হার না মানা এক যোদ্ধা নাটোরের প্রতিবন্ধী মিজান

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
3 মিনিটে পড়ুন

একটি পা ও একটি হাত নেই। ঘোড়ার গাড়িতে অন্যের জমি থেকে ধান বহণ করে সংসার চালায় পঞ্চাশ বছর বয়সের প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান। ৩৩ বছর আগে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় তার বাম হাত ও বাম পা কাটা পরে। শত চেষ্টায়ও পঙ্গুত্ব থেকে রক্ষা পাননি তিনি। তবুও থেমে নেই তার জীবন। ঘোড়ার গাড়িটি তার দৈনিক রুটি রুজির একমাত্র সম্বল।

এক সময় ভাঙ্গুরা উপজেলায় তিনি ঘোড়ার গাড়ি চালাতেন। এখন তিনি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ী গ্রামে ঘোড়ার গাড়িতে ধান বহন করে জীবন-জিবীকা নির্বাহ করছেন। স্ত্রী ও তিন ছেলে এবং এক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে অন্যের জায়গায় একটি ঝুপড়ি ঘর করে বসবাস করছেন প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান।

জীবন যুদ্ধে হার না মা মিজানুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন তার জীবন যুদ্ধের গল্প

তিনি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মাদারবাড়ি গ্রামে। আমার বয়স যখন ১৭ বছর তখন একটি বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় বাম হাত ও বাম পা কাটা পরে। আমার বাবা মৃত জব্বর আলী ফকির ছিলেন একজন অতি দরিদ্র কৃষক। তখন অভাবের কারণে আমার সঠিক চিকিৎসাও করতে পারি নাই। তারপর থেকেই শুরু হয় আমার প্রতিবন্ধী জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ।

বর্তমানে আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে ইয়াদুল ইসলাম(১১) আমার কাজে সহযোগিতা করে। মেজো ছেলে রাজিকুল ইসলাম (৭) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় এবং ছোট ছেলে রাজিবের বয়স ১ বছর। ৪ বছর বয়সের একমাত্র মেয়ে আজমিরা প্রতিবন্ধী। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে আয় ২৫০- ৩০০ টাকা। কোন কোন দিন কাজ থাকে না। শেষ সম্বল বলতে আমার তিনটি ঘোড়া ছাড়া আর কিছুই নেই।

সরকারী কোন সহায়তা আজ পর্যন্ত পাইনি। তবে আমি পরিশ্রম করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারী সাহায্য ও সহযোগিতা পেলে আমার ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারবো। প্রতিবন্ধীত্ব আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। কারও কাছে হাত না পেতে নিজের জীবিকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি। সেই থেকে এগিয়ে চলার অদম্য শক্তি নিয়ে এখনও ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।

প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানকে আশ্রয় দেওয়া মো. নজু আলী বলেন, মিজানুর রহমানকে তার জায়গায় আশ্রয় দিয়েছেন মানবিক কারণে। কেননা আমাদের সমাজে এখনও অনেক মানুষ সুস্থ থাকার পরও সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে জীবন চালাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান তা করেননি। তিনি পঙ্গুত্বকে হারিয়ে দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন।

এ বিষয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তমাল হোসেন জানালেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে সহযোগিতা করা হবে এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবেও তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!