সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় আকাশসীমা বন্ধ করলো নাইজার জান্তা

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
নাইজারের রাজধানী নিয়ামিতে রবিবার এক অনুষ্ঠানে সামরিক কর্মকর্তারা। ছবি রয়টার্স

সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় আকাশসীমা বন্ধ করলো নাইজার জান্তা

পশ্চিম আফ্রিকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকির কথা উল্লেখ করে নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে নাইজারের অভ্যুত্থানের নেতারা। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোর দেখাচ্ছে, নাইজারের আকাশে এখন কোনো আকাশযান নেই।

নাইজারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে রোববার ২৩:০০ জিএমটির মধ্যে পুনর্বহাল করা না হলে শক্তি প্রয়োগ করা হতে পারে বলে সতর্ক করেছিল পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর জোট ইসিওডব্লিউএএস।

বিবিসি জানিয়েছে, নাইজারের সশস্ত্র বাহিনী দেশকে রক্ষার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির জান্তার এক মুখপাত্র।

২৬ জুলাই প্রেসিডেন্ট বাজোমকে রাজধানী নিয়ামের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বন্দি করে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয় দেশটির প্রেসিডেন্ট গার্ড ইউনিট। সামরিক বাহিনীও অভ্যুত্থানে সমর্থন জানায়। পরে প্রেসিডেন্ট গার্ডের প্রধান জেনারেল আবদুরাহমানে চিয়ানি (৫৯) নিজেকে দেশটির নেতা বলে ঘোষণা দেন।

নাইজারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের নিন্দা করেছে দেশটির সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘও এই অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে।

রোববার নাইজারের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে পঠিত এক বিবৃতিতে জান্তার এক প্রতিনিধি জানান, ‘বিদেশি একটি শক্তি’ নাইজারে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবর পেয়েছেন তারা।

নাইজারের জান্তা বাহিনীকে পশ্চিম আফ্রিকার নেতাদের ৭ দিনের আল্টিমেটাম
পশ্চিম আফ্রিকার নেতারা। ছবি এপি

নাইজারের প্রতিবেশী দেশ নাইজেরিয়ায় টানা তিন দিনব্যাপী এক বৈঠক শেষে ইসিওডব্লিউএএস জোটের সামরিক প্রধানরা শুক্রবার জানিয়েছিলেন, নাইজারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করার জন্য সম্ভাব্য শক্তি প্রয়োগের বিস্তারিত একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছেন তারা।

তখন ইসিওডব্লিউএএসের শান্তি, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিশনার আব্দেল ফাতাউ মুসা জানান, প্রস্তুত করা সামরিক হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা অনুযায়ী কখন এবং কোথায় আঘাত হানতে হবে সে সিদ্ধান্ত ব্লকভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা নেবেন আর তা অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে প্রকাশ করা হবে না।

নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজায় ওই বৈঠকের পর মুসা বলেন, “চূড়ান্ত কোনো হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটলে তাতে যেসব বিষয় থাকবে তা এ বৈঠকে ঠিক করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে কী কী উপাদান লাগবে এবং আমরা কখন ও কীভাবে বাহিনী মোতায়েন করবো তা।”

তিনি আরও জানান, তারা চান কূটনীতি কাজ করুক আর এই বার্তা নাইজারের জান্তার কাছে পরিষ্কারভাবে পৌঁছাক যে তারা যা করছে তা পাল্টাতে ইসিওডব্লিউএএস তাদের সব ধরনের সুযোগ দিচ্ছে।

সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় আকাশসীমা বন্ধ করলো নাইজার জান্তা
সামরিক অভ্যুত্থানের পর রাজধানী নিয়ামেতে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট দলের সদর দপ্তরে আক্রমণ এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ছবিটি গত ২৭ জুলাই তোলা। ছবি রয়টার্স

৩০ জুলাই ইসিওডব্লিউএএস জোটের নেতারা এক সপ্তাহের একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, পরবর্তী রোববার (৬ জুন) স্থানীয় সময় মধ্যরাতের মধ্যে নাইজারের জেনারেলরা ক্ষমতা না ছাড়লে শক্তি প্রয়োগ করা হতে পারে।

পশ্চিম আফ্রিকার ১৫ জাতির জোট ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইসিওডব্লিউএএস) এর বেঁধে দেওয়া ওই সময়সীমা ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে। এই জোটের উল্লেখযোগ্য সদস্য দেশগুলো হল নাইজেরিয়া, সেনেগাল, টোগো ও ঘানা।

নাইজারের অভ্যুত্থানের নেতারা এ পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়ার কোনো আগ্রহ দেখাননি। বরং রোববার নিয়ামেতে হাজার হাজার সমর্থক নিয়ে সমাবেশ করে তারা তাদের জনসমর্থনের প্রদর্শনী করেছে।

এর আগে নাইজারের দুই প্রতিবেশী মালি ও বুরকিনা ফাসো সতর্ক করে জানিয়েছে, নাইজারে বাইরের যে কোনো হস্তক্ষেপকে তারা তাদের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ বলে ধরে নেবে।

মালি ও বুরকিনা ফাসো উভয়েই ইসিওডব্লিউএএস এর সদস্য হলেও সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশ দুটিকে জোট থেকে বহিষ্কার করে রাখা হয়েছে।

সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় আকাশসীমা বন্ধ করলো নাইজার জান্তা
নাইজারের রাস্তায় হঠাৎ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রুশ পতাকা। ছবি এএফপি

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ১৫ জাতির জোট ইসিওডব্লিউএএস যে বিকল্পই বেছে নেক না কেন তা বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র একটি অঞ্চলটিতে আরও সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করবে, এখানে আগে থেকেই ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কিত গোষ্ঠীগুলো চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি করে রেখেছে।

সামরিক হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জোটটি কী পরিমাণ সমর্থন পাবে বা তাদের কী পরিমাণ সমর্থন আছে তাও পরিষ্কার নয়। নাইজারের আরেক প্রতিবেশী শাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ইয়াইয়া ব্রাহিম জানিয়েছেন, তারা সামরিক হস্তক্ষেপের সঙ্গে নেই।

নাইজারের অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল চিয়ানি আইভরি কোস্টে ২০০৩ সালের সংঘাতের সময় সেখানে হস্তক্ষেপ করা ইসিওডব্লিউএএস এর বাহিনীর ব্যাটেলিয়ন কমান্ডার হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাই এ ধরনের হস্তক্ষেপ মিশন কেমন হতে পারে তা তিনি ভালো করেই জানেন।

নাইজার উল্লেখযোগ্য খনিজ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী একটি দেশ। ইউরেনিয়াম পারমাণবিক শক্তির প্রধান জ্বালানি। দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাজোম ছিলেন পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে সক্রিয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইরত পশ্চিমা শক্তিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!