‘উচ্চতর গণিতে পাশ না করায়’ হলিক্রস ছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন
প্রতীকি ছবি

উচ্চতর গণিতে পাশ না করায় ঢাকার তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন এলাকার একটি বাসার ১০ তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে “আত্মহত্যা” করেন হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। তার গায়ে ছিল স্কুল ইউনিফর্ম।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীর নাম পারমিতা ফাইহা।

পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) মাহমুদ হাসান এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, “স্কুল থেকে ফিরে ওই শিক্ষার্থী ফ্ল্যাটে না ঢুকে সরাসরি ভবনের ছাদে চলে যায়। সেখানে গিয়ে স্কুলের পোশাক পরা অবস্থায় লাফ দিয়ে নিচে পড়ে।”

মাহমুদ হাসান আরও বলেন, “পারমিতা লাফ দেওয়ার সময় ভবনের পাশে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী মাঠে খেলছিল। পারমিতা লাফ দিতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে তারা চিৎকার করে। এ কারণে মেয়েটি একবার লাফ দিতে গিয়েও দেয়নি। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। ঠিক কী কারণে পারমিতা ‘আত্মহত্যা’ করেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই স্কুলের এক শিক্ষককে ইঙ্গিত করে বলছেন, “তার কাছে” প্রাইভেট “না পড়লে” তিনি ফেল করিয়ে দেন। উঠে এসেছে অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও ফলাফল নিয়ে চাপ থাকার কথাও।

নবম শ্রেণির “সি” সেকশনে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে নিজের ভাগ্নি পড়তেন জানিয়ে হাসিবুজ্জামান নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, “প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় নবম শ্রেণির অনেকগুলো মেয়ে উচ্চতর গণিতে ফেল করে।”

তিনি জানান, তার ভাগ্নি এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে শুনে তারও ধারণা হয় যে, প্রাইভেট না পড়ার ফলে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ভাগ্নি তাকে বলেছে, “মেয়েটি প্রথম সাময়িকীতে উচ্চতর গণিতে ফেল করেছিল। দ্বিতীয় সাময়িকীতেও সে ফেল করেছে। তার বাবা-মাকে স্কুল থেকে ডাকার কথা ছিল বৃহস্পতিবার।”

“শিক্ষকরা ফেল করা ছাত্রীদের বাবা-মাকে ডেকে অপমান করছেন, এরকম কথাও ছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারা অনেকেই আতঙ্কিত হয়। ক্লাসে এ নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে অনেক শলা-পরামর্শও করে। এরকম আলোচনার সময় মঙ্গলবার মেয়েটিকে তার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করেছিল, এখন কিভাবে বাসা ম্যানেজ করবি? মেয়েটি তখন বলেছিল, দেখিস কিভাবে করি। এর কিছুক্ষণ পরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়েটির মৃত্যু সংবাদ আসে।”

মেয়ের মৃত্যুর জন্য ওই শিক্ষককে দায়ী করছেন ওই ছাত্রীর মাও। তবে এ বিষয়ে কোনো মামলা বা আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে জানান তিনি। তারা শুনেছেন, ফলাফল খারাপ হওয়ায় উচ্চতর গণিতের শিক্ষক অনেক রাগারাগি করেছেন। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের ডাকার কথাও বলা হয়।

“অনেক অভিভাবকের সঙ্গে নাকি কর্কশ ভাষায় কথা বলা হয়েছে। এসব নিয়েই হয়তো মেয়েটা চাপে পড়েছিল।” তবে এসব অভিযোগ “মোটেও সত্য নয়” দাবি করে শ্রেণি শিক্ষক রোকেয়া বেগম বলেন, “অনেক গণমাধ্যমে অভিভাবকদের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে ও ক্লাসে প্রথম হতো। কিন্তু বিষয়টি এরকম নয়, ও মধ্যম মানের ফল করে আসছিল।”

তিনি আরও বলেন, “এবার প্রথম সাময়িকী পরীক্ষায় উচ্চতর গণিত ও জীববিজ্ঞানে ফেল করে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় আবারও উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞানের সঙ্গে সাধারণ গণিতেও ফেল করে।”

একজন শিক্ষকের প্রতি অভিভাবকদের যে অভিযোগ সে প্রসঙ্গে শ্রেণি শিক্ষক রোকেয়া বেগম বলছেন, “এরকম কিছু হলে তো মেয়েটি অন্য বিষয়গুলোতে ফেল করত না। সে আরও দুটো বিষয়েও ফেল করেছে।”

অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের রূঢ় আচরণের অভিযোগও নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তাদের ডেকে বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলি। নবম শ্রেণির এতগুলো ছাত্রী কেন খারাপ ফলাফল করলো এ নিয়ে তারা সতর্ক ছিলেন। তবে কারও সঙ্গে রূঢ় আচরণের প্রশ্নই ওঠে না।”

স্কুলের আরও কয়েকজন নারী শিক্ষক জানিয়েছেন, ছাত্রীদের কাছ থেকে তারা শুনেছেন মেয়েটি যেন ভালো ফলাফল করে সেজন্য তার পরিবার অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছিল। তাকে বকা-ঝকা করা হতো বলেও তারা শুনেছেন।

ছাত্রীদের একজন বলেন, “মেয়েটির বাবা অনেক কঠোর অভিভাবক। ভালো ফলাফলের জন্য চাপ দিতেন।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়েটির মা বলেন, “প্রথম সাময়িকী পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলের পর ওর বাবা শুধু বলেছিলেন, এবার ফেল করলে বাড়িতে কোনো ইন্টারনেট লাইন রাখা হবে না।”

গৃহকর্তা ব্যবসা করেন। ছোট ছেলে পড়ে মাদ্রাসায়। এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে তারা ছিলেন সুখী পরিবার। মেয়ের স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করেই মাস ছয়েক আগে তেজগাঁওয়ের স্টেশন রোডের বাসায় উঠেছিল পরিবারটি। ১০ তলা ভবনের ১০ তলাতেই থাকে পরিবারটি। বাসার এক কিলোমিটারের মধ্যেই হলিক্রস স্কুল।

এমন মৃত্যুর তদন্তে বুধবার হলিক্রস স্কুলে এসেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতাগুলো দেখেছেন।

মাউশির একজন কর্মকর্তা জানান, পরীক্ষার খাতাগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে তাদের মনে হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবেই মূল্যায়িত হয়েছে তবুও তারা সেগুলো নিয়ে যাচ্ছেন।

ওই শিক্ষার্থীর “আত্মহত্যার” পেছনে “ফেল করানোর” মতো কোনো কারণ রয়েছে কি-না খতিয়ে দেখতে বুধবার দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। বুধবার অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর এ তথ্য জানান।

ডিআইএ’র উপপরিচালক রেহানা খাতুনকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটির আরেক সদস্য হলেন শিক্ষা পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন।

অধ্যাপক অলিউল্লাহ বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি যে, সেই শিক্ষার্থী উচ্চতর গণিতের প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ফেল করেছিল। সেই অপমানেই সে আত্মহত্যা করেছে। আর সেই শিক্ষার্থী ওই বিষয়ের শিক্ষকের কাছে না পড়ায় তাকে ফেল করানো হয়েছে। এটি তদন্ত করতেই আজকে তদন্ত কমিটির দুইজন গিয়েছিল। তারা পরীক্ষার খাতাগুলো নিয়ে এসেছে। তদন্ত কমিটি ও বোর্ডের কয়েকজন খাতাগুলো পুনর্নিরীক্ষা করে দেখবেন যে, তাকে ফেল করানো হয়েছে কি-না। মূলত আমরা দেখতে চাই, তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়েছে কি-না।”

তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৪টার পর মেয়েটি স্কুল থেকে ফিরে বাসার দরজায় ব্যাগ রেখে ওপরে উঠে যায়। এই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মেয়েটি স্কুলের ইউনিফর্ম পড়া অবস্থাতেই ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!