথায় আমি বুঝি না। এমনকি গৃহশিক্ষকতা করলেও এটি কেন শেখানো যাবে না সেটিও আমি বুঝতে অপারগ। 

এভাবেই চলেছে। তথাকথিত অনেক বড় স্কুলের শিক্ষকের সাথেও কাজ করেছি। তাঁদের অনেকের কাছে কোনো ছাত্র পড়তে গেলে এমনও শোনা যায় তিন মাসের সিরিয়াল লাগে। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি তাদের ইংরেজি জ্ঞান কী ভয়াবহ রকমের শূন্যতায় ভরপুর! সেই আজ থেকে একশো বছর আগের উদাহরণ আর পদ্ধতিই সম্বল।

আমাদের কালের শিক্ষকেরা তবুও তো নেসফিল্ড, রেন ও মার্টিন, পি কে দে কেউ কেউ পড়েছেন, কেউ কেউ দেখেছেন। এখন বই বিক্রির মার্কেটিং আর খামের আড়ালে উঠে এসেছে ভুলে ভরা বই। আমাদের এক শতাংশ শিক্ষক বা বিদ্যালয়ের সাথেও Jones-এর Communicative English Grammar, Collins Cobuild English Grammar, Practical English Grammar, English language in Use সহ গত তিন-চার দশকের ভিতরে যেসকল ভালো ও আধুনিক গ্রামার বই বেরিয়েছে তার কোনো সংশ্রব নেই। এসকল বই থেকে ধারণা নিয়ে NCTB যে ইংলিশ গ্রামার রচনা করে পাঠ্য হিসেবে বিনামূল্যে বিতরণ করলো, সেটা আমাদের সম্মানিত শিক্ষকেরা ছুঁয়েই দেখেন না কারণ সেটি পড়ে বুঝতে হবে, activity সল্ভ করতে হবে। ‘সময় কোথায় সময় নষ্ট করার’? 

এই অপেশাদার আচরণই আমাদের ইংরেজি শিক্ষাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। নইলে বিশ্বের আর কোথাও এটি আছে কিনা জানি না যেখানে বারো বছর ধরে ইংরেজি শেখানোর পরেও শিক্ষার্থী ইংরেজিতে দুটো-পাঁচটা কথা বলতে পারে না! ভাবতেই অবাক লাগে, অপরাধী লাগে। আমরা দোষারোপ করি শিক্ষকবৃন্দকে, শিক্ষকবৃন্দ দোষারোপ করেন কখনও এনসিটিবিকে, কখনও শিক্ষা বোর্ডকে, কখনও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা অভিভাবককে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ অন্য কাউকে, তাঁরা আবার অন্য কাউকে। এভাবেই ব্লেম গেইম চলছে।

গত ত্রিশ, চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছরে কতটা পাল্টেছে আমাদের এই স্থিরচিত্র? 

(চলবে)

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: গৌতম রায়
গৌতম রায় ইংরেজির অধ্যাপক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেবার পর বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বেশ তরুণ বয়সেই শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। পড়িয়েছেন দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা থেকেই পরবর্তীতে ছাত্র হয়েছেন ইংল্যান্ডের এক্সিটার ইউনিভার্সিটির।‌ যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ড লার্নিং থেকে নিয়েছেন পেশাগত প্রশিক্ষণ। এখন কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন বাংলাদেশের জাতীয় ‌শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে। শিক্ষা বিষয়ক বর্ণিল কাজে নিজেকে ‌সম্পৃক্ত রাখার জন্যই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে তিনি দেখেছেন খুব কাছে থেকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে গৌতম রায়ের পছন্দের আঙ্গিনা শিক্ষকের অনিঃশেষ পেশাগত দক্ষতা, ইন্টারেক্টিভ মেটিরিয়ালস ডিভ্যালপমেন্ট, ও লার্নিং এসেসমেন্ট।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!