এভাবেও ভাল থাকা যায় (পর্ব ২৯)

মণিজিঞ্জির সান্যাল
মণিজিঞ্জির সান্যাল
6 মিনিটে পড়ুন
ছবি প্রতীকী

মানসিক শান্তির উপায়

মনের শান্তির জন্য নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। কেউ একা একেবারে নিজের মতো একটা জগৎ তৈরি করে থাকতে পছন্দ করেন, আবার কেউ অনেককে নিয়ে থাকলে ভাবেন তিনি শান্তিতে আছেন। মানসিক শান্তির বিষয়টা একেকজনের কাছে একেক রকম। তবে উৎকন্ঠাহীন অর্থাৎ টেনসেনলেস থাকতে হলে ভাবনার জায়গাটাকে সাজাতে হবে খুব সুন্দরভাবে। মনটাকে প্রসারিত করতে হবে। সবার আগে জীবনটাকে খুব সহজভাবে নিতে হবে। আর মনের দিক থেকে পজিটিভ ভাবনা বা পজিটিভ হতে হবে।

আমরা যদি প্রতি মুহূর্তের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবি, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কেননা আমাদের জীবনের অনেক কিছুই আছে, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে; তাই যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না, তা নিয়ে আফসোস করা উচিত নয়। আমাদের উচিত সেসব বিষয় এড়িয়ে চলা। তাছাড়া অনেকেই আছেন অন্যকে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা করেন। নিন্দে চর্চা, অন্যের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করা; খুঁত ধরা এমন আচরণ মনের ওপর প্রভাব ফেলে, ভাল করে খেয়াল করে দেখবেন মুখের ওপরেও তার ছাপ পড়ে।

আমরা প্রায়শই বলে থাকি ‘ওর মুখটা সবসময় কেমন রাগ রাগ’ অথবা ‘মুখটা কেমন হিংসুটে।’ আবার কারো মুখ দেখে আমরা বলে উঠি ‘কি সুন্দর নিষ্পাপ মুখ’ ‘ইস ওর সাথে আরো কিছুটা সময় কাটাতে ইচ্ছে করছে।’ আমরা নিজেরাও কিন্তু চাই না কেউ আমাদের নিয়ে খারাপ কোনো মন্তব্য করুক, তাই আমাদেরও উচিত আরেকজনের ক্ষেত্রে এমনটা না করা।

সামাজিক যোগাযোগের বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে, আরেকটু যত্নবান হতে হবে। এছাড়া নিজের জীবনে কিছু বন্ধু থাকলে ভাল হয়। নিজের নির্ভরতার জায়গা নিজে হলে তো খুবই ভাল কিন্তু যাদের সেই জোরটা নেই তারা দু একজন ভাল বন্ধুর সঙ্গে নিজের সুখ বা দুঃখ ভাগ করে নিতে পারেন। এমন বন্ধু থাকলে তো চিন্তাই নেই।

আমাদের সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ হয় না। কিছু অপ্রাপ্তি সবার মধ্যেই থাকে। মানসিক শান্তির জন্য এই অপ্রাপ্তিগুলো মেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, অর্থাৎ সন্তুষ্টি। আমাদের কাছে যা-ই আছে, তার মাঝে অবশ্যই কিছু না কিছু ভালো আছে। সেই ভালোকে নিয়ে ভালো থাকাই আমাদের ভেতরকার অর্ধেক অশান্তি দূর করে দেবে।

অনেকের ক্ষেত্রে মানসিক অশান্তির আরেকটি কারণ মানুষ কী ভাববে, তা ভাবা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মানুষ হয়তো তাকে নিয়ে কিছুই ভাবেনি কিন্তু সেই মানুষটি নিজেই অনেক কিছু ভেবে বসে আছেন। নিজেকে একটি উদ্বেগহীন জীবনের স্বাদ দিতে হলে ‘লোকে কী ভাববে’ এই ভাবনাকেও মাথা থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। এতে করে আমাদের মনের ওপর যে আলাদা চাপ পড়ে, তা দূর হবে এবং নিজের প্রতি নিজের আস্থা বেড়ে যাবে।

আরো যে বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখতে হবে তা হল, সব সময় সব দিন ভালো যাবে না — এটাই স্বাভাবিক। অনেক সময় একটার পর একটা দুর্যোগ আসতে পারে জীবনে। সেই সময়ে মনকে একদম স্থির রাখতে হবে। এই দুর্যোগের মাঝেও জীবনের কিছু ভাল কাজ নিয়ে ভাবতে হবে। জীবনে আমরা কিছু ভাল কাজ কিন্তু করেছি। যেমন কাউকে হয়তো মানসিক সহায়তা করেছি বা কেউ হয়তো আর্থিকভাবে কাউকে সাহায্য করেছেন। তার বিনিময়ে আপনি কিছু চাননি। কিম্বা জীবনের ভাল কোনো কাজ, পড়াশোনায় ভাল রেজাল্ট। অর্থাৎ নিজের ইতিবাচক দিকগুলোর জন্য নিজেকে নিজেই মনে মনে সাধুবাদ দিন।

তারপর ধ্যান করুন, নিজের ঘরের জানলা বা বারান্দায় গিয়ে এক বুক শ্বাস নিন। এটি আপনাকে মানসিকভাবে শান্ত করবে। শুধু তা-ই নয়, নিজেকে সময় দেওয়া। নিজের প্রতিটি বিষয়ে অন্য কেউ খেয়াল রাখল কি না, তা না ভেবে নিজেই নিজের খেয়াল রাখুন এবং উপভোগ করুন মানসিক শান্তিতে পরিপূর্ণ জীবন।
টাকা পয়সা, বাড়ি গাড়ি প্রাচুর্য এসব কিছুর থেকেও যা আমাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হল মানসিক শান্তি।

সবসময় জীবনে কী পেলাম আর কি পেলাম না এই ভাবনা মাথা থেকে সরিয়ে দিলেই আমাদের মনের মধ্যে শান্তি বাসা বাঁধে। আর সুন্দর জীবনের জন্য সবসময় এটা চাই , ওটা চাই না করলেই বোধ হয় জীবন অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ হয়। আসলে এই শান্তিপূর্ণ মনটাকে আমরাই কারণে অকারণে অহেতুক অশান্তিতে ভরে তুলি। তাই অযথা যাদের মন অশান্তিতে পূর্ণ, তারা যদি সুন্দর শান্তিপূর্ণ একটা মন পেতে চান তাহলে প্রথমেই শুরু করতে হবে শরীরচর্চা। বরাবরই মানুষ ‘পাওয়া’ ও ‘না পাওয়া’র মাঝে, ‘না পাওয়া’কেই বেশি গুরুত্ব দেয়। এই প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসেব করতে করতেই হতাশা, অবসাদ, মানসিক অশান্তি খুব সহজেই তার জীবনকে গ্রাস করে। ফলে অনেকেই নানা রকমের নেশা ও অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে খুব সহজেই জড়িয়ে ফেলে। তবে মনের এই তিক্ততা ঝেড়ে সুন্দর জীবনের জন্য মাত্র তিনটি উপায় অবলম্বন করলেই হয় ।

  • প্রাচীনকাল থেকেই মানসিক শান্তির জন্য ধ্যান এবং যোগ ব্যায়াম সবচেয়ে ভালো উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিদিন কিছুটা সময় ধ্যান করলে সারাদিনের ক্লান্তি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন খানিকটা সময় বের করে ধ্যান করা যেতেই পারে।
  • শরীরচর্চা করা প্রয়োজন, এর মাধ্যমে বাড়তি ওজন কমানোর পাশাপাশি মানসিক অবস্থারও উন্নতি হয়। শরীরচর্চার ফলে মস্তিষ্কের ডোপামিন ও সেরোটোনিন নামক রাসায়নিক উপাদান নিঃসৃত হয় যা মানসিক অবসাদ দূর করতে সহায়তা করে এবং মনে প্রশান্তি আনে। যারা মদ্য পান থেকে রেহাই পেতে চান তারা প্রতিদিন নিয়ম করে শারীরিক চর্চা করলে অবশ্যই ফল পাবেন।
  • আমাদের এই খারাপ মনটাকে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দের কাজ করতে হবে। যেমন, গান শোনা, বই পড়া, বাগান করা ইত্যাদি। এ ধরনের কাজে প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় ব্যয় করা উচিত। প্রতিদিন নিজেদের পছন্দের কাজ করে খুব সহজেই মানসিক অবসাদ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

মনে শান্তি পাওয়ার জন্য বাড়তি মানসিক চাপ না বাড়িয়ে যে কাজগুলো করে আনন্দ পাওয়া যায় সেগুলোই করা উচিত।

(চলবে)

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মণিজিঞ্জির সান্যাল, বাংলা সাহিত্যে এম.এ., ক্ল্যাসিক্যাল নৃত্য প্রভাকর; জন্মদিন: ২৯শে বৈশাখ, ইং ১৩ই মে; জন্মস্থান: ভারতবর্ষ, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি। যে সব পত্র পত্রিকায় লিখেছেন: আনন্দবাজার, দেশ, সানন্দা, শুকতারা, কিশোর ভারতী, শিলাদিত্য, যুগ শঙ্খ, নন্দন, তথ্যকেন্দ্র, উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকা, উত্তরের সারাদিন, স্টেটসম্যান, অন্যদিন পত্রিকা (বাংলাদেশ), এছাড়া অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। দেশের বাইরে কুয়েত, বাংলাদেশ, কানাডা, লন্ডন এমন অনেক বিদেশের পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বই: (১) একটুকু ছোঁয়া লাগে (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (২) স্বপ্নের পৃথিবী (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (৩) অতৃপ্ত আত্মার সঙ্গে (৪) সমুদ্র তোমার সঙ্গে (বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত) (৫) সম্পর্কের পরিচর্যা (বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত) (৬) কমলালেবুর রস নোনতা (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (৭) ভালোবাসার গোপন দরজা (৮) মাটির কাছাকাছি
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!