ব্রাজিলে মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানে নিহত ৪৫
ব্রাজিলের তিনটি রাজ্যে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত অপরাধী দলগুলোর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানে অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার দেশটির রিও ডি জেনেইরোর কমপ্লেক্সো দা পেনিয়া এলাকায় এক অভিযান চলাকালে পুলিশের গুলিতে ১০ জন নিহত হন।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানে যাওয়ার পর সশস্ত্র আততায়ীরা তাদের আক্রমণ করে, দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে অপরাধীদলের নয় সদস্য ও অপর একজন নিহত হন। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হন।
এর আগে চলতি সপ্তাহে দেশটির সাউ পাওলো রাজ্যে ‘অপারেশন শিল্ড’ নামে পুলিশের পাঁচ দিনব্যাপী আরেক অভিযানে ১৬ জন নিহত হয়।
আর দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় বাহিয়া রাজ্যে শুক্রবার থেকে ১৯ সন্দেহভাজন নিহত হয়েছেনে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন; খবর বিবিসির।
সাউ পাওলো রাজ্যে অভিযান চলাকালে ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার উপকূলীয় শহর গুয়ারুজায় স্পেশাল ফোর্সের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার পর এই অভিযান শুরু করা হয়।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অভিযানে পুলিশ ৩৮৫ কেজি মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে।
![ব্রাজিলে মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানে নিহত ৪৫ 38 ব্রাজিলে মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানে নিহত ৪৫](https://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/08/Untitled-2-12.jpg)
গুয়ারুজায় চালানো অভিযানের সমালোচনা করেছেন ব্রাজিলের বিচারমন্ত্রী ফ্লাবিও জিনো। তিনি বলেছেন, সংঘটিত অপরাধের তুলনায় পুলিশ বেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেছে।
মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে সাউ পাওলো রাজ্যের গভর্নর তারসিজিও ডি ফ্রাইতাস জানিয়েছেন, অভিযান চলার সময় সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও আছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, গুয়ারুজার পুলিশের অভিযানে ‘একজন পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর প্রতিশোধ চাওয়ার স্পষ্ট লক্ষণ’ দেখা গেছে।
রিও’র অভিযানে রিও ডি জেনিরো শহরের বস্তি এলাকা জুরামেন্তো ও চাতুবার অপরাধীদলের দুই অভিযুক্ত নেতা ‘ফিয়েল’ ও ‘দু লেমি’ নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদের একজন মাদক পাচারকারী দলের নেতা ও অপরজন পাচারকারী বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।
এই অভিযানে ১০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজন আহত হয়েছেন।
![ব্রাজিলে মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানে নিহত ৪৫ 39 ব্রাজিলে মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানে নিহত ৪৫](https://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/08/Untitled-4-6-1024x586.jpg)
কমপ্লেক্সো দা পেনিয়া এলাকায় মাদক পাচারকারী চক্রের নেতারা বৈঠক করছে, গোয়েন্দা সূত্রে এমন খবর পাওয়ার পর সেখানে অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছে নগরীটির স্পেশাল পুলিশ ফোর্স।
প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা বেশকিছু গুলির শব্দ শুনেছেন এবং ব্যাপক অস্ত্রে সজ্জিত অপরাধী দলের সদস্যদের পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি করতে দেখেছেন।
রিও রাজ্য পরিষদের সদস্য তালিরিয়া পেত্রোনি এই অভিযানের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, “বস্তিগুলোর জীবনকে এভাবে নরকে পরিণত করতে থাকার কোনো ব্যাখ্যা রাজ্যের কাছে নেই।”
ব্রাজিলের সশস্ত্র সহিংসতার ওপর নজর রাখা সংগঠন ইনস্টিতুতো ফগো ক্রুজাদো (ক্রস-ফায়ার ইনস্টিটিউট) এই অভিযানকে ‘নির্বিচার হত্যা’ বলে বর্ণনা করেছে।
উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বাহিয়ায় শুক্রবার থেকে সোমবারের মধ্যে তিনটি শহরে পুলিশের সঙ্গে অপরাধী দলগুলোর সংঘর্ষ হয়।
![ব্রাজিলে মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানে নিহত ৪৫ 40 ব্রাজিলে মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানে নিহত ৪৫](https://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/08/Untitled-3-8.jpg)
শুক্রবার কামাসারি শহরে সাতজন নিহত হয়। রোববার ইতাচিম শহরে আরও আটজন নিহত হয়। মঙ্গলবার সালভাদর শহরে পুলিশ ও অপরাধী দলগুলোর সন্দেহভাজন সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে আরও চারজন নিহত হয়।
তিনটি অভিযানেই পুলিশ প্রচুর বন্দুক, মোবাইল ফোন ও মাদক জব্দ করে।
বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটে ব্রাজিলে। এই গ্রহের সবচেয়ে প্রাণঘাতী পুলিশ বাহিনীগুলোর বাড়িও এই দেশে। তারা নিয়মিত মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত অপরাধী দলগুলোর সঙ্গে এবং ব্রাজিলের দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণির বসতি এলাকাগুলোতে উপনিবেশ গড়ে তোলা ‘সেল্ফ-ডিফেন্স’ মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর সঙ্গে বন্দুক লড়াইয়ে লিপ্ত হয়।
রিও ডি জেনেইরো ব্রাজিলের সবচেয়ে সহিংসতা কবলিত রাজ্য বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।