চোর-ডাকাতের লেখক

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
2 মিনিটে পড়ুন
লেখক ও হেনরি। ছবি সংগৃহীত।

যাঁর লেখার প্রধান চরিত্রগুলোই চোর, ডাকাত, বাটপার, ভবঘুরে, মিথ্যেবাদী, ভাগ্যহীন এবং প্রতারক, যাদের নিয়ে উনিশশো থেকে উনিশশো পাঁচ সালের মধ্যে, মানে ছ’বছরের মধ্যেই ‌যিনি লিখে ফেলেছিলেন তিনশোরও বেশি গল্প এবং‌ সেই গল্প লিখে পাঠকমহলে বেশ‌ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন, তিনি কিন্তু কখনও চাননি তাঁর এই গল্পগুলো তাঁর নিজের নামে ছাপা হোক। এমনকী, যে সব পত্রপত্রিকায় এ সব গল্প তিনি ছাপতে দিতেন, সেই সব পত্রিকার সম্পাদকদেরও তিনি বলে দিয়েছিলেন, তাঁর আসল পরিচয় যেন কেউ না জানে। তার কারণ, তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল অনেক কলঙ্ক, অনেক অপবাদ এবং অবশ্যই পাহাড় প্রমাণ অপমান।

প্রথম জীবনে তিনি যে ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন, সেখানে একবার এক হাজার ডলারের হিসেব মেলাতে না পারার জন্য তাঁর চাকরি চলে যায়। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই টাকা দিতে না পারলে তাঁকে এরেস্ট করা হবে জানতে পারা মাত্রই তিনি টেক্সাস থেকে পালাতে যান হাউস্টনে। সেখানেও তাঁর নামে গ্রেফতারি সমন জারি হওয়ায় তাঁকে চলে যেতে হয় অরলিনসে। তারও পরে ট্রজিনোতে।

এত বার জায়গা বদল করে, গা ঢাকা দিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হল না। অবশেষে তিনি পুলিশের জালে‌ ধরা পড়েন এবং বিচারে‌ তাঁর জেল হয়ে গেল তিন বছর তিন মাস।
তাই তিনি চাননি তাঁর আসল পরিচয় কেউ জানুক। ফলে প্রকাশকেরা তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, আপনার নামে যদি বই না ছাপি, তা হলে কার নামে ছাপব? যে কোনও একটা নাম দিন। অন্তত একটা ছদ্মনাম।

তখন, যে অহিয়ো জেলে‌ তিনি বন্দি ছিলেন, মনে পড়ে গেল সেই জেলখানার কথা। মনে পড়ে গেল সেই জেলখানার প্রহরীদের যিনি সর্দার ছিলেন, তাঁর কথা। তাঁর নাম ছিল— ওবিন হেনরি। সংক্ষেপে ‘ও হেনরি’। সেই সর্দারটি ছিলেন খুব ভাল। এই লেখকের সঙ্গে তার খুব মিষ্টি একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাই সেই নামটিই তাঁর লেখক জীবনের নাম হিসেবে বেছে নিলেন তিনি। এবং ‘ও হেনরি’ নামেই প্রকাশ পেতে লাগল তাঁর একটার পর একটা বই।

তাই তাঁর প্রকৃত নাম উইলিয়াম সিডনি পোর্টার হলেও, সে নাম একদিন সবাই ভুলে গেল। আর উনি পরিচিত হয়ে উঠলেন ওহিয়ো জেলখানার প্রহরীদের সর্দারের সংক্ষিপ্ত নাম ‘ও হেনরি’ নামে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!