পল্লিকবি জসীম উদ্দিনের জীবন-কথা

মাজরুল ইসলাম
মাজরুল ইসলাম
9 মিনিটে পড়ুন
ছবি সংগৃহীত।

জসীম উদ্দিন পল্লি কবি হিসেবে বেশি স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু, তিনি শুধু পল্লিকবিই ছিলেন না। তিনি অন্য ঘরোনার লোককবি– বাংলার শোষিত, বঞ্চিত, সর্বহারা কৃষক, খেতমজুর, রাখাল বালকদের নিয়ে তিনি তাঁর রচনার ভান্ডার পরিপূর্ণ করেছেন।

জসীম উদ্দিন গরিব কৃষক, খেতমজুরদের মনে প্রাণে ভালবাসতেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায় “সোজন বাদিয়ার ঘাট” কাব্যগ্রন্থে। ভূমিকায় তিনি লিখেছেন — “আমাদের ফরিদপুর অঞ্চলে বহু চাষী মুসলমান ও নমঃশুদ্রের বাস। তাহাদের মাঝে সামান্য সামান্য ঘটনা লইয়া প্রায়ই বিবাদের সূত্রপাত হয়। এইসব বিবাদে ধনী হিন্দু -মুসলমানরা উৎসাহ দিয়া তাহাদিগকে সর্বনাশের পথে আগাইয়া দেয়।মহাজন ও জমিদারের মধ্যে কোন জাতিভেদ নাই। শোষনকারীরা সকলেই এক জাতের। ইহাদের প্ররোচনায় হতভাগ্য নমঃশুদ্র ও মুসলমানদের যে অবস্থা হয় তাহা চক্ষে দেখিলে অশ্রু সংবরণ করা যায় না।” জসীম উদ্দিন ছিলেন আপাদমস্তক প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার লোককবি। এবং অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।

পল্লিকবি নিজের ভাষায় বলেছেন, “সারাজীবন আমার দেশের জনগণকে লইয়া সাহিত্য করিয়াছি তাহাদের সুখ, দুঃখ, স্নেহ, মমতা, ভালবাসা লইয়া কবিতা, উপন্যাস লিখিয়াছি।” পল্লিকবি জসীম উদ্দিন গ্রামের অশিক্ষিত, গরিব, চাষি কবিদের গ্রাম্য গানগুলো সংগ্রহ করেছিলেন। অবশ্য একাজের পরামর্শ দাতা ছিলেন মাননীয় দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয়। দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয়ের সুপারিশে গীতিময় “কবর” শীর্ষক কবিতা ম্যাট্রিক ক্লাসে পাঠ্য হয়েছিল। এবিষয়ে জসীমউদ্দিন লিখেছিলেন, “আমার যতদূর জানা আছে, পৃথিবীর কোনও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ছাত্রের লেখা এপর্যন্ত পাঠ্য হয় নাই।” জসীম উদ্দিন খুব কম বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেন। কলেজে পড়াকালীন পরিবার এবং বিয়োগান্ত দৃশ্যে একদম সাবলীল ভাষায় “কবর” শীর্ষক কবিতা রচনা করেন। লোককবি জসীম উদ্দিনকে একসময় বলব না এখনও দুই বাংলার হৃদয়বন্ধনের উজ্জ্বল প্রতীক।

১ জানুয়ারি ১৯০৩ সালে অখণ্ড বাংলার কুমার নদী বিধৌত ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে জসীম উদ্দিন জন্ম গ্রহণ করেন। মৌলভি আনসার উদ্দিন মোল্লা ছিলেন ইস্কুল শিক্ষক। তিনি ছিলেন ফরিদপুর হিতৈষী ইস্কুলের শিক্ষক। মা আমিনা খাতুন অতি সহজ সরল গ্রাম্য বধূ। ডাক নাম ‘রাঙাছুট’। জসীম উদ্দিন শৈশবে গ্রামের ইস্কুলে পড়াশোনা করেন। ফরিদপুর জেলা ইস্কুল থেকে প্রবেশিকা ও ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে বি. এ. এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত হয় বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির পরিমণ্ডলে। তখন থেকেই তিনি লোকগীতি, কবিগান, জারিগান, সারি, লোককাহিনী প্রভৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন এবং লোককবিদের সান্নিধ্যে এসে তাঁর কবি প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তাদের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও কবিগান, জারিগান, কবিতা ইত্যাদি রচনা শুরু করেন। পল্লিকবি জসীমউদ্দিনের পিতৃ প্রদত্ত নাম– মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন মোল্লা। এখন শুধু পল্লিকবি জসীম উদ্দিন নামেই পরিচিত। কবির ছদ্মনাম তুজাম্বর আলী(?)। তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লোকসাহিত্য সংগ্রাহক। জসীম উদ্দিন বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন কবি। তাঁর রচনা গ্রাম- বাংলার প্রচলিত শব্দ বা উপাদানে ঠাসা। সম্ভবত এই জন্যই তিনি পল্লিকবি বা লোককবি উপাধি লাভ করেছেন। গ্রাম বাংলার প্রচলিত শব্দ বা উপাদানে সৃষ্ট রচনা– যেমন “নক্সী কাঁথার মাঠ”,”সোজন বাদিয়ার ঘাট”, “সকিনা”, এবং “মা যে জননী কান্দে “প্রভৃতি। বাংলার অন্য কবিগণ ধর্মীয় ঐতিহ্য রামায়ণ, মহাভারত, লোকপুরানের দিকে হাত পেতেছেন। কিন্তু, তিনি তা করেন নি। এখানেই তাঁর মুন্সিয়ানার পরিচয় ।

জসীম উদ্দিন ছাত্রাবস্থায় কবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। কবিতার জাদুস্পর্শে কবি হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ– সেই প্রসিদ্ধ কাব্যোপন্যাস ” কবর ” কবিতা লিখে। শুধু তাই নয়, এই “কবর” কবিতা স্থান করে নিয়েছিল বাংলা সাহিত্যের পাঠ্যপুস্তকে। তখন তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি. এ ক্লাসের ছাত্র। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম. এ পাস করেন। কবিতা ছাড়াও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন গান, গল্প, নাটক, উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনী রচনায়। এইগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ আজও।

জসীম উদ্দিন ছাত্রাবস্থায় “কবর” কবিতা রচনা করেন এবং পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়। পৃথিবীর আর কোনো কবির ভাগ্যে এই সুযোগ জুটেছিল কিনা জানা নেই। তাঁর কাব্য হৃদয় সংগীত রূপে আকর্ষণীয়তা লাভ করেছে। তাঁর কাব্য সবসময় আনন্দাশ্রু ঝরিয়ে দিতে পারে। যা হয়ে ওঠে কাব্যরসের পরিবেশনে হৃদয়গ্রাহী সংগীতের সরগম। কখনো আনন্দাশ্রু, কখনো বেদনা-মথিত সুনির্দিষ্ট অনুভূতিতে মণিমুক্তোর দ্যুতি নিয়ে গাঁথা। তাঁর কাব্যে-কবিতায় মাটির সোঁদা গন্ধ পাওয়া যায়। কবিতার গায়ে বিছিয়ে রাখা হয়েছে পরিচ্ছন্ন গ্রাম্য চিত্রের অন্তরঙ্গ শোভা। পরিবার জীবনের রঙ্গ- তামাশা, দুঃখ -বেদনা তাঁকে সম্পূর্ণতা দান করেছে। তাইতো জসীম উদ্দিন পল্লির কবি, প্রকৃতির কবি, মাটির কবি, মানুষের প্রাণের বলিষ্ঠ লোককবি। সবকিছু মিলিয়ে বৈচিত্র্যে ভরা গ্রাম্য ছবির অখণ্ডতার কবি।জসীম উদ্দিন শুধুমাত্র পল্লিকবিই নন।তিনি লোকসংস্কৃতির গবেষক ও সংগ্রাহক। সারা জীবন গ্রামবাংলার পথে, প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছিলেন জারি,সারি, অষ্টক, মুর্শিদ ও ময়মনসিংহ গীতিকা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ড: দীনেশচন্দ্র সেনের উৎসাহে ও পরামর্শে জসীম উদ্দিন লোকগীতি -গাথা সংগ্রহ শুরু করেন। এম.এ. পাশের পর তিনি ড: দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষনা সহকারী নিযুক্ত হন।১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনায় যোগ দেন। এখানে ৫ বছর অধ্যাপনা করেন।১৯৪১ সালে তিনি সরকারের তথ্য বিভাগের চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৪৪ সালে শিক্ষকতার কাজ ছেড়ে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে চকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি লোকসংস্কৃতি চর্চায় পুরোপুরি ভাবে নিয়োজিত ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের আকাশে জসীম উদ্দিন এক ব্যতিক্রমী উজ্জ্বল নক্ষত্র।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জসীম উদ্দিনের কবিতার বোদ্ধাপাঠক ছিলেন। মোহনলাল ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৌহিত্র। তিনি জসীম উদ্দিনের সঙ্গে কবিগুরুর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন। সাক্ষাতের সময় জসীম উদ্দিন তাঁর ” রাখালী” ও “নক্সী কাঁথার মাঠ” বিশ্বকবিকে উপহার দেন। কবি গুরু বই দু’খানা পেয়ে খুশি হন। তিনি বই দু’খানা এক লহমা নেড়েচেড়ে বলেছিলেন, “আমার মনে হচ্ছে তুমি বাংলাদেশের মুসলমান চাষিদের বিষয়-আশয় নিয়ে লিখেছো। তোমার এ বই আমি পড়ব।” কবিগুরুর এই উক্তি শুনে জসীম উদ্দিন ভীষণ আপ্লুত হন। অতঃপর দু’-তিন দিন পর অধ্যাপক তরুণ সেন জসীম উদ্দিনকে ডেকে বলেন, “তুমি কবিকে বই দিয়ে এসেছিলে।আজ দুপুরে আমাদের সামনে কবি অনেকক্ষণ ধরে তোমার কবিতার প্রশংসা করলেন। এমন উচ্ছ্বসিতভাবে কারো প্রশংসা করতে কবিকে কমই দেখা যায়। কবি অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন, তিনি তোমাকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে যাবেন।” এই কথা শোনার পরের দিনই তিনি রবীন্দ্র- তীর্থে হাজির হন। জসীম উদ্দিনের প্রতিভার তারিফ করতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিছুদিন পর রবীন্দ্রনাথ লিখলেন: “জসীম উদ্দিনের কবিতার ভাব, ভাষা ও রস সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে সাজানো। প্রকৃত কবির হৃদয় এই লেখকের আছে।অতি সহজে যাদের লেখার শক্তি নেই, এমনতর খাঁটি জিনিস তারা লিখতে পারে না। “তাঁর কবিতার এই সামগ্রিক মূল্যায়নের পল্লিকবি জসীমউদ্দিন খুব খুশি হয়েছিলেন।আর হবেই বা না কেন যে-সেতো নয় স্বয়ং বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তিনি তুলে ধরেছেন গ্রাম্য শিল্পকে। তাঁকে নিয়ে আকাশবাণীতে অনুষ্ঠান করিয়েছেন, গ্রামোফোন কোম্পানিতে রেকর্ড করিয়েছেন। তাঁর লেখা বিখ্যাত গানগুলো:

“আমার গহীন গাঙের নাইয়া”

বা, “ও রঙিলা নায়ের মাঝি “

আবার, “নদীর কূল নাই কিনারা নাই”

এবং, “আমায় ভাসাইলি রে আমায় ডুবাইলি রে”

আরও— “প্রাণ সখিরে ঐ শোন কদম্ব তলে বংশীবাজায় কে”

কিংবা, “ও বাজান চল যাই চল মাঠে লাঙল বাইতে” ইত্যাদি ইত্যাদি।

জসীম উদ্দিন মানব প্রেমিক কিন্তু ভালবাসা ছিল দরিদ্র, ইষ্টক, খেতমজুর, রাখালদের প্রতি বেশি। তাঁর লেখায় গ্রাম বাংলার হিন্দু -মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন প্রবাহ উপস্থাপিত হয়েছে সমান দরদে। কেউ কেউ জসীম উদ্দিনের গীতিময় “সোজন বাদিয়ার ঘাট”-কে সাম্প্রদায়িক আখ্যায়িত করেন। কিন্তু তার উত্তরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দিকপাল অধ্যাপক দীনেশচন্দ্র সেন বইখানা পড়েন। তিনি ছিলেন কবির পৃষ্ঠপোষক। সাহিত্য সেবক সঙ্ঘের এক অধিবেশনে তিনি বইখানার আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ” আমি হিন্দু। আমার কাছে বেদ পবিত্র,ভগবত পবিত্র। কিন্তু “সোজন বাদিয়ার ঘাট” তার চেয়ে পবিত্র। কারণ এখানে আমার বাংলাদেশের মাটি মানুষের কথা আছে।”

পল্লিকবি জসীম উদ্দিনের কাব্যগ্রন্থাবলি: “রাখালী”,”বালুচর”,”ধানখেত”,”নক্সী কাঁথার মাঠ”,”সোজন বাদিয়ার ঘাট”, “হাসু”,”রূপবতী”, “মাটির কান্না”, “একপয়সার বাঁশী”, “সখিনা”, “সুচয়নী” এবং”বোবা” প্রভৃতি। তাঁর লেখা কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

জসীম উদ্দিন পুরস্কৃত হয়েছেন,”প্রাইড অব পারফরম্যান্স”, “একুশে পদক” এবং “স্বাধীনতা পুরস্কার” ১৯৭৪ সালে “বাংলা একাডেমি সাহিত্য” পুরস্কার তিনি প্রত্যাখান করেন। ১৯৬৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান সূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত হন।

জসীম উদ্দিন ১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ রবিবার ভোরে ৭৩ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর ফরিদপুর জেলার অম্বিকা গ্রামে তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। স্মৃতির সম্মানার্থে নিজ গ্রামে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে পক্ষকালব্যাপী “জসীম পল্লিমেলা” অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।তিনটে ঘর এখন মিউজিয়াম। কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র, বইপত্র, পাণ্ডুলিপি সব সুন্দর করে দর্শনার্থীদের জন্য সাজানো আছে। এমন কি বিয়ের সময় যে পালকিতে চাপিয়ে নতুন বৌ আমিন খাতুন ওরফে রাঙাছোটুকে নিয়ে আসা হয়েছিল সেই পালকিও আছে।

তথ্যসূত্র:

১। সাহিত্যপত্র “নবলিপি”— শারদীয় ১৪২৯

২। গণশক্তি ২ জানুয়ারি ২০১২

৩। উইকিপিডিয়া

৪। আজকাল শনিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

৫। বুলবুল সম্প্রীতি সংখ্যা ২০১৩

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ জেলার অধুনা রানিতলা থানার অন্তর্গত বেণীপুর গ্রামে মাতুলালয়ে কবি ও প্রাবন্ধিক মাজরুল ইসলাম ১৭ জানুয়ারি ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ওই থানার অন্তর্গত শিমুলডাঙ্গা গ্রামে। বর্তমানে তিনি পার্শ্ববর্তী ছাতাই গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। পিতা মরহুম মহাম্মদ মণ্ডল,মাতা মরহুমা হাসিনা বিবি।মাজরুল ইসলাম তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান। তিনি ছাতাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে এবং ৪/৫ বছর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর নিজের প্রচেষ্টায় আখেরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এবং ১৯৮৪ সালে সেখান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিং মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য পুনরায় পড়াশোনা অসমাপ্ত।মাজরুল ইসলাম সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন কবিতা চর্চাশুরু করেন। অবশ্য প্রবন্ধও লেখেন। মুর্শিদাবাদ তথা পশ্চিমবাংলা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। কবি মাজরুল ইসলাম সহজ-সরল কাব্য ভাষার একজন শক্তিশালী কবি। সাবলীল বাক্য গঠন ও বোধগম্য শব্দচয়নের রূপ- মাধুর্য তাঁর কাব্যে উপস্থিত। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছায়াছন্ন ঘরবাড়ি' ।তারপরে 'পুনর্বাসন আপনাকে ... ' , 'নীল জলের কাব্য' ও 'কালের শঙ্খধ্বনি' (যন্ত্রস্থ) । এবং 'লোকায়ত প্রবন্ধ', 'আবার ফিরে এসেছি' , ' ,উপমা' 'মহুয়ামন' , 'লোক' , 'প্রদর্শিকা' , 'অনুভব' , 'অর্বাচীন', 'ডুয়ার্স সমাচার, , 'নন্দন' ,'গোরাগাঙনি' , 'কলাপাতা' , 'স্বপ্ন' , 'বুলবুল' 'উল্কা বৃষ্টি' , 'অন্যমুখ' , 'দ্বাদশাঞ্জলী', 'ধামসা মাদল' , 'আজকের ধূমকেতু' , 'সামান্থা' , প্রভৃতি পত্র -পত্রিকায় লেখেন। ২০১১ সালে তিনি, 'বর্ণ পরিচয়' সাহিত্য পুরস্কার পান। 'অষ্টবসু সাহিত্য পুরস্কার' , 'দূর্গাপদ ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার' , 'নুরুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেওয়া স্মৃতি পুরস্কার' খোলা চিঠি পত্রিকার পক্ষ থেকেও ২০১৯ সালে সংবর্ধিত হন। ২০২১সালে সৈয়দ আহাসান আলী স্মৃতি পুরস্কার পান এবং 'কলকাতা লোকসংস্কৃতি পরিষদ'- এর পক্ষ থেকে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ স্মারক সম্মান অর্জন করেন ২০২২ সালে।এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা থেকে পুরস্কার ও সংবর্ধনা সম্মানে ভূষিত। ১৯৮৯ সালে নাসিমা বেগম-এর সঙ্গে বিয়ে হয়। তাঁদের কন্যাদ্বয় যথাক্রমে কামিনা ইসলাম(জুঁই), মালিকা ইসলাম(জবা)।মাজরুল ইসলাম বর্তমানে ভারতীয় জীবন বিমা নিগমের প্রতিনিধি এবং নাসিমা বেগম লহড়ী শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের সহায়িকা।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!