সেনা ঘাটতি কমাতে রাশিয়া ভাড়াটে বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
ইউক্রেন যুদ্ধে আলোচনায় এসেছে ওয়াগনার গ্রুপ। ছবি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

সেনা ঘাটতি কমাতে রাশিয়া ভাড়াটে বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে

রাশিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় করপোরেশন, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের তৈরি ভাড়াটে বাহিনী ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে যোদ্ধা পাঠিয়েছে। ক্রেমলিনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য তারা নিজেদের যোদ্ধাদের পাঠায়।

ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে যখন রাশিয়ার সেনাবাহিনী ব্যর্থতা ও লড়াইয়ে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছিল তখন এসব ভাড়াটে গোষ্ঠী এগিয়ে আসে।

সেনা ঘাটতি কমাতে রাশিয়া ভাড়াটে বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে
একদল রুশ সেনা। ফাইল ছবি

সম্প্রতি রাশিয়ার জ্বালানি জায়ান্ট গ্যাজপ্রম একটি বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানি গড়ে তুলেছে। আগে থেকেই বিদ্যমান কয়েকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ করছেন রুশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা। যুদ্ধ শুরুর পর এসব কোম্পানি নতুন যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে। এদের বেশিরভাগকে সম্প্রতি ইউক্রেনে লড়াইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।

সেনা, বিশ্লেষক ও সাবেক রুশ কর্মকর্তাদের মতে, বেশিরভাগ সময় অতিরিক্ত বাহিনী হিসেবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রণক্ষেত্রে এসব যোদ্ধাদের পাঠানো হয়েছে।

বেশিরভাগ গোষ্ঠী ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের ওয়াগনার গ্রুপের আদলে তৈরি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত প্রিগোজিনের প্রভাব বেড়েছে যুদ্ধের সময়ে। গোষ্ঠীটি ৫০ হাজার যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে। বেশিরভাগকে নেওয়া হয়েছে রাশিয়ার কারাগার থেকে।

রুশ সেনাবাহিনীর চেয়ে নিজের বাহিনী দক্ষ তা দেখাতে মরিয়া ‘পুতিনের শেফ’ বলে পরিচিত প্রিগোজিন।

এই মাসের শুরুতে ওয়াগনার যোদ্ধারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ নেয় টানা কয়েক মাসের রক্তাক্ত লড়াইয়ের পর। গত দশ মাসের মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার এটিই একমাত্র উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

নতুন বেসরকারি সামরিক কোম্পানিগুলো ওয়াগনার গোষ্ঠীর চেয়ে আকারে ছোট। সমন্বিতভাবে এগুলোর যোদ্ধার সংখ্যা কয়েক হাজার হবে। কিন্তু রণক্ষেত্রে যোদ্ধা পাঠিয়ে তারা পুতিনের প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ইউক্রেনের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণ ঠেকাতে রাশিয়ার আরও সেনা প্রয়োজন।

এই বিষয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা ক্রেমলিনের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

লোকবলের অভাবে গত বছর শেষের দিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রেখায় ফাটল দেখা দেয়। ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের দখলকৃত বিশাল ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করে। ওই ব্যর্থতার পর পুতিন নতুন সেনা সমাবেশের ঘোষণা দেন।

সেনা ঘাটতি কমাতে রাশিয়া ভাড়াটে বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে
ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। ছবি রয়টার্স

সেনাবাহিনীতে প্রায় ৩ লাখ নতুন সেনাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন তিনি নতুন সেনা সমাবেশে আগ্রহী নন বলে মনে হচ্ছে। বেসরকারি খাত ও কোম্পানির যোদ্ধাদের ওপর নির্ভর করতে চাইছেন তিনি।

লন্ডনভিত্তিক মায়াক ইন্টেলিজেন্স-এর রাশিয়া পর্যবেক্ষক মার্ক গ্যালিওত্তি বলেন, সব পর্যায় থেকে রাশিয়া সেনা নিয়োগ দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু যুদ্ধের জন্য তাদের আরও সেনা প্রয়োজন। পুতিন চাইছেন এই ঘাটতি সেনা সমাবেশ না করেই পূরণ করতে।

বেসরকারি সামরিক কোম্পানিগুলোর নিয়োগকৃত যোদ্ধাদের সংখ্যা সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে নতুন কোম্পানিগুলো সাবেক পেশাদার সেনাদের সেনা এবং নিয়মিত নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ইউক্রেনে বিস্তৃত রণক্ষেত্রে লড়াইয়ের জন্য।

করপোরেট সমর্থিত কোম্পানিগুলো ওয়াগনার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবীদের তুলনায় ভালো পারিশ্রমিক দিচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছেন প্রিগোজিন ও সাবেক রুশ কর্মকর্তারা।

বিশ্লেষক ও কয়েকজন ভাড়াটে যোদ্ধা বলেছেন, এদের অনেকেই ভালোমানের প্রশিক্ষণ পাওয়া। বেশিরভাগ সময় তাদেরকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোতায়েন করা হচ্ছে। ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা স্বতন্ত্রভাবে লড়াই করছে।

মস্কোভিত্তিক প্রতিরক্ষা থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর অ্যানালাইসিস অব স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড টেকনোলজিস-এর প্রধান রাসলাম পুখব বলেন, পরিকল্পনা মতো সব কিছু না হওয়ার কারণে রুশরা উন্নতির উপায় খুঁজছে, ওয়াগনার যদি কাজে আসে তাহলে কেন বেসরকারি সামরিক কোম্পানির সংখ্যা বাড়ানো হবে না?

সেনা ঘাটতি কমাতে রাশিয়া ভাড়াটে বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে
মহরয়া কয়েকজন রুশ সৈন্য। ফাইল ছবি

মার্চ মাসের শেষের দিকে রাশিয়ার জ্বালানিমন্ত্রী নিকোলাই শুলগিনভ একটি নিরাপত্তা কোম্পানির নিবন্ধনে অনুমোদন দিয়েছেন। দেশটির বৃহত্তম বেসরকারি কোম্পানি লুকওইল এটি গড়ে তোলে। রুশ মন্ত্রী বলেছেন, এই কোম্পানি তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলা প্রতিহত করবে। এই কোম্পানির যোদ্ধাদের ইউক্রেনে পাঠানো হয়নি।

ফেব্রুয়ারিতে রুশ সরকার একটি ডিক্রি জারি করে। এতে গ্যাজপ্রমকে নিজের একটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এটির নাম পটক। এর দুটি ইউনিটকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়েছে।

সরকারি ডিক্রি জারির কয়েক সপ্তাহ পর সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে এসেছে এই কোম্পানির যোদ্ধারা ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে লড়াই করছে। পটক ইউনিটের কয়েকজন যোদ্ধা বাখমুতেও লড়াই করেছেন।

আরও বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা সেবা প্রদানকারী কোম্পানি ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠী তৈরিতে আগ্রহী হয়েছে। রেডুট নামের একটি রুশ ঠিকাদার কোম্পানি ইউক্রেনে প্রায় ১ হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছে।

রাশিয়ায় বেসরকারি সামরিক কোম্পানি মূলত অবৈধ। কিন্তু ইউক্রেনে আক্রমণের পর ক্রেমলিনের অঘোষিত আশীর্বাদ পাচ্ছে এমন কোম্পানিগুলো। বেশ কয়েকটির সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কের বিষয়টি উঠে এসেছে।

সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!