পুরুষের প্রয়োজন ফুরিয়েছে

ফয়সাল কবির
ফয়সাল কবির - ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
6 মিনিটে পড়ুন

  • তসলিমা নাসরিন

taslima 11759 পুরুষের প্রয়োজন ফুরিয়েছে

পুরুষের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। বিজ্ঞান কিন্তু জোরে সোরেই এ কথা বলছে। যে কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল পুরুষের, সে হলো শুক্রাণু তৈরি করা। কয়েক বছর আগেই স্টেম সেলের গবেষকরা জানিয়েছিলেন স্টেম সেল থেকেই স্পার্ম বা শুক্রাণু তৈরি হতে পারে। এতকাল যাবৎ তৈরি করে দেখাতে পারেননি। বিজ্ঞানের বেলায় শুধু মুখের কথায় বিশ্বাস করার ব্যাপার নেই, প্রমাণ দেখাতে হয়, ঘটনা ঘটিয়ে দেখাতে হয় যে ঘটনা ঘটেছে। চীনের একজন ডাক্তার ইঁদুরের স্টেম সেল থেকে স্পার্ম তৈরিকরেছেন। স্টেম সেল ভ্রুণের নাভি থেকে সংগ্রহ করা যায়। যে ক’টা স্টেম সেলের দরকার একটা নতুন শরীর তৈরি করতে, সেগুলো খরচ হয়ে যাওয়ার পর, বাকি অব্যবহৃত স্টেম সেলগুলো পড়ে থাকে নাভিতে। সেই পড়ে থাকা কোষগুলো দিয়েই পরে তৈরি করা যায় শরীরের যাবতীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। ইঁদুরের স্টেম সেল থেকে যদি স্পার্ম তৈরি করে ফেলা যায়, তাহলে মানুষের স্টেম সেল থেকেও তৈরি করা যাবে স্পার্ম। তাই নয় কি? হ্যাঁ তাই। ইঁদুরের স্টেম সেল থেকে তৈরি করা স্পার্ম এখন ইঁদুর ছানা তৈরি করতে ব্যস্ত।

প্রথমে ইঁদুরের ওপর, গিনিপিগের ওপর, অথবা বানরের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়, ভালো ফল পেলে মানুষের ওপর চালানো হয় পরীক্ষা। মানুষের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে যদি ভালো ফল পাওয়া যায়, তবে আমরা অনুমান করতে পারি ঘটনা কী ঘটতে যাচ্ছে। কোটি কোটি স্টেম সেল থেকে কোটি কোটি স্পার্ম তৈরি করা হবে। স্পার্ম ব্যাংক গজিয়ে উঠবে মোড়ে মোড়ে। স্পার্ম ব্যাংক থেকেই স্পার্ম নেওয়ার চল শুরু হবে। স্পার্মের জন্য পুরুষের ওপর নির্ভর করবে না কেউ। এরকম দৃশ্য তো কল্পনা করতেই পারি, যে, মানব প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখছে নারী, একা নারী। এতে পুরুষের কোনও ভূমিকা নেই। নারীরা নিশ্চয়ই পুরুষকে আর প্রভু মানবে না। পুরুষকে বিয়ে করার সামাজিক দায়িত্ব থেকেও তারা রেহাই পাবে। আর কিছু দিয়ে তো পুরুষতন্ত্রকে ঠেকানো যায়নি, সম্ভবত সন্তান উৎপাদনে পুরুষের ভূমিকা না থাকাটাই পুরুষের আধিপত্যকে ধ্বংস করবে। সমানাধিকারের চর্চা হওয়ার সম্ভাবনা হয়তো তখনই। কিন্তু বিবর্তনের যাত্রায় পুরুষ কি দীর্ঘ দীর্ঘ কাল টিকে থাকবে? জগত সংসারে যারা অপ্রয়োজনীয়, তাদের অনেকেই কিন্তু ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।


- বিজ্ঞাপন -
এ সময় পুরুষ যদি নিজেদের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর জন্য ঘর সংসারের কাজে মন দেয়, শিশু পালন ইত্যাদিতে মন দেয়, তবে পুরুষের গুরুত্ব নারীর কাছে বাড়লেও বাড়তে পারে। আমি চাই না পুরুষ বিলুপ্ত হোক। আমি চাই নারীর সহযোদ্ধা আর সহযাত্রী হিসেবে পুরুষ বেঁচে থাকুক। সেক্সের জন্য পুরুষকে নারীর দরকার নেই। স্বমৈথুনেই অভ্যস্ত হতে পারে নারী। কিন্তু তারপরও বাড়তি আনন্দের জন্য পুরুষকে দরকার হতেও পারে নারীর। আন›“ানে পুরুষ কিন্তু খুব মন্দ নয়।


পুরুষরা আর প্রভু নয়, দাসও নয়। আধিপত্য বিসজর্ন দিয়ে মনস্টারের আসন থেকে মানুষের আসনে এসে বসেছে। এমন দৃশ্য খুব আমার দেখার ইচ্ছে। আমি জানি, আমার জীবদ্দশায় এটি ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই। ভবিষ্যতে মানুষ হয়তো সে স্বাদ পাবে।


স্টেম সেলের রিসার্চে উৎসাহ তেমন দেওয়া হয় না। কারণ মানুষের মৃত্যু রোধ করতে পারে এই রিসার্চ। মৃত্যু না হলে এই গ্রহ মানুষে উপচে পড়বে, মৃত্যু না হলে ভুল প্রমানিত হবে ধর্মগুলো। মানুষের জন্ম মৃত্যু ভগবান বা ঈশ্বর বা আল্লাহর হাতে – এ কথাও আর বলা যাবে না। সাধারণত ভালো কাজে বাধা আসে, স্টেম সেলের রিসার্চেও বাধা এসেছে।


কত কত প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। আমরা মানুষ প্রজাতিকে বিলুপ্ত হতে দিতে চাই না। আমরা চাই যে করেই হোক এই প্রজাতি টিকে থাকুক। সব প্রজাতিই টিকে থাকতে চায়। মানুষ ভিন্ন কিছু নয়। মানব-শিশু তৈরিতে যদি সত্যিই নারী আর পুরুষের যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজন না হয়, যদি নারী একাই যথেষ্ঠ প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য, তবে নারীকে যতই দুর্বল ভেবে নির্যাতন করা হোক না কেন আজ, কাল এই নারীই উঠে দাঁড়াবে, এই নারীই হবে মানবজাতির একমাত্র ভরসা। এই নারীকে অবহেলা অসম্মান আর অত্যাচার নির্যাতন করাই যদি পুরুষের কর্ম হয়, তবে পুরুষেরই বিলুপ্ত হওয়ার প্রয়োজন, মানবজাতির স্বার্থে। আর যদি নারীকে আনন্দ দিতে, সুখ দিতে, নারীকে সেবা যতœ দিয়ে, ভালোবাসা প্রেম দিয়ে, শ্রদ্ধা আর সম্মান দিয়ে পাশে থাকে পুরুষ, তবেই বলা যায়, সমাজে পুরুষের প্রয়োজন এখনও আছে। তা না হলে, গুডবাই। ধরা থেকে বিদেয় হয়েছে পুরুষের চেয়েও মস্ত বড় বড় শক্তিশালী প্রাণী। ইতিহাস থেকে পুরুষ আজও শিক্ষা নেয়নি যে পেশির জোর শেষ কথা নয়, পেশির জোরে কোনও প্রজাতি টিকে থাকতে পারে না, পেশির জোর দেখিয়ে কিছু ভায়োলেন্সই করা যায়, এর বেশি কিছু নয়।


৩০ কোটি বছরে পুরুষ তার ওয়াই ক্রোমোজম থেকে কয়েকশ’ জিন হারিয়েছে। পুরুষ যদি বিলুপ্ত হয়, তাদের ওয়াই ক্রোমোজমের কারণেই হবে, এ কথা বিজ্ঞানীরা অনেক বছর থেকেই বলছেন। এক্স-ক্রোমোজমে বা নারী-ক্রোমোজমে ১০০০ সুস্থ জিন আছে। নারীর আছে দুটো এক্স। তার মানে সুস্থ জিনের সংখ্যা নারীর শরীরে বেশি। একসময় ওয়াই ক্রোমোজমেও এক্স ক্রোমোজমের মতো জিন ছিল। কিন্তু সেসব নষ্ট হতে হতে এখন যা আছে, তা বিজ্ঞানীদের অনেকেই বলেন, স্রেফ আবর্জনা। পুরুষেরশরীরে আছে একটিই এক্স ক্রোমোজম, একা। নারীর যেহেতু দুটো, নারীর এক্সরা শক্তিমান। কিছু বিজ্ঞানী বলছেন, পুরুষের বিলুপ্ত হতে ৫০ লক্ষ বছর লাগবে। কোনও কোনও বিজ্ঞানী বলছেন, এই ৫০ লক্ষ বছরের মধ্যে নিশ্চয়ই এমন বিজ্ঞানী জন্ম নেবেন যিনি ওয়াই ক্রোমোজমের অসুস্থতা সারিয়ে তুলতে পারবেন। আর সব যদি ব্যর্থ হয়, তবে হয়তো একটিই আশার কথা আছে। জাপানে স্পাইনি ইঁদুর নামের একরকম ইঁদুর আছে, যে ইঁদুর ওয়াই ক্রোমোজম ছাড়াই বেঁচে আছে। -বাংলাট্রিবিউন

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
অনুসরণ করুন:
কর্মজীবী এবং লেখক
মন্তব্য নেই

Log In

Forgot password?

Don't have an account? Register

Forgot password?

Enter your account data and we will send you a link to reset your password.

Your password reset link appears to be invalid or expired.

Log in

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!