নিষিক্ত কলাম

মাসুদ আলম বাবুল
মাসুদ আলম বাবুল
6 মিনিটে পড়ুন
ছবি সংগৃহিত

মামুনুল হকের রিসোর্ট কাণ্ডের পরে আরেক কাণ্ডে দেশ। বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভির সোবাহানের লালসার শিকার হয়ে ঝরে গেলো মুনিয়া নামের এক কলেজ পড়ুয়া তরুণী। দেশে বিশ্বে এরকম ঘটনার অঘটন প্রচুর ঘটছে, সবকিছু আমাদের সামনে হয়তো আসে না, আসলেও তার প্রচার গুরুত্ব ব্যক্তি বিশেষের অবস্থানের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। কতো নারীর বিদগ্ধ ক্রন্দন আহাজারি গুমরে মরেছে নিরবে, কেই বা ক’জনার খোঁজ রেখেছে।

মামুনুল হক যা করেছেন তা অপরাধের বিবেচনায় খুব একটা সীমা অতিক্রম না করলেও একই বিষয়ে তিনি যখন নীতিবাক্যবানে অন্যদের জর্জরিত করেন তখনই প্রশ্ন আসে তার কৃতকর্মের বৈধতা অবৈধতা নিয়ে।

ধার্মিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী সকলের চরিত্রই ভণ্ডামির বাজারে সমতালে প্রবাহমান। পশ্চিমা বিশ্বে যদিও অবাধ স্বাধীনতার ফলে তাদের কেনোকিছুই গোপন করার প্রয়োজনীয়তা আসে না, তারা যা সত্য তা প্রকাশে সত্যবাদী, যা মিথ্যা তার চর্চা তারা এড়িয়ে যান।

সৃষ্টির সূচনাকাল থেকেই জীবের যে সবচেয়ে মৌলিক প্রয়োজন তার অন্যতম হচ্ছে জৈবিকতা। জীবমাত্র সেই প্রয়োজনকে অস্বীকার করতে পারে না কেউ। মুখে অস্বীকার করলেও বাস্তবতা ভিন্নরূপ সাক্ষ্য বহন করে এবং সেটাই বাস্তবে ঘটে যাচ্ছে।

- বিজ্ঞাপন -

বর্তমান সময়ে বিশ্বে ব্যবসায়ী রাজনীতিক ও ধর্মগুরুরা একই সূত্রে গ্রোথিত হয়ে একে অপরকে সুরক্ষা দিচ্ছে অবলিলায়। যদিও প্রকাশে একে অপরের শত্রু ভাবাপন্ন হতে পারে, কিন্তু অপ্রকাশ্য স্বার্থের বিনিময়ে তারা পরস্পর একাট্টা।

ব্যবসায়ীরা যেমন বৈধ অবৈধ উপায়ে টাকার পাহাড় গড়ে তোলে, তেমনি তার এক বৃহৎ অংশ খরচ করে পৃষ্ঠপোষণকারী রাজনীতি ও ধর্মের পেছনে। এবং ধর্ম ব্যবসায়ীরাও লেজ নেড়ে নেড়ে সেই সুবিধা নিয়ে মৌসুমি হাওয়ায় গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। রাজনীতি তাদের সুরক্ষা দেয়, ব্যবসায়ীরা তাদের আর্থিক যোগান দেয়, আর সেই যোগান সুবিধায় তারাও একেকজন সুববৃহৎ ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। এই তিন শ্রেণি যেনো এখন পরস্পর পরম্পরা। বিষয়টি একমাত্র উন্নত বিশ্ব ব্যতিরেকে কমবেশি সর্বত্রই বিরাজমান। যে কারনে ছোটোবড় অপরাধ তাদের ধর্তব্যের মধ্যে আসে না। তাই মানবিক অমানবিক বিয়ে তাদের কাছে এখন ফ্যাসন। যার শিকার হয়ে ওঠে অনেক অবলা নারীরা।

পুঁজিতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারী পুরুষ সকলেই বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত। দৈনন্দিন ও সামগ্রিক প্রয়োজনে প্রত্যেকে অর্থ উপার্জনে মরিয়া, যেখানে বৈধ অবৈধের কোনো বালাই নেই। সুতরাং সকল বাক্য নীতিবাক্যের স্খলন শুধুমাত্র ভাণ্ডামির ফানুস ছাড়া কিছুই নয়। তাই সমাজের অন্য দশ জনের সাথে তাল মিলাতে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সম্ভ্রান্ত অসম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরাও এখন কোনো না কোনো উপায়ে অর্থের ধান্ধা করে বেড়ায়। অনেক সময় অভিভাকরাও বুঝতে পারে তার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েটি তার পরিবারে যে ছাত্রাবস্থায় এতোশত আর্থিক যোগান দিচ্ছে তার পুরোটাই কি শুধুমাত্র টিউশনি থেকে পাওয়া? কিংবা কোনো কোম্পানির পার্টটাইম জবে কি এতো বেশি বেতন? সবকিছুর পেছনে লুকায়িত এক অন্ধকার জীবনের গল্প। সে গল্পের পরিণতি কারো হয় বিজয়, কারো হয় বিয়োগান্ত নাটকের সর্বশেষ দৃশ্যের মতো কষ্টের, যন্ত্রণার, মর্মবেদনার।

ধর্মশালা, পাঠশালা, শিল্পকারখানা, শিল্প মিডিয়া সহ পদ পদবীতে শীর্ষে উঠে আসার পেছনের গল্পগুলোও অন্ধকার গলিপথের ভেতর দিয়ে আলোকোজ্জ্বল ক্ষয়িষ্ণু জীবনের পাতাঝরার গল্প। যেসব গল্পের সহায়তায় মা বাবা এমন কি নিজের স্বামীরও থাকে সম্মতির প্রয়াস। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সর্বত্রই ঘেঁটে দেখুন কুল কিনারা পাওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে। যুদ্ধে বিজয়ী হলেও সকল সৈন্য বেঁচে ফেরে না। তাই মুনিয়া ঝর্ণাদের মতো দু’একটি দু’র্ঘটনা অবশ্বম্ভাবী হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র আনভীর আর মামুনুল নয়, সর্বত্র লুকায়িত আছে ভণ্ডামি প্রতারণা আর বলৎকারের দুঃসহ বেদনা। এই তিন শ্রেণি ধর্মের লোক দেখানো বাহবা দেখিয়ে পতিতালয় উচ্ছেদ করেছে দেশের বিভিন্ন নগর প্রান্ত থেকে। অথচ, নিজেরা তাদের কামনার বাসনাগুলোকে সজ্জিত ফ্লাটে রিসোর্টে চরিতার্থের চারণক্ষেত্রে পরিণত করেছে। আর শহর নগরের আবাসিক হোটেল গুলোকে করে তুলেছে দুর্গন্ধের ভাগাড়। কারন এসব উঁচুতলার মানুষগুলো কখনোই পতিতালয় যায় না, পতিতারা কলগার্ল হয়ে তাদের কাছে ছুটে আসে। তাদের কন্দরে সুবাস ছড়ায়, কণ্ঠে পরায় দেহসৌষ্ঠবের বর্ণিল মাংশল মালিকা। আর যারা একদিন ওসব পতিতালয়ের বাসিন্দা ছিলো, উচ্ছেদের পরে তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে দেশের সর্বত্র। আবরুর অবগুণ্ঠনে ঢুকে পড়ে কোনো কোনো হোটেল প্রাসাদের গুহার আঁধারে, তারপর খুলে ফেলে লজ্জার বিলাস ব্যাসন।

পতিতাবৃত্তি মানব ইতিহাসের একটি আদিম পেশা, যা স্বর্গেও থাকবে বলে অনুমেয়। তবে আজকাল শোনা যাচ্ছে পুরুষদের পাশাপাশি অভিজাত পরিারের মেয়েরাও বেশ এগিয়ে গিয়েছেন, পশ্চিমা এসকর্ট বিজনেসের মতো বাংলাদেশেও নাকী এখন এ ব্যবসা জমজমাট। তাই যদি হয় তাহলে আভিজাত্যের অন্ধকার গহ্বর দিয়ে মুনিয়ার মতো কতো মেয়েদের জীবন অর্থের প্রয়োজনে অর্থহীন হয়েছে, তেমনি করে কি অভিজাত নারীদের লালসার সাগরে ভবিষ্যতে নিমজ্জিত হবে দরিদ্র মধ্যবিত্ত ঘরের বিলাস কামনায় উন্মুখ আমাদের সম্মুখ প্রজন্ম? আর এই তিন শ্রেণির মধ্যেকার ভণ্ডদের ভণ্ডামির দোর্দণ্ডপ্রতাপে আস্তে আস্তে ক্ষয়ে যাবে আমাদের ভবিষ্য সমাজ? তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রকে হয় শতভাগ নৈতিক বলে বলিয়ান করে তুলতে হবে, নয়তো স্বাধীন করে দিতে হবে মানুষের মানবিক চাওয়া। যাতে করে মানবিক বিয়ে বা অমানবিক জীবনাচারে মুনিয়াদের মতো সুন্দর ফুটফুটে জ্যোৎস্নাগুলো আলো ছড়াবার আগেই কোনো গ্রহণের রাহুগ্রাসে অকালেই বিলীন হয়ে না যায়। আর যারা বিত্তের দাপটে মাটির সলতের মতো আছড়ে ভেঙে ফেলছে মুনিয়াদের মতো একেকটি জীবন প্রদীপ, নির্বাপিত করছে আলো, তাদের অবৈধ আলোগুলোও নির্বাপণ করা হোক সুষ্ঠু সঠিক বিচারক কাঠামোর মধ্য দিয়ে। যারা দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের আর্থিক প্রয়োজন, অবুঝ মনের আবেগ, বয়সের অপরিপক্বতার সুযোগ গ্রহণ করে ব্যবহার করে, আবার প্রয়োজন ফুরালে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, কিংবা কেড়ে নেয় জীবন, তাদের ক্ষমার কোনো প্রশ্নই আসে না। ধন্যাঢ্য পরিবারের ছেলেরা টাকার জোরে ধরাকে সড়াজ্ঞান করে। আইন তাদের কাছে অধরা। তাই, আইন সবার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি হোক, সবার ক্ষেত্রে। কাউকে মেরে ফেলা বা মৃত্যুর ক্ষেত্র তৈরি করা, কোনোটাই কম অপরাধ নয়। মুনিয়াকে বাঁচিয়ে রেখে একটি সুন্দর জীবন দিতে পারতো আনভীর। এই না দেয়ার খেসারত থেকে মুক্ত হবার কোনো অধিকার তার নেই।

- বিজ্ঞাপন -

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মহাকবি মধুসূদন পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক, কবি ও কলামিস্ট। অধ্যক্ষ, হাজী আক্কেল আলী হাওলাদার ডিগ্রি কলেজ, পটুয়াখালী।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

একটি অ্যাকাউন্ট নেই? নিবন্ধন করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!