তিনি ছিলেন নাৎসি জার্মানির স্বৈরশাসক

শামস ইমরান সৌরভ
শামস ইমরান সৌরভ
5 মিনিটে পড়ুন
এডলফ হিটলার

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একজন স্বেচ্ছাসেবক সৈনিক হিসেবে তিনি জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেই যুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে সেকেন্ড ক্লাস আয়রন ক্রস লাভ করেন। ১৯১৮ সালের আগস্টে তাকে ফার্স্ট ক্লাস আয়রন ক্রস দেয়া হয়। একজন সামান্য কর্পোরালের এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।

পরবর্তীকালে তিনি অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে ভাইমার প্রজাতন্ত্রে নাৎসি পার্টির নেতৃত্ব লাভ করেন। এরপর মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, ইহুদি বিদ্বেষ ও সমাজতন্ত্র বিরোধিতা ছড়াতে থাকেন। এভাবেই একসময় তুমুল জনপ্রিয় নেতায় এবং জার্মানীর ভাগ্যবিধাতায় পরিণত হন।

তার অনেক পর ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানী পোল্যান্ড অধিকার করে এবং ফলশ্রুতিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আর এভাবেই তিনি নিজ হাতে রচনা করেন মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ যাবত কাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের।

নাম বলার দরকার নাই, আপনারা সকলেই বুঝেছেন আমি কার কথা বলছি। হ্যাঁ, তিনি এডলফ হিটলার। আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল ইতিহাসের খলনায়ক নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন।

hit2 তিনি ছিলেন নাৎসি জার্মানির স্বৈরশাসক
বার্লিনের রাইখ চ্যান্সেলরি, এরই নিচের বাংকারে আত্মহত্যা করেন হিটলার।

হিটলারের অদ্ভুত বাসনা ছিল। তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবী থেকে ইহুদী নামক জাহান্নামের কীটকে চিরতরে বিদায় করতে হবে। কারণ তার মতে জার্মানীর উন্নয়ন অগ্রগতী এবং ১ম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয়ের একমাত্র কারণ কমিউনিস্ট এবং ইহুদীদের ষড়যন্ত্র, আর এজন্য তিনি গ্রহণ করেন এক মাস্টার প্ল্যান। যেটা ইতিহাসে হলোকস্ট নামে পরিচিত। আর এই মাস্টার প্ল্যানকে সামনে রেখে হত্যা করা হয় ৬০ লক্ষ ইহুদীকে। হিটলারের ইচ্ছা ছিল ইহুদীদের ব্যবহার্য দ্রব্য সামগ্রী দিয়ে তিনি তৈরি করবেন এক জাদুঘর। আর সেই জাদুঘরের সামনে বড় অক্ষরে লেখা থাকবে ‘ইহুদীদের ব্যবহার্য সামগ্রী, যারা পৃথিবী থেকে বর্তমানে বিলুপ্ত’!!

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!! তিনি যাদের সামগ্রি দিয়ে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, সেটা না হয়ে হিটলার নিজেই ইতিহাসের জাদুঘরে বন্দী হলেন!!

ইহুদীদের প্রতি অত্যাচার ও গণহত্যার এসব ঘটনা বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর অনেক আগেই নাগরিক সমাজ থেকে ইহুদিদের উৎখাতের জন্য জার্মানিতে আইন প্রণয়ন করা হয়। জনাকীর্ণ বন্দী শিবিরে রাজনৈতিক ও যুদ্ধবন্দীদেরকে ক্রীতদাসের মতো কাজে লাগাতো যারা পরে অবসন্ন হয়ে রোগভোগের পর মারা যেত।

আউশবিৎযে হত্যাকান্ড:
জার্মানির স্বৈরশাসক এডলফ হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে কুখ্যাত মৃত্যু শিবিরটির নাম আউশবিৎজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কেবল এই একটি ক্যাম্পেই হত্যা করা হয় অন্তত ১১ লাখ মানুষকে, যাদের বেশির ভাগই ছিল ইহুদি। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে ক্যাম্পটি মুক্ত করে সোভিয়েত রেড আর্মি। জার্মান বাহিনীর নির্যাতনের মূল কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হলেও আউশবিৎজ কিন্তু পোল্যান্ডে অবস্থিত।

১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড দখল করে নেওয়ার পর সেখানকার রাজনীতিবিদদের বন্দী করে রাখার জন্যই মূলত আউশবিৎজ ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠা করা হয়। নির্যাতন ক্যাম্প ও সেনা ছাউনি তৈরির জন্য পোল্যান্ডের শিল্প নগরী অশউইসিমকে বেছে নেয় নাৎসি বাহিনী। তারা এ শহরের নাম পরিবর্তন করে রাখে আউশবিৎজ। শহরটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৪৮টি নির্যাতন ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ক্যাম্পগুলো সম্মিলিতভাবেই আউশবিৎজ নামে পরিচিত।

১৯৪০ সালের ১৪ জুন প্রথম রাজনৈতিক বন্দীদের আনা হয় এ ক্যাম্পে। তবে আউশবিৎজে গণহত্যা শুরু হয় ১৯৪২ সালের জানুয়ারিতে। ঐ জানুয়ারিতে হিটলার ইউরোপীয় ইহুদিদের হত্যার মাধ্যমে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ এর সিদ্ধান্ত নিলে লাখ লাখ বন্দীকে আউশবিৎজে আনা হয়।

হিটলারের কুখ্যাত এসএস বাহিনী ক্যাম্পটি নিয়ন্ত্রণ করত। আউশবিৎজে গণহত্যার প্রধান উপায় ছিল গ্যাস চেম্বার। একসঙ্গে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হতো এসব গ্যাস চেম্বারে। শুরুতে কেবল পোলিশ ইহুদিদের হত্যা করা হলেও পরে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, যুগোস্লাভিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, নরওয়ে, গ্রিস, ইতালি, হাঙ্গেরিসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকেও ইহুদি বন্দীদের হত্যার জন্য আনা হতো এ ক্যাম্পে। প্রতিদিনই ট্রেনভর্তি করে বন্দীদের আনা হতো আউশবিৎজ। মাত্র ৩ বছরে এ ক্যাম্পে হত্যা করা হয় অন্তত ১১ লাখ মানুষকে।

১৯৪৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আউশবিৎজ পাশের বিরকেনাও শহরেও ডেথ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে নাৎসিরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর ১৯৪৫ সালের শুরু থেকেই ডেথ ক্যাম্পগুলো ধ্বংস করতে শুরু করে জার্মান বাহিনী। লক্ষ্য ছিল, নির্যাতনের চিহ্ন মুছে ফেলা। পোল্যান্ডের সোবিবর, ত্রেবি্লঙ্কা, বেলজেকসহ অন্যান্য ডেথ ক্যাম্প প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে সফলও হয় নাৎসিরা। তবে বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত আউশবিৎজ ধ্বংস করতে পারেনি তারা।

১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সোভিয়েত সেনারা ক্যাম্পটি মুক্ত করে। এ সময় মাত্র সাত হাজার বন্দীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ১৯৪৭ সালে আউশবিৎজ ক্যাম্পের জায়গায় ‘আউশবিৎজ-বিরকেনাও স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করে পোল্যান্ড। তখন থেকেই হিটলারের নৃশংস নির্যাতনের জীবন্ত চিহ্ন হয়ে রয়েছে আউশবিৎজ। আর হিটলার স্বস্ত্রীক আত্মহত্যা করে ইতিহাসের খলনায়কে পরিণত হন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
এডভোকেট, জজ কোর্ট, ঢাকা।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!