হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের প্রণোদনা দিবে সরকার

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন

হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জের চার হাজার একর জমির ফসল পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। যা মোট আবাদ করা জমির দুই শতাংশ। তারপরেও বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে বা কৃষকের কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। যত দ্রুত সম্ভব তা নিরূপণের পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে নগদ সহায়তা বা কৃষি সামগ্রী প্রণোদনা বাবদ সহায়তা দেওয়ার কাজ শুরু করবে সরকার। তবে ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের জন্য চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ মোট সাড়ে ১৪ কেজি পরিমাণের নিত্যপণ্যের এক হাজার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। আরও এক হাজার প্যাকেট বিতরণের জন্য পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে বা কৃষকের কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণের কাজ শুরু করেছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। পাশাপাশি হাওর অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনও তৎপর রয়েছে, যাতে তাদের জেলার বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে ফসলের ক্ষতি করতে না পারে।

সূত্র জানায়, সপ্তাহখানেক পরই সুনামগঞ্জের হাওরের ধান পাকার কথা। ফসল তোলার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা কৃষকের। তবে এখন তাদের ব্যস্ততা ফসল রক্ষা বাঁধ বাঁচাতেই। দিন-রাত স্বেচ্ছায় কাজ করছেন। স্থানীয় প্রশাসন সার্বিক সহায়তাও করছে। তবু ফসল বাঁচবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই অবস্থায় জেলার প্রায় ২৫ হাজার কৃষক পরিবার দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কৈয়ারবন ও পুটিয়া হাওরে বাঁধ এবং ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনা থালা হাওরের বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে। নতুন করে এ তিন হাওরে পানি প্রবেশ করে। এতে অন্তত চার হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। শাল্লা উপজেলার কৈয়ারবন ও পুটিয়া হাওরে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে। হাওরের ৪০ হেক্টর ফসলি জমি নিমিষেই তলিয়ে যায়। তবে এই বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর আওতার বাইরে। গত তিনদিন ধরে স্থানীয় কৃষকেরা দিন-রাত মাটি কেটেও বাঁধটিকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৫ এপ্রিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ধর্মপাশা উপজেলার ৭৫ নম্বর পিআইসির ডুবাইল বাঁধ ভেঙে যায়। এর ফলে হাওর ও কংস নদী এখন পানিতে একাকার। ধনু ও সুরমার পাহাড়ি ঢলে কংস নদী অনেকটাই ফুলে উঠেছে। এতে চন্দ্রসোনার থাল, ধারাম হাওর ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার হালদিয়া হাওর ভাঙনের ঝুঁকিতে। ডুবাইল বাঁধটি ভেঙে ধর্মপাশার ১৮৫ হেক্টর জমির আধপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষীণকায় কংস নদীর অপর পারেই নেত্রকোনার হালদিয়া হাওর এখনো সুরক্ষিত। চন্দ্রসোনার থাল হাওরের পাশেই ধর্মপাশা উপজেলার ধারাম হাওর। এই হাওরে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন কৃষকরা। পাশের হাওরটি তলিয়ে যাওয়ায় এই হাওরের কৃষকরা এখন দুশ্চিন্তায় আছেন। হাওরের কান্দা ও বাঁধে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কৃষকরা।

সূত্র আরও জানিয়েছে, সুনামগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে হাওরের চার হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ২৫ হাজার কৃষকের ৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। বাঁধ ভেঙে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা ও অনিয়মকে দায়ী করছেন তারা।

জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, জেলার ২ লাখ ২২ হাজার ৮৫০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র চার হাজার একর জমির ফসল বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে। বাকিটা ভালো আছে। ক্ষতিগ্রস্ত আবাদি জমির পরিমাণ মাত্র ২ শতাংশ। তার পরেও আমরা অক্ষত বাঁধগুলো টিকিয়ে রাখতে কাজ করছি। আর কোনও হাওরে যেনো পানি প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদেরকে কাজে লাগিয়েছি। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলোর জন্য এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। আরও এক হাজার প্যাকেট বিতরণের জন্য প্রস্তুত করা আছে। প্রতি প্যাকেটে ৫ কেজি পরিমাণে উন্নত মানের চাল, ১ কেজি, ডাল, ১ লিটার তেলসহ বিভিন্ন পদের সাড়ে ১৪ কেজি ওজনের নিত্যপণ্য রয়েছে। প্রতি উপজেলার সঙ্গে সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসন যোগাযোগ রাখছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

তিনি জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা বিতরণের পাশাপাশি আমরা পুরো হাওরের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছি। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে সঙ্গে নিয়ে এ কাজটি করছি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কতদিন লাগবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়, কারণ হাওরে পানি প্রবেশের আশঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। নতুন করে যাতে কোনও এলাকা প্লাবিত না হয় সেদিকে সর্বদা নজর রাখছি।

এদিকে হাওর অধ্যুষিত জেলা নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, এ জেলায় কোনও ক্ষতি না হলেও আশংকা রয়েই যায়। তবে আমরা সর্বদা সজাগ ও সতর্ক রয়েছি। যেখানে যেখানে ত্রুটি ছিল সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। আপাতত এ জেলায় কোনও ক্ষতির আশংকা নাই।

এ প্রসঙ্গে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ইতোমধ্যে এক হাজার নিত্যপণ্যের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। আরও এক হাজার প্যাকেট যাচ্ছে। এর বাইরেও সরকারের জিআর তহবিল এবং কৃষি প্রণোদনা সহায়তার জন্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। এ কাজটি শেষ হওয়া মাত্রই সার্বিক সহায়তা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে দাঁড়াবে সরকার।

এদিকে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, জেলায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট চার হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। জেলার ১৩৭টি হাওরসহ কৃষির সঙ্গে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৭০৫টি পরিবার জড়িত। হাওর ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারাও বিশাল ক্ষতির মুখে পড়ে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!