একা নই
কেউ পাশে নেই অথচ নিজেকে একা মনে হচ্ছেনা; মনে হচ্ছেনা অসহায়,
তুমি নেই সে নেই ওরা নেই
অথচ আমি একা নই–
ঠিক জন্মমুহূর্তের মত ভেসে বেড়াচ্ছি নিবিড় নৈঃশব্দের অনিমেষ রক্ত-উপাত্যকায়;
হয়তো কোথাও আছে কানি বক, রত্নদ্বীপ আর বোগেনভিলিয়ায় ঠোঁট ছোঁয়ানো শেষ চৈত্রের ওম, আছে নির্ঘুম স্বপ্নবিলাপ, কাব্যের আলুথালু বোধ আর চৈতন্যের খুনসুটি এবং তুমি।
ঠিক এখন এখানে আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে নির্জনতা এবং তুমি বিশ্বাস কর;
জন্মদিন
তার চোখে যখন মেঘরঙ ছায়াগুলো নামে
তখন ভালোবাসাগুলো শিং মাগুর কৈ হয়ে যায়
উড়াল হাঁসের পালে দুপুর লুকিয়ে আমি মেতে উঠি শ্রাবণের এক্কাদোক্কায়
দুটো দীঘির স্নানে দিন পার হয়ে রাত আসে
কাঠবেড়ালী ঘুমে শ্রান্ত ধূসর
আমি তখন দক্ষ সাঁতারু
হৃদয় চ্যানেল পাড়ি দিতে দিতে
আমার দুই বাহু যেন আলোর নোঙর
একটি ডাহুক নাচে
গাঙচিল মহুয়ার তীব্র উজানে
ঘূর্ণিতে জমেওঠে উর্মির ঋণ
শুভ হোক বোশেকের প্রিয় জন্মদিন।
বৈশাখ এবং শিলং দুপুর
দীর্ঘ আলখাল্লার ভেতর একটা দুপুর লুকিয়ে
আপনি ঘুরে বেড়াতেন;
দুপুর মানেই ঘুঘু, কানিবক আর শিরিষের
ডাল থেকে রৌদ্র খসে পড়া–
আমি স্বপ্নের ঘোরে একদিন সেই রোদে
শব্দ শুকাতে দিয়েছিলাম,
কী সর্বনাশ হঠাৎই শুরু হলো বৃষ্টি;
ফুটতে শুরু করলো পপকর্ণ,
আমি কবিতার বদলে সাদা জুঁই কুড়াতে কুড়াতে
জমে গেলাম যেন দীঘল সাদা মেঘ–
ক্যালেন্ডারের পাতায় তখন পঁচিশে বৈশাখ,
মেঘে মেঘে গীতাঞ্জলি আর বুকের ভেতর
আপনার উড়ন্ত দাড়ি ; শিলং পাহাড়।
অন্ধরাত
ভয় পেওনা–
চলে যাবো বলেছি বলেই যে
আজই চলে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই,
যাওয়ার সে পথটা কেমন সরু ও ধূসর; ঝরা আর মরা পাতার মর্মরে অদ্ভুত এক বিরান ধ্বনি,
বাতাসে কদমের সাথে গন্ধ লোবানের।
ফুল ঝরে যায়, পাখি উড়ে যায়, জল সরে যায়–
কোনো শূন্যতাই হয়না চিরস্থায়ী ,
আমার অভাব পূরণ করবে বাতাস, আগুন অথবা তীব্র বুটের নীচে বাদাম খোসার ভেঙ্গে টুকরো হয়ে যাবার কিছু করুণ আর্তনাদ–
ভয় কিসের?
আজ রাতটা থমথমে
চাঁদের চশমায় বাদুড়ের ভয়াল থাবা,
আহ কি বিষন্নতা, কি নিঃসীম অন্ধকার –
চাঁদের ছায়ার মতো মায়ায় তোমাকে ঢেকে দিয়ে
নিশ্চয়ই পালাবোনা আমি।
চির অমাবশ্যার হাত ধরে একজন কবি
আজ তোমার পাশে জেগে থাকবে একটি অন্ধরাত।
দেয়ালে আটকে গেছে আস্ত দুপুর
দেয়ালে আটকে গেছে আস্ত দুপুর
রোদের নরুন আঁটা মেয়ে পালিয়েছে আধখানা ভুট্টার ক্ষেতে
তিতিরের ডাক শুনে বাড়িয়েছে ছায়াহাত ঘুমের কৃষক, তুমিও তুলছো হাই
আজ তবে নেই কোনো দোয়েল উৎসব?
মেনকার রূপ আঁকা সজনের ডালে
একটি শালিক লুকিয়ে হলুদ ঠোঁট খুঁজে যাচ্ছে প্রণয়ের বিভা
নদীটির নাম যদি কালীগঙ্গা হয়
তবে তার সানুদেশে মেঘেরা লিখেছে নাম
সিঁদুর-কালিতে
ছায়ার স্তন জুড়ে কিলবিল মনসার নীল
সে দুগ্ধ জানায় টা টা তোমাকে আমাকে
বসন্ত বাতাসে লীন জীবন অচিন।
সম্মতি
দিয়েছ সম্মতি তবে মন থেকে নয়
তোমার কথার নীচে চাপা পড়ে গেছে ওই
সারিসারি কথার কবর
বিশ্বাস এমনই মিথ
আমাকেও করেছে সম্মোহিত লতার মতন
ঝাউয়ের নীরব ডালে কাল রাতে কেঁদেছিল
কোনো এক ক্ষুধার্ত বাদুড়
শিশুর কান্না ভেবে গুটিসুটি আমিও নিয়েছি
তুলে গায়ে এক মখমলি ভয়ের চাদর
এভাবে উড়ায় ঘুড়ি চাঁদের জাহাজ
নীরবে ছড়ায় ঘ্রাণ বনে অঘ্রাণে
ঘাসের যুবতী দেহে নীল-সাদা ফুলের মাতম
কথায় কথায়
সত্য ঘুমিয়ে পড়ে জাগে এক গোয়েবলস্ দেহ
কথার সলতে পুড়ে আঁকে সেই মায়ার প্রাসাদ
সেই কথা কাক হয়
কথায় কথায় ছোটে মৃত্যুর ভ্রূণ
ছোটে নিকষ আঁধার
পৃথিবীর একদিকে থাকে যদি আলো
বাকী দিক জেনে রাখো রাতের আহার
দিয়েছ সম্মতি তুমি দ্বীন ও দিনের
অবিশ্বাসে কেন হাসে ইবলিশ প্রাণ।