ডাক
ঘুমায় নদী পট, ঘুমায় মাঝি
ক্লান্ত বৈঠা শ্রমস্বেদ রেখেছে সঞ্চয়ে
বাতাসে চঞ্চল ঢেউ
দূর পথে পাড়ি
লক্ষ্য ক্রমশঃ ম্লান
এই বেলা সেরে নাও অভিযোগ
আছে যা দরকারি।
রাস্তাটি ফিরল, ফিরল শ্মশান বন্ধু যত
তেরাত্রি পরে সহজ হয়ে এলো শোক
তবুও আগুন অনিমেষ
পাঁজরে তীব্র দহন
জ্বেলে রাখে আলো
যদি বাকি থাকে বার্তা অবশেষ
ভাসাও ভীম আবাহন।
রাত কথা
রেখে গেছো মেঘ আর আনত ভূমি
পুরনো কথা আছে আস্তিন জুড়ে
জানার পরেও ফাঁকি ছিল জানি
মাটির নূপুর বাজে রোদ জলে পুড়ে।
শরীরের ভাঁজে ভাঁজে নষ্ট আদর
বিয়েন কাঠি জুড়ে প্রবল জ্বর
বাতাসের হাত ধরে ছায়ার সন্ধান
সর্বনাশ ডেকে আনে মধুলোভী তস্কর।
ডাক নামে তরঙ্গ ওঠে
শরীরে জুড়োয় শরীর
বোকা চাঁদ লিখে রাখে
রাত-কথা, বিষন্ন গভীর।
সংলাপ
গল্পের ঝাঁপি উল্টে রাখলাম
ছাড়া পেয়ে শেষ শব্দটাও
গভীর পেরিয়ে আরো গভীরে
শীত ঘুমে।
খান কতক আপাত হারিয়ে যাওয়া বর্ণ
উষ্ণতার খোঁজে ফিরে এসেছে
অভিধানের বাঁধা টপকে
অনুভবের কাছাকাছি।
কাক পক্ষীর কান বাঁচিয়ে
প্রস্থান নামক গল্পের ধারাবাহিক
যুগল স্রোতও কাছাকাছি আসে, এই
বিনীত আক্ষরিক যাপনকে ভালোবেসে।
স্পর্শ
সব স্পর্শ ফেরত দিতে পারব
এমন ধৃষ্টতা রাখিনি
কিছু ঋণ আদরের
তবুও অলীক চেষ্টার কাছে
বারে বারে ফিরিয়ে দিয়েছি
বাড়তি সময়টুকু।
শরীরের বাঁক পেরিয়ে
নৌকা গিয়ে দাঁড়াল দীঘল নদীর পাড়ে
ঢেউ অপ্রস্তুত হয়ে পিছিয়ে গেল
জলের গর্ভে। পাড়ের মানুষ বোঝেনি সে খেদ
তারা মত্ত ছিল শিকারের গুজবে।
নেশা কেটে গেলে বুদবুদ থিতিয়ে পড়ে
কাঁচ জলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে স্বজন চিহ্ন
সুখ আর স্বমেহনের মধ্যে তিরতির করে
কাঁপছে অমর হতে না চাওয়া গোপন সুখ যত।
রসদ
৯.২৩ এর ট্রেন ছেড়ে যাবার পর
স্টেশনে যে কটি কথা ফেলে এলাম
তারা চাপা পড়ে গেলো পরবর্তী ধাতব শব্দে।
ওর থেকেই যা বাঁচল তার কিছুটা
এক জোড়া শালিক খুঁটে নিয়ে
রাখল জোড়াতাপ্পি দেওয়া বাসায়।
ফলের ঝুড়ির সাথে কিছুটা গেলো
নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসারে।
বাকি থাকা খাজনা চেটে পুটে খেলো সময়
বেঁচে থাকার জন্য আর কিছু লাগে না, বন্ধু।
মাটির মেয়ে
চওড়া কপালে মানতের বোঝা
লক্ষ্মীমন্ত, পয়মন্ত। হিসেব না মিললে
শব্দ বিপরীত। একগলা ঋণ জন্মের।
জলের বাষ্পে মুক্তদানা ছড়িয়ে, যে
স্নান ফিরে গেছে বিপন্ন বন্দিশে, তার
কাজলে, কপালে, কাঁখে ভাসান গান।
ঘুম খুঁটে তুলে দিল শিকড়, মাটি
ব্যাথার সূচী মুখে ক্ষতর নকশা।
গভীর নিয়োজন।
শোকের কম্পন আঁচলে বেঁধে সংসার মাথায় তুলে রাখে সে।
সবাই তাকে পায়ের নীচে রাখলেই বা কি!
নীচেই যে মাটির স্বাদ, গন্ধ, ক্ষমতা, সব সব।