শুরুর কথা
জীবন কি সুন্দর! সত্যিই জীবন অনেক সুন্দর। পৃথিবীতে যখন ভূমিষ্ঠ হই মায়ের কোলে, তখন মা-ই আমার একমাত্র পৃথিবী। ২০০৭ সাল। মায়ের কোল আলো করে আমি এই ভবে এসেছি। আমার মুখ থেকেই প্রথম অস্ফুট শব্দে বেরিয়ে আসা মা ও বাবা ধ্বনি শুনেছিল আমার মা ও বাবা। তাই তো আমি তাদের আদরের দুলাল।
আমি ধীরে ধীরে বড় হই। স্কুলের বারান্দায় পা রাখি। সেদিন আমার দুঃখ ছিল একটাই- আমি একা। মানে আমিই ছিলাম পরিবারের একমাত্র সন্তান। আমার কোনো ভাই বা বোন ছিল না। মাঝে মধ্যে আমার মনের গহীনে দুঃখবোধ চাড়া দিয়ে উঠতো; আহা! আমার যদি একটি ভাইবোন থাকতো! এমন সময় একদিন মা আমার হাসপাতালে ভর্তি হলো, পরেরদিন পেলাম নতুন সুখবর। আমি একজন বোন পেয়েছি। হৃদয় আমার আনন্দে ভরে গেল। বোন! বোন! বোন! এবার নিজেকে খুব সুখী মানুষ বলে মনে হতে লাগলো।
কোনো একটা গানে শুনেছিলাম, অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার দেখা…
এই গানের প্রতি চরণেই যেন আমার সেই প্রত্যাশার পূরণ ফুটে উঠেছে। মনের ভেতরে প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল, আমার একটা ছোট্ট বোন থাকবে। তাকে অনেক আদর করব, তার সাথে খেলা করব, আরও কত কি…
কিন্তু আমার তো কোনো খেলার সঙ্গী ছিল না। সেসময় মনটা ভীষণ খারাপ থাকতো; খুব একাকী লাগতো।
যখন আমি একজন বোন আসলো, ভাবছিলাম তাকে কি বলে ডাকবো। পরে নাম রাখা হলো মাসুমা জান্নাতুল মুন। বাবা-মা ওকে মুন বলেই ডাকে। আমি তাকে ডাকি মুন সোনামণি। ও আমার ছোট্ট আর গুলুমুলু একমাত্র আদরের বোন মুন সোনামণি আমার।
এরই অধ্যে একবছর কেটে গেল। মুনকে হাত ধরে ধরে হাঁটা শিখাচ্ছি। ও আমার হাতের আঙ্গুল ধরে হাঁটছে, সে এক অন্যরকম অনুভূতি। সে আস্তে আস্তে আধো বুলিতে কথা বলা শুরু করেছে। হাতের কাছে থাকা জিনিষ ছুঁড়ে ফেলে; আমি সেগুলো কুড়িনে এনে রাখি।। ওর সঙ্গে খেলা করি, কথা বলি, গল্প শোনাই। তখন মুন সোনামণি বুঝতে পারতো না; হয়তো বুঝতো। কিন্তু কথা বলতে পারতো না। ধীরে ধীরে এ পরিবারের সকলের ভালবাসা আর স্নেহে ও বেড়ে উঠতে লাগলো।
কবে যে মুন বড় হয়ে গেলো বুঝলামই না। মা যখন আমাকে পড়তে বসায় তখন মুন পাশেই বসে থাকে। আমিও বই পড়ি তা দেখে মুনও বই পড়া শুরু করলো। তারপর মুন লেখা শিখছে।
চলবে…