মোদীকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে দুই বছরের কারাদণ্ড রাহুল গান্ধীর

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন
রাহুল গান্ধী কংগ্রেস দলের একজন এমপি। ছবি সংগৃহীত

মোদীকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে দুই বছরের কারাদণ্ড রাহুল গান্ধীর

ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীকে ফৌজদারী মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে এক নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পদবি নিয়ে মন্তব্য করার কারণে মি. গান্ধীর বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছে গুজরাটের একটি আদালত।

তবে এখনই জেলে যেতে হবে না তাকে। এরইমধ্যে তিনি ৩০ দিনের জন্য জামিন পেয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন।

কংগ্রেস দলের এই পার্লামেন্ট সদস্য রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ভারতের সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে এই ঘটনা ঘটলো।

ভারতের গত সাধারণ নির্বাচনের আগে ২০১৯ সালে কর্ণাটক রাজ্যে এক নির্বাচনী প্রচারণায় মি. গান্ধী বলেছিলেন: “সব চোরেরা কেন তাদের পদবিতে মোদী ব্যবহার করে? নিরাভ মোদী, ললিত মোদী, নরেন্দ্র মোদী।”

নিরাভ মোদী হচ্ছেন ভারতের পলাতক হীরা ব্যবসায়ী। আর ললিত মোদী হচ্ছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের সাবেক প্রধান যার উপর আজীবনের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।

তার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছিল পুর্ণেশ মোদী নামে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির এক আইনপ্রণেতার অভিযোগের ভিত্তিতে, যিনি বলেছিলেন যে, মি. গান্ধীর মন্তব্য সমগ্র মোদী সম্প্রদায়ের জন্য মানহানিকর।

মোদীকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে দুই বছরের কারাদণ্ড রাহুল গান্ধীর
২০১৯ সালে এক নির্বাচনী প্রচারণায় ‘মোদী’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন রাহুল গান্ধী। ছবি সংগৃহীত

কিন্তু অনেকেই বলছেন যে, তারা আসলে এই আদেশের বিষয়টি বুঝতে পারছেন না।

আইন বিশেষজ্ঞ গৌতম ভাাটিয়া এক টুইটে বলেছেন যে, “কোন সাধারণ একটি শ্রেণীর ব্যক্তিদের নিয়ে উদ্ধৃতি”-এক্ষেত্রে পদবী-“শাস্তিযোগ্য নয় যদি কোন এক বিশেষ ব্যক্তি এটা প্রমাণ করতে না পারে যে সেটি আসলে তার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।”

“যদি কেউ বলে যে ‘সব আইনজীবীরাই চোর’, তাহলে আমি একজন আইনজীবী হিসেবে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারবো না যদি এটা প্রমাণ করতে না পারি যে এটি আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে,” বলেন মি. ভাটিয়া।

কংগ্রেস দল এক টুইটে বলেছে যে, মি. গান্ধী একটি আপিল করবেন এবং “ আমরা লড়বো ও জিতবো।”

মি. গান্ধী এখনো জনসমক্ষে কোন মন্তব্য করেননি কিন্তু তিনি হিন্দীতে মহাত্মা গান্ধীর একটি উক্তি নিয়ে টুইট করেছেন যেখানে বলেছেন: “আমার ধর্ম সত্য এবং অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত। সত্য আমার ঈশ্বর, আর অহিংসা হচ্ছে তাকে পাওয়ার উপায়।”

মি. গান্ধীর আইনজীবী কিরিত পানওয়ালা বিবিসি গুজরাটিকে বলেছেন যে, রায়ের সময় মি. গান্ধী বিচারকদের বলেছেন “গণতন্ত্রের স্বার্থেই” তিনি এই মন্তব্য করেছেন।

তিনি আরো বলেন যে, মি. গান্ধীর আত্মপক্ষে চারটি যুক্তি রয়েছে: “প্রথমত, মি.গান্ধী গুজরাটের বাসিন্দা নন এবং সেকারণে অভিযোগ দায়েরের আগে একটি তদন্ত অনুষ্ঠানের দরকার ছিল। দ্বিতীয়ত, মোদী নামে কোন সম্প্রদায় নেই। তৃতীয়ত, মোদী পদবী রয়েছে এমন কোন ব্যক্তির সাথে এর কোন সম্পৃক্ততা নেই এবং চতুর্থত, মি. গান্ধীর মন্তব্যের পেছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য নেই।”

মোদীকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে দুই বছরের কারাদণ্ড রাহুল গান্ধীর
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি সংগৃহীত

ভারতের ফৌজদারী মানহানি আইন ব্রিটিশ আমলে প্রণীত একটি আইন যার অধীনে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা দুটোই হতে পারে।

মুক্ত মতের পক্ষে যারা কাজ করেন প্রায়ই তারা অভিযোগ করেন যে, এই আইন স্বাধীনতার মূলনীতির পরিপন্থী এবং এটি রাজনীতিবিদেরা তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করে।

২০১৬ সালে মি. গান্ধীসহ শীর্ষ রাজনীতিবিদেরা মানহানিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে একটি আইনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ভারতের সুপ্রীম কোর্ট আইনের বৈধতা ধরে রাখেন এই যুক্তিতে যে, “মুক্তমতের স্বাধীনতার মানে এই নয় যে, একজন নাগরিক আরেক জন নাগরিকের মানহানি করতে পারে।” এই রায়ের পর মি.গান্ধীর পার্লামেন্ট সদস্য পদ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

ভারতে শুধু মানহানির কারণে কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা যায় না। একজন এমপিকে তার পদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা যায় বিরোধিতামূলক প্রচারণা থেকে শুরু করে নির্বাচনে জালিয়াতিসহ বিভিন্ন কারণে। কিন্তু যদি কোন অপরাধের দায়ে দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে তিনি দণ্ডিত হন তাহলেও তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে।

ray মোদীকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে দুই বছরের কারাদণ্ড রাহুল গান্ধীর
প্রতীকি ছবি

নেহেরু-গান্ধী বংশের উত্তরাধিকারী হচ্ছেন মি. গান্ধী যে বংশ থেকে ভারত এ পর্যন্ত মোট তিন জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। তার প্র-পিতামহ জওহরলাল নেহেরু ছিলেন ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী। তার দাদি, ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং তার বাবা রাজিব গান্ধী ছিলেন ভারতের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী।

তাদের দল কংগ্রেস ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় পুরোটা সময় টানা শাসন করেছে। শুধু মাঝখানে কয়েকটি বছর যখন নরেন্দ্র মোদির বিজেপি বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে সেই সময়টা ছাড়া। এর পর থেকে কংগ্রেস শুধু পুরনো দলের ছায়ায় পরিণত হয়েছে এবং ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে দলটিকে আবারো পরাজিত করে বিজেপি সরকার।

সূত্র : বিবিসি

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!