আমি তখন রণতরীতে

ড. সৌমিত্র কুমার চৌধুরী
ড. সৌমিত্র কুমার চৌধুরী
35 মিনিটে পড়ুন

লেখক: জন ট্রসি
অনুবাদক: ড. সৌমিত্র কুমার চৌধুরী

[‘আমি তখন রণতরীতে’ (When I was on the frigate) আইসল্যান্ডের একটি বিখ্যাত ছোট গল্প। লেখক জন ট্রসি (Jon Trausti, 1873-1918), বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধের বিখ্যাত লেখক। শিল্প সাহিত্যে উন্নত দেশ আইসল্যান্ড। পাহাড় সমুদ্র খাঁড়ি নদী সমন্বিত স্বল্প জনসংখ্যার এক বৈচিত্র পূর্ণ দেশ। ওখানে মানুষের জীবনযাত্রা, বেঁচে থাকবার লড়াইও বড় কঠিন। আমাদের অচেনা প্রেক্ষাপটে রচিত বর্তমান গল্পটি]।

জেলেদের গাঁয়ে এসে আটকে পড়লাম। প্রবল ঝড়। যে স্টিমারে এসেছি, ছেড়ে চলে গেছে। আমি একা। অচেনা জায়গা। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। 
স্থলপথে যাত্রা করবার পরিকল্পনা ছিল আমার। পথের দু’ধারে পাহাড়ি গাঁ। পার হলেই সমুদ্রের খাঁড়ি। যাত্রাপথে পয়সা খরচ করে ঘোড়া বা পথপ্রদর্শক, কোনটাই যোগাড় করতে পারিনি। মে-মাসের প্রথম দিক তখন। বসন্ত কাল। ঝোড়ো তুফান আর বন্যায় ফুঁসছে সব নদী। এরকম আবহাওয়ায় মানুষ বা ঘোড়া যোগাড় করাও সহজ ছিল না। 
স্থানীয় এক ডাক্তারের ঘরে আশ্রয় পেলাম। শুধু থাকতে দেওয়াই নয়, সব কাজে আমাকে সাহায্য করতে লাগলেন উনি। সেদিন আমার ঘরেই বসে ছিলেন ডাক্তার। আমারা সিগারেট খেতে খেতে গল্প করছিলাম। 
এখান থেকে বেরোবার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি। ডাক্তারের ঘরে সোফায় বেশ আরামেই বসেছিলাম। হঠাৎ অবাক কান্ড। কানে ঢুকল ঘরের বাইরে ভারী বুটের শব্দ, জাহাজীদের পায়ে যেমন থাকে। দরজায় কড়া নাড়ল কেউ। 
‘ভেতরে আসুন’, ধীরে দরজা খুলে ডাক্তার বললেন। 
দরজার বাইরে নাবিকের পোষাক গায়ে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে লোকটি বলল, ‘আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, নদী বাঁধের বুড়ো হর্লফার একজন ছেলেকে নদী পার করে দিতে পারবে কিনা। আমি বলি, পারবে। চাইলে সে আমার নৌকায় আসতে পারে’।  
একটু পরে আবার, ‘উনি চাইলে পুরনো স্থলভূমি থেকে নদীর বাঁধ অবধি নৌকায় যেতে পারবেন’। 
আমরা দু’জনেই দাঁড়িয়ে উঠে দরজা অবধি এগিয়ে গেলাম। ওভাবে যাবার সম্ভাবনা আমি বা ডাক্তার, কারুর মাথায় আসেনি। 
‘হর্লফার কি নদী-বাঁধে মাছ শিকারে যাচ্ছে’? ওর দিকে তাকিয়ে ডাক্তার জানতে চাইলেন।
‘হ্যাঁ, ওই দ্বীপে ক’দিন থাকবে বলে তো যাচ্ছে। ওর কাছে মুলাদালির দ্বীপ পেরিয়ে যাওয়া কঠিন কিছু নয়’।
‘ঠিক আছে’। আমার দিকে ফিরে ডাক্তার বললেন, ‘নদী বাঁধের শেষ মাথায় যাবার ভালো উপায়। একদিন সময় কম লাগবে। মুলাদালির দ্বীপে ঘোড়া এবং গাইড পাওয়াও এখানকার চাইতে অনেক সহজ’। 
পুরো ব্যাপারটা এমন অপ্র্যাত্যাশিত ভাবে ঘটল যে আমি কিছু বলতে পারলাম না। একবার ডাক্তারের মুখের দিকে তাকাচ্ছি, একবার আগন্তুকের দিকে। প্রথমেই মনে হল ডাক্তার যেন আমাকে বিদায় দিতে পারলেই বেঁচে যায়। পরক্ষণেই অন্য ভাবনা উঁকি দিল। অনেক গুলো নদী পেরিয়ে নদী-বাঁধ পৌঁছানোর চাইতে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়াটাই ভালো হবে। তখন মনে হল, ডাক্তারের কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই। আমার ভালোর জন্যই উনি এসব করছেন। 
‘হর্লফার কি ভালো আছো ইদানীং’? দরজার বাইরে দাঁড়ানো লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন ডাক্তার। 
‘হ্যাঁ, ঠিক আছে’, হর্লফার বলল।  
‘ঠিক আছে মানে’? মাথায় খোঁচা মাড়ল প্রশ্নটা। কিন্তু নীরব রইলাম। মনে হল কিছু জিজ্ঞেস করাটা বোকামি হবে। 
ডাক্তার একটু হাসলেন। কপালে আঙুল ঠেকিয়ে আমাকে ইশারায় বললেন, ‘ঠিকই আছে। তবে একটু খ্যাপাটে, এই যা’!
বুক কেঁপে উঠল আমার। এরকম আধ পাগল একটা লোকের সাথে দেশী নৌকায় লম্বা সমুদ্রযাত্রা! ডাক্তার ঠিক আমার মনের কথা বুঝে ফেলেছিলেন। ইশারায় আমাকে আশ্বস্ত করলেন ডাক্তার। 
‘কোন বিপদ হবে না তো ওর সঙ্গে গেলে’? আমি জিজ্ঞেস করলাম। 
‘না না কোন বিপদ হবে না। ও পাগল নয়, একটু খ্যাপাটে ধরনের। মাঝে মাঝে শীতের রাতে ওর মাথায় পোকা কামড়ায়। তবে এই গরমে পাগলামির কোন চিহ্ন থাকবেনা। মোটের উপর ও খুব ভালো নাবিক একজন’। 
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন লোক বলে উঠল ‘উঁচু মানের নাবিক সে-ই, যে কখনও ব্যর্থ হয় নি। ওর সাথে সমুদ্র যাত্রায় কোন বিপদ নেই। আমার কথা মিলিয়ে নিও’।
‘তুমি ওর সঙ্গে যাচ্ছ’? ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন। 
‘হ্যাঁ আমরা তিন জন ক্রু মেম্বার আছি। হর্লফার সমেত চার জন’। 
লোকটার দিকে তাকালাম। বছর কুড়ির একজন যুবক। দেখলে ভরসা জাগে। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ভালো লাগলো।  
মনে মনে আমি লজ্জা পেতে লাগলাম। এরকম নাবিক পেয়েও সমুদ্র যাত্রায় ভয় পাচ্ছি! হোলোই বা ওদের ক্যাপ্টেন একটু পাগলাটে’!
 ‘আজকেই রওনা দেবে কি? জোর হাওয়া বইছে তো!’ ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন। 
‘আমার মনে হয় বুড়ো হর্লফার বাতাসকে পাত্তা দেবে না’, ছেলেটা হাসতে হাসতে বলল।  
‘পাল খাটাতে পারবে’? 
‘নিশ্চয় পারবো। ভালো বাতাস উঠেছে আজ’।  
ব্যাস, ওর সাথে আমার যাওয়া ঠিক হয়ে গেল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি তৈরি হয়ে নিলাম। আমার মালপত্র—পিঠের ব্যাগ, কাঁধের ছোট ব্যাগ সব নৌকায় পৌঁছে গেল। আমাদের সাথে ডাক্তার জেটি অবধি এলেন। 
বাঁধের পাশে, ঢেউয়ের ধাক্কা থেকে বাঁচবার জন্য যে  আশ্রয় গুলো বানানো হয়, সেখানেই বাঁধা ছিল হর্লফারের নৌকা। মাস্তুল সোজা করা হয়ে গেছিল। ওর চারদিকে জড়ান ছিল নৌকার পাল। চার দাঁড়ির নৌকা এটা। সাধারণ নৌকার চাইতে একটু বড়। সর্বত্র আলকাতরা মাখানো। মাথার কাছে অন্য রঙ। ওখানে হাল্কা নীলের প্রলেপ। নৌকায় হাঙর শিকারের সব রকম যন্ত্র মজুত। লোহার চারটে হুক লাগানো কাঠের একটা মোটা বিম। হাঙ্গর ধরবার টোপ-- নোংরা দুর্গন্ধে ভরা ছোট পিপে। আর হাঙরের লিভার রাখবার জন্য বেশ বড় একটা পিপে। হাঙ্গরের আক্রমণ প্রতিহত করবার জন্য ছুরি, অসংখ্য কোঁচ এ সব রাখা ছিল নৌকার পাটাতনের নিচে।     
খাবার এবং অন্য মালপত্র ভর্তি বাক্স গুলো নৌকার সামনের দিকে রাখা। আর পেছন দিকে, প্রধান নাবিকের বসবার জায়গা এবং নৌকার প্রান্তবিন্দুর মাঝামাঝি একজন লোক কোমর বেঁকিয়ে সামনে ঝুঁকে কাজ করছে। পাটাতনের নিচে একগাদা পাথর গুছিয়ে রাখছিল ও। পরনে টুকরো টুকরো জোড়া দেওয়া চামড়ার পোশাক, বগল অবধি টানা। কাঁধের কাছে চামড়ার সরু দড়ি দিয়ে বাঁধা। ওর সামনে আরেকজন লোক। তৃতীয় লোক জেটির উপরে দাঁড়িয়ে। 
‘শুভ দিন’, ডাক্তার বললেন। 
‘শুভ দিন’, হর্লফার বলল। মুখ দিয়ে হলদে রঙের পানীয় উগড়ে দিতে দিতে দাঁড়িয়ে উঠে ও আবার বলল, ‘ওই পাথরগুলো আমার হাতে তুলে দাও তো! 
শেষ কথাটা ডাক্তার বা আমার উদ্দেশ্য বলা নয়। জেটিতে আরেকজন যে লোক ছিল, তাকে বলা। 
হর্লফার পলক তাকিয়েই আমাকে স্বাগত জানাল। কিন্তু দৃষ্টিটা কেমন যেন! একটা বিদ্বেষ ভাব। তবে ভয় পাওয়ার মত কিছু ছিল না তাতে। ওর ধারাল চোখের দৃষ্টি দিয়ে আমাকে ফালা ফালা করতে লাগল হর্লফার। এরকম সন্দেহ আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে আগে কখনও আমাকে পড়তে হয় নি।  
ছোট খাট চেহারার এক লোক। প্রাণবন্ত। কিন্তু বার্ধক্যে শরীর ভাংছে দ্রুত। রোদ জলে পোড়া অপরিষ্কার মুখ, অসংখ্য সরু ভাঁজ চারদিকে। এখানে ওখানে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। 
হঠাৎ ওর শরীরে একটা কাঁপুনি লাগল। সম্ভবত পেটে মদ পড়েছিল বলেই। লক্ষ করলাম, একরাশ রুক্ষতা মাখানো মুখটায় বিষণ্ণতার ছোঁয়া। হাত দুটো লাল, ফোলা ফোলা আর শক্ত। সম্ভবত দীর্ঘ কাল দাঁড় টানবার কারণেই।   
‘হর্লফার, বাতাসের গতি খুব তীব্র, তাই না’? অনেকক্ষণ চুপ থেকে ডাক্তার প্রশ্ন করলেন। 
‘হতে পারে’, মুখ না তুলে হর্লফার বলল। 
আবার অনেকক্ষণ চুপচাপ। মনে হচ্ছে ওর কথা বলার সময় বা ইচ্ছে কোনটাই নেই।  জেলার মেডিক্যাল অফিসারের কথাকেও আমল দিচ্ছে না। 
ডাক্তার আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। যেন এরকমই হবার কথা ছিল। একটু থেমে ডাক্তার বললেন, ‘হর্লফার, তাহলে এই টুরিস্টের মহা উপকার করছো তুমি’?
‘আরে না, না। ওকে নিলে নৌকা কোন আপত্তি করবে না’।
তার মানে আমি নৌকার পেটে রাখবার একটা প্রভার, শুধু ওজন মাত্র! মনে মনে ভাবলাম। 
‘মূলার ক্রিকে নামা কি খুব কঠিন হবে’? 
পেছনে হাত রেখে সোজা দাঁড়িয়ে হর্লফার আমার দিকে তাকাল। বলল, ‘ছাড়ো তো! ডাঙ্গায় কোন জোরদার বাতাস নেই। আর সমুদ্রের অবস্থাও তেমন খারাপ কিছু নয়। যা’হক, পরের বার জোয়ার এলেই আমরা ওখানে পৌঁছে যাবো’।
‘আমার জন্য তোমাকে গন্তব্য থেকে দূরে যেতে হচ্ছে, তাই না’? 
‘তেমন ভাববার কারণ নেই। আমরা অনেক সময় ওই দ্বীপে একটা রাত বিশ্রাম নিয়ে পরদিন সমুদ্রে পারি দিই’। 
এ কথার পরেই ডাক্তারকে বিদায় জানিয়ে নৌকার খোলের ভিতর আমি ঢুকে গেলাম। জেটিতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি দড়ি খুলে দ্রুত নৌকায় লাফ দিয়ে উঠে এল। মাল্লাদের একজন স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড় ঠেলে নৌকা অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেল। কয়েকজন একসাথে কিছুক্ষণ দাঁর ঠেলে বাতাসের অভিমুখে নৌকাটাতে টেনে নিয়ে গেল। বৃদ্ধ হর্লফার নৌকার হাল ধরে রইল। 
যাত্রা শুরু হল। ধীর গতিতে বড় একটা বাঁক নিল নৌকা। দ্বীপের জেটিকে দ্রুত পেছনে ফেলে অনেকটা এগিয়ে গেল। 
সাগরের অভিমুখে চলেছি আমরা। দিগন্তে পাহাড়। গাড় নীল কুয়াশা মাখা ধূসর চূড়া ঢেউয়ের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নৌকা আর পাহাড়ের মাঝে মাইলের পর মাইল লম্বা সমুদ্র চাদরের মত টানটান পাতা। মাস্তুলের কাছে নাবিকদের মাঝখানে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। অভিজ্ঞতায় আমরা জানি, মাথার কাছটা ভারী থাকলে আইসল্যান্ডের নৌকাগুলো তরতরিয়ে ছোটে। বাতাসের দিকে মুখ করে আমরা চারজন দাঁড়িয়ে। হাল ধরে রাখবার জন্য যে সাপোর্ট থাকে, তার নিচে জল তখনও ফেনা কাটছিল।
আমার আরামের জন্য যা যা করনীয়, নাবিকরা তাই করেছিল। আমি দাঁড়ির আসনে একটা নরম গদির উপর বসলাম। মাথা বাঁচাতে নৌকার ছাদের নিচে ঢুকলাম। নৌকার ডান দিক থেক আমার মাথার উপর দিয়ে জলের ঝাপটা এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল অন্য দিকে। বেশ অনেকটা দূরে। 
সেই ছেলেটি, ডাক্তারের বাড়ি থেকে যে আমাকে নিয়ে নৌকা অবধি নিয়ে এসেছিল, তাঁর নাম এরিক এরিক্‌সন। ওকে যত দেখছিলাম, ততই ভালো লাগছিল। নাবিকদের দ্বিতীয় জন ছিল নৌকার পেছন দিকে। দাঁড়িদের বসবার জায়গায় মাস্তুলে ঠেস দিয়ে বসেছিল ও। একদম বাচ্চা ছেলে। সদ্য দাড়ি গজিয়েছে লালচে মুখে। আলস্য জড়ান শান্ত মুখ। একদম উদাসীন। জলের ঝাপটা ক্রমাগত আছড়ে পড়ছিল ওর মুখে।
তৃতীয় নাবিক ছিল নৌকার পেছন দিকে। জালে তেল মাখানোর জ্যাকেটটা ভাঁজ করে মাথায় দিয়ে ঘুমাচ্ছিল ও।
অনেকক্ষণ, প্রায় এক ঘণ্টা আমি চুপচাপ বসে ছিলাম। দৃষ্টিতে যা ধরা পড়ছিল আর কানে যা শুনছিলাম, সে সবই মাথায় ঘুরছিল। আমার ঘুম তাড়ানোর পক্ষে ওগুলো ছিল যথেষ্ট। 
লক্ষ করলাম, কেমন করে প্রবল বাতাসের মধ্যে উত্তাল ঢেউ পারি দেয় নৌকা। জোরে টান দিয়ে বেঁধে রাখতে হয় পাল। নৌকার উপর দিকে পালের কোণায় বাঁধা থাকে সুতোর ফাঁস। পালের কাছেই দাঁড়িয়েছিল হর্লফার। পালের সামনের দিকটা দেখাচ্ছিল সুন্দর বাঁকানো একটা লোহার পাতের মত। শক্ত দৃঢ়। দু’টো পালই ধবধবে সাদা। প্রায় স্বচ্ছ। রোসেনবার্গ প্রাসাদে রাখা আদর্শ জাহাজের ভাস্কর্যে হাতির দাঁতের পালের মতন। মাস্তুল খানিক ঝুঁকে আছে। পালের দড়ি গুলো বেহালার তারের মত টানটান বাঁধা। গাছের পাতার মত কাঁপছে নৌকা। নৌকার দু’ধারে জোরে ঝাপটা মারছে ঢেউ। আমার গালে এসে লাগছে। প্রচণ্ড ঝাপটা খাচ্ছি কিন্তু বেশ আরাম লাগছে। দুধ সাদা ঢেউ ভেঙে ভেঙে পড়ছে নৌকার সামনে।
মাঝে মাঝে পালের নিচ দিয়ে দিগন্তরেখা নজরে আসছে। কিন্তু বেশীরভাগ সময়েই ঢেউয়ের পৃষ্ঠ দেশ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে ঢেউয়ের দাপটে নৌকা ডুবতে ডুবতে আবার ভেসে উঠছে। নৌকার পাক খাওয়াটা বুঝতে পারা যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট একটা কোণ বরাবার ঢেউ কেটে কেটে এগিয়ে চলেছে। বেশ মনোরম গতি নৌকার। বড় বড় জাহাজের ভয়ংকর দুলুনি নেই। । 
নৌকার মধ্যে আবার আমাদের স্বাভাবিক কথাবার্তা শুরু হল। এরিক ছেলেটাই সবচেয়ে বেশী বকবক করে। যদিও নৌকার পাটাতনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাও দু’চারটে কথা বলছিল।    হর্লফারকে নিয়ে কথা উঠল। আস্তে কথা বলছিলাম যাতে মানুষটার কানে কিছু না ঢোকে। যদিও তেমন সম্ভাবনা ছিল না। ওই মানুষটা ছিল অনেকটা দূরে, আর সমুদ্রের বাতাস আমাদের কথাগুলো উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। উদ্দিষ্ট মানুষটা চোখের সামনে থাকলে, তাকে নিয়ে ভালো কথাও লোকে সাধারনত গলা নামিয়েই বলে। 
হর্লফারের দিকেই চোখ ছিল আমার। সঙ্গীরা ওর সম্পর্কে যত বেশী বলছিল, ততই হর্লফার সম্পর্কে আমার ধারণা পরিস্কার হচ্ছিল। 
সামনে দৃষ্টি মেলে পালের টানটান দড়িতে হাত রেখে ওই মানুষটা বসেছিল। আমাদের দিকে একটুও তাকায় নি। ওর সম্বন্ধে যা শুনলাম, মোটামুটি এরকম।
গ্রামে জন্ম। ওখানেই বেড়ে ওঠ হর্লফার। গ্রামের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে ও। ওর বাড়ির উল্টো দিকেই সমুদ্রের বাঁধ। ওর গ্রামের মধ্যদিয়েই বড় নদীটা বয়ে গিয়ে সাগরে মিশেছে। গ্রামের নামেই নদীর নাম। 
যখনই সুযোগ পেয়েছে, সমুদ্রে ভেসেছে হর্লফার। হাঙর শিকার করেছে বসন্তকালে। অন্য ঋতুতে কড এবং হ্যাডক। সমুদ্র যাত্রা ছাড়া অন্য কিছুতে ও তেমন আনন্দ পায় না। জলে না ভাসলে ও ঘরের বাইরে নিজের ছোট ক্ষেতের চারদিকে ঘুরে বেড়ায়। অন্য জেলেদের মত বন্দরে কাজ খুঁজতে যায় না। স্থল ভুমিতে কখনও কাজ করেনি মানুষটা। নৌকা নিয়েই থাকে। নিজের সাথে কথা বলতে বলতে নৌকার পরিচর্যা করে। তেল আর আলকাতরায় ভর্তি হয়ে যায় হাত। তখন কেউ ডাকলে বিরক্ত হয়। অল্প দু’চারটে কথা বলে, কখনও গালাগাল দিয়ে ভাগিয়ে দেয়। লোকজন ওর কাছে ঘেঁষতে ভয় পায়।  
তবুও সকলেই ভালোবাসে মানুষটাকে। ওর পরিচিতরা বলে, আগের থেকে অনেকটা ভালো হয়েছে ও। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেপামোটা খানিক কমেছে। পাগলামো দারুণ বেড়েছিল বড় ছেলের মৃত্যুর পর।
যথেষ্ট বড় হয়েছিল ছেলেটা। অনেক সম্ভাবনা ছিল ওর মধ্যে। গ্রামের নাবিকদের মধ্যে ও ছিল সব চাইতে সাহসী। নৌকা নিয়ে পাড়ি দিত বহু দূরে। বন্ধুদের মধ্যে মাছ শিকাড়ে ওই ছিল সব চেয়ে দক্ষ। কিন্তু একদিন দলের লোকদের নিয়ে খাঁড়ির কাছে ঝড়ের মুখে পড়ল ছেলেটি। প্রবল ঝড় আর উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে দাঁড় বেয়ে পাহাড়ে পৌছাতে পেরেছিল ওরা। কিন্তু ততক্ষণে প্রচণ্ড বিদ্ধস্ত সবাই। মূলার পাহাড়ে নামতে চেয়েছিল ওরা। কিন্তু দুর্ভাগ্য! পাহাড়ের কাছে পৌঁছে ওদের নৌকা গেল উল্টে। হর্লফারের ছেলে আর আরেকজন নাবিক ডুবে গেল। বাকী সকলকে বাঁচানো গেলেও হর্লফারের ছেলে আর ঐ নাবিককে বাঁচানো যায় নি।    
এই বিপর্যয়ের পর থেকেই হর্লফার কারুর সাথে কথা বলতো না। প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিল। কান্নকাটি করত এমন নয়। প্রথম কয়েকদিন চোখের জল ফেললেও পরে শান্ত হয়ে গেছিল হর্লফার। নিজের মধ্যে ডুবে থাকত। অন্য ছেলে বা স্ত্রীর ডাকে সাড়া দিত না। মনে করত সর্বস্বান্ত হয়ে গেল সে। নিজের মধ্যে ডুবে থাকত কেবল। কেউ ওর সাথে কথা বলতে ভয় পেত। সান্তনা দিতেও এগিয়ে আসতো না কেউ। 
তারপর এক শীতের দিনে নিজের সাথে কথা বলতে শুরু করল হর্লফার। দিন-রাত শুধু নিজের সাথে বক বক করা। শুনলে মন হত, দুই বা বেশী লোক যেন কথা বলছে। গলার স্বর পাল্টে নাটকীয় ভঙ্গীতে চলত বাক্যালাপ। ওর কথায় পাগলামি কিছু ছিল না। শুধু কী নিয়ে কথা বলছে বোঝা যেত না। 
কখনও কেউ ধীরে যুক্তি পূর্ণ কথা বললে উত্তর দিত হর্লফার। অনেক সময় মনে হত ও যেন সদ্য ঘুম থেকে উঠল। সব সময় অন্যমনস্ক। তবে নিজের কাজ ঠিকঠাক চালিয়ে যেত। 
ছেলেকে নিয়ে কোন কথা বলতো না। আপনমনে শুধু নিজের দুঃসাহসিক কাজের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলে যেত। খানিক অতিরঞ্জিত ঘটনা, কোনটা আবার পুরোটাই মনগড়া। কখনও ভবিষ্যতে কী করবে তাই নিয়েই বকবক করত। আবার কখনও কী করেছিল অতীতে বা ভবিষ্যতে কী করতে চায়, তাই বলে যেত। বর্তমান প্রসঙ্গ নিয়ে কখনও কিছু বলত না। 
‘হর্লফার পাগল হয়ে গেছে’ এই কথা রাষ্ট্র হবার আগের ঘটনা এসব। দীর্ঘ সময় ওর সাথে কেউ সমুদ্র যাত্রায় যেতো না। তবে এ সব কাহিনী এখন অতীত। বলতে বলতে এরিক হাসল। তারপর বলল, ‘এখন ওর সাথে অনেকেই যেতে চায় কিন্তু সবাইকে সঙ্গে নিতে পারে না ও’। 
‘ও কি অনেক মাছ শিকার করতে পারে’? 
‘হ্যাঁ পারে তো! কখনও ও ব্যর্থ হয় না’। 
‘তাহলে নিশ্চয় ও খুব পয়সা করেছে’?
‘ঠিক জানি না। তবে ও কারুর উপর নির্ভর করে না। নিজেই নৌকার মালিক। ছিপ বঁড়শী কপিকল—যাবতীয় সরঞ্জাম ওরই। তবে কি জানো, বুড়ো মানুষটা প্রচুর টাকা উড়িয়ে দেয়’। মাস্তুলে দাঁড়িয়ে থাকা অরেকজন হাত দিয়ে মুখের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া জলের ঝাপটা মুছতে মুছতে বলল। তারপর ওরা মূলার দ্বীপ নিয়ে কথা শুরু করল। সামনের সপ্তাহ ওখানে কেমন ভাবে কাটাবে তাও জানাল।  
এরিক বলতে লাগলো, ‘মূলার একটা পরিত্যক্ত দ্বীপ। সমতল থেকে পাহাড় চূড়া অবধি গোটাটাই পাথর। শরতের ঝড়ে দ্বীপের দখল নিয়ে নেয় সমুদ্র। দ্বীপের স্থলভূমি জুড়ে তখন সমুদ্রের ঢেউ। দ্বীপে পৌঁছে প্রথম কাজ, আগের বছরের ফেলে যাওয়া জিনিষপত্র যোগাড় করে থাকবার আশ্রয় তৈরি করা। দূরে সরে যাওয়া কাঠ যোগাড় করে ঘরের ছাদ বানানো। তারপর ছাদের মাথায় সমুদ্রের লতা গুল্ম চাপিয়ে দেওয়া। আবহাওয়া যেমনই হোক, রাত কাটাবার আশ্রয় এরকমই। প্রকৃতির দেওয়া একটা ডাঙা খুঁজে পাওয়া গেছে, অতএব কোন সমস্যা নেই। যদিও জায়গাটা এত মারাত্মক যে রাত জেগে নৌকা পাহারা দিতে হয়। 
প্রত্যেক সধ্যায় সমুদ্রে নৌকা ভাসিয়ে কোন মাছ ধরবার স্পটে যাত্রা করতে হয়। মাঝ রাত্তিরের পরেই হাঙ্গর গুলো ছড়িয়ে দেওয়া চাড় খেতে ছুটে আসে। রামে ভেজানো ঘোড়ার মাংস এবং পচা সিল মাছের চর্বির গন্ধে ছুঁটে আসে লোভী হাঙরের দল। যা পায় তাই গিলতে থাকে যতক্ষন না বুঝতে পারে লোভনীয় খাবার গুলো গাঁথা আছে লোহার হুকের মধ্যে। দাঁত দিয়ে হুকের দণ্ড কামড়ানো শুরু করে। খুব অল্প ক্ষেত্রেই হাঙ্গর গুলো ফাঁদ কেটে বেরিয়ে যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওদের চেষ্টা ব্যর্থ হয় কারণ হুকের সাথে লাগানো থাকে লোহার শিকল। অনেক সময় হুকে আটকে গেলেও শিকল কেটে বেরিয়ে যায় ওরা। মুক্তির আনন্দে পেটুক এই জীব গুলো অন্য হুকে লাগানো মাংসের দিকে ছুটতে থাকে। আর ওখানেই আবার আটকে যায়। এমন সম্ভাবনা আছে বলেই হুক গুলো ওদের দিকে ঘোরানো থাকে। প্রচণ্ড ধৈর্য নিয়ে হাঙর শরীরে মোচর মারে যাতে নৌকার পাশাপাশি চলতে পারে। আর দ্বিতীয় হুকে দ্রুত আটকে যায়। সন্ত্রস্ত, সবুজ আর শুয়ারের মত চোখওয়ালা হাঙর গুলো প্রচণ্ড রাগে অত্যাচারির দিকে তাকিয়ে জ্বলে ওঠবে। তারপর পাগলের মত প্রচণ্ড রাগে দাঁত বের করে কামড়ে ধরবে সবকিছু। এমন সাংঘাতিক লড়াই শুরু করবে মনে হবে যেন নৌকাটাই উল্টে যাচ্ছে।  
বহু শতাব্দী ধরে আমাদের পূর্বপুরুষরা এ ভাবেই খোলা নৌকায় হাঙর শিকার করেছে। কিন্তু এখনকার দিনে মানুষ পছন্দ করে স্টিমারের ডেক থেকে শিকার করা। হর্লফার পুরনো পদ্ধতিই ভালোবাসে। ওর জেলাতেও প্রাচীন টেকনিক কেউ পছন্দ করে না। অনেক বড় বড় হাঙর ধরেছে হর্লফার’। 

কথা শেষ করে নৌকার পেটের ভেতর থেকে এরিক একটা হুক তুলে নিয়ে এসে আমার হাতে দিল। নাবিকগুলো ওদের শিকারের রোমাঞ্চকর বহু ঘটনা নিয়ে এত রকম গল্প বলল যে আমি ওদের সাথে পাথুরে দ্বীপে থাকবার ইচ্ছে প্রকাশ করলাম। হঠাৎ এরিক কনুই দিয়ে গুঁতো মারল আমাকে।
আমাদের কথাবার্তা থেমে গেল। পিছন ফিরে তাকালাম। দেখি হর্লফার নিজের মনে বিড়বিড় করছে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে আমরা শুনতে লাগলাম।
পাথুরে মূর্তির মত হাল ধরে বসেছিল হর্লফার। সুদূরে নিবদ্ধ চোখ। মুখে অদ্ভুত প্রশান্ত হাসি। অনেকক্ষণ চুপ থেকে ও আবার কথা বলল। একদম স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর। ‘আমি যখন রণতরীতে কাজ করছিলাম…’
একটা বেশ অহঙ্কারের হাসি ওর মুখে। মনে হচ্ছিল অতীতের কোন স্মৃতি, বেশ মজার কোন ঘটনা মনে পড়েছে ওর।
‘হ্যাঁ, আমি যখন রণতরীতে কাজ করতাম, আমার ছেলে…’
ওর কথায় মনে হচ্ছে যেন হালের ওপাশে কেউ বসে আছে। যার সাথে দুঃসাহসিক কোন অভিযানে গিছিল ও।
‘ও কি রণতরীতে কখনও কাজ করেছে’? আমি গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
‘কখনও করে নি’। এরিক বলল, ‘আমারা সবসময় ওকে চোখে চোখে রাখতাম। আমার মনে আছে, কাজের সময় ওর শরীর কেমন কেঁপে কেঁপে উঠত। চোখ বন্ধ। মনে হ’ত ঘুমাচ্ছে। কিন্তু কপালের সামনের দিক আর চোখের তারা সবসময় ঘুরত। যেন চাক্ষুষ ঘটনাই বলছে’।
আমি কোন কথা বলতে পারলাম না। চোখেও সবকিছু ঝাপসা দেখছি। বুঝতে পারলাম, হাল ধরে আছে যে মানুষটা, যার হাতে আমাদের জীবন, সে একটা উন্মাদ। মাঝিরা পরস্পরকে খোঁচা মেরে খলখল করে হাসতে লাগল। এরকম ব্যাপার স্যাপার তারা আগেও দেখেছে।
হর্লফার বলে চলেছে, ‘অগভীর জল কেটে সে এগোচ্ছিল। সোজা পাহাড়ের দিকে। তারপর বিপর্যয়। সর্বনাশ হয়ে গেল। বড় ধুর্ত ছিল সে। কালো চকচকে, দু’পাশে সাদা ছোপ। দু’ধারে দশটা লড়াকু মুখ। সামনের দিকে একটা বেঁকানো সুন্দর মূর্তি। আমার মনে হয় ওটা না-পাওয়াটা এক রাজার কাছেও আফসোসের বিষয়। ওটা এতই সুন্দর ওর ডাকে সারা না দিয়ে পারলাম না। আমি যাওয়াতে ওরা খুবই খুশী হল।
‘পাল খাটাও’। আমি চিৎকার করে উঠলাম, ‘মাঝি মল্লা পাল খাটাও’। সোনালী চুলের অফিসার মরার মত ফ্যাকাসে হয়ে আছে তখন। নীল জ্যাকেট গায়ে ছেলেরা ভয়ে লুটিয়ে পড়েছে ডেকের উপর। ছেলারা শোন, আমি দু’হাতে তলোয়ার ঘোরাইনি তখন। হুংকার ছাড়লাম, ‘পালের উপরটা উঁচু করে ধর’। ওরা আমার কথাটা শুনে আদেশ মান্য করল। আদেশ না-শুনে পালাবার উপায় ছিল না। আবার হুমকি দিলাম, শয়তানের নামে বলছি, ‘পাল উঁচু কর’।
হাত দিয়ে শক্ত করে দড়ি ধরে হর্লফার উঁচু হয়ে বিমের কাছে উঠে এল। এরিকের হাসতে হাসতে ফেটে পড়ার অবস্থা। আপ্রাণ চেষ্টা করছে আওয়াজ চেপে রাখবার। কিন্তু হাল ধরে থাকা লোকটা নিজেকে সংযত রাখতে পারল না।
হর্লফার দু’পাশে মাথা নাড়ছে। মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে বলে চলেছে, ‘ও কাজটা করতে পারল, বুঝলে। সমুদ্রে ঢুকে গেল। সোজা সমুদ্রে গিয়ে পড়ল। এখন ইচ্ছে হলে একটু বিশ্রাম নিতে পারে। তাতে যুদ্ধ জাহাজের কোন ক্ষতি হবে না। আইসল্যান্ডের লোকের ভাষায়, ‘দাঁড় আটকানোর আংটা অবধি বুদবুদ উঠলেও’ কোন পরোয়া নেই। যদিও কিছু ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ উঠবে। কিন্তু শুনতে ভালোই লাগবে। কাঠের পাটাতনটা তো পচা নয়। যাইহোক, আমরা এই জাহাজেই যাত্রা করবো। শুধু সামনে এগিয়ে যাবো। শুধুই সামনে’।
হর্লফারের গলার স্বর নিচে। কথা বলছে ধীরে। ‘ততক্ষণে আমরা খাঁড়ি ছাড়িয়ে দূরে চলে এসেছি। খুব এলোমেলো ঢেউ উঠছে। জোয়ারের স্রোতে ফেঁপে উঠেছে সমুদ্র। হাল ধরে এগিয়ে চলা ভীষণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সহজাত প্রবৃত্তিতে সে কাজটা নিপুণ দক্ষতায় করে চলেছে হর্লফার। একবারও উপরে মুখ তুলে তাকায় নি। তবুও সব কিছুই ওর নজরে ধরা পড়ছে। বড় বড় ঢেউগুলো আছড়ে পড়বে সেটা যেন আগে থেকেই আঁচ করে কাটিয়ে যাচ্ছে। মসৃণ ভাবে নিচে নেমে আবার উপরে উঠে ঢেউয়ের মধ্যে দিক ঠিক রেখে নৌকা এগিয়ে চলেছে। ঢেউ গুলোর যেন বোধ শক্তি আছে। একটা ঢেউও নৌকার উপর আছড়ে পড়ে নি। নৌকা মাথায় নিয়ে সফেন ঊর্মিমেলা প্রবল গর্জনে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু একদম শেষের দিকে একটা বড় ঢেউ উল্টে দিল নৌকা। ভয় পাওয়া হরিণীর মত অবস্থা নৌকার। দ্রুত হাল ঠিক করে নিল। রেসের ঘোড়ার মত নমনীয় ভঙ্গি। সব কিছু শাসন করছিল হর্লফারের অতিপ্রাকৃত স্বত্বা।
হর্লফার ছিল অন্য জগতে। সেই যুদ্ধ জাহাজে। নিজের নয় কিন্তু সেই জাহাজের হাল ধরতে হয়েছিল তাকে। বিশাল জাহাজ, আকাশ ঢেকে দেওয়া পাল। দু’পাশে দশটা করে কামান। একটা সাংঘাতিক ব্যাপার। বিস্ময়কর যুদ্ধ জাহাজ। অনেকগুলো লোহার তার দিয়ে তৈরি বিশাল পাল। পতাকা টাঙানোর দড়িও মাস্তুলের সাথে জোড়া দেওয়া। এক সাথে থাকলেও প্রত্যেকটাই আলাদা।
আমাদের সামনের পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে মনে হল, একটা পর্দা অন্য পাশে সরে গেল। মুলাদির উপত্যকা আমাদের চোখের সামনে ফুটে উঠল। পাথর ছড়ানো সমুদ্র তট। পর্বতের গ্রাম্য বাড়িগুলোর মাথা দেখতে পাওয়া পাচ্ছে।
নৌকা এবার খাঁড়ির ভিতর ঢুকে গেল। বাইরের চেয়ে জায়গাটা অনেক শান্ত।
‘দড়ি দরা খুলা ফেল’, হর্লফার আদেশ করল।
এরিক দ্রুত এগিয়ে এসে হর্লফারের হাতে ধরা একদিক খোলা পালটা নিজের হাতে নিল। পালের একটা দিক হর্লফারের হাতে। আমার মনেহল, হর্লফার ভাবছে, আঁটসাঁট পাল ঢিলে রেখে খাঁড়ির ভিতর যাওয়াই বোধহয় নিরাপদ। কারণ ওখানে বেগে দমকা বাতাস বইছে।
‘তুমি কি ভিতরে ঢুকবে ভবছো’, যে লোকটা এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিল, নাকে নস্যি নেওয়া স্বরে কথাটা বলল।
‘চুপ করে থাকো’, রাগে চিৎকার করে উঠল হর্লফার। বেগতিক বুঝে লোকটা চুপ করে গেল। কেউ কোন প্রশ্ন করল না। সবার কাছেই প্রত্যেকটা মুহূর্ত এখন খুব উদ্বেগের।
আমরা পাহাড় চূড়ার দিকে নিঃশব্দে তাকিয়ে ছিলাম। সাদা ফেনায় ঢাকা পাহাড় চূড়া। একটার পর একটা ঢেউ নৌকার নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। নৌকাটাকে উপরে তুলে ধরছিল যেন আমাদের ঢেউয়ের খেলা দেখাচ্ছে। নৌকা যেই ঢেউয়ের মাথা থেকে নিচে নেমে ডুবে যাচ্ছে, পরের ঢেউ আমাদের পাড়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কী ভাবে যে ছোট একটা নৌকা এগিয়ে চলে, ভাবলে অবাক হয়ে যেতে হয়। তবে এই ঘটনার একটা ব্যাখ্যা এখনি পেয়ে যাবো। দেখতে পাবো নৌকার সব লোকজন যন্ত্রপাতি, সবই হর্লফারের ইচ্ছে মত চলবে। পালের বাতাস বের করে দিল হর্লফার। খুব কায়দা করে হাল ধরে রেখে নৌকাটা একদম স্থির করে রাখল। নৌকার মাথার বিমের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল হ্রলফার। স্থির দৃষ্টি নৌকার সামনের দিকে।
নিজের মনে তখন বক বক করছিল না হর্লফার। যুদ্ধজাহাজেও ছিল না। ছিল নিজের নৌকায় দাঁড়িয়ে। ও ভালো করে জানে, সবাই ওর উপর কতটা নির্ভরশীল।
কিছুক্ষণ থামবার পর ঠিক সুযোগ বুঝে হর্লফার প্রচণ্ড বেগে নৌকা ছুটিয়ে দিল। এরপরই সেই মুহূর্তটা এল। আমি এবং সম্ভবত নৌকার সকলেই জীবনে ভুলতে পারবো না। প্রবল ভয়ে বিহ্বল হয়ে যাওয়া শুধু নয়। যুদ্ধের আগে উত্তেজনার চরম মুহূর্ত। যদি অন্য কোন উপায় থাকতো তাহলে পাহাড়চূড়ার উল্টো দিকে দৌড় লাগাতাম আমি।
শক্ত হাতে হাল ধরে হর্লফার দাঁড়িয়ে ছিল। চোখ ঘুরছে এপাশওপাশ। কখনও পালের উপর, কখনও পাল ছাড়িয়ে দূরে দৃষ্টি। ঘন ঘন তামাক চিবানো আর থুথু ফেলা চলছে। চোখের ঘন ঘন পাতা পড়া নেই যেমন দিনের শুরুতে দেখা গেছিল। অতি প্রশান্ত দেখাচ্ছে ওকে। ওর এই স্থির মূর্তি দেখে আমারাও বেশ আশ্বস্ত।
পাহাড়ের দিকে যতই এগোচ্ছি, একটা বিশাল ঢেউ আমাদের পেছন পেছন এগিয়ে আসছে। চোখের কোণ দিয়ে ঢেউটাকে দেখল হর্লফার। দাঁত বের করে খিস্তি মারল। এগিয়ে আসা ঢেউ বিশাল উঁচু হয়ে পাহাড়ের দিকে ছুটছে। ঠিক পাহাড়ের মুখে উঁচু ঢেউটা। ঢেউয়ের বিশাল মাথাটা দারুন স্বচ্ছ। সোজা হয়ে ঢেউ আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। যেমন দেখলাম, ঢেউয়ের চূড়া থেকে নৌকা নিচে নেমে গেল। সমুদ্র অনেক নিচে বহু গভীরে টেনে নিয়ে গেল আমাদের নৌকা।
নৌকাটা পেছনে ভর দিয়ে একদম স্থির হয়ে গেল। মনে হোল আমাদের চারদিকে সমুদ্র যেন ফুটছে। সমুদ্র পারের লতাগুল্ম সেদ্দ করে সুপ বানিয়ে ফেলেছে।
হঠাৎ এক বরফ-ঠাণ্ডা চাবুক আমার মুখে সপাটে আঘাত করল। ধাক্কার চোটে সামনে ছিটকে পড়ে যাচ্ছিলাম। কোন রকমে পালের দড়ি ধরে সামলে নিলাম।
‘সামনের পাল খাটিয়ে দাও’, হর্লফার চিৎকার করল।
আমি সামনের দিকে যখন মুখ তুলতে পারলাম, নজরে এল নৌকার মাথায় পাল উড়ছে নিখুঁত ভাবে। গভীর জলরাশির বিপদকে পাত্তা না দিয়ে পাহাড়ের দিকে নৌকা এগোচ্ছে দ্রুত। সবার চোখে মুখে আনন্দ।
কিন্তু সমুদ্রের কনকনে ঠাণ্ডা জল আমার জামার ভিতর দিয়ে খোলা পিঠ বেয়ে নিচে নামছে। তাতে আমার তেমন কষ্ট নেই। যা ঘটল যেন আমার পিঠে বিদায় চুম্বন এঁকে দিল সাগর তরঙ্গের কনিষ্ঠা কন্যা।
অপ্রত্যাশিত শান্ত সমুদ্রে ধীর গতিতে এগিয়ে চলা নৌকা পাড়ে পৌঁছে নির্দিষ্ট জায়গায় থামল। পাড়ে দাঁড়িয়ে সব নজর করছিল দ্বীপের দু’জন কর্মী। একজন চিৎকার করে বলল, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম হর্লফার ছাড়া কে আর হবে! আজকের এমন আবহাওয়ায় দ্বীপে এসে নামা কি যার তার কর্ম’!
হ্রলফার উত্তর দিল না কিন্তু ওর গোটা মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ল। সাবধানে হাল হাতে নিয়ে উঁচু করে তুলে রাখল যাতে নিচে নৌকার পেছন দিকে ধাক্কা না লাগে।
মুলারের কৃষক অধিবাসীরা আমাদের রাজকীয় অভিনন্দন জানাল। আমার পরবর্তী যাত্রার জন্য সমস্ত আয়োজনের ব্যবস্থা হয়ে গেল ওখানে। যদিও আইসল্যান্ডের দূরবর্তী জায়গাগুলোতে, পর্যটক কম বলে, আতিথেয়তার সুযোগ তেমন ভাবে তৈরি হয় নি।
আমারা সকলেই মালপত্র নিয়ে নেমে এলাম। নৌকা জলের উপর থেকে টেনে তোলা হোল। সকলেই খুশী। চার ঘণ্টা পা মুড়ে নাগাড়ে বসে থাকবার পর এতক্ষনে সোজা হবার সুযোগ।
আমি এগিয়ে গেলাম একটু দূরে যেখানে নিচু জায়গায় সমতল একটা পাথর খন্ডে হর্লফার দাঁড়িয়েছিল। অভিনন্দন জানিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কত দিতে হবে তোমাকে’?
‘মানে? তুমি পারিশ্রমিকের কথা বলছো’? রাগী মুখ করে হর্লফার বলল, ‘থামো, এক মিনিট দাঁড়াও’।
ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের কোন সৌজন্য না দেখিয়ে, যদিও একদিনের আলাপ আমাদের, বেশ রুঢ় গলায় উত্তর দিল ও। গোটা মুখ জুড়ে বিরক্তি। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব ছোট করে বলল। উত্তরটাতে ওর প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা দুটোই বেড়ে গেল।
‘এই ভ্রমণের খরচ জানতে চাও? একটু দাঁড়াও’।
মনে হল অন্য জগতে ঘুরছে ওর ভাবনা। ও তালি দেওয়া পাজামার দড়িটা খুলল। ভিতরের পকেট থেকে বেড় করে আনল সরু করে কাটা তামাকপাতা। একটা কামড় দিল। তারপর ছোট একটা টুকরো টুপির ভিতর রাখল। ধীরে, ইচ্ছে করেই যেন বেশ সময় নিয়ে ও পাজামার দড়িতে গিঁট দিল।
‘আমার মনে হয় এই দ্বীপে নামবার আগে তুমি কিছুটা ভিজে গেছিলে’।
‘না, তেমন কিছু নয়। এখানে তো ভিজে আবহাওয়ায় এমনি এমনি ভিজে যায়।’। আমি বললাম।
‘…এমনি এমনি ভিজে যায়। কথাটা বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল হর্লফার। তামাক পাতা চিবোচ্ছে। দ্বীপে ঢুকবার গেটের দিকে চোখ। মনে হল আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে ভুলে গেল ও।
‘এখানে তো এমনি এমনি ভিজে যায়’। কথাটা আবার বলল ও। প্রত্যেকটা কথায় জোর দিয়ে বলল। আমি সোজা ওর দিকে তাকিয়ে। দেখি ওর চোখ দিয়ে টপ টপ জল ঝরছে। ওর শরীর কাঁপছে ঠিক আগের মতই।
‘দেখ, অনেক নৌকা বাঁধা আছে এখানে। অনেকেই আর এগোতে পারে নি। কিন্তু আমি ভেসেছি দ্বীপের ভিতরে বাইরে সব জায়গায়। কথায় বলে, রূপার বাটি ডুবে যায় কিন্তু কাঠের নৌকা ভেসে চলে। একসময় আমিও এখানকার পাহাড় থেকে ভেসে বাইরে যেতে পারতাম না। কিন্তু একজন ছিলেন যে আমার চাইতে অনেক বেশী করে দ্বীপটাকে চিনতো। তার কাছ থেকেই এই দ্বীপটা চিনতে পেরেছি’।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে হর্লফার দ্বীপের দিকে চোখ মেলে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর চোখের জল মুছে বলল, ‘দীর্ঘ এই যাত্রা পথের ভাড়া জানতে চাইছ? শোন, কোন দাম দিতে হবে না। পারশ্রমিক না-নিয়েই কাজটা করি আমি’।
‘বিনা মূল্যে’? কি বলছ তুমি?
‘কোন মূল্য দিতে হবে না যেহেতু তুমি ভিজে গেছো। হাসি মুখে চোখের জল মুছতে মুছতে হর্লফার বলল, ‘এখানকার নিয়ম, নৌকার মাঝি পারাপার করতে গিয়ে কোন যাত্রীকে যদি ভিজিয়ে দেয়, এমন কি পায়ের পাতায় যদি জল লাগে, সেই মাঝির খাটুনি বিফলে গেল’।
আমি বারবার অনুরোধ করলাম পারাপারের মুল্য নিতে, কিন্তু হর্লফার রাজীই হল না। খানিক পরে মুখটা গম্ভীর করে ও বলল, ‘যাত্রার কোন মুল্য আমি নিচ্ছি না। এই পাহাড়ি দ্বীপে বহু মানুষকে নিয়ে এসেছি আমি এবং কারুর কাছ থেকেই একটা পয়সা নিই নি। তবে যদি তুমি এই দ্বীপে আর কখনও পা দাও, আর হ্রলফার যদি তার ঘরে থাকে, তাহলে চলে এসো। একসাথে কফি খাবো, রকসুগার মেশানো কালো কফি, সঙ্গে এক ফোঁটা ব্র্যান্ডি’।
আমি কথা দিলাম, এখানে এলে ওর ঘরে গিয়ে একসাথে কফি খাবো।
বিদায় দেবার আগে দু’হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল হর্লফার। পাথর খণ্ডের উপর দাঁড়িয়ে আমি, সঙ্গে মূলার দ্বীপের দু’জন চাষি। দূর থেকে দেখছি হর্লফার এবার কী করে।
ওর সঙ্গীরা পাল গুটিয়ে নিয়ে দাঁড়ের কাছে বসেছে। বৃদ্ধ হর্লফার নৌকার বিমের কাছে হাল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। ওরা দাঁড় বাইছে না, উঁচু করে ধরে সুযোগের অপেক্ষা করছে। হঠাৎ ঢেউয়ের পড় ঢেউ পাহাড়ের দিক থেকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগল। দুধের মত সাদা ঊর্মিমালা পাথুরে তটের সব খানে ছড়িয়ে পড়ল।
গভীর পর্যবেক্ষণে ডুবে আছে হর্লফারের চোখ। অপেক্ষা করছে বন্য প্রাণী যেমন শিকারে লাফ দেবার আগে প্রস্তুতি নেয়। মনে হচ্ছে অতীত কালের ভাইকিং যোদ্ধারা যেন এখনই লড়ায়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
ঢেউয়ের গর্জনে হর্লফারের স্বর চাপা পরে গেল। দাঁড় হাতে লোকজনকে জোর গলায় ও কিছু নির্দেশ দিচ্ছিল। ওরা অভ্যস্ত হাতে দাঁড়ে টান মারল আর নৌকা তখন তরতরিয়ে ছুটছে।
পাহাড়ের ঠিক মুখে বিশাল একটা ঢেউ প্রাচীর তুলে ওদের সামনে এসে দাঁরাল। নিঃশ্বাস চেপে আমরা ভয়ংকর দৃশ্যটা দেখতে লাগলাম। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল হর্লফার সঙ্গে সঙ্গে মাঝি-মাল্লারা দাঁড় হাতে নৌকার পাশে জরো হল। জলচ্ছাসের কবলে পড়া সলমন মাছের পাখনার মত অবস্থা!
ঢেউয়ের উপর আছড়ে পড়ে ঘূর্ণির মধ্যে নৌকা অদৃশ্য হয়ে গেল। শুধু মাস্তুলটা চোখে পড়ছিল। অনেকক্ষণ পর যখন নৌকা নজরে এল, ঢেউয়ের ধাক্কায় অনেক দূরে ছিটকে গেছে পড়েছে ওটা।
নৌকার বিমের নিচে হর্লফার দাঁড়িয়ে। এমন ভঙ্গি যেন কিছুই ঘটে নি। এখানেই সকাল থেকে দাঁড়িয়ে, ঠিক যুদ্ধ জাহাজে যেমন দাঁড়িয়েছিল।
দু’জন মাল্লা পাল খাটাতে শুরু করল। আরেক জন নৌকার হাল ধরল। এবার আরও জোরে ছুটতে লাগল নৌকা।
হর্লফারকে নৌকায় অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখে আমার গলার কাছে কি যেন একটা দলা পাকিয়ে এল। মনে মনে বললাম, ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন। সত্যি তোমারই যোগ্যতা আছে আইসল্যান্ডের ঠাণ্ডা জলস্রোতের মাথার উপর দিয়ে দুর্দান্ত এক যুদ্ধ জাহাজে চেপে এগিয়ে চলবার।
সুন্দর ভঙ্গিমায় সিগালের মত দু’পাশে পাখা বিস্তার করে ঢেউয়ের উপর দিয়ে ছুটছে হর্লফারের নৌকা। চোখের আড়ালে চলে যাবার আগের মুহূর্ত অবধি স্থির দৃষ্টিতে ওদিকে তাকিয়ে রইলাম।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ড.সৌমিত্র কুমার চৌধুরী, ভূতপূর্ব বিভাগীয় প্রধান ও এমেরিটাস মেডিক্যাল স্যায়েন্টিস্ট, চিত্তরঞ্জন জাতীয় কর্কট রোগ গবেষণা সংস্থাণ, কলকাতা-700 026. প্রকাশিত গ্রন্থ- বিজ্ঞানের জানা অজানা (কিশোর উপযোগী বিজ্ঞান), আমার বাগান (গল্পগ্রন্থ), এবং বিদেশী সংস্থায় গবেষণা গ্রন্থ: Anticancer Drugs-Nature synthesis and cell (Intech)। পুরষ্কার সমূহ: ‘যোগমায়া স্মৃতি পুরস্কার’ (২০১৫), জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকায় বছরের শ্রেষ্ঠ রচনার জন্য। ‘চৌরঙ্গী নাথ’ পুরস্কার (২০১৮), শৈব ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাসের জন্য। গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য স্মৃতি পুরষ্কার (2019), পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তি দফতর থেকে), পঁচিশ বছরের অধিক কাল বাংলা ভাষায় জনপ্রিয় বিজ্ঞান রচনার জন্য)।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!